মুজতবা আলীর ‘জলে–ডাঙায়’: ভ্রমণসাহিত্যের অনন্য সম্পদ

সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন বৈঠকি আড্ডার অধিপতি। তার সমগ্র লেখার মধ্যেই তাই খুঁজে পাওয়া যায় সরস আড্ডার রস ও মেজাজ। মুখের কথা কলমের ডগায় সুনিপুণভাবে তুলে ধরায় মুজতবা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাই তার লেখা পড়তে গিয়ে পাঠককে কখনো থমকে যেতে হয় না। সহজ সাবলীলতায়, আলাপচারিতায়, এবং রসসমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার ডালি সাজিয়ে তিনি তার লেখায় পাঠককে মগ্ন রাখেন। যথেচ্ছ, অথচ সচেতন প্রয়োগে আরবি, ফারসি, ও অন্যান্য বিদেশি শব্দের ব্যবহার এবং সাধু–চলিতের মিশ্রণে সৃষ্ট তার লেখাগুলি যেন চলমান দৃশ্যপট তৈরি করে, যেখানে পাঠক ও লেখকের মধ্যে কোনো আড়াল নেই।

তার লেখা পড়তে গিয়ে তাই বারবার মনে হয় পাঠক কোনো এক আড্ডার মাঝে বসে আছে, আর আলীসাহেব সারাজীবনের ভ্রমণসঞ্জাত অভিজ্ঞতার ডালি উজাড় করে পাঠকের মনের ক্ষুধা নিবৃত্ত করছেন। তার রচনাশৈলী প্রসঙ্গে লেখক–শিক্ষাবিদ প্রমথনাথ বিশী লিখেছেন—

‘তাঁর রচনার স্টাইলকে অনায়াসে বৈঠকী চাল বলা যেতে পারে, এ যেন আসর জমিয়ে কথা বলছেন আর সেসব কথা অনায়াসে কলমের মুখে ঝরছে, কলম তাঁকে এতটুকু বিকৃত করতে পারেনি। এ বড়ো শক্ত কাজ। অবনীন্দ্রনাথের ‘পথে বিপথে’ এই চালে রচিত, সে যেন লেখকের হয়ে কলম কথা বলে চলেছে। তবে অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে মুজতবা আলীর রচনার পার্থক্য এই যে, তাঁর ভাষায় দেশী–বিদেশী, বিশেষ উর্দু–ফারসীর অনায়াস ও অঙ্গাঙ্গী মিশ্রণ, কোথাও এতটুকু ফাটল নেই। কাজী নজরুল ইসলাম যা করেছেন পদ্যে, সৈয়দ মুজতবা আলী তাই করেছেন গদ্যে। … বৈঠকী রীতির এই বিশেষ স্টাইল বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রধান দান।… তিনি পণ্ডিত ছিলেন কিন্তু কোথাও পণ্ডিতী করেন নি— সেইজন্যে সাধারণ পাঠকেরও আকর্ষণ তাঁর রচনার প্রতি।’[১]

সৈয়দ মুজতবা আলী সারাজীবনে যথেষ্ট ভ্রমণ করেছেন। নানা দেশের ধুলো, নানান বন্দরের পানি ঘেঁটেছেন তিনি। কিন্তু নিছক ভ্রমণকাহিনি লেখার জন্য তা করেননি। তাই অধিকাংশ ভ্রমণ-কাহিনিকারের মতো তার ভ্রমণমূলক লেখায় সন–তারিখের কচকচি নেই। সত্যাশ্রয়ী ইতিহাসধর্মী লেখার ধারও মাড়াননি মুজতবা। বরং আড্ডার আমেজে তিনি শুনিয়েছেন নানা দেশের হরেক কিসিমের কথা। ভ্রমণকে উপলক্ষ করে তিনি পাঠকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মেতে উঠেছেন। আর সেই আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি সুনিপুণ ঢঙে পরিবেশন করেছেন।

সৈয়দ মুজতবা আলী ভ্রমণ করার পরপরই অনেক লেখকের মতো তা নিয়ে ভ্রমণকাহিনী লিখতে বসেননি। তিনি ভ্রমণ করেছেন বহু আগে, আর সে–বিবরণ যখন লিখতে বসেছেন ততদিনে গঙ্গা-পদ্মা ধরে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসেনি। প্রখর স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে তিনি কাহিনীর তথ্য পরিবেশন করেছেন। সেক্ষেত্রে সন–তারিখকে বাহুল্য মনে হয়েছে তার। পাঠকেরও তার লেখার রসাস্বাদনে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়নি। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলী মন্তব্য— ‘সার্থক ভ্রমণকাহিনী–লেখক নতুন পুরাতন উভয় অভিজ্ঞতাকে সমাহিত চিত্তে স্মরণ করে রসস্বরূপ প্রকাশ করেন। ভ্রমণ উপলক্ষ মাত্র। কিংবা হয়তো তথ্য পরিবেশন করেন। সেটা যদি রসরূপে প্রকাশিত হয়, তবে আরো ভালো। কিন্তু রস নেই, এবং তদুপরি যদি সে তথ্য কারো কোনো কাজে না লাগে, তবে সেটা বলে কী লাভ আমি ঠিক বুঝতে পারিনে।’  সেভাবেই পথ হেঁটেছেন মুজতবা আলী। পাঠককে ঋদ্ধ করতে লেখার মধ্যেই আসর জমিয়েছেন তিনি। রসের কথায় পাঠককে মগ্ন রেখে তিনি সুকৌশলে জ্ঞানের কথা শুনিয়েছেন। মুগ্ধ পাঠক যখন তা টের পেলেন, তখন তিনি অবলীলায় ঢুকে পড়েছেন অন্য প্রসঙ্গে।

আজন্ম বোহেমিয়ান, মননে ঋদ্ধ, বহুভাষাবিদ আলীর সমগ্র লেখার মধ্যে যেগুলি মূলত ভ্রমণসাহিত্য তা হলো— দেশে বিদেশে (১৩৫৬), জলে–ডাঙায় (১৩৬৩), ভবঘুরে ও অন্যান্য (১৩৬৯), মুসাফির (১৩৭৮), এবং বিদেশে (পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থভুক্ত, ১৩৫৯)। এই প্রবন্ধের আলোচ্য গ্রন্থ ‘জলে–ডাঙায়’ নিছক ভ্রমণকাহিনি নয়, তা এক পরিপূর্ণ, নির্ভেজাল কিশোরসাহিত্যও বটে। এই বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তার পুত্র ফিরোজকে (সৈয়দ মুশাররফ আলী), শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবে। গ্রন্থের উৎসর্গপত্রটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। উৎসর্গপত্রে মুজতবা লিখেছেন তার ছেলেকে—

জলে ডাঙায় বইয়ের উৎসর্গপত্র; উৎস: সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী (৭ম খণ্ড)

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলীর সপ্তম খণ্ডের ভূমিকায়, লেখক শ্রী অরুণ বসু আক্ষেপ করেছেন মুজতবা আলীর গ্রহ–সূর্য–তারালোক ভ্রমণের কাহিনী আর ইহলোকে পড়ার সুযোগ হবে না বলে।[২] অরুণবাবুর এই আক্ষেপ একজন পাঠকের আক্ষেপের প্রতিফলনও। ছোটোদের জন্য এমন অসামান্য সব লেখা তিনি কেন আরও লিখলেন না— এটাও আক্ষেপের জায়গা। তাছাড়া, রসময় এই মানুষটি শেষ জীবনে যদি পুলিশি লাঞ্ছনার এবং তথাকথিত বন্ধুদের ব্যঙ্গ–বিদ্রুপের শিকার না হতেন, যদি স্ত্রী–পুত্রের অমঙ্গলের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে না নিতেন তাহলে বাংলা সাহিত্যে আরও অনেক মণিমাণিক্যের সঞ্চয় বাড়ত— এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷

১৯৫৩ সালের শীতকাল। তখন স্ত্রী–পুত্রের সঙ্গে ময়মনসিংহে মুজতবা। সদ্য তার প্রথম উপন্যাস ‘অবিশ্বাস্য’ শেষ করেছেন। এরপর কী লিখবেন সেটাই ভাবছেন ক’দিন ধরে। তা জানতে পেরে স্ত্রী রাবেয়া বললেন, ‘বাচ্চাদের জন্য একখানা বই লেখ।’ স্ত্রীর অনুরোধে তৎক্ষণাৎ ‘জলে–ডাঙায়’ লিখতে শুরু করেন সৈয়দ মুজতবা আলী।

‘জলে–ডাঙায়’ রচনার শুরু মাদ্রাজ বন্দরের হুলস্থুল কর্মকাণ্ড থেকে পোর্ট সঈদ বন্দর পর্যন্ত। এই ভ্রমণের ‘জলে’ অংশটি মাদ্রাজ বন্দর থেকে ফরাসি জাহাজ ‘মেসাজেরি মারিতিম্’–এ করে সুয়েজ বন্দর পর্যন্ত। সেখান থেকে প্রথমে ট্যাক্সিতে কায়রো শহর এবং পরে ট্রেনে পোর্ট সঈদ পর্যন্ত ভ্রমণ ‘ডাঙায়’ অংশের অন্তর্ভুক্ত। এই ভ্রমণে তিনি তার দুই কিশোর বন্ধু পল আর পার্সিকে নিয়ে জাহাজে–বাজারে–রেস্তোঁরায় আড্ডায় মত্ত থেকেছেন। সে–আড্ডার খাঁজে–ভাঁজে বিস্তর গালগল্প ও চুটকি পরিবেশন করে যেমন পাঠককে একঘেয়েমির হাত থেকে মুক্তি দিয়েছেন মুজতবা, তেমনি এর পাশাপাশি বৈঠকি ঢঙে তিনি জ্ঞানগর্ভ কথাও গল্পের ছলে শুনিয়ে দিয়েছেন। সেই গল্পের তোড়ে ইতিহাসের খুঁটিনাটি যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে আবহাওয়ার হালহদিস, শব্দতত্ত্ব, নামতত্ত্ব ও সমাজ–সংস্কৃতির প্রসঙ্গ। লেখার শুরুতেই তিনি বন্দরের হৈ–হট্টগোল বর্ণনা করার জন্য তার ‘গুরু’ সুকুমার রায়কে স্মরণ করেছেন—

এইদিকে এসে তবে লয়ে ভোজভাণ্ড

সমুখে চাহিয়া দেখ কি ভীষণ কাণ্ড।

বন্দরে জাহাজ ছাড়ার সময় যে তুমুল কাণ্ড হয় সে সম্পর্কে মুজতবার উপলব্ধি— ‘বন্দরে বন্দরে তখন যে চিৎকার, অট্টরব ও হুঙ্কারধ্বনি ওঠে সে সর্বত্র একই প্রকারের। একই গন্ধ, একই স্বাদ। চোখ বন্ধ করে বলতে পারবে না, নারায়ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে চাঁটগাঁইয়া শুনছ, না হামবুর্গে জর্মন শুনছ।’[৩]

পল আর পার্সির পাশাপাশি আলী সাহেবের আর এক সঙ্গী ‘ঝান্ডু গাইড’ আবুল আসফিয়া। এই ভ্রমণে এদের সঙ্গে তার অবাধ সম্পর্ক— কখনও তিনি পল ও পার্সির বন্ধু, আবার কখনও–বা প্রজ্ঞাবান শিক্ষক। মানুষ, দেশ, বন্দরের খুঁটিনাটি বিষয় শুনিয়ে তিনি তাদের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করছেন। পল ও পার্সির সঙ্গে আলাপচারিতা এবং কৌতুকময় রসালাপ, এ কাহিনীর অনেকটা অংশ জুড়ে আছে। তা সে জিবুটি বন্দরে পার্সির মাত্র তিন শিলিং দিয়ে ও–দ্য–কলনের শিশি ভেবে স্রেফ জল ভরা শিশি কেনা, কিংবা জাহাজের বেহালাবাদন প্রসঙ্গে পলের অসন্তুষ্টি আর পার্সির সাফাই গাওয়া— সবক্ষেত্রেই মুজতবা তাদের ফ্রেন্ড, ফিলোসফার এবং গাইড।

‘জলে–ডাঙায়’ গ্রন্থ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার ‘আবুল আফসিয়া’ চরিত্রটির কথা, ভারী মজার চরিত্র। প্রথমদিকে তিনি ছিলেন মৌন। পল–পার্সি এবং লেখক তাকে নিয়ে কৌতুক অনুভব করেছিলেন। কিন্তু ভ্রমণের শেষপর্বে বিপদের সময় দলের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি সকলকে অবাক করে দিয়েছেন। সুয়েজ বন্দরে ছুট্ হয়ে যাওয়া জাহাজ ধরার জন্য প্রথমে গাড়িতে (ট্যাক্সি) কায়রো শহর, সেখানে জমিয়ে শহর ও পিরামিড দেখা, পরে ট্রেনে পোর্ট সঈদ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর ভ্রমণের মূল কাণ্ডারী তিনি।

১৯৮৬ সালের একটি সংস্করণ; Image Source: facebook.com/Oldbookseller 

সৈয়দ মুজতবা যেখানেই যান না কেন, তার ঝুলি থেকে বাংলাদেশ বেরুবেই। আর অবশ্যই তা সরস ভঙ্গিতে। ছোটদের কাছে ছোটদের মতো হয়েই তিনি উপস্থাপন করেছেন তার লেখাকে। আর তাই দুটি জাহাজের একে অন্যকে অতিক্রম করে যাওয়ার মুহূর্তকে তিনি অসামান্য ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন এ–রচনার প্রায় শুরুতেই, যা পড়ে ছোটরা তো মুগ্ধ হবেই, বড়রাও সমান মজা পাবে। এই বই যে ছোটদের জন্যই, মুজতবা নিজেই তা উল্লেখ করেছেন এ–গ্রন্থে। ছোটদের সম্পর্কে তার উপলব্ধি, ‘সাধারণত বড়রা ছোটদের যত আহাম্মক মনে করেন আমি বুড়ো হয়েও সে রকম ভাবিনে।’ তাই সরস ভঙ্গিতে লেখা এ রচনায় তিনি ছোটদের মৃত্যু বিষয়ক ভাবনার কথাও শুনিয়েছেন।

মুজতবার লেখার পরিচিতজনেরা জানেন, অবলীলায় তিনি প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে চলে যান। মোট তেইশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই গ্রন্থটিও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই মাদ্রাজ, কলম্বো, পোর্ট সইদ, প্যালেস্টাইন, কায়রো, আফ্রিকার জিবুটি বন্দর ও অন্যান্য স্থান পরিভ্রমণকালে তার লেখায় এসেছে জাহাজের খুঁটিনাটি, ইলিশ, সকল ধর্মের প্রতি তার শ্রদ্ধাভাব, পূর্ববঙ্গের প্রতি আত্মিক টান, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, কনফুসিয়াস, মুহম্মদ, গৌতম বুদ্ধ; আবার বিভিন্ন দেশের খাদ্যাভ্যাস, খালাসিদের বাকযুদ্ধ, বোম্বেটে, হারমদ প্রভৃতি শব্দের আদি তথ্য, আফ্রিকার ইতিহাস, বাবুর্চির ভুঁড়ি নিয়ে সরস মন্তব্য আরও কত্তো কী! শুধুই নীরস আলোচনা নয়, প্রসঙ্গে পৌঁছে তিনি পাঠককে নিয়ে ঢুকে পড়েন মনোজ্ঞ ব্যাখ্যায়।

পিরামিডের ভিতরটা দেখা নিয়ে মুজতবার আগ্রহ ছিল না ঠিকই, কিন্তু তার গঠনশৈলী এবং যেসব রাজা সেগুলি তৈরি করেছেন তাদের ঐশ্বর্য সম্বন্ধে মুজতবার বিস্ময়ের অবধি নেই। পিরামিড প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে তিনি স্বভাব বশেই চলে গিয়েছেন তাজমহলের সঙ্গে তার তুলনায় এবং তাজমহল নিয়ে কবিতা লেখা প্রসঙ্গে তিনি তার গুরুদেব রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেছেন। বহুকষ্ট করে পিরামিড তৈরি করে অজস্র টাকা খরচ করে মৃতদেহকে মমি করে রাখার মধ্যে কোনও যৌক্তিকতাও খুঁজে পাননি মুজতবা আলী। আর এই সূত্রে তিনি মিশরীয়দের ভাবনার সঙ্গে মুসলমানদের ভাবনাচিন্তার তফাতকে তুলে ধরেছেন। 

যুবক মুজতবা আলী; Image Source: alchetron.com

‘জলে–ডাঙায়’ এমন ভ্রমণসাহিত্য যেখানে পথের তেমন বর্ণনা নেই, দ্রষ্টব্য স্থানের ফর্দ নেই, নেই সন–তারিখ বা ইতিহাস নিয়ে পেঁজোমিও; বরং ভ্রমণের পাশাপাশি মুজতবা আলী মানুষের অন্দরমহলে ঢুকে পড়েন। তাকে হাসান, ভাবিয়ে তোলেন এবং সেইসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার অংশীদার করেন স্বেচ্ছায়। আর সে ভ্রমণসাহিত্যের মাধ্যমেই পেয়েছি দুনিয়ার পানশালার হালহদিস, চেখেছি বিশ্বের তাবৎ রেস্তোরাঁর কোপ্তা–কাবাব, মাংসের পুরঠাসা পোলাও শশা (লাউ), মিশরীয় সিমবীচি— আরও কত্তো কী। সবই মুজতবা আলীর আত্মজীবনীর খণ্ডাংশমাত্র, নিপুণ বাবুর্চির মতো যা তিনি রসের ভিয়েনে চাপিয়ে পাঠকের সামনে পরিবেশন করেছেন।

মানুষ এবং তার হৃদয়ের অন্বেষণে মুজতবা ছিলেন অক্লান্ত। তাই তার মজলিসে বিশ্বমানবের অবারিত দ্বার। মুজতবার লেখা যেন এক আন্তর্জাতিক সম্মিলনক্ষেত্র। লেখায় নানান বিদেশি শব্দ ও আচার–আচরণ বর্ণনা করে মুজতবা ‘বিবিধের মাঝে’ ‘মিলন মহান’ করে দেখালেন। পাঠকের ভাবনাকে সমৃদ্ধ করে তাকে বৃহত্তর পরিধিতে উত্তরণের স্বপ্ন দেখান সৈয়দ মুজতবা আলী। শতবর্ষের প্রায় দেড় দশক পেরিয়ে, আজও।

Language: Bangla

Topic: This article is about the book 'Jole Dangay' and writings of Mujtaba Ali.

References:

১.     শ্রী প্রমথনাথ বিশী, ‘কথারসিক সৈয়দ মুজতবা আলী’, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, কলকাতা, আশ্বিন ১৪১৭, পৃ. ‘ছ’

২.      শ্রী অরুণ বসু, ‘ভূমিকা’ অংশ, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, সপ্তম খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, কলকাতা, আশ্বিন ১৩৫৫, পৃ. ‘ছ’

৩.     সৈয়দ মুজতবা আলী, ‘জলে–ডাঙায়’, সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী, সপ্তম খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, কলকাতা, আশ্বিন ১৩৫৫, পৃ. ৩

Featured Image: facebook.com/Oldbookseller 

Related Articles

Exit mobile version