Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চিড়িয়াখানা থেকে পালানো বিখ্যাত প্রাণীরা

বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে

কিন্তু  কিন্তু শিশুরা যেরকম একটু চঞ্চল হলেই আর মাতৃক্রোড়ে থাকতে পছন্দ করে না, তেমনি কিছু কিছু পশুও তাদের নির্ধারিত স্থানে থাকতে চায় না। আর সে পশুকে যদি চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়, তাহলে তো কথাই নেই! চিড়িয়াখানা থেকে বিভিন্ন প্রাণীদের পলায়নের ঘটনা খুব একটা কম না। এদের মধ্যে কিছু ঘটনা অন্যগুলোর তুলনায় বেশি আলোচিত হ‌য ঘটনাগুলোর অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে অথবা প্রাণীগুলোর সাহসিকতা বা বুদ্ধিমত্তার কারণে। চলুন দেখে নিই এরকমই কিছু পলায়নের ঘটনা।

গরিলা জুটি এভিলিন ও জিম, লস অ্যাঞ্জেলস

গরিলা এভিলিন; Source: Los Angeles Zoo and Botanical Gardens/ Facbook

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস চিড়িয়াখানাটি এর প্রাণীদের পলায়নের জন্য বিখ্যাত। গত তিন দশকে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৩৫টি প্রাণী চিড়িয়াখানাটি থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এভিলিন নামের একটি গরিলা। এ পর্যন্ত সে মোট পাঁচ বার তার নির্ধারিত জায়গা থেকে পালিয়েছে।

নারী গরিলা এভিলিনের পলায়নের প্রধান সঙ্গী পুরুষ গরিলা জিম। বেশ কয়েকবার তারা একে অন্যকে পালানোর ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। একবার জিমকে বসিয়ে তার পিঠের উপর চড়ে এরপর দেয়াল বেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল এভিলিন। আরেকবার দূর থেকে দৌড়ে এসে আঙ্গুরলতা ধরে ঝুলে লাফিয়ে ১২ ফুট চওড়া পরিখা পার হয়ে গিয়েছিল এভিলিন।

বেশ কয়েকবার নিজের খাঁচা থেকে পালাতে পারলেও সৌভাগ্যবশত এ পর্যন্ত একবারও এভিলিন বা জিম চিড়িয়াখানার মূল এলাকা ছেড়ে বের হতে পারেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক-দেড় ঘন্টা জিরাফ সহ অন্যান্য প্রাণীর আশেপাশে ছোটাছুটির পর চিড়িয়াখানার কর্মীরা তাদেরকে ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে অজ্ঞান করে খাঁচায় ফেরত আনতে সক্ষম হয়। তবে বারবার পালানোর অভিযোগের কারণে সম্প্রতি ফেডারেল কর্মকর্তারা চিড়িয়াখানাটিকে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে।

গেছো নেকড়ে ভার্জিনিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস

গাছের উপর একটি নেকড়ে; Source: firstpeople.us

এটিও লস অ্যাঞ্জেলস চিড়িয়াখানার ঘটনা। ভার্জিনিয়া নামে ৯ মাস বয়সী একটি বাচ্চা নেকড়ে মোট তিনবার চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে যায়। সর্বশেষ ১৯৭৯ সালে সে একটি গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায় এবং চিকন একটি ডালের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দেয়ালের কাছাকাছি পোঁছে যায়, এরপর লাফ দিয়ে বাইরে পড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তার খোঁজে নিকটস্থ গ্রিফিথ পার্ক পুরো চষে ফেলে। কিন্তু অন্তত দুবার ভার্জিনিয়ার দেখা পেলেও তাকে ধরতে ব্যর্থ হয় তারা।

একবার চিড়িয়াখানা কর্মীদের ছুঁড়ে দেওয়া মাংস মুখে দিয়েই সে দ্রুতগতিতে বনের গভীরে হারিয়ে যায় ভার্জিনিয়া। অন্য একবার ট্রাঙ্কুলাইজার গান থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলেও সেটা লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। দীর্ঘদিন অনুসন্ধানের পরেও শেষ পর্যন্ত ভার্জিনিয়াকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। চিড়িয়াখানা থেকে নেকড়ের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অবশ্য কর্তৃপক্ষকে এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হতে হয়নি। কারণ জন্মের পর থেকেই চিড়িয়াখানার বিচ্ছিন্ন পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে ভার্জিনিয়া তখনও শিকার করা শেখেনি।

প্রেমিক গন্ডার ‘সাতারা’, অস্ট্রেলিয়া

পলায়নরত অবস্থায় সাতারা; Source: ABC News

গন্ডারও যে বিরহে কাতর হয়ে গৃহত্যাগ করতে পারে, সেটাই প্রমাণ করেছিল অস্ট্রেলিয়ার মোনারতো চিড়িয়াখানার একটি গন্ডার। সাতারা নামের ঐ গন্ডারটি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে কাঠ এবং লোহার তৈরি বেড়া ভেঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, ১৮ বছর বয়সী সাতারার নারী সঙ্গী অন্য একটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী গন্ডারের সাথে মিলিত হওয়ার পরেই এ ঘটনা ঘটে।

চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা গন্ডারটিকে হেলিকপ্টারে করে ধাওয়া করে। তারা একে উদ্দেশ্য করে পাঁচটি ট্রাঙ্কুলাইজার ডার্ট নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে প্রথম কয়েকটি এর শরীরে লেগে ছিটকে ফিরে আসলেও শেষ পর্যন্ত একটি শরীরে প্রবেশ করে এবং গন্ডারটিকে কাবু করতে সক্ষম হয়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মতে, যদি গন্ডারটিকে অজ্ঞান করা সম্ভব না হতো, তা হলে অন্যান্য প্রাণী এবং কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য একে মেরে ফেলা ছাড়া তাদের হাতে আর কোনো উপায় থাকত না

টুইট তারকা কোবরা, নিউ ইয়র্ক

২০১১ সালে নিউ ইয়র্কের একটি চিড়িয়াখানা থেকে একটি বিষাক্ত মিসরীয় কোবরা নিখোঁজ হয়ে যায়। ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এই সাপগুলো এতই বিষাক্ত যে, এগুলোর ছোঁবলে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সাপটির পলায়নের সংবাদ এলাকাবাসীর মধ্যে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। কেউ একজন টুইটারে সাপটির নাম দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে বসে এবং বিভিন্ন মজাদার বার্তা টুইট করতে থাকে। মাত্র তিন দিনের মধ্যে টুইট অ্যাকাউন্টটির ফলোয়ার দেড় লাখ ছাড়িয়ে যায়।

সৌভাগ্যবশত কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সাপটির সন্ধান পাওয়া যায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে জানায়, সাপটি আসলে পালাতে পারেনি, বরং এটি একটি পাইপের ভেতরে লুকিয়ে ছিল। পরে একে ইঁদুরের মতো গন্ধ বিশিষ্ট কাঠের গুঁড়া স্প্রে করে বের করে আনা হয়। সাপটির অভিযান সেখানেই শেষ হয়ে গেলেও এর টুইটার অ্যাকাউন্টটি এখনও সক্রিয় আছে। বিভিন্ন সময় অ্যাকাউন্টটি থেকে প্রাণীজগত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যমূলক অথবা মজাদার তথ্য টুইট করা হয়।

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের চিড়িয়াখানা ভ্রমণ, ভারত

একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার; Source: poplinre

ভারতের ভুবনেশ্বরের নন্দনকানন চিড়িয়াখানায় যথেষ্ট পশুপাখি ছিল। নতুন কোনো প্রাণী আমদানি করার কোনো পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের ছিল না। কিন্তু এক সকালে হঠাৎ করেই জঙ্গল থেকে একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এসে হাজির হয় চিড়িয়াখানার সামনে। তার নজর ছিল বাঘের খাঁচাগুলোর দিকে। কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, বাঘটি তার স্বগোত্রীয় সঙ্গীদের সাথে মিলিত হতে এসেছে।

চিড়িয়াখানার ২০ সদস্যের কর্মী প্রস্তুত হয় বাঘটিকে ধরার জন্য। কিন্তু খাঁচার দরজা খোলামাত্র বাঘটি স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে ধরা দেয়। তার স্থান হয় অন্য বাঘগুলোর সাথে। সেখানে সে ভালোভাবেই দিন কাটাতে থাকে। কিন্তু একমাস পরে সে সিদ্ধান্ত নেয়, যথেষ্ট হয়েছে, চিড়িয়াখানার এ বন্দী জীবন তার না। কাজেই এক সকালে সাত মিটার উঁচু লোহার বেড়া টপকে সে চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে যায়। ফিরে যায় যেখান থেকে এসেছিল, সেখানেই।

গোল্ডি ঈগল, লন্ডন

গোল্ডি ঈগল; Source: Getty Images

১৯৬৫ সালে গোল্ডি নামের একটি ঈগল লন্ডন চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে যায়। চিড়িয়াখানার এক কর্মচারী যখন ঈগলের খাঁচাটা খুলেছিল পরিষ্কার করার জন্য, তখন তার অসাবধানতার সুযোগে বেরিয়ে যায় গোল্ডি। তবে পুরোপুরি নিরুদ্দেশ না হয়ে সে চিড়িয়াখানার আশেপাশেই অবস্থান করে। চিড়িয়াখানার কর্মীরা ছাড়াও লন্ডনের পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস বিভাগের ব্যাপক অভিযান সত্ত্বেও ১২ দিন পর্যন্ত তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।

গোল্ডির পলায়নের সংবাদ সে সময় লন্ডনের মানুষের মধ্যে দারুণ উদ্দীপনার জন্ম দেয়। প্রতিদিন হাজার হাজার ফোন এবং চিঠি আসতে থাকে গোল্ডির সংবাদ জানতে চেয়ে। হাজার হাজার মানুষ গোল্ডিকে দেখার জন্য চিড়িয়াখানার আশেপাশে ভীড় জমাতে শুরু করে, যার ফলে এলাকায় বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১২ দিন পর একটি মৃত খরগোশ ধরার লোভে মাটিতে নেমে এলে চিড়িয়াখানার ডেপুটি জু কীপার ঝাঁপিয়ে পড়ে খালি হাতে ধরে ফেলেন ঈগলটিকে। এর কয়েক মাস পরেও অবশ্য গোল্ডি আরেকবার পালিয়েছিল, তবে সেবার চার দিনের জন্য।

রেস্যাস বানরের মহাপলায়ন, নিউ ইয়র্ক

কিছু রেস্যাস বানর; Source :arc-burystedmunds.com

নিউইয়র্কের নিকটবর্তী লং আইল্যান্ডের একটি অ্যানিমেল পার্ক থেকে ১৯৩০ সালের এক রাতে একসাথে প্রায় ১৭০টিরও বেশি বানর পালিয়ে যায়। চার্লস সেলনার নামের এক কর্মচারী রেস্যাস নামক ক্ষুদ্রাকৃতির এশিয়ান বানরগুলোর এলাকা থেকে পরিচর্যার কাজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরিখার উপর স্থাপন করা কাঠের তক্তাটি সরিয়ে নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই কাপোন নামে নেতৃস্থানীয় এক বানরের নেতৃত্বে সারিবদ্ধভাবে কাঠের তক্তার উপর দিয়ে এক এক করে পালিয়ে যায় ১৭০টিরও বেশি বানর।

বানরগুলো লং আইল্যান্ডের রেল লাইন পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সকাল থেকেই স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে একের পর এক বানরের উৎপাতের অভিযোগ জানিয়ে ফোন আসতে থাকে। প্রথম দিন রাতের বেলা ৩০টির মতো বানর ফিরে এলেও বাকিরা বাইরেই রয়ে যায়। বাধ্য হয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বানর ধরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ এবং বিনামূল্যে চিড়িয়াখানা ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

পলায়ন শিল্পী ‘ফু মাঞ্চু’, ওমাহা

ফু মাঞ্চু ওরাংওটাং; Source: Omaha’s Henry Doorly Zoo & Aquarium/ Facebook

চিড়িয়াখানা থেকে অনেক প্রাণীই পালিয়েছে, কিন্তু ওমাহা চিড়িয়াখানার ‘ফু মাঞ্চু’ নামের ওরাংওটাং এর সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। বন্দী অবস্থা থেকে পালানোকে ফু মাঞ্চু শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। প্রায় সময়ই সকালবেলা তাকে তার সঙ্গী ও সন্তানদের সাথে তাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যেত। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে এ রহস্যের সমাধান করতে পারেনি যে, সব ধরনের পথ বন্ধ থাকার পরেও তারা কীভাবে বেরিয়ে যায়! পরবর্তীতে গোপন নজরদারিতে তাদের কর্মকান্ড ধরা পড়ে।

ফু মাঞ্চু প্রথমে বায়ুনির্গমণ পাইপের ভেতরে দিয়ে চিড়িয়াখানার তাপনিয়ন্ত্রণ কক্ষ পর্যন্ত যেত। কক্ষটি রাতের বেলা তালাবদ্ধ থাকত, কিন্তু অসাধারণ বুদ্ধিমান ফু ধাতব তার দিয়ে তালাটি খুলে ফেলতে পারত। তারটি সে দিনের বেলা তার মুখের মধ্যে লুকিয়ে রাখত, যেন রাতের বেলা সেটি ব্যবহার করে দরজা খুলে বাইরে এসে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। ফু মাঞ্চুর পলায়ন বন্ধ করার জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দরজা পরিবর্তন সহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম চালাতে হয়েছিল।

ফিচার ইমেজ- National Geographic

Related Articles