বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ: করুণরসে সিক্ত খেদোক্তির কবিতা

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর ষষ্ঠ সর্গের শেষের দিকে মেঘনাদের বিভীষণকে করা কিছু ভর্ৎসনা, আক্ষেপ এবং ক্ষেদোক্তি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ শিরোনামে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে। কবিতার উৎস সরাসরি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। কাব্যে কবি ঢালাওভাবে অমিত্রাক্ষর ছন্দে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গেছেন। ছোট ছোট কবিতাকারে ভাগ করে সেগুলোর শীর্ষক বা শিরোনাম প্রদান করেননি। শুধু সর্গগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মহাকাব্যের কাহিনীটি রামায়ণ থেকে গৃহীত হলেও মধুসূদন সর্বাংশে রামায়ণকে অনুসরণ করেননি। আদি ‘রামায়ণ’ সংস্কৃতে রচিত হলেও ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্নজনের দ্বারা সেটি অনূদিত হয়েছে। রামায়ণের কাহিনীগুলো আশ্রয় করে অনেক কাব্য, গীত, নাটক-নাটিকা, গীতিনাট্য রচিত হয়েছে। রামায়ণের কাহিনীগুলো সর্বাধিক প্রচারিত হয়েছে মধ্যযুগে। হিন্দুস্তানী ভক্তি সাহিত্য রামায়ণ তথা রামকে আশ্রয় করে ব্যাপকভাবে পরিপুষ্ট হয়েছে।

মধ্যযুগীয় সাহিত্যগুলোর ভেতরে মৌলিকতায় তেমন বিভিন্নতা ছিল না। ভক্তিবাদ, দেব-দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার, স্তব-স্তুতি প্রভৃতি সে-যুগের কাব্যগুলোতে ঘুরেফিরে এসেছে। আধুনিক যুগের প্রারম্ভে ভক্তিবাদকে সরিয়ে রেখে মানবতাবাদকে সাহিত্যের মূলধারা হিসেবে গ্রহণ করেন লেখকগণ। মানবের জয়গান গাওয়াতেই তাদের আনন্দ।

আধুনিক সাহিত্য মানুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে। মানুষের কর্ম, ধর্ম, রুচি, প্রবৃত্তি, আচারণ, মনন ইত্যাদি বিশ্লেষণ এবং বর্ণন আধুনিক সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেসময় ‘মেঘনাদবধ’ লিখেছিলেন তখন বাংলায় রেনেসাঁ চলছিল। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও মুক্তমনা, মননশীল হিসেবে পরিচিত হচ্ছিলেন। মাইকেল সেই সময়কার বাংলায় ভক্তিমূলক রামায়ণের একটি কাহিনীকে মানবীয়রূপে প্রকাশ করলেন।

প্রচলিত অক্ষরবৃত্ত ছন্দকে অমিত্রাক্ষর নামে নবরূপে সৃষ্টি করলেন। আগের মাত্রা ঠিক রেখে চরণান্তের মিল রোধ করলেন। একে বলা হলো ‘চৌদ্দ মাত্রার অমিল প্রবহমান যতি স্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দ’। আকারে রামায়ণের তুলনায় মেঘনাদবধ খুব ছোট্ট একটি রচনা। পুরো নয় সর্গের মেঘনাদবধ, সাতকাণ্ড রামায়ণের এক কাণ্ডেরও সমান হবে না। মেঘনাদবধের সর্গগুলো হলো– ১) অভিষেক, ২) অস্ত্রলাভ, ৩) সমাগম, ৪) অশোকবন, ৫) উদ্যোগ, ৬) বধো, ৭) শক্তিনির্ভেদ, ৮) প্রেতপুরী, ও ৯) সংক্রিয়া।

নিকুম্ভিলাতে যজ্ঞরত মেঘনাদ (রমানন্দ সাগর নির্মিত ‘সম্পূর্ণ রামায়ণ’ টিভি সিরিয়াল থেকে); Image Source : indiatvnews.com

মাইকেলের রচনায় প্রথাবিরোধিতা, মননশীলতা, নারীজাগরণের বিষয়গুলো খুব সূক্ষ্মভাবে এসেছে। গুরুগম্ভীর ভাষার ব্যবহার সাহিত্যমহলে তার একটি আলাদা ইমেজ তৈরী করেছিল। মেঘনাদবধ কাব্যে স্বদেশপ্রেম অত্যন্ত প্রখররূপে প্রকটিত হয়েছে। প্রচলিত ধারার ধর্ম রক্ষার চেয়ে স্বজাতির প্রতি টানকেই মাইকেল অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারতবর্ষকে আধার করেই মাইকেল চরিত্রগুলো চিত্রায়িত করেছিলেন। ভাবুক পাঠকমাত্রই বুঝবে যে, সভ্যতার ও আধুনিকতার মালা জপকারী ইংরেজদের রাম ও তার বানর সেনাদলরূপে প্রতীকায়িত করা হয়েছে, যারা লঙ্কায় বহিরাগত হিসেবে ঢুকে পুরো লঙ্কা তছনছ করে দিয়ে গেছে। বহিরাগত দখলদার যত ধার্মিক হোক, উন্নত হোক, তারা পরিত্যাজ্য।

মেঘনাদবধ প্রকাশিত হওয়ার চার বছর আগে সংগঠিত সিপাহী বিদ্রোহ প্রতিটি স্বাধীনতাকামী ভারতীয়ের মনে নব আশা যুগিয়েছিল। মাইকেল মধুসূদনও তাদের একজন ছিলেন। তার ইউরোপমোহ কেটে যাওয়ার পরে তার লেখাগুলোয় প্রবল দেশপ্রেমের লক্ষণ প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলেও তিনি তার লেখায় রূপক, অলঙ্কার, উদাহরণ প্রভৃতি প্রসঙ্গে অহরহ ভারতীয় পুরাণ ও আর্য সংস্কৃতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এ প্রবণতা তার লেখাকে ভারতীয় পাঠকদের কাছে আরো শিকড়স্থানীয়রূপে উপস্থাপন করে।

‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতা শুরু হয়েছে নিকুম্ভিলার দ্বারে বিভীষণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘনাদের আক্ষেপ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। মেঘনাদ যখন বুঝতে পারেন, লক্ষ্মণ ও তার বানরদের নিকুম্ভিলার দুর্ভেদ্য পথ দেখিয়ে আনা ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তার পিতৃব্য বিভীষণ- তখন ইন্দ্রজিৎ তাকে প্রথমে তার জন্ম প্রদানকারিণী মাতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বিভীষণের মায়ের আসল নাম কৈকসী। গাত্রবর্ণ কষ্টিপাথরের ন্যায় কালো হওয়ায় তিনি নিকষা নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। মহর্ষি বিশ্রবার সাথে তার বিয়ে হয়। মহাসতী নিকষার পুত্র হয়ে বিভীষণ কীভাবে রামশিবিরে গিয়ে নিজের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন, মেঘনাদ এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিভীষণ সেই ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যারা নিজ মাতৃভূমির মহিমা বিস্মৃত হয়ে সর্বান্তকরণে বিদেশীদের তোয়াজে নিজেদের লিপ্ত করেছে।

‘মেঘনাদবধ’ থেকে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’; Image Source : Meghanad Badh Kavya

তারপর বংশের অন্যান্যদের গৌরব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভীষণকে। রক্ষঃশ্রেষ্ঠ অর্থাৎ, রাক্ষসকুলে শ্রেষ্ঠ বিশেষণ দিয়ে রাবণকে, শূলিশম্ভুনিভ দিয়ে মহাপ্রতাপী কুম্ভকর্ণ এবং বাসববিজয়ী অর্থাৎ, বাসব বা দেবরাজ ইন্দ্রকে জয় করেছেন যিনি- দ্বারা মেঘনাদ নিজেকে বিশেষায়িত করেছেন। মেঘনাদ রাম ও তার বানরদের তস্কর (চোর), চণ্ডাল (বর্ণপ্রথা অনুযায়ী হিন্দু সমাজের নিচুস্তরের জাতি, যারা শ্মশানে শবদাহ করে জীবিকা নির্বাহ করে) বলে সম্ভাষিত করেছেন। বিভীষণকে ভর্ৎসনা করার পর মেঘনাদ তাকে গুরুজন বলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে পথ ছাড়তে বললে বিভীষণ নিজেকে ‘রাঘবদাস’ বলে। মেঘনাদ পুনরায় আক্ষেপ শুরু করেন। এসময় তিনি একটি সুন্দর রূপক ব্যবহার করেন,

“স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থানুর ললাটে;
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি
ধুলায়?”

এটি একটি পৌরাণিক রূপক। বিধু বা শশী মানে চাঁদ, বিধি হলেন পরমেশ্বর এবং স্থানু বলা হয় মহাদেব শিবকে। একবার দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা জগতের তিল তিল সৌন্দর্য দিয়ে সৃষ্টি করেন অপরূপা এক রূপসীকে। তার নাম দেওয়া হয় তিলোত্তমা। তিলোত্তমাকে দেখতে সকল দেবতা, অসুর হুমড়ি খেয়ে পড়লেও একমাত্র শিব নিশ্চল থেকেছিলেন। তাই, শিবের আরেকটি নাম হয় স্থানু। স্থানুর আক্ষরিক অর্থও স্থির বা নিশ্চল। শিব চন্দ্রকে নিজের জটায় স্থাপন করেন। এ রূপকটি ব্যবহার করে মেঘনাদ বিভীষণকে প্রশ্ন করেছেন যে, চন্দ্রের কি উচিত হবে শিবের জটা ছেড়ে এসে ধুলোয় গড়াগড়ি দেওয়া?

পরের চরণগুলোতে মেঘনাদ নিজের রাক্ষসকুলের বড়াই করেছেন। সে বড়াই থেকেই লক্ষ্মণকে ক্ষুদ্রমতি নর বলে সম্ভাষিত করেছেন। আক্ষেপের একপর্যায়ে মেঘনাদ মহারথী প্রথার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সে যুগে একজন যোদ্ধার হাতে অস্ত্র থাকলেই আরেকজন তাকে যুদ্ধে আহ্বান করতেন। লক্ষ্মণ মেঘনাদকে নিরস্ত্র অবস্থায় আক্রমণ করে। মাইকেল মধুসূদনের তৈরি করা নিকুম্ভিলার সে বাতাবরণে লক্ষ্মণ ছিলেন ভীরু ও কাপুরুষ।

মেঘনাদের হত্যাকারীর গুণগুলো একমাত্র লক্ষ্মণের সাথে মিলে যাওয়ায় লক্ষ্মণই তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন; Image Source : quora.com

এ সময় মেঘনাদ বিভীষণকে আরেকটি কথা বলেন, “আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে”। এ বাক্যে মেঘনাদের বিনয়সূচক অনুরোধ প্রকাশ পেয়েছে। বিভীষণকে কুলের মাহাত্ম্য বর্ণনা করার পরে তার কাছে মেঘনাদ নরের অধম কাপুরুষ লক্ষ্মণকে শাস্তি দেওয়ার অনুমতি চেয়েছেন। মূল রামায়ণেও রাম-লক্ষ্মণকে রাক্ষসদের বনবাসী বলে ছোট করার প্রবণতা দেখা যায়। বনবাসী দুর্বল গেরুয়াধারী মানবদ্বয়ের প্রতি এটি ছিল তাদের একটি কটু সম্ভাষণ। বিভীষণের প্রতি মেঘনাদের তথা সমস্ত রাক্ষসদের করা আরোপকে বিভীষণ একটি কথা দিয়েই বাতিল করে দিয়েছেন। সেটি হলো–

“রাবণ মহাপ্রতাপী হলেও আরেকজনের স্ত্রীকে হরণ করে মহাপাতকে পরিণত হয়েছে। তাহলে, তার একার করা পাপের শাস্তি কেন পুরো লঙ্কাবাসী ভোগ করবে? ধার্মিকগণের উচিত রাবণকে ত্যাগ করা।”

বিভীষণের এ উত্তরকে মেঘনাদ জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্বের কথা বলে বাতিল করে দিয়েছেন। এ সময় মেঘনাদ একটি উক্তি করেন যেটি কবি হবহু রামায়ণ থেকে ধার করেছেন,

…শাস্ত্রে বলে গুণবান যদি
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়, পরঃ পরঃ সদা!”

এ উক্তির মাধ্যমে মেঘনাদ এবং কবি সকল ধার্মিকতা, আনুষ্ঠানিকতা, সভ্যতা, ভব্যতার উর্ধ্বে দেশপ্রেমকে স্থাপিত করেছেন। কবিতাটি শেষ হয়েছে মেঘনাদের আরেকটি ক্ষেদোক্তি দিয়ে– “গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি”। অর্থাৎ, যার সঙ্গ নিচু-হীন শ্রেণীয় লোকদের সাথে, সে নিজেও মন্দবুদ্ধিতে পরিণত হয়। পুরো কবিতাতে সর্বোপরি করুণরস ক্ষরিত হয়েছে। দুয়েক জায়গায় বীররসের প্রসঙ্গও এসেছে। কবি প্রতিটি চরণে চৌদ্দ মাত্রার নিয়ম রক্ষা করে গেছেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত; Image Source: Wikimedia Commons

এবার মূল রামায়ণের সাথে ‘মেঘনাদবধ’ এর ফাঁকটুকু বর্ণনা করে লেখাটি শেষ করা যাক। বাল্মিকী লক্ষ্মণকে কোথাও কাপুরুষ হিসেবে বর্ণনা করেননি। ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যের কাহিনী অনুযায়ী লক্ষ্মণ বিভীষণের সহায়তায় নিকুম্ভিলাতে প্রবেশ করে ছল করে মেঘনাদকে হত্যা করে। দেবতারা লক্ষ্মণকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করে। নিকুম্ভিলাতে লক্ষ্মণকে দেখে মেঘনাদ প্রথমে ভাবেন, স্বয়ং অগ্নিদেব তাকে যুদ্ধের জন্য দিব্যরথ দিতে এসেছেন।

পরে ভুল ভাঙলে মেঘনাদ লক্ষ্মণের দিকে যে কোষাকুষি (পূজায় ব্যবহৃত বাসনাদি) ছুড়ে মেরেছিলেন, মায়াদেবী সযত্নে সেগুলো সরিয়ে দিয়ে লক্ষ্মণকে বাঁচান। দেবী লক্ষ্মী লঙ্কায় অধিষ্ঠাত্রী হয়েও রাক্ষসদের বিরুদ্ধে দেবতাদের সাহায্য করেন। রাক্ষসদের সাথে শুধু অন্যায়ই হয়েছে। মেঘনাদের স্ত্রীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রমীলা, যেটি রামায়ণে আছে সুলোচনা।

‘রামায়ণ’ অনুসারে ঘটনা ছিল এরকম- রাক্ষসদের হারতে দেখে মেঘনাদ যুদ্ধের ময়দানে একটি মায়াসীতা উপস্থিত করে। মায়া দিয়ে সীতার একটি অবিকল প্রতিমূর্তি নির্মাণ করে মেঘনাদ তাকে বানরদের সামনেই হত্যা করে। এতে রামসহ সকল বানরসেনা ভেঙে পড়ে। তখন বিভীষণ রামকে বলেন যে, সীতার প্রতি রাবণের যে মনোভাব, তিনি কখনও সীতাকে হত্যা করতে দেবেন না। এটি ইন্দ্রজিতের ছলনা। বানরশিবিরে হতাশা সৃষ্টি হলে মেঘনাদ তড়িঘড়ি করে নিকুম্ভিলাতে প্রবেশ করে ব্রহ্মদেবের বর অনুযায়ী ইষ্টদেবীর পূজা আরম্ভ করে। পূজা যথাযোগ্য নিয়মানুযায়ী সম্পন্ম হলে মেঘনাদ হবেন অজেয়।

এই সময় লক্ষ্মণ বিভীষণের সহায়তায় পথ চিনে বানরদের নিয়ে এসে নিকুম্ভিলা আক্রমণ করেন। বানরদের আগ্রাসনে রাক্ষসবাহিনী চিৎকার শুরু করলে মেঘনাদ বাইরে এসে দেখে, তারা বানরদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তৎক্ষণাৎ যজ্ঞ অসম্পন্ন রেখে যুদ্ধসাজ পড়ে রথে চড়ে মেঘনাদ বানরদের আক্রমণ করেন। প্রথম দফা যুদ্ধে মেঘনাদ এঁটে উঠতে পারেন না। তার রথও নষ্ট হয়। তিনি পুনরায় নিকুম্ভিলার ভেতরে প্রবেশ করে নতুন অস্ত্রশস্ত্র, রথ নিয়ে এসে যুদ্ধ শুরু করলে লক্ষ্মণের প্রয়োগকৃত ঐন্দ্রাস্ত্রের প্রভাবে বীরগতিপ্রাপ্ত হন।

তেলেগু সিনেমার সুপারহিরো এনটিআর মেঘনাদের জীবনের ওপর আধারিত সিনেমায় মেঘনাদ চরিত্রে অভিনয় করেন, ছবিটি পরে বাংলায় ডাবিং করে কলকাতায় মুক্তি দেওয়া হয়; Image Source: Eros Now

এ প্রসঙ্গে শেষ কথা বলার আগে মাইকেলের একটি মন্তব্য বিশেষ প্রণিধানযোগ্য-

“আমার ভীষণ জ্বর আসে এবং আমাকে ছয়-সাতদিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয়। তখন যেন এক লড়াই চলছিল যে, মেঘনাদ আমাকে শেষ করবে, না কি আমি মেঘনাদকে। ঈশ্বরের কৃপা, আমি জয়লাভ করেছি। বলা চলে, মেঘনাদ এখন মৃত। আমি ৭৫০ লাইনে ছয়টি বই (সর্গ) শেষ করেছি। ওকে মারতে আমার অনেক চোখের জল ফেলতে হয়েছে।”

(বন্ধুকে লেখা একটি চিঠিতে মাইকেল এমন মন্তব্য করেছিলেন)

মাইকেল সাহিত্যের নবধারা নবরূপে সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত ধারাকে ভেঙে দিয়েছিলেন। কাঠামোগত এবং মনস্তাত্ত্বিক দুটোকেই। এটি সে যুগে একটি দুঃসাহসিক কাজ ছিল, সন্দেহ নেই। তখনকার অনেকেই মেঘনাদ বা রাবণকে নায়ক হিসেবে দেখতে চাননি। কেউ মেঘনাদবধকে বিপরীত ধারার সাহিত্য বলেছিল, কেউ একে মূল ভক্তিবাদ থেকে বিচ্যুতির দায়ে ভয়ানক সমালোচিত করেছিল। বস্তুত মাইকেল বিভীষণের প্রতি মেঘনাদের খেদোক্তিগুলো দিয়ে বঙ্গীয় রেনেসাঁর আধুনিকতাবাদী, যুক্তিগ্রাহ্য, মননশীল, মুক্তমনা সদস্যবৃন্দের আক্ষেপটিই প্রকাশ করেছিলেন।

The article is in Bangla language. It describes the background, importance and of the poem ‘Bivishoner Proti Meghnad’ (Meghnad to Vivishana) from the ‘Meghnad Badh Kavya' and it’s detachment from the authentic ‘Ramayana’.

All the necessary references are hyperlinked into the article.

Featured Image: Deviant Art

 

Related Articles

Exit mobile version