দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি…
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে যে কবিতা লিখে গিয়েছিলেন তা আজও অস্বীকার করবার উপায় তো নেই-ই, বরং ভাবতেও অবাক লাগে যে এত বছর আগে সভ্যতায় এত যান্ত্রিকতা ছিল না, ছিল না কালো ধোঁয়া, তবু কী নিদারুণ সত্য!
এই প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, কারণ প্রকৃতি সমস্ত উজাড় করে দিয়েছে আমাদের। প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য আমরা নিজেরা ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি। যেমন- প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা, বেশি করে গাছ লাগানো, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানিসহ প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় না করা, বাইসাইকেলের ব্যবহার বাড়ানো ইত্যাদি।
দেরি না করে আজ থেকেই চলুন শুরু করা যাক পরিবেশ রক্ষার কাজ।
কীভাবে প্রকৃতিকে রক্ষা করবেন
প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য আমাদের কিছু দায় তো আছেই। আমরা খুব সহজেই বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে কিছুটা হলেও আমাদের প্রিয় পৃথিবীকে বাঁচাতে পারি। আমরা প্রতিনিয়ত যে ভুলগুলো করি, সেসব শুধরে নিলেই এই পৃথিবী আর প্রকৃতি রক্ষা পেতে পারে।
১) গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান
আমাদের বাঁচার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আর এই নগরায়নের শতাব্দীতে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রকৃতিকে বাঁচাতে, যত্ন নিতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। গাছের যত্ন নিতে হবে। আমাদের অনেক প্রয়োজনেই গাছ কাটতে হয়, কিন্তু একটা গাছ কাটলে যে ঘাটতি হবে তা অপূরণীয়। তাই এর বিপরীতে বেশি করে গাছ লাগাতেও হবে।
২) বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের অপচয় বন্ধ করুন
আমাদের অধিকাংশ মানুষের খুব বাজে স্বভাব হলো দাঁত ব্রাশ কিংবা গোসলের সময় পানি ছেড়ে রাখা, গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা ম্যাচের কাঠির খরচ বাঁচাতে, কিংবা সারাদিন লাইট, ফ্যান, এসি ছেড়ে রাখা। সম্পদের এই যথেচ্ছা ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতি করে।
একদিকে পৃথিবীর অগণিত মানুষ সুপেয় পানির অভাবে হাহাকার করছে, অন্যদিকে আরেকদল অবিবেচক মানুষ পানির অপচয় করেই যাচ্ছে। প্রকৃতির আশীর্বাদ এভাবেই ধ্বংস করে ফেলছি আমরা। এতে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো কেবল বিনষ্টই হচ্ছে।
এগুলো প্রয়োজনের বাইরে ব্যবহার করবেন না। এতে করে সম্পদের যেমন সাশ্রয় হবে, ঠিক তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
৩) প্লাস্টিক ব্যবহার সীমিত করুন
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পাত্র, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিক বর্জ্য মাটির সাথে মিশে যায় না। বছরের পর বছর এগুলো মাটির উপরে, পানির মধ্যে থেকে মাটি-পানি-বাতাস দূষিত করছে। ফলে এসব স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে বিষ। প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ বা যা মাটির সাথে মিশে যায় এমন উপাদানে তৈরি থলে ব্যবহার করুন। রিসাইকেল করা যায় এমন থলে ব্যবহার করুন। এতে বাড়তি ব্যাগের দরকার যেমন হবে না, ফেলে দেয়া বর্জ্যের সংখ্যাও কমে যাবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে। যদি ফেলে দেয়া হয়ও, তবুও যেন মাটির সাথে মিশে মাটি-পানির কোনো ক্ষতি না করে। একেবারে পরিহার করা সম্ভব নয় আসলে, তবু সীমিত পর্যায়ে ব্যবহার করুন।
৪) বাইসাইকেল ব্যবহার করুন
গাড়ির কালো ধোঁয়া আমাদের বাতাসে মিশে যায়। এই ধোঁয়া প্রতিদিন ঠিক কী পরিমাণ বের হচ্ছে তার হিসাব নেই। পেট্রোলিয়াম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় এবং বাতাসে মিশে যায় সীসা যা ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম বড় কারণ। সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে, এবং একইসাথে কালো ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে, সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে চেষ্টা করুন বাইসাইকেলের ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে। কাছাকাছি দূরত্বে খুব জরুরি না হলে হেঁটে চলাচল করুন, প্রকৃতিবান্ধব জীবনযাপন করুন।
৫) অতিরিক্ত কাগজের ব্যবহার পরিহার করুন
আধুনিক এই যুগে যদিও আমরা যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল, তবুও কাগজের ব্যবহার নিয়মিত করা হয়। অফিস-আদালতে কাগজ ছাড়া গতি নেই। কাগজ তৈরিতে প্রয়োজন হয় গাছের, প্রতি বছর অগণিত গাছ কাটা হয় কাগজ তৈরির জন্য। তাই খুব দরকার ছাড়া অতিরিক্ত কাগজ ব্যবহার করবেন না। খুব সামান্য কাজে কোনো কিছু প্রিন্ট করবেন না। এছাড়া, যত্র তত্র ফ্লায়ার, পেপার, কাগজের বক্স বা প্যাকেট কিংবা পেপার বা ম্যাগাজিনের পেইজ ছুড়ে ফেলবেন না।
যদি কোনো কাজ ইলেকট্রনিক ডিভাইসেই হয়ে যায়, স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজন না হয়, তাহলে কাগজের বদলে ইলেকট্রনিক মাধ্যমেই সমাধান খুঁজে নিন।
কিছু ক্ষেত্রে কাগজকে রিসাইকেল করা সম্ভব। এটা করেও অনেক অপচয় থেকে বাঁচতে পারবেন।
এগুলো ছাড়াও যত্রতত্র ময়লা, মানববর্জ্য, প্রাণীবর্জ্য, কেমিক্যাল বর্জ্য, ইলেকট্রনিক বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা; পলিথিন বা অপচনশীল পণ্য-বর্জ্য পুড়িয়ে কালো ধোঁয়া ছড়ানো, প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় করা- এসব কাজ প্রকৃতিবিরুদ্ধ। প্রকৃতি তার সমস্ত রত্নভান্ডার আমাদের উজাড় করে দিয়েছে। সকল প্রয়োজন পূর্ণ করেছে। তাই মানুষ হিসেবে আমাদেরও উচিৎ প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এতে প্রকৃতি ও প্রাণ দুটোই রক্ষা পাবে।