Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টিজান: শীতে সুস্বাস্থ্যের উষ্ণ এক চুমুক

পাঠক, শীতকাল তো চলেই এলো। ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সবাই নিশ্চয়ই এখন ঝুঁকবেন গরম গরম চা বা কফির দিকে। কেমন হয়, যদি গতানুগতিক চা-কফির বদলে এমন কিছু পাওয়া যায়, যা স্বাদে ভিন্ন আমেজ এনে দেবে, আবার উষ্ণতা ছড়ানোর পাশাপাশি শরীরের নানাবিধ উপকারও করবে? জ্বী পাঠক, এমনই এক পানীয় রয়েছে, যার নাম হচ্ছে টিজান (Tisane)।

টিজান মূলত উদ্ভিদের ওষধি গুণসম্পন্ন বিভিন্ন অংশের (যেমন- পাতা, মূল, ছাল, ফুল বা ফল) ক্বাথ থেকে প্রস্তুত করা হয়, যা ভেষজ পানীয় হিসেবে পান করা হয়ে থাকে। যদিও এটি তৈরিতে চা পাতা ব্যবহার করা হয় না, তবু একে অনেক সময় হার্বাল টি বলা হয়

এই শীতে সুস্থ থাকতে পান করতে পারেন টিজান; Source: Fabio De Giovanni

কী দিয়ে তৈরি করা যায় টিজান?

লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, মৌরি, হলুদ, লেবু, তুলসী, পুদিনা, আদা, রসুন, পেঁয়াজকলি, আপেল, কমলার খোসা- নিত্যদিনের ব্যবহার্য এমন অসংখ্য উপাদানে লুকিয়ে আছে হরেক রকমের ওষধি গুণ। এসব এক বা একাধিক উপকরণের সমন্বয়ে টিজান তৈরি করা সম্ভব।

আজকের এই আয়োজনে আটটি অত্যন্ত সুলভ উপকরণের গুণাগুণ, সেগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতার নির্দেশনা, এবং কীভাবে সেই উপকরণ ব্যবহার করে টিজান তৈরি করা যায়- তা জানানো হবে।

লবঙ্গের টিজান

  • লবঙ্গে বিদ্যমান ইউজিনল শ্বাসতন্ত্র ও সাইনাসে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের করে দিয়ে আরাম দেয় এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
  • জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক।
  • কৃমি, বদহজম বা পেটে গ্যাসের কারণে হওয়া পেটে ব্যথা এবং বমি বমি ভাবের উপশম করে।
  • দুপুরের বা রাতের খাবারের আগে লবঙ্গের টিজান পান করলে রক্ত সঞ্চালন, মুখের লালা উৎপাদন এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এতে খাবার হজমে সুবিধা হয়।
  • এটি প্রদাহরোধী হওয়ায় দাঁত ও মাড়ির ব্যথা, মাড়ি ফোলা কমায়।
  • ব্যাকটেরিয়া ও কৃমি দ্বারা সংক্রমণ রোধ করে

সতর্কতা

  • যারা রক্ত পাতলাকারী ওষুধ সেবন করেন, তারা লবঙ্গের টিজান পান করা থেকে বিরত থাকুন।
  • দীর্ঘদিন ধরে বা খুব বেশি পরিমাণে লবঙ্গ খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে, রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে

প্রস্তুত প্রণালী

এক টেবিল চামচ আস্ত লবঙ্গ নিয়ে গ্রাইন্ডার বা হামানদিস্তায় আধভাঙ্গা করে নিন। এক কাপ পানি চুলায় দিয়ে ফুটিয়ে নামিয়ে নিন। এতে লবঙ্গ যোগ করে দশ থেকে বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। চাইলে এতে চিনি বা মধুও যোগ করতে পারেন

আমাদের হাতের কাছের উপাদান দিয়েই তৈরি হয় টিজান; Source: Bigodino

এলাচের টিজান

  • এলাচে বিদ্যমান পটাসিয়াম রক্তনালীকে প্রসারিত করে, ফলে এটি উচ্চ রক্তচাপের জন্যে বেশ উপকারী। এটি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকেরও ঝুঁকি কমায়।
  • আয়রন লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ায়, রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, জীবাণুনাশক ক্ষমতা, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমূহ একজিমা, সোরিয়াসিস, অ্যাকনে সহ চামড়ার অন্যান্য প্রদাহজনিত উপসর্গ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। চামড়ার সংক্রমণের প্রতিকার শুধু নয়, বরং প্রতিরোধেও এটি কার্যকর।
  • মাথার তালুর শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও প্রদাহ রোধ করে, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং চামড়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে চুল পড়া ও খুশকির হাত থেকে বাঁচায়।
  • এলাচের বীজের তেলে বহুবিধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উদ্বায়ী যৌগ রয়েছে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং ফ্রি রেডিক্যালসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এভাবে এটি সম্ভাব্য টিউমার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • পেট ফাঁপা, বদহজম, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম করে।
  • যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
  • মাসিকের সময় মেয়েদের মন প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
  • ব্যথানাশক হিসেবেও কাজ করে।

সতর্কতা

  • গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারীরা এলাচের টিজান পান না করাই ভালো।
  • পিত্তথলিতে পাথর থাকলে এটি পান করা উচিত হবে না, পেটে ব্যথা হতে পারে। তবে রান্নায় মশলা হিসেবে এলাচ খেতে তাদের বাধা নেই।
  • যারা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, বিষণ্নতা, পিত্তথলির পাথর বা রক্ত পাতলা করার জন্যে কোনো ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের এলাচের টিজান পান করার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ জেনে নেয়া উচিত

প্রস্তুত প্রণালী

একটি পাত্রে চার কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। এক টেবিল চামচ এলাচের বীজের গুঁড়ো, তিনটি আস্ত লবঙ্গ, তিনটি আস্ত গোলমরিচের দানা, এক টুকরো দারচিনি এই পানিতে ছেড়ে দিন। আঁচ কমিয়ে পাত্রটি চুলায় পনের-বিশ মিনিট রেখে ফোটান। চুলা থেকে নামিয়ে এক-দুই মিনিট পরে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে, এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন এলাচের টিজান।

ক্লান্ত দেহে নতুন উদ্দীপনা এনে দেবে টিজান; Source: The 3 Foragers – blogger

দারুচিনি টিজান

  • দারুচিনিতে রয়েছে ইউজিনল, যা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাসের বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • এতে বিদ্যমান পলিফেনোল রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে, পরিপাকতন্ত্রকে আরাম দেয় এবং গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করে।
  • প্রচণ্ড মাথাব্যথা কিংবা ব্যায়ামের পর মাংসপেশীর ব্যথা উপশম করে।
  • প্রদাহজনিত ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়।
  • চীনে সর্দি-জ্বরের উপশমে দারুচিনি অহরহ ব্যবহার করা হয়।
  • শীতের সময়ে শরীরকে উষ্ণ রাখতে দারুচিনির টিজান বেশ কার্যকর।

সতর্কতা

সাধারণত দারুচিনির টিজানের তেমন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব নেই। তবে এটি অতিরিক্ত পান করলে ডায়রিয়া হতে পারে। নিয়মিত পান করা শুরু করতে চাইলে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত

প্রস্তুত প্রণালী

কাপে এক টুকরো দারুচিনি বা এক চামচ দারুচিনি গুঁড়ো নিন। তাতে আট আউন্স পরিমাণ ফুটন্ত পানি ঢেলে আট থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করে এরপর পান করুন। চাইলে এতে মধুও মেশাতে পারেন

টিজান পানের আগে সতর্ক থাকা উচিত স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে; Source: The Sur La Table Blog

মৌরি টিজান

  • বুকজ্বলা, পেটে গ্যাস জমা, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও বদহজমে মৌরির টিজান বেশ কাজে দেয়। মৌরির বীজ চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
  • অন্ত্র কৃমিমুক্ত রাখে।
  • কিডনির কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায় এবং কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে।
  • ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
  • কাশি, ব্রংকাইটিস ও হাঁপানির উপসর্গে আরাম দেয়।
  • প্রসূতি মায়ের বুকে দুধ উৎপাদন ও প্রবাহ বৃদ্ধি, মাসিক না হওয়ার চিকিৎসা, মাসিককালীন তলপেটের ব্যথা ও মেনোপজের বিভিন্ন উপসর্গের উপশমে মাঝেমাঝে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং মাড়ির প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়

সতর্কতা

  • মৃগী রোগী; স্তন, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তি, এন্ডোমেট্রিয়োসিস ও ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডের মত হরমোন সংবেদনশীল রোগের চিকিৎসা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্যে মৌরির টিজান এড়িয়ে চলাই উত্তম।
  • এই চা জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী পিল বা অন্যান্য ইস্ট্রোজেনভিত্তিক ঔষধের কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। সুতরাং যারা এসব ঔষধ সেবন করছেন, তারা এই টিজান পান করা থেকে বিরত থাকুন।
  • মৌরির টিজান এবং সিপ্রোফ্লক্সাসিন বা ট্যামোক্সিফেন জাতীয় ঔষধ পরপর খাওয়া হলে শরীরে ঔষধের শোষণকাজ ব্যাহত হতে পারে। সুতরাং এই ব্যাপারে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া উচিত

প্রস্তুত প্রণালী

এক চা চামচ মৌরি হামানদিস্তায় পিষে নিন। এবার এটিকে চামচে করে নিয়ে একটি ছাঁকনিতে রাখুন। ছাঁকনির মধ্য দিয়ে একটি পাত্রের মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত পানি ঢালুন। মৌরির বীজগুলোকে ছাঁকনিতে থাকা অবস্থায়ই সাত থেকে দশ মিনিট ঐ পানিতে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি তুলে নিয়ে আরও একটু পানি যোগ করে পান করুন মৌরির টিজান

নানা রকম ভেষজ উপাদান থেকে তৈরি হয় এই পানীয়; Source:  The 3 Foragers – blogger

পুদিনার টিজান

  • এর প্রধান উপাদান হচ্ছে মেন্থল, যা ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে শরীরকে ভেতর থেকে ঠাণ্ডা করে। ফলে জ্বরের সময় এটি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে।
  • পেটে গ্যাস জমতে বাধা দেয়, ফলে পেট ফাঁপা, অস্বস্তি ও ব্যথা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
  • এটি অন্ত্রের মাংসপেশীর ওপর কাজ করে। তাই ডায়রিয়া, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এটি উপকারী।
  • মাংসপেশীর সংকোচনে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে বমি বমি ভাব বোধ করা এবং বমি হওয়ার আশংকা কম থাকে।
  • জ্বর, সর্দি, কাশি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করে এবং মেন্থলের কড়া সুগন্ধ শ্বাস-প্রশ্বাসে সতেজতা এনে দেয়।
  • ক্ষুধা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • মানসিক চাপ থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেয়, যে কারণে অ্যারোমাথেরাপির কাজে পুদিনার তেল অতি জনপ্রিয়

সতর্কতা

বুকজ্বলা ও হজমের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা; এবং যারা সাইক্লোস্পোরিন, অ্যান্টাসিড, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ঔষধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সেবন করছেন, তাদের পুদিনার টিজান পান করা উচিত হবে না

প্রস্তুত প্রণালী

এক কাপ গরম (ফুটন্ত নয়) পানিতে এক চা চামচ শুকানো পুদিনা পাতা দিয়ে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট স্থিরভাবে রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে পুদিনার টিজান।

লেমনগ্রাস টিজান

এটি লেবুর মত সুগন্ধিযুক্ত এক প্রকার ভেষজ উপাদান, যা সাধারণত এশিয়ান খাবার রান্নায় ব্যবহৃত হয়।

  • লেমনগ্রাসে সিট্রাল নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা খাবার হজমে সহায়তা করে। চীনে প্রাচীনকাল থেকে এটি পেট ফাঁপা, হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশমে ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ হওয়ায় শরীরের বিষাক্ত সব বর্জ্য বের করে দিয়ে শরীরকে পরিশুদ্ধ করে তোলে।
  • এতে আছে পটাসিয়াম, যা শরীরে মূত্র উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তচাপ হ্রাস পায়। এছাড়া এটি অন্ত্র থেকে কোলেস্টেরল শোষণের হার সীমিত রাখে, যা হৃদপিণ্ডের সুস্থতার জন্যে সহায়ক।
  • বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি ঘটানো এবং বেশি বেশি ক্যালরি পোড়ানোর মাধ্যমে এটি অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • এর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় অপরিহার্য। এছাড়া রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি ত্বক পরিস্কার রাখে; ত্বকের তৈলাক্ত ভাব, অ্যাকনে, ব্রন ও একজিমা দূর করতে সাহায্য করে।
  • এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল ক্ষমতা সর্দি, কাশি ও ফ্লু কাটিয়ে উঠতে সহায়ক।
  • মহিলাদের মাসিককালীন ব্যথা ও হট ফ্লাশের সময়ে এটি আরাম দেয়।

সতর্কতা

  • লেমনগ্রাস রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়। সুতরাং ডায়াবেটিক রোগীদের উচিত এটি গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া।
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের লেমনগ্রাস টিজান পান করা থেকে বিরত থাকাই ভালো

প্রস্তুত প্রণালী

একটি সসপ্যানে চার কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। দুই কাপ লেমনগ্রাস কুচি এই পানিতে দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট ফুটতে দিন। চুলার আঁচ কমিয়ে সসপ্যানটি আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন। এবার পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে তাতে চিনি মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে লেমনগ্রাস টিজান

পানীয়র চাহিদায় নতুন স্বাদ এনে দেবে টিজান; Source: Alimentazione Sana

রসুনের টিজান

  • এটি রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করে, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়, রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং রক্তনালীর গায়ে চর্বি জমতে বাধা দেয়।
  • শরীরের বিপাক ক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি করে, অতিরিক্ত চর্বি গলাতে সাহায্য করে। তাই রসুন খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
  • এতে আছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা চামড়ায় বার্ধক্যের ছাপ ফুটে ওঠা রোধ করে।
  • সর্দি ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করে

সতর্কতা

  • রসুনের বিশেষ গন্ধের জন্যে দায়ী উপাদানের নাম অ্যালিসিন। এর উপস্থিতির কারণে রসুন খাওয়ার পর শরীরে ও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
  • রসুনে অ্যালার্জির কারণে মুখে ঘা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে রসুনের টিজান পান করা নিরাপদ নয়।
  • রসুন কিছু ঔষধের সাথে মিশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করতে পারে। টিজান পানের পূর্বে এটি মাথায় রাখা দরকার

প্রস্তুত প্রণালী

সসপ্যান চুলায় দিয়ে তাতে তিন কাপ পানি ও তিন কোয়া রসুন নিন। পানি ফুটে উঠলে চুলা বন্ধ করে তাতে আধা কাপ মধু ও আধা কাপ তাজা লেবুর রস মেশান। ছেঁকে নিয়ে পান করুন। দিনে তিনবার আধা কাপ করে পান করতে পারেন। অতিরিক্ত টিজান রেফ্রিজারেটরে রেখে দিলে পরের দিনও পান করা যাবে

টিজান শরীরকে রাখবে উষ্ণ; Source: The Spruce

আদা টিজান

  • এতে বিদ্যমান ভিটামিনস, মিনারেলস ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়, হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • খাদ্য হজম ও শোষণে সাহায্য করে।
  • মোশন সিকনেসজনিত উপসর্গের উপশমে আদা চা বেশ উপকারী।
  • সাধারণ সর্দি, কাশি, ফ্লু, পরিবেশগত অ্যালার্জি ও হাঁপানির উপশম করে।
  • মাসিককালীন পেটব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • মানসিক চাপ নিরসনে সাহায্য করে

সতর্কতা

  • দিনে দু’বারের বেশি আদার টিজান পান করা উচিত নয়।
  • খুব বেশি পরিমাণে আদা ব্যবহার করলে মুখ ও বুক জ্বালাপোড়া এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
  • পেপটিক আলসারের রোগী আদার টিজান পান  করলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। সুতরাং তারা এটি পান না করাই উত্তম।
  • রক্তক্ষরণ সংক্রান্ত রোগ থাকলে বা রক্ত পাতলাকারী ঔষধ সেবন করলে আদার টিজান এড়িয়ে যান।
  • পিত্তথলিতে পাথর থাকলে আদার টিজান পান করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

প্রস্তুত প্রণালী

আদার খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করে নিন। প্রতি কাপ পানির জন্যে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ আদার টুকরো নিতে হবে। একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে আদা ছেড়ে দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ফুটে উঠলে চুলার আঁচ কমিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। এবার ছেঁকে নিয়ে পান করুন আদার টিজান।

সুতরাং পাঠক, চমৎকার সব স্বাস্থ্যকর পানীয় রয়েছে ঠিক আমাদের হাতের কাছেই। দরকার শুধু নিজের রুচি, প্রয়োজন ও শারীরিক অবস্থা বুঝে সঠিক উপাদানটি বেছে নেওয়া। তো আর দেরি কেন? এই শীতে ঊষ্ণতা পেতে নিজের পছন্দের টিজানটি পান করুন আর সুস্থতার পথে এগিয়ে যান আরও এক ধাপ।

ফিচার ইমেজ- The 3 Foragers – blogger

Related Articles