দুটি ঘর।
একটিতে ঢুকেই আপনি দেখতে পেলেন জামাকাপড় সব এদিক-ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মোবাইল, ল্যাপটপের চার্জারগুলোও সব একটির সাথে আরেকটি পেঁচিয়ে গেছে। বিছানার চাদর ঠিক নেই, বালিশের কভারও খুলে গেছে। পড়ার টেবিলে বইগুলোও ওলটপালট হয়ে আছে। মেঝেতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে ধূলা-ময়লা, চুলসহ বিভিন্ন আবর্জনা।
অন্য ঘরটি একেবারেই পরিপাটি। জামাকাপড় সব ওয়্যারড্রোবে ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখা। পড়ার টেবিলে বই-খাতা তাকে তাকে সাজানো। বিছানার চাদর টানটান হয়ে আছে। বালিশও সুনিপুণভাবে রাখা ঠিক সেখানে, যেখানে তার থাকার কথা। মেঝেতেও কোনো ময়লার ছাপ নেই।
এখন যদি আপনাকে বলা হয়, ঘর দুটির একটি হলো কোনো মেয়ের, অপরটি কোনো ছেলের, নিঃসন্দেহে আপনি ধরে নেবেন, প্রথম ঘরটি কোনো ছেলের, আর দ্বিতীয়টি কোনো মেয়ের। কেননা এটি দেখেই আপনি অভ্যস্ত যে ছেলেদের ঘর নোংরা-অগোছালো, আর মেয়েদের ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
আর তা হবে না-ই বা কেন! পরিসংখ্যান তো বলছেই, কোনো একটি সাধারণ দিনে একজন নারী তার ঘরদোর পরিষ্কারে যে সময় ব্যয় করে, একজন পুরুষ ব্যয় করে তার তিন ভাগের এক ভাগ সময়।
কেন এমনটি হয়? আমরা কি তবে ধরে নিতে পারি যে জন্মগতভাবেই নারী-পুরুষের ভেতর এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিহিত থাকে? নারীরা সবকিছু নিয়ে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে, আর পুরুষদের এসব ‘ছোটখাট’ অসঙ্গতি চোখেই পড়ে না?
পুরুষদের অগোছালো স্বভাবকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ইংরেজিতে একটি পরিভাষাও রয়েছে, ‘ডার্ট ব্লাইন্ড’। অর্থাৎ ধূলা-ময়লা কিংবা অগোছালো কোনোকিছু চোখে পড়ে না যাদের।
কিন্তু আসলেই কি তা-ই? বিজ্ঞান কিন্তু তা বলছে না। কেননা গবেষণার মাধ্যমেই প্রমাণ হয়ে গেছে, কোনো জিনিস বা জায়গার অপরিচ্ছন্নতা পুরুষদের ঠিক ততটাই চোখে পড়ে, যতটা পড়ে নারীদের। সুতরাং জিনগত কারণে পুরুষরা এগুলোতে কম খেয়াল দেয়, সেই অজুহাত দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। বরং খুঁজতে হবে অন্য এমন কোনো কারণ, যেজন্য অপরিচ্ছন্নতা দেখা সত্ত্বেও তা দূরীকরণে খুব একটা উদ্যোগী হয় না পুরুষরা।
সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারার সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক সারাহ থিবো ও তার দল। তারা জানার চেষ্টা করেছেন, কেন নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি অগোছালো-অপরিচ্ছন্ন হয়।
ঘরের কাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য
এক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো ঘরের কাজে বৈষম্য। বর্তমান সময়ে নারীরা শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, সকল জায়গায় যতই উন্নতি করুক না কেন, ঘরের কাজে আজও তাদেরকে পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়।
কেউ যেন না ভাবেন, এই বিষয়টি শুধু তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বিদ্যমান। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সর্বাধুনিক দেশেও দেখা যায় অভিন্ন চিত্র। সেখানে একজন নারী দৈনিক গড়ে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় ব্যয় করে রান্না, ঘর ঝাড়পোঁছ করা এবং কাপড় ধোয়ায়। এবং তাদের এই সময়ের এক-তৃতীয়াংশ খরচ হয় কেবল ঘর ঝাড়পোঁছে। অপরদিকে পুরুষরা মাত্র আধাঘণ্টায় সব কাজ সেরে ফেলে, যার মধ্যে ১০ মিনিট তারা ব্যয় করে ঘরের জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ও গোছানোর কাজে।
নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা, পেশা, দৈনিক ঘরের বাইরে কাজ প্রভৃতি কোনোকিছুর ফলেই হ্রাস পায় না ঘরের কাজে নারী-পুরুষের এই বৈষম্য। এমনকি সুইডেনের মতো দেশেও, যেখানে সরকারী নীতিমালাই রয়েছে লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের নিমিত্তে, সেখানেও নারীদেরই ঘরের কাজ বেশি করতে হয়। বরং বলা যায়, সেখানকার নারীদের অন্যান্য দেশের নারীদের চেয়ে বেশিই কাজ করতে হয়। কারণ একে তো সুইডেনের অধিকাংশ নারীই ঘরের বাইরে ফুল-টাইম কাজ করে, পাশাপাশি বাসায় ফিরেও তারা পুরুষদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি কাজ করে।
বলাই বাহুল্য, নারীদের যত বেশি সময় ব্যয় করতে হয় ঘরের কাজে, ততই তাদের সুযোগ কমে যায় প্রধান অর্থকরী পেশায় সময় দানে। এছাড়া পুরুষদের চেয়ে তারা অবসর সময় কাটানো, বিশ্রাম নেয়া এবং পরিমিত ঘুমের সুযোগও পায় অনেক কম। ঘরের টুকটাক কাজ সেরে তাদের ঘুমাতে যেতে যেমন দেরি হয়, তেমনই ঘরের কাজ সারার লক্ষ্যে তাদের সকালেও আগে আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়। আবার সারাদিন বাদে বাসায় ফিরে পুরুষরা কিছুটা জিরিয়ে নেয়ার সুযোগ পেলেও, নারীদের লেগে পড়তে হয় ঘরের কোনো একটি কাজে।
পুরুষদেরও চোখে পড়ে সবই
সারাহ থিবো ও তার দল সোজিওলজিকাল মেথডস অ্যান্ড রিসার্চ জার্নালে যে গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছেন, সেখানে উল্লেখ করেছেন যে, সমীক্ষায় তারা বিভিন্ন বয়স, শ্রেণী ও প্রেক্ষাপটের মোট ৩২৭ জন পুরুষ ও ২৯৫ জন নারীকে কাজে লাগিয়েছেন।
গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের একটি ছোট লিভিং রুম ও রান্নাঘরের ছবি দেখিয়েছেন। র্যান্ডম অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কোনো অংশগ্রহণকারী দেখেছে একটি খুবই অগোছালো ঘরের ছবি, আবার কেউ কেউ দেখেছে একটি পরিপাটি ঘরের ছবি। এরপর তারা যা দেখেছে, সে অনুসারে ছবিগুলোকে ‘রেট’ করেছে। দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত নোংরা ও অগোছালো ঘরগুলোকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই কম নম্বর দিয়েছে, বলেছে ঘরগুলো জরুরি ভিত্তিতে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আবার পরিপাটি ঘরগুলোর ব্যাপারে নারী-পুরুষ সকল অংশগ্রহণকারীই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
অর্থাৎ গবেষণার এই প্রথম ধাপেই ভেঙে দেয়া হয়েছে সেই চিরাচরিত মিথ যে পুরুষরা ‘ডার্ট-ব্লাইন্ড’, তারা অপরিচ্ছন্নতাকে কম খেয়াল করে। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, নারীদের চোখে কোনো ঘরের অপরিচ্ছন্নতা যতটুকু চোখে পড়ে, পুরুষদের চোখেও ঠিক ততটুকুই পড়ে।
বিচারের ক্ষেত্রে ফের বৈষম্য
‘ডার্ট-ব্লাইন্ডনেস’ যদি দায়ী না হয়, তাহলে কেন নারীরা পুরুষদের চেয়ে ঘরের কাজ বেশি করে? কেন পুরুষরা অপেক্ষাকৃত বেশি অগোছালো হয়?
এ ব্যাপারে একটি প্রচলিত কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় নারী ও পুরুষদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক প্রত্যাশা। অর্থাৎ নারীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সমাজ আশা করে, পুরুষদের কাছ থেকে তা করে না।
এ ব্যাপারে মনোবৈজ্ঞানিক বই ‘Why Men Like Straight Lines and Women Like Polka Dots‘ এর রচয়িতা গ্লোরিয়া মসের রয়েছে নিজস্ব তত্ত্ব। তিনি বলেন,
“এই ভিন্নতাগুলো তৈরি হয়েছে মানব ইতিহাসের ৯৯ শতাংশ সময় ধরে। কারণ সেই সময়টায় মানুষ বাস করত শিকারী ও সংগ্রাহক হিসেবে। পুরুষরা ছিল শিকারী, তারা বিভিন্ন খাদ্যবস্তু শিকার করে আনত। আর নারীরা ছিল সংগ্রাহক, তারা প্রধানত ঘরে থাকত এবং পুরুষদের শিকার করে আনা খাদ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করত।”
অর্থাৎ মানবসভ্যতার শুরু থেকে সিংহভাগ সময় যেহেতু পুরুষরা ঘরের বাইরের কাজে বেশি সক্রিয় থেকেছে আর নারীরা ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজে, তাই স্বাভাবিকভাবেই ঘরের কাজে তাদের কাছ থেকে অধিক নিপুণতার প্রত্যাশা গড়ে উঠেছে। সেই প্রত্যাশা বাড়তে বাড়তে এখন এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে যে, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের যুগেও ঘরের কাজের বেলায় বৈষম্যটা রয়েই গেছে।
গবেষকরা চেয়েছেন এই ধারণাটি কতটুকু সত্য এবং আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক তা যাচাই করে দেখতে। তাই তারা গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের একেকটি ছবি দেখিয়েছেন, এবং কোনোটিকে জনের (পুরুষ) ঘর আবার কোনোটিকে জেনিফারের (নারী) ঘর হিসেবে অভিহিত করেছেন। এরপর ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর ভিত্তি করে তারা জন বা জেনিফারের চরিত্র মূল্যায়ন করতে বলেছেন। অর্থাৎ জন বা জেনিফার কতটা দায়িত্বশীল, পরিশ্রমী, অমনোযোগী, বিচারবোধসম্পন্ন এবং পছন্দ করার যোগ্য।
গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের আরো জিজ্ঞেস করেছেন যে, অপ্রত্যাশিত অতিথি যেমন দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বন্ধু বা বসের আগমনে জন বা জেনিফার তাদের ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দ্বারা কতটুকু নেতিবাচকভাবে বিবেচিত হবে, এবং বিভিন্ন বৈবাহিত অবস্থায় (বিবাহিত কিন্তু সন্তানহীন, সন্তানসহ বিবাহিত, অবিবাহিত) লিঙ্গভেদে তাদের উপর ঘরের কাজের দায়িত্ব কতটুকু বর্তাবে।
এই পর্যায়ে এসেই বিষয়গুলো আগ্রহোদ্দীপক হয়ে উঠতে শুরু করে। এতক্ষণ নিরপেক্ষভাবে ঘরের অবস্থা বিচার করলেও, ঘরটি কোনো নারীর নাকি পুরুষের তা শোনার পর অংশগ্রহণকারীরা ভিন্ন ভিন্নভাবে বিবেচনা করতে শুরু করে। দেখা যায়, তারা জেনিফারের কাছ থেকে জনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আশা করে। তাই অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন ঘরগুলো যদি জেনিফারের হয়, তাহলে সেটিকেও তাদের কাছে কিছুটা হলেও অগোছালো মনে হয়। কিন্তু ওই একই ঘর জনের শুনলে তাদের আর কোনো আপত্তি থাকে না।
‘পুরুষরা অলস’
অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছে, ঘর যদি অগোছালো থাকে, তাহলে অপ্রত্যাশিত অতিথিদের মনে জন বা জেনিফার উভয়ের ব্যাপারেই নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে। মজার ব্যাপার হলো, ঘর অগোছালো থাকায় জনের চরিত্রের ব্যাপারেই অতিথিরা বেশি নেতিবাচক হবে, কিন্তু তারপরও সেই চারিত্রিক নেতিবাচকতা দিয়ে তারা জনকে বিচার করবে না। কেননা এটি তো ধ্রুব সত্য যে “পুরুষরা অলস”।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, সমাজ জানে পুরুষরা অলস, তাই সেটি প্রমাণিত হলে পুরুষের ব্যাপারে তারা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে ঠিকই, কিন্তু সেই নেতিবাচকতা দ্বারা তারা ওই পুরুষকে সামগ্রিকভাবে বিচার করতে যাবে না। বরং মনে করা হবে, পুরুষরা তো সারাদিন ঘরের বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকছেই, তাহলে ঘরে ফিরে তাদের যদি আলস্যবোধ হয় সেটিকে মাফ করে দেয়া যেতেই পারে। কিন্তু নারীর বেলায় অবস্থা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। নারীর চরিত্রে যদি সামান্যতম নেতিবাচকতাও খুঁজে পাওয়া যায়, সেটির ভিত্তিতেই সমাজ ওই নারীকে বিচার করবে।
এমনটি বলার কারণ, সর্বশেষ বিভিন্ন বৈবাহিক অবস্থায় ঘরের কাজে জন নাকি জেনিফার, কার দায়িত্ব বেশি, এমন প্রশ্নের জবাবেও অংশগ্রহণকারীরা জেনিফারকেই বেছে নিয়েছে। জেনিফার একা নাকি বিবাহিত, বাচ্চা আছে নাকি নেই, সে বাইরে কাজ করে নাকি করে না, এগুলো কোনোটিই অংশগ্রহণকারীদের কাছে বিচার্য বলে মনে হয়নি। সকল পরিস্থিতিতেই তারা জেনিফারের উপরই ঘরের কাজের দায়িত্ব বেশি বলে মনে করেছে।
ফলাফল
গবেষণার এই পর্যায়ে এসে গবেষকরা প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তাদের জিজ্ঞাসা ছিল, কেন নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি অগোছালো হয়। উত্তর তারা পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু খানিকটা ভিন্নভাবে। তারা জানতে পেরেছে, কেন নারীরা বেশি গোছালো হয়। কারণ, নারীদের উপর সামাজিক প্রত্যাশা।
গবেষকরা মনে করছেন, সমাজই ঠিক করে দিয়েছে একজন নারীকে কতটুকু গোছালো হতে হবে। তাই কোনো নারী অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গোছালো হলেই যে মনে করতে হবে সে কাজটি নিজের আগ্রহ বা ভালোবাসা থেকে করছে, তেমনটি না-ও হতে পারে। বরং এমনও হতে পারে যে ছোটবেলা থেকেই তার উপর এই কাজগুলো চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তাকে ভয় দেখানো হয়েছে যে এই কাজগুলো না করলে তাকে লোকে খারাপ বলবে। আর তাই সে মন থেকে না চাইলেও বাধ্য হয়ে কাজগুলো করতে শুরু করেছে।
তবে হ্যাঁ, সময়ের সাথে সাথে অনেক কাজে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়, কাজটিকে ভালোবেসেও ফেলে। তাই এমনটিও মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়, যদি কোনো মেয়ে ছোটবেলা থেকে করা কাজটিকে এখন সত্যিই ভালোবেসে ফেলে, এবং বর্তমানে নিজের ভালোবাসা থেকেই সে কাজটি করে।
একই সূত্র ধরে পুরুষদের অগোছালো হওয়ার কারণটিকেও সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। নারীদের উপর যেভাবে পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, পুরুষদের উপর তা করা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই পুরুষরা জেনে এসেছে যে এই কাজগুলো মূলত মেয়েদের করার কথা, তাদের নয়। তাই তারা এ কাজগুলোর ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গেছে। বড় হওয়ার পর নিজেদের স্বার্থেও তারা কাজগুলো করতে তেমন একটা আগ্রহ পায় না। এমনকি প্রচণ্ড অপরিচ্ছন্ন, অগোছালো পরিবেশে বাস করা সত্ত্বেও অনেক পুরুষই মন থেকে সেই তাড়না পায় না, যা তাদেরকে ঘরের সবকিছু গোছগাছ করে রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে।
শেষ কথা
এই গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো এটিই প্রমাণ হওয়া যে, অপরিচ্ছন্নতা বা অগোছালো স্বভাবের হওয়া পুরুষদের কোনো জিনগত বৈশিষ্ট্য নয়। ছোটবেলা থেকে তারা সমাজে যা দেখে এসেছে, সেটিই তাদেরকে অগোছালো করে তুলেছে, ঘরের কাজের ব্যাপারে নারীদের প্রতি অতিনির্ভরশীল করে তুলেছে।
সুতরাং কোনো ছেলে শিশুকে যদি ছোটবেলা থেকেই ভিন্নভাবে মানুষ করা যায়, তার মনে এমন কোনো ধারণা বাসা বাঁধতে দেয়া না হয় যে ঘরের কাজগুলোর দায়িত্ব কেবল মেয়েদের, বরং তাকে উৎসাহিত করা যায় ঘরের কাজগুলো নিজেই করতে, তাহলে অবশ্যই ভবিষ্যতে সে-ও একজন পরিচ্ছন্ন ও গোছালো স্বভাবের ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে। তখন আর কেউ বলতে পারবে না যে সে কোনো নারীর চেয়ে অগোছালো।
লাইফস্টাইলের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/