‘নোটবুক’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি বাঁধাই করা সুন্দর মলাটের দাগকাটা পৃষ্ঠা সম্বলিত খাতা, যেখানে কাগজগুলো হবে বাহারি রঙের। কিন্তু আসলে নোটবুক কী? এক কথায় বলা যায়, যা ‘নোট’ রাখে তা-ই নোটবুক। অর্থাৎ আপনার প্রাত্যহিক কাজকর্মের হিসাব, যে কাজগুলো করবেন বলে ভাবছেন তার তালিকা অথবা টুকে রাখার মতো যেকোনো বিষয়ই যাতে লিপিবদ্ধ করা হয়, সেটাই নোটবুক। নোটবুক বিভিন্ন আকারের, রঙের বা মলাটের হতে পারে। বাহকের রুচি এবং পছন্দ অনুযায়ী নোটবুকে ভিন্নতা দেখা যায়।
প্রতিদিনই আমাদের কিছু না কিছু কাজ বাকি থেকে যায়। কিছু কাজের সময় পরিবর্তন করতে হয়। একই দিনে অনেকগুলো কাজও একসাথে পড়ে যায়। সবসময় সবকিছু মনে করে চলা একটু হলেও কষ্টসাধ্য। তাই নোটবুক হয়ে ওঠে অনেকেরই সঙ্গী।
নোটবুক ব্যবহারে বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমন-
- যেকোনো সময় মাথায় চলে আসা চিন্তাগুলো টুকে রাখা যায়।
- সারাদিনের পরিকল্পনা লিখে রেখে মাথা ঠাণ্ডা করে তাতে চোখ বুলানো যায়।
- কোনো কাজ ছুটে যাবার সম্ভাবনা কমে যায়।
- দিন শেষে পুরোটা সময়ের এক নজর প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়।
আপনাকে নোটবুক ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলবে এমন ব্যাপারগুলো নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।
১. হঠাৎ করে মাথায় আসা চিন্তা টুকে রাখা
রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দারুণ একটি গল্পের প্লট মাথায় চলে আসলো। কী করবেন তখন? মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে টাইপ করার মতো অবস্থা সবসময় না-ও থাকতে পারে। ভাবলেন, বাসায় গিয়েই লিখে ফেলবেন প্লটটি। বাসায় কোনো কারণে ফিরতে দেরি হলো। হতে পারে সারাদিন অনেক ধকল গেলো। এসবের ভিড়ে প্লটটি বেমালুম হারিয়ে গেলো! এমনটা আমাদের সাথে অহরহ হয়ে থাকে। সাথে একটি নোটবুক থাকলে কিছু শব্দ লিখে রাখা যায়। এতে পরবর্তীতে ঐ শব্দটি দেখলেও মনে পড়ে গল্পটির বিষয়বস্তু কী ছিলো। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, খুব অদ্ভুত সময়ে মাথায় ভালো ভালো ধারণাগুলো ঘুরপাক খায়। কারো সাথে মিটিংয়ে বসলে, কোথাও বেড়াতে গেলে, পথে-ঘাটে কারো বিশেষ কোনো কাজে, মুভি দেখতে গেলে ইত্যাদি। তাই যখনই চিন্তা আসুক, তাকে ধরে রাখুন নোটবুকের সাহায্যে।
২. সম্পূর্ণ চিন্তা একেবারে আসে না
কোনো কাজের জন্যই একবারে পুরোপুরি চিন্তা সেরে ফেলা যায় না। চিন্তাগুলো হঠাৎ করেই আসে এবং খণ্ড খণ্ড ভাবে আসে। এক খণ্ডের সাথে তাই আরেক খণ্ড জুড়ে দিতে নোটবুকের জুড়ি নেই।
৩. নোটবুক হলো সৃজনশীল বীজের জন্য উর্বর মাটি
বীজ যতই ভালো হোক, কৃষকও যতই পরিশ্রমী হোক; জমি যদি উর্বর না হয় তাহলে ফসল ভালো ফলবে না। সৃজনশীলতাও বলে কয়ে আসে না। ঠিক কখন কীভাবে তা কাজে লাগানো যাবে, সেটিও বলা যায় না। হয়তো আপনি কারো সাথে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজে দেখা করতে গেলেন এবং দেখলেন, সেখানে এমন আরো কিছু কাজের উৎস আছে যা হয়তো আপনার রুচির সাথে মিলে যায়। কিন্তু আপনার কাজগুলো হয়তো ছড়িয়ে আছে আপনার ব্যক্তিগত টেবিলে অথবা বালিশের কোণায়। এমন অবস্থায় মাথা ঠিকরে বেরিয়ে আসা প্রচুর উৎসাহকেও দমিয়ে দিতে হয় অসম্পূর্ণতার ভয়ে। তাই নোটবুক সাথে রাখুন। সবসময় আপনার সকল আইডিয়া নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।
৪. নোটবুক হতে পারে আপনার মুড নিয়ন্ত্রক
নোটবুকে ছক কেটে বানিয়ে ফেলতে পারেন একটি মুড ট্র্যাকার। এখানে কয়েকটি ছক এঁকে কিছু শব্দ যোগ করে দিন। যেমন- খুশি, রাগ, দুঃখ ইত্যাদি। তারপর প্রতিদিন আপনার মুড তথা মনের ভাব অনুযায়ী টিক দিন এবং সপ্তাহ শেষে দেখুন কেমন কেটেছে আপনার সময়গুলো।
৫. নোটবুক হোক অভ্যাস পরিবর্তনের কারণ
আপনি নোটবুকে টুকে রাখতে পারেন ভালো এবং মন্দ দু’রকম অভ্যাসই। প্রতিদিন যা যা করলেন, তা দাগ দিয়ে রাখুন। নির্দিষ্ট সময় শেষে নোটবুক দেখে নিজেকে যাচাই করুন নিজের মতো করে।
৬. ছবি আঁকা
যারা ছবি আঁকতে পছন্দ করেন তাদের যখনই কিছু আঁকতে ইচ্ছে করবে, একটি পেন্সিল নিয়ে চষে বেড়ান সঙ্গে থাকা নোটবুকটি। হারিয়ে যাবে না ছোটো বড় কোনো সৃষ্টিই!
৭. হিসাব রক্ষক
সব সময় সব দোকান থেকে আপনি রসিদ পাবেন না। বাসা গিয়ে মনে না-ও থাকতে পারে কোন জিনিসটির দাম কত ছিলো। নোটবুক হবে এক্ষেত্রে আপনার অতুলনীয় সহায়ক। আপাতত দাম টুকে রেখে পরবর্তীতে সময় করে হিসেব মিলিয়ে নিন।
৮. ফোন নম্বর এবং ঠিকানা টুকে রাখুন
মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাই আজকাল খুব সাধারণ একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় নম্বর মনে না থাকাই স্বাভাবিক। খুব সহজ ডিজিটগুলোও কেমন করে যেন ভুল হয়ে যায়। তাই সাথে রাখা নোটবুকে যদি টুকে রাখা থাকে ঠিকানা এবং ফোন নম্বর, তাহলে বিপদের মুহূর্তে নোটবুক হতে পারে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এছাড়াও পথে চলতে চোখে পড়া কোনো বিজ্ঞাপনে দেওয়া ফোন নম্বর টুকে রাখা বা ঠিকানা টুকে রাখার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন ব্যাগে রেখে দেওয়া নোটবুকটি।
৯. লিখে ফেলুন, নিশ্চিন্তে থাকুন
মগজকে বিশ্রাম দিতে নোটবুকের জুড়ি নেই। অনেক সময় খুব জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ অথবা মাথায় রাখা কিছু পয়েন্ট বারবার মনে করতে হয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে একটি নোটবুক। নোটবুকে টুকে রেখে আপনার মগজকে বিশ্রাম দিন অথবা নিজেকে নিশ্চিন্তে ব্যস্ত করে ফেলুন নতুন কোনো কাজে।
১০. হাতের লেখা চর্চা করুন
নিজের হাতের লেখা উন্নত করা বা নতুন কোনো হাতের লেখা রপ্ত করার জন্য নিতে পারেন নোটবুকের সাহায্য। সুন্দর দাগ টানা পৃষ্ঠাগুলো লেখার ধাঁচে কিছুটা পরিবর্তন আনতেই পারে!
নোটবুকে কী কী লিপিবদ্ধ করা যায়
আসলে নোটবুকে ছোট ছোট করে সব কিছুই লেখা যায়। সেটি হতে পারে আগত গল্পের নাম, কাহিনী, দুয়েকটি চরিত্র, ক্লাসের কাঠখোট্টা সূত্র, মিটিংয়ের সময়, প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু ইত্যাদি। তবুও মূলত যে বিষয়গুলো আপনার নোটবুককে আরো বেশি উপকারী করে তুলবে সেগুলো হলো-
- উক্তি
- ধারণা
- চিন্তা
- ছবি
- পয়েন্ট
আপনার কাজগুলোকে এই অংশে ভাগ করে নিন। তারপর থরে থরে সাজিয়ে তুলুন আপনার নোটবুক।
কীভাবে সাজাবেন নোটবুকটি
আগেই বলা হয়েছে একেকজনের পছন্দ অনুযায়ী নোটবুক একেক রকম হয়ে থাকে। তবে নিজের হাতে তৈরি করা নোটবুকটি আপনার খুব ভালো সঙ্গী হতে পারে। বাজার থেকে পছন্দ অনুযায়ী কিছু পৃষ্ঠা কিনে এনে নিজেই মলাট করে তৈরি করে ফেলতে পারেন আপনার পছন্দের নোটবুকটি। যারা সময় স্বল্পতায় ভুগছেন তারা বাজারে যেকোনো দোকান ঘুরে পছন্দমত নোটবুক কিনে আনতে পারেন।
তাহলে আর দেরি না করে একটি নোটবুকের মালিক হয়ে যান, আপনার সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে, সেই সাথে অবসর সময়ও কাটবে নিশ্চিন্তে।
ফিচার ইমেজ: sosteffso.com