Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোনটি অধিক কার্যকর- শাস্তি নাকি পুরস্কার?

শিশুর বেড়ে ওঠা পুরোপুরি নির্ভর করে তার অভিভাবক তাকে কীভাবে পরিচালনা করছে তার ওপর। শিশু তার প্রাথমিক শিক্ষা পায় পরিবার থেকেই। তবে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিবারের সদস্যদের ভুল পরিচালনায় সন্তানও ভুল পথে পরিচালিত হয়, যা পরিবারের পাশাপাশি সমাজের জন্যও অকল্যাণকর। শিশুর মানসিক বিকাশ নির্ভর করে তার পরিবার তাকে নিত্যনতুন জিনিসের সাথে কীভাবে পরিচয় করাচ্ছে তার উপর।

আমাদের দেশের বাচ্চারা কোনো ভুল করলে তাদের বাবা-মা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন। গায়ে হাত তোলা তো অনেকের জন্য খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু বেশিরভাগই তারা এটা বোঝেন না যে, গায়ে হাত তোলা শিশুদের মানসিক বিকাশে কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের দেশে বাবা-মায়েরা শিশুদের উপর কেন হাত তোলেন বা তাদের নানা সময় কঠিন শাস্তি দেন, তা একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেরাও ছোটবেলায় এমন সব শাস্তি পেয়েই এসেছেন। তাই তাদের মনেও এই ধারণা তৈরি হয়ে আছে যে, শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একমাত্র উপায় হলো তাকে ভুলের জন্য শাস্তি দেয়া। আবার অনেক সময় দেখা যায়, শিশু পড়া বাদ দিয়ে যদি সৃজনশীল কিছু করে, যেমন কবিতা লেখা, ছবি আঁকা; তবে এগুলোকে পরিবার ভালো চোখে দেখে না। তারা মনে করে, কেবল পড়ালেখা করাই জীবনের সবকিছু। তখন সেই শিশুর কপালে জোটে তিরস্কার এবং শাস্তি।

অযথা শাস্তির ফলে শিশুদের মনে তৈরি হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া; image source: CCIG

কিন্তু এই শাস্তির ব্যাপারটি শিশুর মনে যে প্রভাব ফেলে, তার মধ্যে প্রধান হলো, ক্রমাগত নিজের প্রকৃত দোষ বা সেই ক্ষেত্রে করণীয় জানতে না পেরে কেবল শাস্তি পেয়ে যাওয়া। এতে শিশু তার পরিবারের প্রতি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে যায়। সে তার সৃজনশীলতার মূল্যায়ন না পাওয়ায় পরিবারের উপর বিরক্ত হয়ে সব কার্যক্রম লুকাতে থাকে। পরিবারের কাছে তার সব কথা তখন খুলে বলতে চায় না। সে ভয় পায়, এটা বললে হয়তো তাকে ধমক শুনতে হবে বা কোনো শাস্তি পেতে হবে। উপরন্তু সে ভাবতে থাকে, শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য কীভাবে পরিবার থেকে লুকিয়ে থাকা যায়। নিশ্চিতভাবেই এটি শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়।

শাস্তির বিপরীত হলো পুরস্কার দেয়া। বাচ্চাদের কি তাহলে তাদের বিভিন্ন কাজের জন্য পুরস্কৃত করে উৎসাহ দেবেন? এখানে একটি ব্যাপার আছে। পুরস্কৃত করে কাজে উৎসাহ দেয়া যায়। কিন্তু কতটুকু পুরস্কৃত করবেন তাকে? আর কতবারই বা করবেন? অনেক সময় শিশুদের পুরস্কার দেয়াকে শাস্তির যমজ রূপ হিসেবে দেখা হয়। আপনি একটি শিশুকে কোনো কাজের জন্য পুরস্কৃত করার পর যদি পরবর্তীতে সেই একই কাজের জন্য সে পুরস্কৃত না হয়, তখন তার কাছে এটি নেতিবাচক একটি মনোভাব তৈরি করে। আবার কোনো কিছু চাইলেই দিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা যদি হয়, তাহলে তো শিশু মনে করবে, চাইলেই সব পাওয়া যায়। নিজে থেকে কিছু করে দেখানোর আর চিন্তা করবে না। এটি তার সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে দেবে।

পুরস্কার দেয়া ভালো, তবে তা হতে হবে সীমিত পর্যায়ে; image source: Lynda.com

অনেকেই বলতে পারেন, পুরস্কৃত করলে আবার সৃজনশীলতাকে নিরুৎসাহ করা হয় কীভাবে। এটি তো তার সৃজনশীলতার পুরস্কার। দুটি পরীক্ষার কথা তুলে ধরছি। তাহলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

নিউ ইয়র্কের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানে ক্লিনিক্যাল এবং সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার জন্য কয়েকটি শিশুকে দুই দলে ভাগ করা হয়। এর মাঝে একটি দলকে বলা হয়, তারা যত বেশি ছবি আঁকবে, তাদের তত বেশি পুরস্কৃত করা হবে। দিন শেষে দেখা গেলো, যাদের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছিলো তাদের চেয়ে যাদের পুরস্কারের কথা বলা হয়নি তারা অনেক বেশি ছবি আঁকতে পেরেছে।

এবারের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বেথ এ. হেনেসি। তিনি দুটি দলকে একটি ধাঁধা সমাধান করতে দেন। তাদেরকে কিছু পিন, একটি মোমবাতি এবং এক বক্স ম্যাচ দিয়ে বলা হয় মোমবাতিটিকে দেয়ালে আটকাতে হবে। এই ধাঁধার জন্য নিজেদের কিছু সৃজনশীলতা দেখানোর দরকার হতো। তবে এক গ্রুপকে বলা হয়েছিলো যদি তারা ধাঁধাটির সমাধান বের করতে পারে, তাহলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু দেখা গেলো, যাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি, তারাই আগে সমাধান বের করে ফেলেছিলো।

শিশুদের সৃজনশীলতাকে দাম দিন; image source: Study Breaks Magazine

দেখা যাচ্ছে, যদি সৃজনশীলতার সাথে কোনো প্রকার শর্ত জুড়ে থাকে, তাহলে তা খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। তাহলে শাস্তি দিলেও সমস্যা, আবার পুরস্কার দিলেও সমস্যা। শিশুদের মানুষ করে তোলার জন্য সমাধান কী তাহলে? আপনি যদি একটু খেয়াল করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে, শিশুরা আসলে আপনার কাছে কিছু ভালো সময়, ভালো মন্তব্য এবং সামান্য ভালোবাসা আশা করে। এগুলোর জন্য আসলে কোনো শর্ত লাগে না। আপনি যদি তাদের ভালোভাবে একটু বুঝিয়ে বলেন, তাহলেই তারা আপনার কথা শুনবে। আসলে আপনার কথা শোনার ব্যাপারে তাদের ব্যাপক আগ্রহ আছে। আপনাকে শুধু বুঝতে হবে তারা আসলে কী শুনতে চায়।

শিশুরা কী বলতে চায় তা শুনুন; image source: Understood.org

অনেক সময় ছোট ভাই-বোন কিংবা বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া অথবা কথা কাটাকাটি হয়। তখন তাদের মাঝে একটি সমঝোতা এনে দেয়ার জন্য দরকার বড়দের। বাবা-মা এসে যদি “তুই ওকে কেন মারলি? তার সাথে কেন ঝগড়া করলি?” এসব বলে বাচ্চাদের ধমকাধমকি করেন, তাহলে বাচ্চারা একে অপরকে দোষারোপ করেই যাবে। তাদের মাঝে সমঝোতা তো হবেই না, বরং তাদের মাঝে আরও দূরত্ব সৃষ্টি হবে। এখানে বড়দের উচিত তাদের মাঝে একটি সুন্দর সমঝোতার ব্যবস্থা করে দেয়া। তারা কী বলতে চায় তা শুনে তাদেরকে ভালো পরামর্শ দেয়া।

শিশুদের মাঝে ঝগড়া লাগলে তাদের মাঝে সমঝোতা তৈরিতে সহায়তা করুন; image source: EmpowHER

বাচ্চা যখন কোনো ভুল করে বসে, উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক সে একটি গ্লাস ভেঙে ফেললো, তখন তাকে গ্লাস কেন ভাঙল তা নিয়ে বকাঝকা করাটা অযৌক্তিক। প্রাপ্তবয়স্ক হোক অথবা শিশু, কেউ তো আর নিজের খুশিতে গ্লাস ভাঙতে আসে না। হয়তো কোনো বেখেয়ালেই হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে। এখানে আপনার উচিৎ পরবর্তীতে যাতে এরকম ভুল না হয় সে ব্যাপারে তাকে পরামর্শ দেয়া। আপনি যদি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন, তাহলে তারা অবশ্যই আপনার কথা শুনবে। তারা সুন্দর কথা শুনতেই পছন্দ করে।

পরিবারে কোনো কাজে মতামত বা পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কথাকেও গুরুত্ব দিন। তারাও যে পরিবারের একটি অংশ তা তাদের বুঝে উঠতে দিন। মানুষ কিন্তু জন্মগতভাবে অলস হয় না। আর বাচ্চারা তো অবশ্যই না। বাচ্চারা সবসময়ই চায় কোনো না কোনো একটি কাজ করে দেখাতে। তারা চায় তাদেরকে যেন দলের একটি অংশ ভাবা হয়। এ কারণে বাসায় প্রতিদিনের ছোটখাট কাজ করার জন্য বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়া উচিত। এতে তারা ধীরে ধীরে বড় কোনো কাজের দায়িত্ব নেয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার সুযোগ পায়।

পারিবারিক সিদ্ধান্তে শিশুদের কথার গুরুত্ব দিন; image source: License to Parent with Trace Embry

তাই পরিবারের যেকোনো কাজে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের কথারও গুরুত্ব দিন। তাদের যেকোনো ভুল শুধরে দিয়ে এর একটি সুন্দর সমাধান তাদের বুঝিয়ে দিন। তারা যাতে নিজেদেরকে বোঝা মনে না করে সেদিকে বাড়তি নজর রাখুন।

This is a Bengali article desciribing about what is good for childs growth. 

Featured photo: Hindustan Times

References are hyperlinked. 

Related Articles