অ্যাথেনা: গ্রিক উপকথার জ্ঞানের দেবী

গ্রিক উপকথার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে জ্ঞানের দেবী অ্যাথেনার উপাখ্যান। নিজের মতো করে চলা এই দেবী সম্পর্কে যুদ্ধ দেবতা অ্যারেস একবার জিউসকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন,

তুমি এমন এক অবাধ্য মেয়েকে জন্ম দিয়েছ যে কেবল অনায় কাজ করেই আনন্দ পায়। অলিম্পাসের সবাই যেখানে সবাই তোমাকে মান্য করে চলে, সেখানে ও নিজের ইচ্ছাতেই কাজ করে, তোমার কোনো আদেশই মানে না।

জিউসের নিজ মেয়ে অ্যাথেনাকে পরবর্তীতে যথেষ্ট প্রশ্রয় দিলেও প্রথমে অ্যাথেনার জন্মই দিতে চাননি। কারণ ছিল এক ভবিষ্যদ্বাণী: মেটিসের পেটে জিউসের যে কন্যা হবে সে হবে বুদ্ধিমত্তায় জিউসের সমান। নিজ মেয়ের কাছে বুদ্ধিমত্তার মুকুট হারাতে চাননি জিউস, তাই শুরু করলেন ষড়যন্ত্র। অ্যাথেনার জন্মের কী সেই উপাখ্যান? আর পরবর্তীতেই বা অ্যাথেনা কীভাবে গ্রিক উপকথাকে প্রভাবিত করেছেন?

অ্যাথেনা; Image Source: Grunge

অ্যাথেনার জন্ম

কথিত আছে, জিউস যদি তার স্ত্রী হেরার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতেন, তবে গ্রিক উপকথার কলেবর এতটা বড় হতো না। অ্যাথেনার জন্মের ক্ষেত্রেও এই কথা ব্যতিক্রম নয়। জিউসের এবারের লক্ষ্য ছিল টাইটান ওসেনাস এবং টাইটানেস টেথিসের ৩ হাজার সমুদ্র কন্যার একজন মেটিস। সেক্ষেত্রে মেটিসকে দ্বিতীয় যুগের টাইটান হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা যায়, অর্থাৎ এক হিসেবে মেটিস ছিলেন জিউসের বোন। অবশ্য জ্ঞানের দেবী মেটিসের জন্ম জিউসের অনেক আগে, আর তিনিই ছিলেন জিউসের জীবনের প্রথম ভালোবাসা।

মেটিস তার জ্ঞানের সাহায্যে সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন জিউসের প্রথম ভালোবাসা তিনি হলেও এই তালিকার শেষ নেই, তাই প্রথমে তিনি জিউসকে এড়িয়েই যাচ্ছিলেন। তবে নাছোড়বান্দা জিউসের বারবার আমন্ত্রণে তিনিও শেষমেশ সাড়া দিলেন।

এদিকে পৃথিবীর আদিমাতা গাইয়া (প্রথম যুগের টাইটানদের মা) ভবিষ্যদ্বাণী করলেন মেটিসের গর্ভে জিউসের প্রথম সন্তান হবে কন্যা, আর এই কন্যাসন্তান বুদ্ধিমত্তায় ও শক্তিতে হবে জিউসের সমান। আর দ্বিতীয় সন্তান যদি হয়, তবে সে হবে পুত্র। আর জিউস যেভাবে তার বাবাকে হটিয়ে দেবতাদের রাজা হয়েছিলেন, সেই একইভাবে এই দ্বিতীয় সন্তানও জিউসকে হটিয়ে পরবর্তী রাজা হবে।

জিউস এবার ভয় পেলেন, আর যা-ই হোক, ক্ষমতা হারাতে তিনি রাজি নন। যে মেটিসকে পাওয়ার জন্য তিনি নানা রূপ ধারণ করে নাছোড়বান্দার মতো লেগে ছিলেন, ক্ষমতার জন্য সেই মেটিসকেই বিসর্জন দিতে একমুহূর্ত দেরি করলেন না। পরিকল্পনা করলেন- তার বাবা ক্রোনাস যেভাবে তার ভাই-বোনদের গিলে ফেলেছিলেন, তিনিও সেই একইভাবে মেটিসকেও গিলে ফেলবেন।

পিটার পল রুবেন্সের আঁকা সন্তানকে খেয়ে ফেলা স্যাটার্ন (ক্রোনাস); Image Source: Biblioklept

মেটিসকে গলাধঃকরণ সহজ ছিল না, সবসময় সতর্ক থাকতেন তিনি। জিউস দেখা করতে গিয়ে দেখতে পেলেন- মেটিস সুতা দিয়ে পোশাক বুনছেন, সাথে বানাচ্ছেন এক হেলমেট। জিউস তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কার জন্য এই পোশাক বানাচ্ছেন। প্রশ্ন শুনতেই মেটিস একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন, আর সেই সুযোগেই জিউস তাকে গিলে ফেললেন।

তবে জিউস দেরি করে ফেলেছিলেন, মেটিস ততদিনে অন্তঃসত্ত্বা। মেটিস তার গর্ভের সন্তানের জন্যই পোশাক বানাচ্ছিলেন। গিলে ফেলার পর জিউসের পেটের মধ্যেই মেটিস পোশাক বোনা শুরু করলেন, আর সেই বোনার শব্দে প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হতো জিউসের।

জিউসের মাথাব্যথা এবং অ্যাথেনার জন্ম; Image Source: Wattpad

একদিন ট্রাইটন নদীর তীরে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হলো জিউসের। তার গোঙানি শুনে হাজির হন দেবদূত হার্মিস। জিউস হার্মিসকে পাঠালেন কামার দেবতা হেফাস্টাসকে ডাকার জন্য। হেফাস্টাস তার কুড়াল নিয়ে হাজির হলেন, সোজা কোপ দিয়ে মাথা খুলে ফেললেন। জাদুর মতো জিউসের মাথা থেকে যুদ্ধপোশাক আর হেলমেট পরা অবস্থায় বের হলেন এক অপ্সরী। হার্মিস আর হেফাস্টাস যারপরনাই অবাক, এভাবে যে আর কোনো দেবতার জন্ম হয়নি। জিউস বুঝতে পারলেন- এই অপ্সরী আর কেউ নন, তার মেয়ে অ্যাথেনা।

মা যেহেতু জ্ঞানের দেবী ছিলেন, অ্যাথেনাও হয়ে উঠলেন জ্ঞানের দেবী। জিউস প্রথমে অ্যাথেনাকে না চাইলেও পরবর্তীতে তার খুব প্রিয় সন্তান হয়ে উঠলেন।

অ্যাথেনার জন্ম; Image Source: Wikimedia Commons

এরিকথোনিয়াস এবং অ্যাথেনা

অ্যাথেনা ছিলেন গ্রিক উপকথার অন্যতম কুমারী দেবতা, এবং এই কুমারিত্ব রক্ষার জন্য তিনি যথেষ্টই সচেতন থাকতেন। তবে এই কুমারিত্বের প্রায় অবসান হতে গিয়েছিলো কামার দেবতা হেফাস্টাসের জন্য।

হেফাস্টাস ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতির স্বামী হলেও দুজনের মধ্যে ঝামেলা হওয়ায় দুজন আলাদা থাকতেন। এমন সময়েই অ্যাথেনা একবার যুদ্ধের অস্ত্র বানানোর জন্য হেফাস্টাসের কাছে এলেন। হেফাস্টাস তখনই অ্যাথেনার জন্য প্রবল কামনা অনুভব করেন এবং জোর করেই অ্যাথেনার সাথে মিলিত হতে চাইলেন। কিন্তু অ্যাথেনা সরাসরি নিষেধ করে দিলেন এবং একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। হেফাস্টাসের বীর্য অ্যাথেনার উরুতে পড়লে অ্যাথেনা সেটি ঘৃণাভরে এক টুকরো পশম দিয়ে মুছে ফেলে দেন। কিন্তু পৃথিবীমাতা গাইয়ার উর্বরতার কারণে এই বীর্য থেকে জন্ম নেয় এক বাচ্চা। অ্যাথেনা এই বাচ্চাকে ভরণপোষণের দায়িত্ব দেন, নাম দেন এরিকথোনিয়াস।

অ্যাথেনা তার দত্তক নেওয়া বাচ্চাকে এক ঝুড়ির মধ্যে লুকিয়ে রেখে অ্যাথেন্সের রাজা সেক্রোপসের ৩ মেয়ের (হেরসে, অ্যাগ্লোরাস এবং প্যান্ড্রোসাস) কাছে পাঠিয়ে দেন, তাদের আদেশ দেন ঢাকনা না খোলার জন্য। একদিন অ্যাথেনা অ্যাথেন্স শহরের অ্যাক্রোপোলিসকে সাজানোর জন্য পাহাড় খুঁজতে অন্যদিকে চলে গিয়েছিলেন। এমন সময় সেই ৩ বোন অ্যাথেনার নির্দেশ অমান্য করে ঢাকনা খুলে ফেলেন এবং এরিকথোনিয়াসকে দেখে ভয় পেয়ে দৌড় দেন। অ্যাক্রোপোলিসের প্রান্ত থেকে নিচে পড়ে মারা যান। এরিকথোনিয়াসের এই খবর এক সাদা দাঁড়কাক গিয়ে অ্যাথেনাকে জানালে অ্যাথেনা রেগে গিয়ে দাঁড়কাকটিকে কালো বানিয়ে দেন এবং তার নিয়ে আসা পাহাড় রাগে নিচে ছুড়ে মারেন। এই পাহাড়ই এখন অ্যাথেন্স শহরের মাঝখানে থাকা লাইকাবেট্টাস পাহাড়।

পরবর্তীতে অ্যাথেনার সাহায্যে এরিকথোনিয়াস অ্যাথেন্সের রাজা হন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটান। উপকথা অনুযায়ী, এই এরিকথোনিয়াসই প্রথম ঘোড়ার সাথে রথ যুক্ত করেন, লাঙল আবিষ্কার করে কৃষকদের কর্ষণ কাজে সুবিধা করে দেন এবং মানুষকে রূপার ব্যবহার শেখান।

অ্যাথেনার প্রতিশোধের গল্প

আরাকনি: লিডিয়া শহরে বাস করতেন এক সুন্দরী নারী- আরাকনি। তিনি একইসাথে নিজের সৌন্দর্য আর তাঁতকাজের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। আরাকনির এই তাঁতকাজের জন্য নিজের মধ্যে গর্বও ছিল। তার সুতা বোনার কাজ দেখতে নিম্ফরা পর্যন্ত হাজির হতো। গ্রিক উপকথা অনুযায়ী, তাঁতকাজ এবং সুতা বোনা আবিষ্কার করেছিলেন অ্যাথেনাই, এবং তিনিই মানুষকে এসব কাজ শিখিয়ে দেন। আরাকনির কাজ দেখে এক নিম্ফ মন্তব্য করে বসলো, আরাকনি নিশ্চয়ই অ্যাথেনার কাছ থেকেই এই কাজ শিখেছেন। কিন্তু উদ্ধত আরাকনি অস্বীকার করে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন অ্যাথেনাকে। দাবি করলেন, তিনি অ্যাথেনার চেয়েও ভালো তাঁতের কাজ জানেন, এবং যদি অ্যাথেনা তাকে হারাতে পারে, তবে যেকোনো শাস্তি গ্রহণ করতে রাজি আছে সে। এই কথা কানে গেল অ্যাথেনার।

রেনেঁ আতোঁয়ার তুলিতে মিনার্ভা (অ্যাথেনার রোমান নাম) এবং আরাকনি; Image Source: Wikimedia Commons

অ্যাথেনা হাজির হলেন আরাকনির বাসায়। বৃদ্ধা মহিলার ছদ্মবেশে আরাকনিকে অনুরোধ করলেন তার কথা ফিরিয়ে নিতে। আরাকনি উল্টো বৃদ্ধাবেশী অ্যাথেনাকে দু-চার কথা শুনিয়ে দিলেন। ব্যস! অ্যাথেনা তার ছদ্মবেশ খুলে হাজির হলেন আরাকনির সামনে। বাকিরা অ্যাথেনাকে দেখে মাথা নিচু করে সম্মান জানালেও আরাকনি উদ্ধত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেন। অ্যাথেনা এবং আরাকনি শুরু করলেন তাদের তাঁতের কাজ। স্বাভাবিকভাবেই অ্যাথেনার কাছে হেরে গেলেন আরাকনি, এবং শাস্তি হিসেবে আরাকনিকে মাকড়সায় রূপান্তর করলেন অ্যাথেনা। সেই থেকে মাকড়সা শুধু সুতাই বুনে যাচ্ছে। 

মাকড়সায় পরিণত হওয়া আরাকনি; Image Source: Athens and Beyond 

মেডুসা: দানব টাইফোইয়াস আর সাপ-মানবী একিডনের মিলনে ৩ গর্গনের জন্ম হয়, এর মধ্যে মরণশীল ছিলেন মেডুসা। মেডুসা ছিলেন খুবই সুন্দরী। পরবর্তীতে মেডুসাকে অভিশাপ দিয়ে অ্যাথেনা সর্পকেশী দানবীতে পরিণত করেন।

অ্যাথেনা কেন মেডুসাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে দুটো মত পাওয়া যায়। প্রথমটি হলো, মেডুসা অনেক উত্তর দিকে থাকতেন। তিনি দক্ষিণ দিকে আসার জন্য অ্যাথেনার কাছে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু অ্যাথেনা অনুমতি না দেওয়ায় মেডুসা রেগে অ্যাথেনাকে বলেন, “তুমি আমাকে দক্ষিণে আসতে দিতে চাও না, কারণ আমি তোমার চেয়ে সুন্দরী।” এরপরেই অ্যাথেনা মেডুসাকে অভিশাপ দেন।

অ্যাথেনার অভিশাপে দানবীতে পরিণত হওয়া মেডুসা; Image Source: Mythology Source

অন্য মত অনুযায়ী, মেডুসা দক্ষিণেই থাকতেন, এবং প্রচণ্ড সুন্দরী ছিলেন। তাকে দেখে অনেকেই কামনা করতেন, সমুদ্র দেবতা পসাইডনও ব্যতিক্রম ছিলেন না। একদিন পসাইডন আর মেডুসা মিলিত হলেন, আর তা-ও অ্যাথেনার মন্দিরের ভেতরেই। আরেকটি মত অনুযায়ী, পসাইডন জোর করে মেডুসার সাথে অ্যাথেনার মন্দিরে সঙ্গম করেন, মেডুসার দোষ ছিল না। ঘটনা যা-ই হোক, অ্যাথেনার পুরো আক্রোষ পড়ে মেডুসার ওপর, এবং মেডুসা হয়ে যান সর্পকেশী দানবী, যার শরীর ড্রাগনের, এবং যার চোখের দিকে চোখ পড়ামাত্রই অন্যরা পাথর হয়ে যাবে। পরবর্তীতে অ্যাথেনার সাহায্যেই মেডুসাকে হত্যা করেন গ্রিক বীর পার্সিয়াস।  

মেডূসার কাটা মাথা হাতে পার্সিয়াস; Image Source: Thought Co.

ডিডেলাস: ডিডেলাস অ্যাথেন্স শহরের বেশ বিখ্যাত স্থপতি ছিলেন। মনে করা হয়, ডিডেলাস তার এই জ্ঞান পেয়েছিলেন অ্যাথেনার কাছ থেকেই। ডিডেলাসের বোন তার ছেলে পারডিক্সকে রেখে আসেন মামা ডিডেলাসের কাছে, স্থাপত্যবিদ্যা শেখার জন্য। অল্প সময়েই পারডিক্স অনেক কিছু আয়ত্ব করে ফেলেন। একটুকরো লোহা নিয়ে তার একপাশ তীক্ষ্ণ করে খুব দ্রুত পাথর কাটার যন্ত্র আবিষ্কার করেন পারডিক্স, অর্থাৎ প্রাচীন গ্রিকরা করাতের আবিষ্কর্তা হিসেবে পারডিক্সকেই স্বীকৃতি দেন।

এদিকে পারডিক্স দিনে দিনে ডিডেলাসের সমকক্ষ হয়ে উঠছিলেন। ডিডেলাস বুঝতে পারেন- পারডিক্স বেঁচে থাকলে তার চেয়েও বড় স্থপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। সুতরাং, পারডিক্সকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করলেন ডিডেলাস। একদিন অ্যাক্রোপোলিস ভ্রমণের সময় ধাক্কা দিয়ে পারডিক্সকে সেখান থেকে ফেলে দেন ডিডেলাস। অ্যাথেনা সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছিলেন। পারডিক্স পড়ামাত্রই তাকে একধরনের পাখিতে রূপান্তর করেন (যা এখন পারডিক্স পাখি নামেই পরিচিত)। পারডিক্স উড়ে নিজেকে রক্ষা করেন। এদিকে ডিডেলাসের এই অপরাধের জন্য তার জ্ঞান কেড়ে নেওয়া হয় বলে ধারণা করা হয় এবং তাড়িয়ে দেওয়া হয়। একইসাথে ডিডেলাসের মুখে পারডিক্স পাখির আকারের দাগ দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে লোকজন দেখে চিনতে পারে সে একজন খুনী। প্রাচীন গ্রিসে খুনীদের মুখে এ ধরনের পাখির দাগ করে দেওয়ার প্রচলন ছিল। 

রোমান মোজাইকে ডিডেলাস (মাঝখানে) এবং তার ছেলে ইকারুস; Image Source: Wikimedia Commons

দুর্ঘটনা এবং অ্যাথেনা

পালাস: অ্যাথেনার জন্ম হয়েছিল ট্রাইটন নদীর তীরে, তো সেই নদী দেবতা ট্রাইটনেরই এক মেয়ে ছিল পালাস নামে। পালাস ছিলেন অ্যাথেনার খেলার সাথী। দুজন সারাদিন একসাথেই কাটাতেন। একদিন দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে পালাস অ্যাথেনাকে আঘাত করতে উদ্যত হন। এদিকে জিউস তার মেয়ের এ অবস্থা দেখে স্বর্গ থেকে তার ঢাল পাঠিয়ে অ্যাথেনাকে রক্ষা করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় পালাস বিমূঢ় হয়ে যান এবং এই সুযোগে অ্যাথেনা পালাসকে আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে পালাস মারা গেলে অ্যাথেনা বুঝতে পারেন তিনি কত বড় ভুল করে ফেলেছেন।

পরবর্তীতে অ্যাথেনা পালাসের স্মরণে একটি কাঠের মূর্তি তৈরি করেন পালাডিয়াম নামে। এই মূর্তি শহরে থাকলে সে শহরের কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে করা হতো। ট্রয় যুদ্ধের আগে এই মূর্তি ছিল ট্রয়ে, কিন্তু যুদ্ধের সময় ওডিসিয়াস এবং ডায়োমিডিস এই মূর্তি চুরি করে নিয়ে আসেন, যার ফলে ট্রয়ের পতন হয়। পরবর্তীতে এই মূর্তি রোমে চলে যায় এবং রোমের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে থাকে।

প্যালাডিয়াম হাতে ডায়োমিডিস; Image Source: Wikimedia Commons

আয়োডামা: আয়োডামা ছিলেন অ্যাথেনার মন্দিরের পুরোহিতানী। একদিন রাতে আয়োডামা যখন মন্দিরে ঢুকছিলেন তখন হঠাৎ সামনে অ্যাথেনাকে দেখতে পান। অ্যাথেনার কাপড়ে আঁকা ছিল মেডুসার কাটা মাথার ছবি। সেই ছবি দেখামাত্রই আয়োডামা পাথরে পরিণত হন।

এগুলো ছাড়াও ট্রোজান যুদ্ধের সময় অ্যাথেনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্যারিসের সুন্দরী দেবীর বিচার থেকে শুরু করে পুরো যুদ্ধজুড়েই যুদ্ধকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন অ্যাথেনা। এছাড়াও পার্সিয়াস এবং হেরাক্লেস (রোমান: হারকিউলিস)-কেও বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিলেন তিনি।

Feature Image: Telecom TV

This article is in the Bengali language. It is about Athena, the goddess of wisdom and war in greek mythology. 

Sources: 
1. গ্রিক মিথলজি - আদি থেকে অন্ত - এস এম নিয়াজ মাওলা - জাগৃতি প্রকাশনী
2. Athena - Greek Gods and Goddesses
3. Athena - Theoi

Related Articles

Exit mobile version