Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে নিজস্ব সাহিত্য রক্ষা করেছিলেন ওকিনাওয়ার সাহিত্যিকরা

প্রায় ৬,৮৫২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা দেশ জাপান। এই জাপানের দক্ষিণে অবস্থিত একটি বৃহৎ দ্বীপের নাম ওকিনাওয়া। দ্বীপটি রাইওখাও নামেও পরিচিত। প্রায় ১,২০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটির জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। প্রাচীনকাল থেকে মানববসতি পূর্ণ এই দ্বীপটির রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। নিজেদের ভাষার নামও ওকিনাওয়া। তবে দ্বীপটিতে ওকিনাওয়া ভাষার মোট ৬টি উপভাষা চালু রয়েছে।  

কিন্তু যুগে যুগে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের সেই নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে। বিশেষত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাদের হাতে দ্বীপটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়। সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের নামে এখনও দ্বীপটির প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দ্বীপটিকে পুরোপুরি দখল করে রেখেছিল মার্কিন বাহিনী। ১৯৭২ সালে দ্বীপটির দায়িত্বভার তুলে দেয়া হয় জাপানের কাছে।  

শুধু বহিরাগতদের দ্বারা নয়, খোদ জাপানিদের দ্বারাও বহুবার নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে ওকিনাওয়ারা। তাদের উপরে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে জাপানি ভাষা ও সাহিত্য। স্থানীয় ওকিনাওয়া ভাষায় লিখিত সাহিত্যকে বিলুপ্ত করার চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু একদল স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকের প্রবল বাধা ও লড়াইয়ের মুখে এখনো টিকে আছে ওকিনাওয়া ভাষা ও সাহিত্য। 

ওকিনাওয়া দ্বীপের মানচিত্র; Image Source: wikimedia.org

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১,৮৫,০০০ মার্কিন সৈন্য প্রেরণ করে ওকিনাওয়া দ্বীপ দখল করে নিলে স্থানীয় ভাষা ও সাহিত্যের উপর দুর্দিন নেমে আসে। বিশেষত, স্থানীয় জনগণ তাদের ভূমিতে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি কখনোই ভালো চোখে দেখেনি। মার্কিন সেনা ও স্থানীয় জনগণের মাঝে একটি মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব লেগেই ছিল। ফলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ওকিনাওয়ার অধিবাসীদের মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়। এজন্য তারা ওকিনাওয়া ভাষার চেয়ে জাপানি ভাষার প্রচার প্রসারে বেশি আগ্রহ দেখায়।

একপর্যায়ে ওকিনাওয়া ভাষা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করে। স্কুল-কলেজে ধীরে ধীরে জাপানি ভাষা বাধ্যতামূলক করা হতে থাকে। সভা-সমাবেশে ওকিনাওয়া ভাষার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা করা হতে থাকে। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী দ্বীপটি তার আদি ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভুলে যেতে শুরু করে।

এমন পরিস্থিতিতে কলম হাতে লড়াইয়ে নামেন একদল লড়াকু কবি-সাহিত্যিক। ১৯৫০ দশকের শুরুর দিকে স্থানীয় ওকিনাওয়ান লেখকরা সংগঠিত হতে শুরু করেন। তারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেন, এখন থেকে তারা জাপানি ভাষাতেও সাহিত্য রচনা করবেন। অনেকটা মাছ দিয়ে মাছ ধরার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ। তাদের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কারণ ছিল- জাপানি ভাষায় সাহিত্য রচনা করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মানুষের কাছে তাদের দুর্দশা, যুদ্ধের, গণহত্যা ও শোষণের ইতিহাস জানানো যাবে। এতে তারা সফলও হলেন। তাদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘টাইফুন অফ স্টিল ১৯৫০’ এবং ‘অ্যান ওকিনাওয়ান ট্র্যাজেডি ১৯৫১’ গ্রন্থ দুটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। 

ওকিনাওয়া দ্বীপে একটি মার্কিন সেনা দল, ছবিটি ১৯৪৫ সালের ২৭ জুনে তোলা; Image Credit: USMC PHOTOGRAPH

এরপর কবিরা মিলে ‘কোরাল অ্যাতুল গ্রুপ’ নামে আরেকটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। রাইওকাইও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় তারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা লেখালেখির মাধ্যোমে সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রকে বিতারিত করতে সব সময় সচেষ্ট থাকবেন। এ সময় কবিগণ তাদের লেখালেখিতে অধিক হারে সোশ্যাল রিয়েলিজমের ব্যবহার করতে থাকেন। পাশাপাশি জনমত সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন লিফলেট ও একটি সাময়িকী প্রকাশ করেন। সাময়িকীটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে জাপান সরকার ১৯৫৫ সালে সেটি নিষিদ্ধ করে দেয়। সরকারের দমন পীড়নের কারণে এ সময়ে আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়ে

কবি ইয়ামানোগুচি বাকু ছিলেন ওকিনাওয়া দ্বীপের অধিকার রক্ষায় সরব কণ্ঠস্বর; Image Source: longdream.wordpress.com

১৯৫৮ সালে কবিরা ফের সংঘবদ্ধ হয়ে নতুনভাবে কাজ শুরু করেন। এবার তাদের নেতৃত্ব দেন ওকিনাওয়াতে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট জাপানি কবি ইয়ামানোগুচি বাকু। বাকুর বয়স যখন ২০ বছর তখনই তিনি টোকিওতে চলে যান এবং সেখানে বসেই সাহিত্যচর্চা করছিলেন। টোকিওতে অবস্থান করলেও মাতৃভাষা ও জন্মভূমির প্রতি তার ছিল অগাধ টান। ফলে যখন আন্দোলনের ডাক আসে তখন তিনি তাতে স্বতস্ফূর্তভাবে সাড়া দেন এবং নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সরকারের সাথে আপোষ করে সাহিত্যচর্চা না করায় পূর্ব থেকেই জাপান সরকার তার উপর ছিল বীতশ্রদ্ধ। আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ যেন তাতে গরম তেলে জল ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো। তবুও তিনি থেমে থাকলেন না। তিনি লিখলেন,

ওহে জাপানি শাসক!
আমরা- ওকিনাওয়ানরা তোমাদের দাসত্ব মানি না।

এই স্লোগান ওকিনাওয়ার সকল লেখক ও পাঠকের রক্তের বিন্দুতে বিন্দুতে প্রবাহিত হতে লাগল। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে উঠতে থাকলো। ১৯৬৩ সালে মৃত্যুবরণের আগপর্যন্ত বাকু লেখালেখি ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার মাধ্যমে ওকিনাওয়ার অধিকার আদায়ে লড়াই করে যান। উল্লেখ্য, তিনিই সর্বপ্রথম কোনো ওকিনাওয়ান লেখক ছিলেন, যিনি জাপানের একাধিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। কিন্তু অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে নেমে আসলে তিনিও সরকারের কাছে নিন্দনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। 

ইংরেজি ভাষায় সংকলিত বিভিন্ন ওকিনাওয়ান লেখকের একটি বই ‘আইসল্যান্ড অফ প্রটেস্ট: জাপানিজ লিটারেচার ফ্রম ওকিনাওয়া’, ২০১৬ সালে ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই প্রেস থেকে বইটি প্রকাশিত হয়; Image Source: amazon.com

১৯৬৬ সাল ওকিনাওয়া সাহিত্যের জন্য একটি স্মরণীয় কাল। কেননা কৌশল হিসেবে ১৯৫০ সালে কবি-সাহিত্যিকরা জাপানি ভাষায় যে সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন, তাতে নিজেদের ওকিনাওয়া ভাষার সাহিত্যে কোনো সমৃদ্ধি আসছিল না। কিন্তু তা ব্যাপক পরিমাণে মানুষের সহানুভূতি আদায় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ওকিনাওয়াকে পরিচিত করে তোলার ব্যাপারে কাজে দিয়েছিল। বিশেষত, তাদের লেখনীতে ওকিনাওয়ার যে বিভিন্ন জায়গার নাম ও যুদ্ধের বর্বরতার বিবরণ উঠে এসেছিল, তা মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছিল। সেই পাঠকপ্রিয়তা ও মানুষের আবেদনকে কাজে লাগিয়ে ১৯৬৬ সালে কবিরা আবার নিজস্ব ওকিনাওয়া ভাষায় সাহিত্যচর্চা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

তারা ‘দ্য ওকিনাওয়া টাইমস’ নামে একটি সংবাদপত্র ও ‘নিউ ওকিনাওয়া লিটারেচার’ নামে একটি সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করেন। এতে ওকিনাওয়া ভাষার সাহিত্যে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয়। একটি আলাদা পাঠকশ্রেণী গড়ে ওঠে। সাহিত্য সাময়িকীর প্রথম সংখ্যা তুমুল আলোড়ন ফেললে ‘দ্য টারটেল শেভ গ্রেভ’ শিরোনামে সাহিত্য সাময়িকীর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। সংখ্যাটিতে নবীন লেখকদের অনেকগুলো ছোটগল্প প্রকাশ করা হয়। লেখকগণ নতুন হলেও এর বিষয়বস্তু, রচনাশৈলী ও হৃদয়গ্রাহী বিবরণ ওকিনাওয়া সাহিত্যের আকাশে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে দেয়।

ওকিনাওয়ার লেখকদের মধ্যে ওশিরো তাতাসুহিরো (বামে) অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ৯৩ বছর বয়সী এই সাহিত্যিক এখনো বেঁচে আছেন; Image Source: manoaokinawaissue.wordpress.com

এ পর্যায়ে এসে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ওকিনাওয়ার লেখকদের মধ্যে ভাষা সম্পর্কে দুটি মতামত দেখা দেয়- একদলের মতে তাদের শুধুমাত্র ওকিনাওয়া ভাষাতে সাহিত্যচর্চা করা উচিৎ, অন্য দলের মতে, তাদের ওকিনাওয়া ও জাপানি উভয় ভাষাতেই সাহিত্যচর্চা করা উচিৎ। দ্বিতীয় দলের সাহিত্যিকদের যুক্তি- এতে করে তারা তাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অধিক মানুষের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। এতে ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি লাভ করতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি ওকিনাওয়া ভাষাতেও সাহিত্য সমৃদ্ধ হতে থাকবে। যুগের চাহিদার আলোকে দ্বিতীয় মতের সাহিত্যিকরাই বেশি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।

ওশিরো তাতাসুহিরোর লিখিত ককটেল পার্টি বইয়ের প্রচ্ছদ; Image Source: akumasminkey.com

এই মতের অনুকূলে ওশিরো তাতাসুহিরো অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তার ‘দ্য ককটেল পার্টি’ নামে প্রকাশিত একটি ছোটগল্প তুমুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। সাহিত্য সমালোচকদের বিবেচনাতেও বইটি ছিল মানউত্তীর্ণ। বইটির জন্য তিনি জাপানের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘আকুতাগাওয়া’ অর্জন করেন। ফলে তিনি জাপানি সাহিত্যের জাতীয় পর্যায়ে নিজের শক্তিশালী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। ছোটগল্পের পাশাপাশি তিনি অসংখ্য কবিতা, উপন্যাস, ইতিহাস ও প্রবন্ধের বই প্রকাশ করেন। তিনি ওকিনাওয়া ও জাপানি সাহিত্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করেন। তিনি মনে করতেন, অতিরিক্ত গোত্রপ্রেম উন্নতির অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। তাই তিনি তার প্রায় সব গ্রন্থে ওকিনাওয়া ও জাপানীদের মধ্যে সম্প্রীতির সুর তুলেছেন। তবে তিনি সব সময়েই ওকিনাওয়াদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাছাড়া, তিনি তার অধিকাংশ বই উভয় ভাষাতে প্রকাশ করার চেষ্টা করতেন।

হিগাশি মাইনিও লিখিত ওকিনাওয়া বয় গ্রন্থের প্রচ্ছদ; Image Source: akumasminkey.com

ওকিনাওয়ার অধিকার আদায়ে সক্রিয় আরেকজন বিখ্যাত সাহিত্যিকের নাম হিগাশি মাইনিও। তার ‘ওকিনাওয়া বয়’ একটি বিশ্বখ্যাত উপন্যাস। এটি অবলম্বনে পরবর্তীতে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়। উপন্যাসটির জন্য ১৯৭২ সালে তিনি আকুতাগাওয়া পুরস্কার অর্জন করেন। 

হিগাশির জন্ম ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপে, কিন্তু বেড়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ঘাঁটি কাদেনা এয়ার বেসের নিকটবর্তী কোজা নামক স্থানে। কোজা যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত একটি ওকিনাওয়ান শহর। এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠাই হয়তো তাকে সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী করে তুলেছে। তার লেখালেখির মধ্য দিয়ে ওকিনাওয়ানদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। যেমন- ‘ওকিনাওয়া বয়’ উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে একটি পতিতালয়কে কেন্দ্র করে। সেখানে ওকিনাওয়ার স্থানীয় মেয়েরা বাধ্য হয়ে মার্কিন সেনাদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হতেন। যেন নিজ জীবনের অবলোকন করা দুঃসহ স্মৃতিগুলো তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন তার লেখনীতে। ফলে ওকিনাওয়ান সাহিত্যে ভুবনে তিনি হয়ে ওঠেন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

ওকিনাওয়ার আরেকজন প্রভাবশালী লেখক মাতায়োশি ইকি; Image Source: pinsdaddy.com

মাতায়োশি ইকি আরেকজন প্রভাবশালী ওকিনাওয়ান সাহিত্যিক। তার লিখিত ‘দ্য ওয়াইল্ড বোয়ার জর্জ শট’, ‘অ্যা ব্ল্যাক বাগ অন দ্য ওয়াইন্ড’, ‘গিফট অফ দ্য প্যারাশুটিস্ট’ উপন্যাসসমূহ ইতিমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার অধিকাংশ লেখাই ওকিনাওয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের নানাধর্মী নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত। 

এরপর আরও অনেক তরুণ লেখক-লেখিকা ওকিনাওয়া সাহিত্য সমৃদ্ধ করতে এগিয়ে এসেছেন। অনেকে আবার মিশ্র ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। এদের মধ্যে নাকাওয়াকা নাওকো, নাকাচি হিরাকো, কিশিমাতো ম্যাচিকো প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমান লেখকদের মধ্যে পূর্ববর্তীদের মতো সেই অধিকার আদায় ও প্রতিবাদের ভাষার ব্যবহার কম পরিলক্ষিত হয়।  

১৯৯০ সালে নির্মিত হাওয়াই ওকিনাওয়া সেন্টার দ্বীপটির শিল্প-সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে; Image Source: huoa.org

তবুও এই লেখকগণ ধারাবাহিকভাবে ওকিনাওয়া সাহিত্য নিয়ে চর্চা করার কারণে তা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। বিশেষত, যারা জাপানি ভাষায় লেখালেখির করেছেন, অথচ ওকিনাওয়ার শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন অথবা যারা ওকিনাওয়ায় জন্মগ্রহণ করে জাপানি ভাষায় প্রভাবশালী লেখকে পরিণত হয়েছেন, তারা সকলেই ওকিনাওয়ার সাহিত্যকে পরোক্ষভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ফলে এখন পর্যন্ত ওকিনাওয়ার অধিবাসীদের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনমত বর্তমান আছে। পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে হলেও ওকিনাওয়া সাহিত্য এখনো টিকে আছে। তাছাড়া ওকিনাওয়া ভাষায় অনেকগুলো পত্রিকা, রেডিও ও টেলিভিশন চালু হয়েছে। নিজস্ব সাহিত্য রক্ষার্থে ওকিনাওয়ার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লেখকগণ যেভাবে ভূমিকা পালন করেছেন সত্যিই তা প্রশংসনীয়। 

ওকিনাওয়া দ্বীপে মার্কিন সেনা ঘাঁটি বিরোধী বিক্ষোভ; Image Cadet: AP

ফিচার ইমেজ- wikimedia.org

সূত্র:

১. মোহাম্মদ সা’দাত আলী, শিল্প সাহিত্যে গুণীজন, কৃষ্ণচূড়া প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ২০০৪

Related Articles