Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বন্য প্রাণীরা কি আসলেই পোষ মানে?

বন্য পশুকে কি পোষ মানানো সম্ভব? অনেকের কাছেই এটি একটি হাস্যকর প্রশ্ন! তারা বলে বসবেন, অবশ্যই বনের পশুকে পোষ মানানো সম্ভব নয়। হ্যাঁ, আমরা অনেকেই জানি যে বনের পশুকে কখনো গৃহপালিত করা সম্ভব নয়। তবে তা সত্ত্বেও আমরা প্রায়ই এমন অনেক ঘটনা শুনি বা জানি, যেখানে বাঘ, সিংহ, সাপ, হরিণের মতো বন্য প্রাণীদেরকে শখের বসে বাড়িতে গৃহপালিত অবস্থায় রাখা হচ্ছে।

অনেক বছর ধরেই সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারে বন্য পশু (যেমন: বাঘ, চিতাবাঘ) গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে রাখার নিয়ম ছিল, যা ২০১৫ সালে আরবে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আমরা অনেকেই ইন্টারনেটে একটি ছবি দেখেছি, যেখানে হোটেল বুর্জ-আল-আরবের সামনে এক সৌদি নাগরিকের গাড়িতে গলায় চেইন পরানো এক চিতাবাঘ দেখা যায়।

ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া চিতাবাঘের সেই ছবি; Image Source: cairoscene.com

মূল কথায় যাওয়ার আগে আরেকজন প্রাণীপ্রেমীর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, যাকে ২০০৭ সালে ‘দ্য লায়ন হুইসপারার’ খেতাব দেয়া হয়। ৫-৬ ফুট লম্বা, প্রাপ্তবয়স্ক সিংহদের সাথে তার অন্তরঙ্গ ছবি আর ভিডিওর কারণেই তিনি এই খেতাব পান। সিংহদের সাথে বিড়ালের মতো আদুরে ব্যবহার করার সেই ইউটিউব ভিডিওতে দর্শকের ক্লিক পড়েছে প্রায় ১৫ মিলিয়নেরও বেশিবার!

ভদ্রলোকের নাম কেভিন রিচার্ডসন। তার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। তার ছোটবেলা যেখানে কাটে, সেখানে জঙ্গলের ছিটেফোঁটাও ছিল না। তিনি বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে আমি পশুদের নিয়ে কাজ করবো”। তিনি পশু নিয়ে কাজ না করতে চাইলেও পশুরাই তাকে বেছে নিয়েছিল।

নিজের পরিচিত সিংহদের সাথে কেভিন; Image Source: youtube.com

প্রাণীদের প্রতি সহজাত ভালোবাসা কেভিনের ছোটবেলা থেকে ছিল। ছোটবেলায় বান্ধবী ও তার পরিবারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার চিড়িয়াখানা ও গেইম-রিজার্ভ পার্কগুলোতে ঘুরতেন তিনি। ‘গেইম রিজার্ভ’ বলতে মূলত কৃত্রিম বনভূমিকে বোঝায়, যেখানে বন্য প্রাণীদেরকে ‘মুক্ত’ রাখা হয় ও ভাড়ার বিনিময়ে শিকারীরা বদ্ধ পরিবেশে শিকার করেন। তিনি তার কলেজে বেশ কিছু সময় প্রাণিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। হতে চেয়েছিলেন একজন পশু বিশেষজ্ঞ, কিন্তু সে যাত্রায় টেকেননি।

ফলে বান্ধবীর বাবার পরামর্শেই শরীরবিদ্যা নিয়ে পড়ার আগ্রহ জন্মায় কেভিনের। পড়াশেষে একটি ব্যায়ামাগারে প্রশিক্ষকের কাজ করেন কিছুদিন। সেখানেই রডনি ফুর নামের এক ভদ্রলোকের সাথে বন্ধুত্ব হয়। তার মাধ্যমেই আফ্রিকার একটি সিংহ রিজার্ভ পার্ক, ‘লায়ন পার্কে’ সিংহ দেখাশোনার দায়িত্ব পান কেভিন।

এরপর থেকে তিনি যেন তার সেই সহজাত পশুপ্রেম থেকেই দুটি সিংহের বাচ্চা টাও আর নেপোলিয়নের সাথে খাতির করে ফেলেন। তিনি প্রায়ই বলেন,

“সিংহদের পোষ মানাতে আমি কোনো আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করি না। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।” 

অন্যতম হিংস্র প্রাণী হায়েনাদের সাথেও আছে কেভিনের বন্ধুত্ব; Image Source: pinterest.com/Credit: Matti Tetzlaff

সিংহ ছাড়াও হায়েনাদের সাথে কেভিনকে পাড়ার আদুরে কুকুরগুলোর মতো আচরণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু কেভিন তার পশুপ্রেমকে শুধু শখে আটকে রাখেননি। তার লক্ষ্য, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বে বিলুপ্ত হতে চলা সিংহ, বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীকে শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা। 

যে হারে দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্য সিংহের শিকার বাড়ছে এবং তাদেরকে বন্দী অবস্থায় রাখা হচ্ছে, এতে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে সিংহ চিরতরে বিলুপ্ত হতে পারে – কেভিন রিচার্ডসন

লায়ন পার্কে কাজ শেষ করে রডনি ফুরের সহায়তায় ৮০০ হেক্টর জমির উপর তিনি একটি রিজার্ভ তৈরি করেন- নাম দেন ‘দ্য কিংডম অব দ্য হোয়াইট লায়ন’। কারণ ২০১০ সালের চলচ্চিত্র দ্য হোয়াইট লায়নের শ্যুটিং এখানে হয়েছিল এবং এতে কেভিনের একটি সিংহকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

সাদা সিংহদের সাথে কেভিন;
Image Source: thedailytelegraph.com

কিন্তু সেটি ভাড়া করা জায়গা ছিল। আর একটি বিশাল সিংহের রিজার্ভ চালানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন তো রয়েছেই। তাই কেভিন তার সিংহগুলো বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ব্যবহার করেছিলেন ও নিজে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন, যা থেকে তিনি অর্থ পেতেন। ২০১৫ সালে ব্যক্তিগত মালিকানায় দক্ষিণ আফ্রিকার সুদূরে ওয়েলজগ্যাট গেইম রিজার্ভ নামে একটি পশু সংরক্ষণ ক্ষেত্র তিনি তৈরি করেছেন। তিনি চাচ্ছেন, শীঘ্রই সেই রিজার্ভটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। সেদিন পার্কে স্কুল প্রজেক্টের জন্য রিজার্ভের ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে এসেছিলেন ২০-২২ বছরের দুই তরুণী। তাদের মধ্যে একজন তার প্রজেক্টের জন্য পার্কের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলছিলেন।

দুর্ভাগ্যবশত সেই সময় কেভিন ও তার সহকর্মী ৩টি বড় সিংহকে পার্কে হাঁটার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের মতে, হাঁটার আগেই তিনি পার্কের সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তারা হাঁটতে বেরোচ্ছেন। কিন্তু একটি হরিণকে তাড়া করতে গিয়ে একটি সিংহ দলছুট হয়ে অন্যদিকে চলে যায়। সেখানে পার্কে একা দাঁড়িয়ে থাকা সেই তরুণীকে সে দেখে ফেলে এবং আক্রমণ করে। এতে তরুণীটি মারা যান। এবং আবারও প্রশ্ন ওঠে বন্য প্রাণীদেরকে রিজার্ভে আটকে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে।

কেভিন এর জবাবে বলেন, “যে সিংহটি তাকে আক্রমণ করে, তা বন্য ছিল না, বরং পার্কেই তার জন্ম হয়েছিল। যার কারণে মানুষ দেখে অন্য বন্য প্রাণীর মতো ভয় না পেয়ে সে আক্রমণ করার সাহস পেয়েছে!”

আমরা আজ পর্যন্ত বন্য প্রাণীকে আটকে রেখে তাদেরকে পোষ মানানোর যত উদাহরণ দেখেছি, এর মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই দেখা যায় একসময় এই বন্য প্রাণীরা আর ঘরের লক্ষ্মী পোষা বিড়ালটির মতো না থেকে হিংস্র হয়ে ওঠে ও তার নিজের তথাকথিত ‘মালিকের’ উপরই হামলা করে ফেলে!

প্রশ্ন থাকে, সে যদি বন্যই হয়ে থাকবে, তাহলে জন্মের পর থেকে তাদেরকে ঘরের পরিবেশে বড় করার পরও তাদের মূল স্বভাব কেন লোপ পায় না? আর যদি লোপ না-ই পেয়ে থাকে, তাহলে কেন কিছুদিন তারা আসলেই পোষা প্রাণীর মতো আচরণ করে? যেমন কেভিনের সিংহটি কেভিনের সাথে এত বছর পোষা প্রাণীর মতো আচরণ করার পর কেন হঠাৎ অন্য কারো উপর হিংস্র হয়ে উঠলো?

এর এককথায় উত্তর দেয়া বেশ জটিল। কারণ কোনো প্রাণীকে গৃহপালিত বা পোষ্য করার প্রক্রিয়াটি হাজার বছর পুরনো। আর আমরা যতই ভাবি যে কোনো প্রাণীকে ‘আমরা’ নিজেরা পোষ মানিয়েছি, আসলে সেটি সেই প্রাণীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তাদের জেনেটিক গঠনের উপরও অনেকটা নির্ভর করে।

কুকুরের পূর্বপুরুষ বিলুপ্ত ধূসর নেকড়ে;
Image Source: weheartpet.com

প্রকৃতপক্ষে কোনো বন্য প্রাণীই স্থায়ীভাবে গৃহপালিত নয়। যেমন: বিড়াল আর কুকুরকে আমরা গৃহপালিত বললেও তাদের পূর্বপুরুষেরা সবাই বন্য ছিল। বিড়ালের আগেও কুকুরকে মানুষ তাদের গৃহে জায়গা করে দিয়েছিল। ঠিক কবে থেকে, তার সঠিক হদিস পাওয়া না গেলেও অনেকে মনে করে, মানুষ তার কৃষিকাজের জন্য কুকুরের ব্যবহার শুরু করেছিল। তবে অন্যদের মতে, কুকুর আরও আগে, যখন মানুষ অন্য বন্য প্রাণী শিকার করে জীবিকা চালাত, তখন থেকেই মানুষের সাথে আছে এবং একটি সহাবস্থানে চলে এসেছে। অন্যদিকে, কুকুরের আদি-পিতা, বন্য ধূসর নেকড়েগুলো আজ বিলুপ্ত, কারণ তারা মানুষের সাথে সহাবস্থানে যেতে পারেনি।

বিড়াল অনেকটা নিজে নিজেই গৃহপালিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে। তবে অবশ্যই এখন ২০১৮ সালে আপনার বিড়ালের সাথে আপনার যে ধরনের সম্পর্ক, ১০,০০০ বছর আগে মানুষের সাথে বিড়ালদের সে সম্পর্ক ছিল না। বিড়াল মানুষের সাথে তার পরিবেশকে খাপ খাইয়েছে। বিড়াল কুকুরের চেয়ে বেশি স্বাধীন প্রাণী, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল নয়। বিড়াল মানুষের সমাজে আসে তখন, যখন মানুষের ঘরের শস্যের মধ্যে ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ে। তাই বলা যায়, বিড়াল তার নিজের সুবিধার জন্যই মানুষের সাথে একটি প্রভু-মালিকের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

কিন্তু বিড়াল বা কুকুর এত হাজার বছরের গৃহপালিত জীবন পার করার পরও তাদের শিকারী মনোভাব ও পশুত্ব পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারে না। তাই গৃহপালিত কুকুর-বিড়ালরাও মানুষকে জখম করে। সেখানে বাঘ, সিংহ বা সাপের মতো প্রাণীদের কাছ থেকে আমরা কীভাবে গৃহপালিত পশুর আচরণ আশা করতে পারি?

 গৃহপালিত বিড়ালের পূর্বপুরুষ বন্য বিড়াল; Image Source: lifewithcats.com

বিখ্যাত প্রাণী ও ভূতত্ত্ববিদ জ্যারেড ডায়মন্ড তার বই ‘গানস, জার্ম ও স্টিল’– এ  পোষা প্রাণীর ৬টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। এই ৬টির মধ্যে যদি একটি মাত্র বৈশিষ্ট্যও না থাকে, তাহলে সে প্রাণীটিকে গৃহপালিত বলা যাবে না, বা কখনো পোষ্য বানানোর চেষ্টা করা যাবে না। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

১। গৃহপালিত পশুরা সব খায়। যেসব প্রাণীর খাবারের ব্যাপারে বাছ-বিচার আছে, বা যেসব প্রাণী মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না, তারা কখনো গৃহপালিত হবে না।

২। যারা অল্প সময়ের মধ্যেই জীবনের ধাপগুলো পার হয়ে যায়, তারা গৃহপালিত হতে পারবে। যেমন: কুকুর বা বিড়াল সর্বোচ্চ ১০-১২ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এই অল্প সময়ে তারা মানুষের সমপর্যায়ের একটি জীবন উপভোগ করে। যেসব প্রাণীর জীবনসীমা মানুষের মতো দীর্ঘ, তাদের পোষ মানানো যায় না।

৩। যেসব প্রাণী বদ্ধ পরিবেশে সন্তান জন্ম দিতে পারে, তাদের গৃহপালিত করা যাবে।

৪। স্বভাবে তুলনামূলক নরম ও শান্ত প্রকৃতির হলে গৃহপালিত করা যাবে।

৫। ভয় পেলে বা মানুষের দ্বারা তাড়িত হলে বেশি দূর যায় না বা খুব বেশি ভীত হয়ে পড়ে না- এমন প্রাণী।

৬। তারা একটি জন্মগত শ্রেণীকাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে একজন দলনেতা থাকে। তবে এক্ষেত্রে বিড়াল ব্যতিক্রম, কারণ বিড়ালদের সমাজে শ্রেণী-কাঠামো নেই।

খুব স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এই ৬টি বৈশিষ্ট্যের একটিও সিংহ, বাঘ, পাখি, সাপ বা অন্যান্য কোনো বন্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যায় না। তাই তাদেরকে বিড়াল, কুকুরের মতো পোষ মানানোর ব্যবস্থাটি যেমন অস্বাভাবিক, তেমনি এই প্রাণীদের উপর একধরনের অত্যাচারও বটে।

হলিউডের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সিংহ ও বাঘ প্রশিক্ষণের জন্য বিখ্যাত প্রাণী প্রশিক্ষক পল রেনল্ডস বলেন,

“বন্য পশুরা কখনো আপনার বন্ধু হতে পারবে না। আপনাকে তাদেরকে ভুলিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হবে। তারা তখনই আপনার কথা শুনবে, যখন বুঝবে আপনি তাদের উপর হুকুম করার যোগ্য। এভাবেই তাদেরকে সম্মোহিত করতে হবে”।

তবে তিনি এসব পশুকে মেরে, ভয় দেখিয়ে বা অন্য কোনো অসৎ উপায়ে ভোলানোর বিপক্ষে। কারণ এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

শেষ কথা

যদি বন্য প্রাণীদের পোষ না মানানো যায় আর যদি তারা আমাদের জন্য ক্ষতিকারক হয়, তাহলে কি তাদের হত্যা করা উচিত? কখনোই নয়। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের সকলেরই এই বন্য প্রাণীদেরকে রক্ষা করা উচিত।

কেভিন তার রিজার্ভে বাঘ, সিংহ, হাতি, জলহস্তীর মতো হিংস্র ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সংরক্ষণ করছেন। যদিও তার বিপক্ষে সমালোচনা উঠেছে যে, তিনি অনেক সিংহকে এই রিজার্ভে কৃত্রিম বংশবিস্তার করাচ্ছেন ও তিনি তার প্রাপ্তবয়স্ক সিংহদের শিকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন- তবে এগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু তিনি রিজার্ভে রেখে সিংহের প্রজননের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির বংশবিস্তার দরকার বলেই তিনি এমনটি করছেন।

আরেকটি প্রশ্ন পাঠকদের মনে আসতে পারে, বন্য প্রাণী পোষ না মানলে কেভিন কী করে তার সিংহদের পোষ মানাতে পারলেন? আসলে তিনিও ঠিক তাদেরকে ‘পোষ মানানো’ যাকে বলে, সেটি করেননি।

যেসব সিংহের সাথে কেভিনকে ধস্তাধস্তি করতে দেখা যায়, সেসব সিংহকে কেভিন জন্মের পর থেকেই দেখাশোনা করে আসছিলেন। আর তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মানুষ যাতে বুঝতে পারে যে সিংহ আর বাঘ বা হায়েনাও আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজন, তাই তাদের ভয় কাটানোর জন্যই আমি সিংহদের সাথে এত ঘনিষ্ঠ হয়ে ছবি তুলি।” তিনি চান, মানুষ এসব প্রাণীকে শুধুই আক্রমণকারী হিসেবে না দেখে অন্যান্য প্রাণীর মতোই দেখুক। বন্য প্রাণী সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তিনি কেভিন রিচার্ডসন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থাও চালু করতে চান।

বিলুপ্তির পথে অসাধারণ পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার;
Image Source: desibantu.com

বন্য প্রাণীরা মানুষের জন্য ভয়ের কারণ হলেও তাদেরও এই পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার আছে। বাংলাদেশের গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগারও আজ এমনি একটি আতংকের মুখে রয়েছে। শিকার ও বাসযোগ্য স্থানের অভাবে দিন দিন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে সে। আমাদের সবার উচিত বন্য প্রাণী হত্যা ও এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সচেতন হওয়া, কেভিন রিচার্ডসনের মতোই তাদেরকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়া।

প্রাণীজগত সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন এই বইটি

১) পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপতি
২) জীবজগতের আজব কথা

This article is in Bangla Language. It's about a man famously known as The Lion Whisperer and it also questions the rationality of keeping wild animals as pets. References have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: eluxemagazine.com

Related Articles