Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৃথিবীর বুকে স্বর্গ আনা অনিন্দ্য সুন্দর পাখিদের গল্প

প্রকৃতি সুন্দর। অথবা সৌন্দর্য নিজেই প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে সৌন্দর্যের সম্পর্কটাই অনেকটা এরকম। এই ধরণী আর প্রকৃতি মায়ের আঁচলের প্রতিটি কোণায় কোণায় যেন সৌন্দর্যের অপার সম্ভার। তবুও যদি কেউ প্রশ্ন করেই বসে যে, প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টিগুলো কী কী? কী উত্তর দেবেন? ফুল, সাগর, পাহাড়, পাখি- হ্যাঁ, পাখি। প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টিগুলোর একটি। প্রায় প্রতিটি পাখিই সুন্দর, প্রতিটি পাখিই অপরূপ শিল্প-শৈলীর এক একটি নিদর্শন। কিন্তু তার মাঝেও এমন কিছু পাখি আছে, যারা যেন সৌন্দর্যেরই সংজ্ঞা প্রদান করে। গায়ের বাহারি রঙে, কখনো রাজকীয় ঝুঁটিতে, কখনো মনোহর লেজ, অনন্য গঠন- সবই যেন প্রকৃতির সৃষ্টিশৈলীর দক্ষতাই প্রকাশ করে। স্বর্গের সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ওঠে এসব পাখিরা। আর সেইসাথে দুঃখের সাথে এটাও বলতে হয়, অনেক মায়াবী রূপময় পাখিকেই আবার বিভিন্ন কারণে বিদায় নিতে হয়েছে পৃথিবীর বুক থেকে। কিন্তু তবুও এখনো এমন অনেক পাখির মেলা বসে, যারা অন্য সকল মলিনতা আর অসুন্দরকে ভুলিয়ে দিয়ে আপনাকে অন্য এক মায়াবী পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতে পারে।

প্রকৃতির এমন অসাধারণ সৃষ্টি অনন্য রূপবতী পাখিদের গল্প শুনি চলুন আজ।

ভিক্টোরিয়া ক্রাউনড পাইগন

ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে নাম রাখা হয়েছে অপরূপ এই পাখিটির। নীল রঙের এই পাখির সৌন্দর্য অপূর্ব। বিশেষ করে এর নীল পালকের ছড়ানো অসাধারণ ঝুঁটি দেখে মুগ্ধতা গ্রাস করবে যে কাউকে। সারা দেহেই এর নীল রঙের প্রাধান্য থাকলেও চোখ দুটো কিন্তু টকটকে লাল। ঘাড়ের নিচেও থাকে লালচে পালকের সমাবেশ। সব মিলিয়ে নামের মতোই রাজকীয় রূপ এই পাখির।

রাজকীয় পাখি ভিক্টোরিয়া ক্রাউনড পাইগন; Source: arkinspace.com

নিউগিনির উত্তরের বনাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোতে এই পাখির দেখা মিললেও পাখিটির সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে কমছে। মাংস আর রূপের জন্য এরা মানুষের শিকারে পরিণত হতে হতে এখন বিলুপ্তপ্রায় পাখির তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

বার্ড অব প্যারাডাইস

পাখির রূপ যদি এমন হয় যে স্বর্গের কথাই মনে করিয়ে দেয় দর্শককে, তখন কি নাম দেবেন সেই পাখির? স্বর্গের পাখি? সেজন্যই বোধহয় এই পাখিটির নাম বার্ড অব প্যারাডাইস বা স্বর্গের পাখি।

বার্ড অব প্যারাডাইস স্বর্গের রূপেরই প্রতীক যেন; Source: kcet.org

নিখুঁত গড়ন, রঙের সবচেয়ে সুন্দর ব্যবহারের সাথে বিস্ময়কর অসাধারণ লেজ নিঃসন্দেহে সৌন্দর্যের এক নতুন সংজ্ঞা হয়ে উঠবে মুহূর্তেই। আর এই দলের মধ্যেও সবচেয়ে সুন্দর মনে করা হয় ব্লু বার্ড অব প্যারাডাইসকে বা স্বর্গের নীল পাখিকে। শুধু রূপে নয়, গুণেও কিন্তু শ্রেষ্ঠ এই পাখি। সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে পুরুষ পাখিরা দেখায় নানা শারীরিক কৌশল। গাছের ডালের সাথে উল্টো হয়ে ঝুলে বা নিজেদের ডানা মেলে দিয়েই কিন্তু ক্ষান্ত দেয় না তারা, মৃদু মধুর সুর তুলেও চলে প্রিয়জনের মন পাবার চেষ্টা। পাপুয়া নিউগিনি আর ইন্দোনেশিয়ার ঘনবর্ষণ এলাকার বনাঞ্চলগুলোতেই প্রধানত এদের দেখা পাওয়া যায়।

কুইজাল

সারা দেহে পালকের ব্যাপকতা নিয়ে রঙের এক মনোরম খেলা যেন এই পাখিটি। তার ওপরে দীর্ঘ পালকনির্মিত লেজ এর আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। সবমিলিয়ে যখন আকাশে ডানা মেলে, সেটা আসলেই এক দেখার মতো দৃশ্য।

পালকের দীর্ঘ লেজই অনন্যতা দেয় কুইজালকে; Source: adventurecollection.com

এর সৌন্দর্যের সাথে সাথে এর ক্ষুধাও কিন্তু বেশ নামকরা। টিকটিকি, পোকা, ফল ইত্যাদি পাখির পক্ষে সম্ভব প্রায় সবই খায় সে।

হুপি

সাদা-কালো পালকের সমন্বয়ে ডানা আর লেজ হলেও এই পাখিটির দেহে বাদামী রঙের প্রাধান্যই বেশি দেখা যায়। তার সাথে সরু, ধারালো ঠোঁট কিন্তু ভালোই মানায়। তবে এই পাখির কথা বলতে গেলে এর রাজকীয় ঝুঁটির কথা যেন না বললেই নয়, মাথায় ঠিক যেন বাদামী রঙের মুকুট। আফ্রিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন অংশে দেখা যাওয়া এই পাখির সূর্যস্নান করার জন্য বেশ নামডাক।

ক্ষুধার জন্যও তার বেশ নামডাক; Source: pinterest.com

গোল্ডেন ফিজান্ট বা সোনালী পাখি

পশ্চিম চীনের এই পাখিটি এর দেহে রঙের ব্যবহার আর দারুণ নকশার জন্য বিখ্যাত। ঘাড়ের কাছে গাঢ় কমলা রঙের পালকের বেষ্টনীর সাথে এর থাকে গাঢ় বাদামী রঙের লেজ। দেহের নিম্নভাগ লাল হলেও পিঠের দিকে রয়েছে সবুজের ছাপ। গাঢ় হলুদ ঝুঁটি নেমে যায় প্রায় ঘাড় পর্যন্ত।

চীনদেশে বাড়ি এই পাখির; Source: jkflies.com

পাখিটির ঘাড়ের কমলা অন্তরীপের কিন্তু একটা দারুণ মাহাত্ম্য আছে। পুরুষ পাখি যখন তার সঙ্গীর জন্য ব্যাকুল হয়, তখন সে তার এই ঘাড়ের কমলা অন্তরীপ ডানার মতো মেলে ধরে এর সকল রঙ ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে।

উল্টানো ঠোঁটের টাওকান

ভয়হীনতার সাথে সৌন্দর্যের একটা সম্পর্ক আছে। নির্ভয়, স্বাবলম্বী যে কারুরই নিজস্বতা থাকে, থাকে এক অন্য রকম সৌন্দর্যও। এই পাখিটিও যেন সেই সৌন্দর্যেরই একটি উদাহরণ। কেবলমাত্র মাংসাশী পাখিই নয়, এই টাওকান পাখির আলাদা পরিচিতি আছে নির্ভীক পাখি হিসেবেও। ভয়ঙ্কর ঝড়ের মধ্যেও শান্তভাবে ডালে বসে অপেক্ষা করতে পারে অত্যন্ত সাহসী এই পাখি।

সাহসও তার বলিহারি! pinterest.com

তাই বলে কিন্তু রূপেও কম যায় না সে। কালো দেহে হলদে মাথা আর ঘাড় সুন্দর হয়ে ফুটে ওঠে। তবে সবচেয়ে নজর কাড়ে লাল মাথা আর কমলা মধ্যরেখার বেশ বড়ো আর বাঁকানো হলুদ ঠোঁট। একধরনের বন্যতাই যেন প্রকাশ করে এই পাখির ঠোঁট।

গোল্ডেন ফিন বা সোনালী ফিঙে

অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় পাখিদের একটি হলো এই সোনালী ফিঙে। দেশটির সবচেয়ে রঙিন পাখিও এটি। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বাদামী, বেগুনী, কালো- না জানি কতগুলো রঙের সমারোহ দেখা যায় ছোট ছোট এক একটা পাখিতে! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, রঙের সমারোহ প্রত্যেকটি পাখিতে আলাদাও হতে পারে।

রঙের খেলা! Source: pixdaus.com

বোহেমিয়ান ওয়াক্সউইং বা যাযাবর মোম ডানার পাখি

নামের মতোই কোমল, স্নিগ্ধ আর সুন্দর এই পাখি। নিখুঁত আর কোমল সুশ্রীই একে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পাখিদের মধ্যে জায়গা করে দিয়েছে। সারা দেহে এর দৃষ্টিকে শান্তি দেওয়া ছাই আর হালকা বাদামী রঙের ছোঁয়া। কিন্তু ডানার শেষ মাথায় থাকে সাদা আর হলুদের সীমা টানা। যত কাছ থেকে দেখা যাবে ততই এর আভিজাত্য দর্শকের নজর কাড়বে।

মোমের মতোই কোমল এই পাখি; Source: imgur.com

নর্দার্ন কার্ডিনাল

গাঢ় কমলা আর লাল রঙের এই পাখি বরফের দেশের এক দারুণ দৃশ্য। চারিদিকে শুভ্র বরফের মধ্যে যখন টুকটুকে এই ছোট্ট প্রাণীটি বসে থাকে, তখন তা আসলেই এক দেখার মতো দৃশ্য হয়।

শুভ্রতায় রক্তিম ফোঁটা; Source: dreamstime.com

অপূর্ব সুন্দর এই পাখির তালিকা কখনোই সম্পূর্ণ হবে না যদি আমরা ম্যাকাওয়ের কথা না বলি। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার রক্তিম ম্যাকাও যেন সত্যিই স্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি। লিয়ার ম্যাকাও বলে এর আরেকটি জাতও আছে, কিন্তু গাঢ় নীল পাখি হিসাবে কিছু কম যায় না।
এরপরও কিন্তু ব্লু জে, বিভিন্ন জাতের ও রঙের টিয়া, ময়ূর আরো অনেক পাখির কথা থেকে গেলো। স্রষ্টার সৃষ্টিই এত বিশাল যে একে সামান্য লেখনীতে বন্দি করা যায় না। তবুও আমাদের চেষ্টা থাকবে প্রকৃতির বুক থেকে অসামান্য সুন্দর সৃষ্টির গল্প আমাদের পাঠকদের জন্য সাজিয়ে আনা।

ফিচার ইমেজ: www.birdsofeden.co.za

Related Articles