Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেন সবার জীবনে অন্তত একটি শখ থাকা আবশ্যক?

স্কুলজীবনের ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে  খুবই পরিচিত একটি প্যারাগ্রাফ ছিল ‘মাই হবি’। এছাড়া বাংলাতেও ‘প্রিয় শখ’ সম্পর্কে রচনা লিখতে হতো। পরীক্ষায় ঠিকভাবে লিখে আসার উদ্দেশ্যে আমরা সকলেই মুখস্থ করেছি সেসব প্যারাগ্রাফ বা রচনা। একেকজন সেখানে একেক রকম শখের কথা বর্ণনা দিতাম। আমাদের কারো প্রিয় শখ ছিল বই পড়া, কারো বাগান করা, কারো বা আবার ডাকটিকিট সংগ্রহ করা। এমন হরেক রকম শখের বিবরণে ভরে উঠত আমাদের পরীক্ষার খাতা। 

কিন্তু ছেলেবেলায় পরীক্ষার খাতায় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াকে জীবনের উদ্দেশ্য লেখা অনেকেরই যেমন শেষ পর্যন্ত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওঠা হয় না, তেমনই পরীক্ষার খাতায় লেখা শখের বেশিরভাগই আমাদের বাস্তব জীবনের প্রকৃত শখে পরিণত হয় না। তাছাড়া শৈশব, কৈশোর এমনকি তারুণ্যেও অনেকে নানা শখের চর্চা চালিয়ে গেলেও, কর্মজীবনে প্রবেশের পর অধিকাংশের জীবন থেকেই হারিয়ে যায় শখগুলো। ন’টা-পাঁচটা কাজের চাপেই জীবন যেখানে ওষ্ঠাগত, সেখানে শখের পেছনে সময় দেয়াকে খানিকটা বিলাসিতাই যেন মনে হয়।

ন’টা-পাঁচটা চাকরির পর শখের কাজ করাকে অনেকের কাছেই বিলাসিতা মনে হয়; Image Source: The Moment Magazine

কেন শখের প্রতি কর্মজীবী মানুষের এত অনীহা? এর প্রধান কারণ, শৌখিন কাজ অর্থকরী হয় না, অর্থাৎ সেখান থেকে কোনো নগদ নারায়ণের সম্ভাবনা থাকে না। যদি একটি কাজ করে আপনার পকেটই না ভরল, তাহলে কী লাভ সে কাজ করে – এমনটিই অভিমত অনেকের। তাছাড়া আমাদের সমাজেও শখের কাজকে খুব একটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। কেউ স্রেফ শখের বশে একটি কাজ করছে, তা যেন কারোই সহ্য হয় না। বারবার তাকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হয়, কেন এই কাজে বৃথা সময় নষ্ট করছ, কেন এই সময়টা অন্য কিছুতে কাজে লাগাচ্ছ না? মোদ্দাকথা হলো, কর্মজীবনে প্রবেশের পর অর্থোপার্জনটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। পেট ও পকেটের খিদের কাছে মনের খিদেটা গৌণ হয়ে যায়।

ফলে বর্তমান সময়ে কর্মজীবী মানুষদের শৌখিন কর্মকাণ্ডের পরিধি ক্রমশই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কাজ করে বাসায় ফেরা ও গৃহস্থালি দরকারি কাজগুলো সারার পর, টিভিতে অর্থহীন কিছু অনুষ্ঠান দেখা, মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করে যাওয়া, কিংবা গভীর রাত পর্যন্ত মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে কারো সাথে চুটিয়ে চ্যাটিং করা, এটুকুতেই সীমাবদ্ধ তাদের দৈনন্দিন কার্যাবলী। এর পাশাপাশি শখ বলতে মাঝেমধ্যে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের ‘ট্রিট’ দেয়া, খুব হাইপ ওঠা কোনো সিনেমা দেখতে দলবেঁধে হলে যাওয়া, অথবা মাঝেমধ্যে টুকটাক শপিং করা। এর বাইরে আর কোনো শৌখিন কাজের কথা যেন কর্মজীবী মানুষরা ভাবতেই পারে না

এখন প্রশ্ন হলো, এক সময় যে শখের দাম আশি তোলা বলে গণ্য হতো, সেই শখ কি আজ এতটাই সস্তা ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে? কর্মজীবনে প্রবেশের পর মানুষের কি সত্যিই আর কোনো শৌখিন কাজ করার দরকার নেই?

না। শখ কখনোই সস্তা হতে পারে না। মানুষের জীবনে শখের প্রয়োজনীয়তাও কখনো ফুরায় না। বরং প্রতিটি মানুষের জীবনেই অন্তত একটি শখ থাকা খুবই প্রয়োজন। কেন এ কথা বলছি, সে বিষয়ে যুক্তিগুলোই এবার তুলে ধরব একে একে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনেই অন্তত একটি শখ থাকা আবশ্যক; Image Source: BC Jobs

কর্মক্ষেত্রের পারফরম্যান্সে উন্নয়ন ঘটাতে

কর্মজীবনে উন্নতি করার জন্যই আপনার প্রয়োজন কর্মজীবনের বাইরেও আলাদা একটি জীবনের। হ্যাঁ, কথাটা শুনতে অদ্ভুত শোনাতে পারে। কিন্তু জার্নাল অফ অকুপেশনাল অ্যান্ড অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজি ৪০০ জন চাকরিজীবীর উপর গবেষণা চালিয়ে এমন ফলাফলই বের করেছে। কর্মজীবনের বাইরে কারা সৃজনশীল শখের সাথে যুক্ত, আর কারা নয়, এমন প্রশ্নের ভিত্তিতে তারা চাকরিজীবীদের আলাদা দু’টি দলে ভাগ করেছে। এবং দেখা গেছে, সৃজনশীল শখের অধিকারী চাকরিজীবীরাই অফিসের বিভিন্ন প্রজেক্টে ভালো কাজ দেখাচ্ছে, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বও অধিক সফলতার সাথে সম্পন্ন করছে। তাছাড়া এ ধরনের চাকরিজীবীরা নিজেদের কাজের ব্যাপারেও বেশি সন্তুষ্ট থাকে, এবং কাজের ব্যাপারে তাদের মনে অপেক্ষাকৃত কম অভিযোগ থাকে।

শারীরিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে

যদি কারো শখ হয় বডি বিল্ডিং বা শরীরচর্চা, তাহলে তার যে স্বাস্থ্যগত উন্নতি হবে, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু শখের কাজটি যদি শারীরবৃত্তিক নাও হয়, তারপরও শারীরিক উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ১,৪০০ মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, অবসর সময়ে উপভোগ্য কাজের সাথে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের অধিকাংশেরই রক্তচাপ, কর্টিসল, কোমরের পরিধি এবং শরীরের উচ্চতা ও ওজনের অনুপাত সবকিছুই সন্তোষজনক ছিল। সুতরাং সারাদিন কাজ করার পর কেউ যদি বাসায় এসে বই পড়া, সিনেমা দেখা বা গিটার বাজানোর মতো বিনা নড়াচড়ার কাজও করে, তবুও তাদের শরীর ভালো থাকবে, যদি কাজটি করে সে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে।

মানসিক চাপ ও অবসাদ কমাতে

উপভোগ্য কোনো শৌখিন কাজের সাথে যুক্ত থাকলে মানসিক চাপ, অবসাদ ও উদ্বেগ হ্রাস পায়, এমনটিই উঠে এসেছে ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়ার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ জাওয়াজকির এক গবেষণায়। এ গবেষণায় দেখা যায়, অবসর সময়ে কেউ যদি নিজের ভালোলাগার কোনো কাজ করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তার মানসিক উদ্বেগ কমে যায়, এবং সে বিভিন্ন মানসিক উপকারিতা লাভ করে। যেমন: মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, মনে শান্তি আসে, নেতিবাচক চিন্তা দূর হয়। এবং এই সুফলগুলো স্থায়ীও হয় বেশ অনেকটা সময়। ভালোলাগার কাজটি করার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর, এমনকি কারো কারো ক্ষেত্র কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও, তার মনে ভালোলাগার অনুভূতি বিরাজ করে।

শখের কাজে আসতে পারে মানসিক প্রশান্তি; Image Source: Getty Images

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে

মানুষের কাজ দু’ ধরনের হয়ে থাকে। একধরনের কাজ সে নিজের পছন্দ ও খুশিতে করে থাকে, আর একধরনের কাজ সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে করে। কর্মক্ষেত্রে করা কাজগুলো প্রধানত দ্বিতীয় শ্রেণির হয়ে থাকে। কেননা আজকের দিনে নিজের নেশাকেই পেশায় রূপান্তরের সুযোগ খুব কম মানুষই পায়। আর যদি কেউ পেয়েও থাকে, কর্তব্যবোধের তাড়নায় একসময় সে নিজের পছন্দের কাজটি করতে গিয়েও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এবং এই ক্লান্তির চেয়েও আরো বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে আত্মবিশ্বাসের অভাব।

ব্যক্তি যখন নিজেকে নয়, অন্যকে খুশি করতে কোনো কাজ করে, তখন সে মাঝেমধ্যে ব্যর্থ হতেই পারে, এবং ব্যর্থতার পাল্লা ভারি হয়ে গেলে সে নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। নিজের উপর তার সন্দেহ তৈরি হয়, নিজেকে তুচ্ছ ও অক্ষম বলে মনে হয়। এমন পরিস্থিতিতে তার আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পারে তার শখের কাজ। যেহেতু শখের কাজে কোনো বাড়তি চাপ থাকে না, কেবল নিজের আনন্দেই করা যায়, তাই নির্ভার হয়ে সে কাজটি করতে পারে এবং কাঙ্ক্ষিত সফলতাও পেয়ে যায়। শখের কাজের এই সফলতাই পারে তাকে এমন উপলব্ধি দিতে যে- সে আসলে অক্ষম নয়, চাইলে সে অবশ্যই যেকোনো কাজ করতে পারে। এই ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস সে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে এক সময় সেখানেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত হতে

কর্মক্ষেত্রে বেশি বেশি উৎসাহ দেখানো, নিজ উদ্যোগে নানা কাজ করা ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ এতে করে বসের নেক নজরে পড়া যায়, পদোন্নতির সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এত বেশি আভ্যন্তরীণ রাজনীতি চলতে থাকে যে, শুধু পদোন্নতির জন্য নিজ কাজে বেশি উদ্যম দেখানোটা কষ্টকর। কিন্তু যাদের বিভিন্ন শখ রয়েছে, তারা ওই শৌখিন কাজের স্বার্থেই কর্মক্ষেত্রে ভালো করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। যেমন: কারো হয়তো ভ্রমণের শখ, এবং সেজন্য তার মোটা অঙ্কের টাকা দরকার।

তার এখন যে বেতন, তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে ভ্রমণের জন্য সঞ্চয় করা কঠিন। ফলে তার আগে প্রয়োজন বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি, আর সেজন্য দরকার কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। আর পদোন্নতি পেতে প্রয়োজন নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করা। তাই ভ্রমণের তীব্র আকাঙ্ক্ষাই তার মনে প্রণোদনা যোগাবে সবকিছু সহ্য করে হলেও কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে। অর্থাৎ, কর্মক্ষেত্রে ভালো করার জন্য প্রয়োজন বাহ্যিক কোনো স্বপ্ন, এবং সেই স্বপ্নের যোগান দিতে পারে একটি শখই। 

শখের কাজে উপকার আসতে পারে কর্মক্ষেত্রেও; Image Source: Margolis

ভালো চাকরি পেতে

হ্যাঁ, কর্মক্ষেত্রে উন্নতি তো রয়েছেই, এমনকি ভালো কোনো কর্মক্ষেত্র অর্জনেও সাহায্য করতে পারে একটি শখ। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গের উদাহরণই ধরা যাক। তিনি মনে করেন, একটি শখ থেকেই বোঝা যায় কোনো ব্যক্তি কেমন মানসিকতার অধিকারী, এবং নিজের কাজে সে কতটা নিবেদিত হতে পারবে। তাই ফেসবুকে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, আপনার শখ কী? যাদের শখ ও তার নেপথ্যের বিষয়বস্তু ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিদের সন্তুষ্ট করতে পারে, তারা চাকরি লাভের লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে যায়। এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে বিশ্বের আরো বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানিতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও। তাহলে বুঝতেই পারছেন, ভালো কোনো শখের অধিকারী হওয়াও একটি মস্ত বড় যোগ্যতা।

কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে

কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন ও সেখানে ভালো পারফরম্যান্স দেখানোর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতেও সাহায্য করে একটি শখ। ন’টা-পাঁচটা চাকরি করে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। আবার পরদিন ওই একই কাজে ফিরে যেতেও মনের উপর পড়ে যথেষ্ট চাপ। আজ হয়তো আপনি সারাদিন অফিসে ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করে খুবই বিরক্ত হয়ে আছেন, এবং সেই বিরক্তি বাসায় ফেরার পরও আপনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

যখন আপনার মনে পড়বে যে আগামীকালও অফিসে গিয়ে ঠিক এমনই কোনো বিরক্তিকর কাজই আপনাকে করতে হবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন, নিজের কাজকে ঘৃণা করতে শুরু করবেন। কিন্তু এমন কোনো পরিস্থিতির আগমন ঘটবে না, যদি বাসায় ফিরে অবসর সময়টা আপনি কোনো উপভোগ্য কাজ করে কাটান। নিজের শখের কাজটি আপনি অবশ্যই উপভোগ করবেন, এবং সেই কাজটি করতে গিয়ে আপনি সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। ফলে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে নয়, বরং প্রাণোচ্ছল হয়েই আপনি পরবর্তী দিন কাজে ফিরতে পারবেন।

চরিত্র ও ব্যক্তিত্বকে শাণিত করতে

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “All work and no play makes Jack a dull boy.” অর্থাৎ কেউ যদি সারাদিন শুধু কাজই করে যায়, একটুও খেলাধুলা (বা অন্য কোনো আনন্দদায়ক কাজ) না করে, তবে সে বিরক্তিকর হয়ে উঠবে। সে নিজে তো বিরক্ত হবেই, পাশাপাশি অন্যদের মনেও বিরক্তির উদ্রেক ঘটাবে। সুতরাং নিজে জীবনকে উপভোগ করতে, এবং অন্যদের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে একজন মানুষের প্রয়োজন কাজের পাশাপাশি অন্য কিছুও করা। সেই অন্য কিছুটি হলো তার শখের কোনো কাজ। এতে করে তার মাথা থেকে কাজের চিন্তা দূর হবে, এবং অন্য কোনো চিন্তার প্রবেশ ঘটবে।

যে ব্যক্তি সারাদিন শুধু কাজই করে, তার মনের মধ্যেও কাজের চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে, এবং তার কথাবার্তায়ও সেসব চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ফলে তার সাথে কথা বলে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কিন্তু সে যদি কাজের বাইরেও অন্য কোনো বিনোদনমূলক কাজে জড়িত থাকে, তাহলে তার চিন্তার জগত অবশ্যই বিস্তৃত হয়, তার চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব শাণিত হয়, এবং অন্যদের কাছেও তার সান্নিধ্য উপভোগ্য হয়।

শৌখিন ব্যক্তিদের সান্নিধ্য উপভোগ করে সবাই; Image Source: Hobby Help

সামাজিকীকরণ বৃদ্ধিতে

একই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে একটি সার্কেল বা গ্রুপ গড়ে তুলতে চায়, যেন তারা তাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে একে অন্যের সাথে কথা বলতে পারে, বিভিন্ন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির আদান-প্রদান করতে পারে। সশরীরে তো বটেই, পাশাপাশি বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে এ ধরনের সার্কেল বা গ্রুপের বিস্তার আরো বেড়েছে। যে মানুষটি বই পড়তে পছন্দ করে, সে চাইলেই এমন কোনো একটি গ্রুপের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের বই-প্রেমীদের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। একই কথা প্রযোজ্য যেকোনো শখের ক্ষেত্রেই। আর অভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ থাকার ফলে সে সহজেই ওই গ্রুপের মানুষদের সাথে অন্তরঙ্গতা গড়ে তুলতে পারে, সামাজিকীকরণ বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং, নিজের কর্মজীবনের বাইরে কেউ যদি অন্য কোনো শখের অধিকারী হয়, তাহলে সে যত অন্তর্মুখী স্বভাবেরই হোক না কেন, বাস্তবে কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে সমমনা মানুষদের খুঁজে নিতে ও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।

নিজেকে জানতে

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে নিজেকে জানাটা আসলেই অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কর্মজীবনে প্রবেশের পর কাজের অফুরন্ত চাপ তো রয়েছেই, এছাড়া বিয়ে করে সংসার শুরুর পর সাংসারিক হাজারটা চিন্তাও মাথায় জেঁকে বসে। এই সকল চিন্তা ও কাজে ব্যস্ত থাকতে থাকতে মানুষ এক পর্যায়ে নিজের প্রকৃত স্বরূপকেই হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে করতে সে ভুলেই যায়, সে কে, কী তার উদ্দেশ্য। ফলে শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের স্বপ্নচারী মানুষগুলো যৌবন ও মধ্যবয়সে সময়ের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে হয়ে পড়ে আত্মবিস্মৃত।

জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে অবসর পাওয়া যায় বটে, কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে যায়। পেছন ফিরে তাকিয়ে উপলব্ধি করতে হয়, কালে কালে অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে, অথচ জীবনটা নিজের মতো করে উপভোগ করা হয়নি। এমন উপলব্ধির পর আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কিন্তু একজন মানুষ কর্ম ও সংসারজীবনে প্রবেশের পরও নিজের একক অস্তিত্বকে পুরোপুরি হারিয়ে না ফেলে, নিজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে ধরে রাখতে পারে, যদি তার কোনো একটি শখ থাকে, এবং প্রতিদিন অন্তত কিছু সময়ের জন্যও সেই শখের সুবাদে সে নিজেকে কিছুটা সময় দেয়।

শখের মাধ্যমেই সম্ভব ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে টিকিয়ে রাখা; Image Source: Getty Images

শেষ কথা

শখের কাজকে কখনোই তুচ্ছজ্ঞান করা উচিত নয়। শখের বশে একজন মানুষ যে কাজ করে, সেটিই তার ব্যক্তি-মানসের পরিচায়ক হয়ে ওঠে। যে মানুষের জীবনে নিজ পেশা ব্যতীত অন্য কোনো শখ নেই, সে আসলে নিজের জীবনকে সত্যিকার অর্থে উপভোগই করতে পারে না। তাই প্রত্যেক মানুষেরই উচিত জীবনে অন্তত একটি হলেও শখের চর্চা করা। তবে কিছু শখ অবশ্যই অন্য শখের চেয়ে অপেক্ষাকৃত শ্রেয়। আপনার জীবনে যদি এখনো কোনো শখ না থাকে, এবং আপনি সন্ধানে থাকেন এমন কোনো শখের, যা আপনার জীবনকে উপভোগ্য করার পাশাপাশি উন্নতও করবে, তাহলে পড়তে পারেন রোর বাংলায় প্রকাশিত এই লেখাটি।

জীবনযাত্রার চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about why every man must have a hobby. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © MakeUseOf

Related Articles