প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে যারা মোটামুটি পড়াশুনা করেন এবং জ্ঞান রাখেন তাদের কাছে বিভিন্ন প্রাণীর আশ্চর্যজনক ক্ষমতার বিষয়টি খুব একটা নতুন নয়। তবে জীবজগতে যতই নতুন নতুন প্রজাতির আবিষ্কার করছে মানুষ, ততই যেন বিস্ময় সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আবিষ্কৃত হচ্ছে এমন নতুন নতুন প্রজাতির প্রাণী যা সত্যিই বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। আজ আলোচনা করবো এমনই দশটি আদ্ভুত প্রাণীর কথা যা আপনারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।
১০) মুখ চেনা মাছ ‘আর্চার ফিশ’
মুখ চেনা মাছ কি ভাবছেন তো? এমন এক মাছের কথা বলছি যা মানুষের মুখ চিনতে পারে! প্রাণীবিদরা মাছের মধ্যে মানুষের চেহারা শনাক্ত করার ক্ষমতা আবিষ্কার করেছেন। হ্যাঁ, আমি আর্চার ফিশের কথা বলছি যা মানুষের চেহারা দেখে মনে করতে পারে যে এই চেহারাটি সে আগে দেখেছিল।
আর্চার ফিশ এর মধ্যে টক্সোট ক্যাটেরিয়াস নামের একটি প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে মানুষের চেহারা মনে রাখার মত আশ্চর্য গুণ। প্রথমত এই মাছের পোকামাকড় শিকারের পদ্ধতি দেখেও আপনি অবাক হতে বাধ্য। এরা মুখ থেকে পানির প্রবাহ থুতুর মত নিঃসৃত করে পোকামাকড় পরাস্ত করে নিজেদের শিকারে পরিণত করে! হ্যাঁ, এই মাছ মানুষের মত থুতুও ফেলতে পারে! গবেষণায় দেখা গেছে স্বচ্ছ পানির ক্যাটেরিয়াস মাছ প্রায় ৪৪ জন মানুষের চেহারা মনে রাখতে সক্ষম। গবেষকরা একটি স্বচ্ছ কাচের ট্যাংকে ক্যাটেরিয়াস মাছ রেখে তার পাশে একটি কম্পিউটার পর্দায় দুটি মানুষের ছবি ভাসিয়ে তোলেন। তারা যেকোন একটি চেহারা শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণ দেন মাছটিকে। পরবর্তীতে ছবি দুটির অবস্থান পরিবর্তন করে দেয়া হলেও মাছটি সঠিক ভাবে প্রথমে যে ছবিটিতে থুতু দিয়েছিল তাতেই থুতু দেয়। গবেষকরা সেই ছবিটি কম্পিউটার এডিটিং এর মাধ্যমে যথেষ্ট পরিবর্তন করে কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখালেও মাছটি তা সঠিকভাবেই শনাক্ত করে!
প্রাণিবিজ্ঞানীদের নিকট এখনও আর্চার মাছের এই ক্ষমতা একটি রহস্যের মতই হয়ে আছে। কেননা চেহারা মনে রাখে মস্তিস্কের নিওকর্টেক্স নামে একটি অংশ যা মানুষ ছাড়াও অন্যান্য উন্নত প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আর্চার মাছের ছোট্ট মস্তিস্কে কোন নিওকর্টেক্স নেই যা বিজ্ঞানীদের হতবুদ্ধি করছে।
৯) ফটোগ্রাফার পতঙ্গ
গুবরে পোকা দেখেছেন কি কখনো? তারা কোথায় বসে নৃত্য করে বলুন তো? আরে উত্তর তো খুব সহজ। গোবর ছাড়া গুবরে পোকা আর কোথায় থাকবে বলুন। কিন্তু এই গুবরে পোকার মধ্যে অসাধারণ এক ক্ষমতার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরা যখন গোবরের ছোট ছোট ঢিবি বা বলের উপর উঠে নৃত্য করে, তখন এরা নিজেদের মনের মধ্যে আকাশের ছবি তোলে!
ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা? ভরসা রাখুন, আপনি ঠিকই পড়ছেন। অন্তত গবেষকরা দাবি করছেন যে গুবরে পোকা আকাশের ছবি নিজেদের মস্তিস্কে রাখার মাধ্যমে তাদের অবস্থান ঠিক করে এবং স্বল্প সময়ের নৃত্য তাদের মস্তিস্কে তাদের পরিপার্শ্বের ভৌগলিক অবস্থানের একটা স্মৃতি তৈরী করে। তারপর তারা গোবরের বল থেকে নেমে সোজা হাঁটা শুরু করে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকামাকড় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবার সময় তারা আমাদের ছায়াপথ মিল্কি ওয়ে’র দ্বারা নির্দেশিত হয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে চলতে থাকে, এই তথ্যটি বিজ্ঞানীদের জানা ছিল অনেকদিন থেকেই। কিন্তু গুবরে পোকারা অপরাপর কীটপতঙ্গ থেকে আরও অধিক অগ্রসর। এদের ন্যাভিগেশনাল সক্ষমতা মানুষের চেয়েও অনেক উন্নত। এই ক্ষুদ্র জোতির্বিদ মশাই যখন গোবরের উপর উঠে নৃত্য করে, তখন এরা চাঁদ, সূর্য সহ তারকাদের অবস্থান নিজেদের মস্তিস্কে ম্যাপিং করে রাখে! পরবর্তীতে পথ চলতে এই ম্যাপ কাজে লাগায়।
তবে বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তারা এতটুকু নিশ্চিত হয়েছেন যে, অন্যান্য পোকামাকড়ের মতো গুবরে পোকা প্রকৃতির কোনো সহজ ইঙ্গিত ব্যবহার করে না।
৮) পিঁপড়ার ভেলা!
একদল পিঁপড়া হেঁটে যাচ্ছে কোথাও। একটা ঢালু জায়গায় যেতেই আপনি তাদের সেখানে পানি ঢেলে দিলেন। এবার তারা যদি একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে হতবাক করে দিয়ে তারা একে অপরের সাথে মিলে একটি ভেলা তৈরী করবে যার মাধ্যমে তারা পানি থেকে সাঁতরে তীরে চলে আসবে। তবে এটাতো গবেষকদের কাছে পুরনো খবর। যে খবরটি নতুন তা হচ্ছে ভেলা তৈরী করার সময় তারা এলোমেলোভাবে সজ্জিত হয় না, বরং মেনে চলে একটি নির্দিষ্ট ফরমেশন, যেখানে প্রত্যেকটি পিঁপড়া একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে!
ভেলা বানানোর ব্যাপারটি বিজ্ঞানীরা যখন নতুন করে লক্ষ্য করেন, তারা দেখেন যে প্রতিবার ভেলায় নির্দিষ্ট পিঁপড়া নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকছে। তার এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে কিছু পিঁপড়াকে ভিন্ন ভিন্ন রঙে রাঙিয়ে নকল ঢেউয়ে ছেড়ে দেন। দেখা যায় পিঁপড়াগুলো প্রতিবার অব্যর্থভাবে নিজেদের পূর্ববর্তী অবস্থানে গিয়ে ভেলা বানাচ্ছে।
মূলত পিঁপড়ারা তাদের চোয়াল, পা এবং পায়ে একপ্রকার আঠালো প্যাডের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ভেলা তৈরী করে। বিস্ময় এখানেই শেষ নয়। ভেলা তৈরীর সময় তারা ডিম, পিউপা, লার্ভা এবং ছোট ও দুর্বল পিঁপড়াগুলোকে মাঝের অবস্থানে রাখে, যাতে তারা আরামে থাকে। আলপিন সিলভার নামে একপ্রকার পিঁপড়া ঝড়ের কবলে পড়লে তাদের কলোনির রানীকে ঘিরে সবাই যার যার নির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে।
৭) বিমানকে হার মানায় সাপ
কিছু প্রজাতির সাপ আছে, যেগুলো জঙ্গি বিমানের চেয়েও অধিক দ্রুততার সাথে গতিবৃদ্ধি করতে পারে! গবেষকগণ ১৪টি টেক্সাস র্যাটল স্নেক, ২টি ভাইপার, ৬টি ওয়েস্টার্ন কটনমাউথ এবং ১২টি ডায়মন্ডব্যাক র্যাটল স্নেকের আক্রমণ করার চিত্র ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেন। আর এই ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তারা পান বিস্ময়কর একটি তথ্য।
একটি অত্যাধুনিক ফাইটার বিমান সর্বোচ্চ যে গতিতে চলতে পারে, একটি সাপ তার চেয়ে তিনগুণ অধিক গতিতে আক্রমণ করতে পারে! এক কথায়, গবেষণায় তারা যে সাপগুলো ব্যবহার করেছিলেন, তারা সবাই মানুষের চোখের পলকের কম সময়ে আক্রমণ করতে সক্ষম। মানুষের চোখ সাধারণত পলক ফেলতে সময় নেয় ২০০ ন্যানোসেকেন্ড, যেখানে নিজের সামনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সাপগুলো সময় নেয় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড!
৬) পানিশূন্য ব্যাঙাচি
এদের অস্বাভাবিকতা আপনাকে বিস্মিত করবে এটা নিশ্চিত। আমি বলছি ‘ইন্ডিয়ান ড্যান্সিং’ ব্যাঙের ব্যাঙাচির কথা। এরা বসবাস করে বালুর মধ্যে, এমনকি খায়ও বালু! পুরুষ ব্যাঙগুলো আবার একপ্রকার নৃত্যও করে (নামকরণের কারণ) যা দ্বারা বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে এবং প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়।
মাইক্রিএক্সেলাস হেরেই প্রজাতির এই ব্যাঙগুলো বাস করে নদীর নিচে বা তীরের বালুর গভীরে। এ প্রজাতির ব্যাঙাচি দেখতে অনেকটা পাঁকাল মাছের মতো। দেহের শেষাংশে থাকে পেশল লেজ, যার দ্বারা এরা মাটি এবং নুড়ির মধ্য দিয়ে ছিদ্র করে নিজেদের স্থান করে নেয়। ব্যাঙাচি অবস্থায় আর কোনো প্রজাতির ব্যাঙই গর্ত খুঁড়তে পারে না। একটি মোটা চামড়ার আবরণ এদের চোখকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে যা এদের সত্যি অবিশ্বাস্য করে তোলে তা হচ্ছে এদের খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়া। এরা মাটির নিচে পলি খায় এবং বিশেষ ধরণের প্রত্যঙ্গের সহায়তায় এদের অন্ত্রে তা পরিপাক হয় এবং কলাগুলো চুনাপাথরে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
৫) কালো শার্কে উজ্জ্বল আভা
এক নতুন প্রজাতির শার্ক পাওয়া গেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে। শার্কগুলো সম্পূর্ণ কালো, কিন্তু মাঝে মাঝে উজ্জ্বল আভা সৃষ্টি করতে পারে। আভা তৈরীর এই প্রক্রিয়াকে বলে বায়োলুমিনোসিটি। এরা পানির ১.৬ কিলোমিটার গভীরে বসবাস করে। অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ আলোক সৃষ্টি করার ক্ষমতা এবং প্রচন্ড গতিতে শিকারকে পরাস্ত করার ক্ষমতার জন্য বিজ্ঞানীরা এদের নাম দিয়েছে ‘নিনজা ল্যান্টার্নশার্ক’। ‘ফটোফোর’ নামক একপ্রকার কাপ সদৃশ অঙ্গ থেকে এদের দেহ আলোক তৈরী করে। সমুদ্রে আলো তৈরী করতে পারে এমন আরও ৪০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
যেখানে অন্যান্য প্রজাতির লুমিনাস মাছের দেহের নিচের অংশে পুরোটাই ফটোফোর থাকে, সেখানে নিনজার আছে কেবল মাথার চারদিকে। গবেষকরা এদের এই আভা সৃষ্টির সঠিক কোনো কারণ আজও খুঁজে পাননি। তবে উদ্দেশ্য হচ্ছে শিকারকে প্রলোভন দেখানো। আপনিই ভেবে দেখুন না, সমুদ্রের গভীরে, গাঁ শিরশির করা অন্ধকারে হঠাৎ কোথাও একটা আলোর দেখা পেলে আপনি কি সেই আলোর উৎসের দিকে আগ্রহী হবেন না?
৪) দেয়ালে আরোহণ করছে মাছ!
ক্রিপটোটোরা থামিকোসা নামের এক প্রজাতির মাছ, মূলত গুহায় বসবাসকারী, দেহের শ্রোণীচক্রের সহায়তায় দেয়ালেও আরোহণ করতে পারে! যদি আগে না শুনে থাকেন তবে আজ জেনে নিন এই বিস্ময়কর মাছের কথা, যার কিনা কোনো চোখ নেই, কিন্তু যা আছে তা হচ্ছে অদম্য ভ্রমণ পিপাসা। আর তাই কখনো কখনো এরা জলপ্রপাতের ধারের পাথুরে পাহাড় বেয়ে অনেকটা উপরেও উঠে যায়।
আরও কয়েকপ্রজাতির ‘ওয়াকিং ফিশ’ (হাঁটতে পারে যেসব মাছ) রয়েছে যেমন ওয়াকিং ক্যাটফিশ, মাডস্কিপারস, লাংফিশ ইত্যাদি, যারা তাদের লেজ এবং ডানার সাহায্যে নদীর তীরে বা তলদেশের মাটিতে হাঁটে। কিন্তু থামিকোসা ভিন্ন। এর শ্রোণীদেশের অস্থিসমূহ অনেকটা উন্নত চতুষ্পদী প্রাণীর মতো। অনেক বিজ্ঞানী তাই থামিকোসাকে ডারউইনের বিবর্তনবাদের সাথে তুলনা করে বলতে চান যে, এই মাছ কোনো এক চতুষ্পদী প্রাণীরই বিবর্তিত রূপ।
৩) দৈহিক গঠন বদলে ফেলা ব্যাঙ
আন্দিজ পর্বতমালায় এক নতুন অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। বহুরূপী ব্যাঙের সাথে আমরা অনেক আগেই পরিচিত যারা কিনা একাধিক রঙ ধারণ করতে পারে। কিন্ত এই ব্যাঙ যে দেহের রঙ পরিবর্তন করেই ক্ষান্ত হয় না, একেবারে দেহের গঠনই পরিবর্তন করে ফেলে!
২০০৯ সালে একদল গবেষক আন্দিজে রাত্রিকালীন খোঁজ করছিলেন। হঠাৎ পুরো দেহ কন্টকময় একটি ব্যাঙ তাদের নজরে আসে। ব্যাঙটির দেহে এত পরিমাণ কাটা ছিল যে, তারা সেটিকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘পাঙ্ক রকার’ নামকরণ করেন। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে পরদিন যখন তারা ব্যাঙটি দেখলেন, তখন হয়তো তারা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় চমকটি পেয়ে গেলেন। তারা দেখলেন যে, ব্যাঙটির দেহে কাঁটার চিহ্নও নেই! বরং এটির ত্বক ভীষণ মসৃণ!
গবেষকরা প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। পরে তারা ব্যাঙের কন্টেইনারের মধ্যে এক ঝাড় মস রাখেন। দেখা যায় এক মিনিটের মধ্যে ব্যাঙটির ত্বকে কাঁটা ফিরে এসেছে। দেহের গঠন পরিবর্তন করার ভান করতে পারে, এরকম কোনো উভচর প্রাণী আগে দেখা যায় নি। এই প্রজাতির একটি ব্যাঙকে হয়তো কিছুক্ষণ পরপর দেখলে আপনি একটি ব্যাঙকে ৫/৬টি ভিন্ন ব্যাঙ ভাবতে পারেন!
২) মুখবিহীন হাইড্রার মুখ কিন্তু আছে!
বলছি মিঠা পানির জীব হাইড্রা ভালগারিসের কথা। এদের দেহে কোনো অস্থি তো নেই-ই, নেই কোনো মুখছিদ্র। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না যেন হাইড্রা খায় না। হাইড্রা তার শিকারকে নেমাটোসিস্ট নামক এক বিশেষ রকমের অঙ্গ থেকে নিউরোটক্সিন ছুড়ে দিয়ে অবশ করে দেয়। এরপর আপনি যা দেখবেন তা নিশ্চিতভাবে আগে কখনো দেখেননি।
হাইড্রা তার মাথার ত্বকের মধ্যে চিড় সৃষ্টি করে, যা ধীরে ধীরে বড় হয় এবং দেখতে মুখের মতো দেখায়। তখন সে তার শিকারকে সেই ছিদ্রের মধ্যে নিয়ে যায়। তবে বিস্ময়ের ঘোর কাটার আগেই আরেক বিস্ময় আপনাকে পেয়ে বসবে। আপনি যেন প্রাচীন গ্রীক রূপকথার জাদুর দরজাই বাস্তবে দেখলেন, যে দরজা মন্ত্র পড়লে সমতল মাটির মধ্যে অলৌকিকভাবে সৃষ্টি হয়, আবার মন্ত্র পড়লে কোনো চিহ্ন থাকে না। হাইড্রাও তেমনি তার শিকারকে মুখের ভিতরে নেয়ার পর ত্বক এমনভাবে জোড়া লাগায় যেন এখানে কখনোই কোনো ছিদ্র ছিল না! তবে আর দেরি কেন, ইউটিউবে আপনিও দেখে নিতে পারেন হাইড্রার এই বিস্ময়কর ক্ষমতার ভিডিও চিত্র।
১) অমর জীব হাইড্রা!
মানুষের দেহে যে স্টেম সেল আছে তা নিশ্চয় জানেন। স্টেম সেলের কাজ হচ্ছে শরীরে কোনো কোষ মারা গেলে বা কোনো কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হলে স্টেম কোষ রূপান্তরিত হয়ে সেই কোষের ঘাটতি পূরণ করে। কিন্তু একটি সম্পূর্ণ অঙ্গ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে স্টেম সেলও অসহায়। কখনো কি শুনেছেন কারো একটি আঙ্গুল কাঁটা গেছে কোনো দুর্ঘটনায় এবং পরে সেটা পুনঃরায় হয়েছে?
মানুষের ক্ষেত্রে না শুনলেও হাইড্রার ক্ষেত্রে হয়তবা শুনে থাকবেন। কেননা হাইড্রার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্ষিকার মধ্যে থাকা স্টেম কোষগুলোর মধ্যে রয়েছে আশ্চর্য রকমের পুনরুৎপাদন ক্ষমতা। আপনি হাইড্রার দেহের একটি অঙ্গ কেটে ফেললেও হাইড্রার তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ স্টেম কোষ খুব শীঘ্রই পুনঃপুনঃ বিভাজনের মাধ্যমে সেই অঙ্গটি ঠিক সৃষ্টি করে নেবে।
জীববিজ্ঞানী ড্যানিয়েল মার্টিনেজ হাইড্রার অমরত্ব পরীক্ষার জন্য ২,৩০০টি হাইড্রাকে একটি কৃত্রিম ব্যবস্থার মধ্যে স্বচ্ছ পানিতে রাখেন। তাদেরকে প্রয়োজন মতো খাবার দিতে থাকেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো হাইড্রা মারা যায় কিনা। প্রায় ৮ বছর চলে তার এই পর্যবেক্ষণ।
ফলাফল দাঁড়ায়, প্রতি ১৬৭ হাইড্রায় একটি হাইড্রা মারা যায়। কিন্তু বাকিরা আশ্চর্য হারে প্রজনন করে চলে। আট বছরেও তাদের মধ্যে প্রজননের সক্ষমতায় কোনো কমতি দেখা যায় না। হতবাক মার্টিনেজ দেখেন যে, আশি ভাগ হাইড্রাতেই বয়সের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এর যেন চিরতরূণ। প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের স্বাভাবিক মৃত্যু নেই বললে তাই খুব বাড়িয়ে কিছু বলা হয় না। অধিকাংশ সময়ই এরা কোনো না কোনো প্রাণীর শিকার হয়েই মৃত্যুবরণ করে। অন্যথায় অনন্তকাল বেঁচে থাকার সক্ষমতাই এদের মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা!