শারীরিক ব্যথা কমাতে গাদাখানেক ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার? ডাক্তার অবশ্য আপনার প্রয়োজন বলেই ওষুধগুলো লিখেছেন নিশ্চয়ই। তবে ওষুধ কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে যদি এই ব্যথা কমিয়ে আনা যেত, তবে কেমন হতো বলুন তো?
আপনি যদি হন কোমর ব্যথা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি ক্রনিক ব্যথার ভুক্তভোগী, সেক্ষেত্রে ওষুধ আপনার সাথে নিয়মিত থাকবেই। তাতেও যে ব্যথা পুরোটা কমে আসবে তা কিন্তু না। আর এই জায়গাতেই আপনাকে সাহায্য করতে পারে যোগব্যায়াম বা ইয়োগার মতো প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা কমানোর পদ্ধতিগুলো। জানতে ইচ্ছে করছে মস্তিষ্কের মাধ্যমে শারীরিক ব্যথা কমানোর উপায়গুলো নিয়ে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক!
মন যখন শরীর ব্যথার ওষুধ
গবেষকদের মতে, ব্যথা শুধু শারীরিক কোনো ব্যাপার না। মস্তিষ্ক শরীরের ব্যথা অনুভব করবে কিনা সেটার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। আর তাই ব্যথা কমিয়ে আনতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে মাইন্ড-বডি থেরাপি বেশ কার্যকর। শুধু তা-ই না, একজন মানুষ কীভাবে ব্যথা পাবে, কতটুকু ব্যথা পাবে- তার অনেকটা নির্ধারণ করে মানুষটির ডিএনএ, জীবনযাপন পদ্ধতি, আবেগ ইত্যাদি।
অতীতে ঘটা কোনো ঘটনা একজন মানুষের ব্যথাকে বোঝার ক্ষমতাকেই পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। অনেকদিন হয়ে গেলেও যদি কোনো ব্যথা আপনাকে যন্ত্রণা দেয়, তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনি নিজেই সেই ব্যথাকে ধরে রাখছেন। মস্তিষ্ক অনেক আগেই ব্যথার সংকেত আপনাকে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।
মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, ব্যথার অনুভূতি দূর করতে হার্ভার্ড-ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালের ‘দ্য বেনসন-হেনরি ইন্সটিটিউট ফর মাইন্ড-বডি মেডিসিন’ কাজ করছে বহুদিন হলো। এই ইন্সটিটিউটেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ডক্টর অ্যালেন স্লসবি মানসিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যথা কমিয়ে আনার এই প্রক্রিয়াকে অনেকটা আইসক্রিম খাওয়ার মতো বলে মনে করেন। যে আইসক্রিমের ফ্লেভার মানুষের মনের অবস্থা, শারীরিক অবস্থা ও পরিবেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, মাথা আপনাকে ব্যথার অনুভূতি দেবেই। কিন্তু ছোট্ট কিছু কৌশল ব্যবহার করে কীভাবে সেই অনুভূতিকে এড়িয়ে যাবেন আপনি সেটাই বলছি এখন।
১) লম্বা নিঃশ্বাস নেওয়া
রাগ হলে বা ব্যথা পেলে, হতাশায় বা কষ্টে আমরা যে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিই, সেটা কিন্তু একদম এমনিই না। বরং লম্বা শ্বাস নেওয়া এবং কিছুক্ষণ ধরে রেখে আবার সেটাকে ছেড়ে দিয়ে নতুন নিঃশ্বাস নেওয়া- এই প্রক্রিয়া ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শুধু তা-ই না, এই সময় নির্দিষ্ট কোনো শব্দ আপনার জন্য ব্যথা কমিয়ে আনার কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে খুব সহজেই।
২) শরীরকে ছেড়ে দেওয়া
মানসিক বা শারীরিক ব্যথায় আমরা খুব তটস্থ হয়ে যাই। ঠিক একই ঘটনা ঘটে শরীরের বেলাতেও। অটো রেসপন্স হিসেবে শরীর এ সময় অনেক বেশি সতর্ক হয়ে যায়, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে। এমনটা ঘটলে নিজেকে সবকিছু থেকে একটু আলাদা করে চোখ বন্ধ করে ফেলুন। এবার লম্বা নিঃশ্বাস নিন, আর একেকবার নিঃশ্বাসের মাঝে ‘শান্তি’ শব্দটি বলুন। এভাবে ১০-২০ মিনিট কাটিয়ে চোখ খুলুন, আর একইভাবে আরো মিনিট দুয়েক বসে থাকুন।
৩) কল্পনা করুন
ব্যথা পেলে চারপাশের যেকোনো ব্যাপার আমাদের চোখে আরো বেশি বেশি পড়তে থাকে। আমাদের যা দেখার কথা সেটা দেখতেই ভুলে যাই আমরা। এমন সময়েও লক্ষ্যকে ঠিক রাখতে আর মনকে শান্ত করতে চোখ বন্ধ করুন। কল্পনা করুন আপনার খুব শান্তিময় এক জায়গার কথা, যেখানে গেলে আপনার মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। লম্বা নিঃশ্বাসের সাথে সাথে কল্পনার শান্তির জগতে কিছু সময় ঘুরে আসার এই প্রক্রিয়া আপনাকে অনেকটাই শান্ত করে দেবে।
৪) মনোযোগ সরিয়ে রাখুন
কথায় আছে, নতুন ব্যথা পুরনো ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। কথাটা ভুল নয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যথা বাদ দিয়ে অন্য কোনো কাজে মন দিন। হতে পারে আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন, গান গাইতে বা লিখতে ভালোবাসেন। আপনার পছন্দের কাজ যেটাই হোক না কেন, সেদিকেই মনোযোগ সরিয়ে ফেলুন। ব্যথার বদলে আনন্দ দিয়ে নিজের ব্যথাকে সরিয়ে রাখুন।
৫) যোগব্যায়াম আর তাই চি করুন
নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে মেডিটেশন, শারীরিক কসরত, পেশী তৈরি- সবকিছুই আছে যোগব্যায়াম আর তাই চি-তে। শুরুতেই যদি ক্লাব বা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে দিয়ে না যেতে চান, তাহলে ইউটিউবে ভিডিও দেখে এই অনুশীলনগুলো করতে থাকুন। আপনার ওষুধের খরচ অনেকটাই বেঁচে যাবে।
আর সবচেয়ে বড় যে কাজটি আপনাকে খুব সহজেই ব্যথা ভুলিয়ে দিতে পারে সেটি হলো ইতিবাচক চিন্তা করা। চিন্তার মধ্যে খারাপ কিছু না আনার অনুশীলন করুন। আজ হচ্ছে না, কাল হচ্ছে না, পরশু নিশ্চয়ই সেটা সম্ভব হবে। নিজের মনকে অন্যভাবে চিন্তা করার জন্য প্রশিক্ষণ দিন। আপনার হাতে ব্যথা হচ্ছে? নিজের সব মনোযোগ পায়ের দিকে রাখুন। কারণ, পৃথিবীতে ক্রনিক সব ব্যথা মানসিক শক্তি দিয়ে কমিয়ে আনতে পেরেছেন অনেকেই। তাই আপনার পক্ষেও সেটা অবশ্যই সম্ভব। শুরুটা তাহলে আজ থেকেই হয়ে যাক!