যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন তার উদ্বোধনী বক্তব্যেই জানান দেন, বৈশ্বিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে আসছে, আগের অবস্থানে ফিরবে মিত্রদের সাথে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পলিসির প্রভাব পড়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও, গত এক বছরে বাইডেন প্রশাসন বেশকিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে, চীনের ব্যাপারেও ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছে, কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছে উত্তর কোরিয়া আর সমমনা কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর ব্যাপারেও।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কোয়াড, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে এই কাঠামো আরো স্পষ্ট কাঠামো লাভ করেছে। পাশাপাশি, বাইডেন প্রশাসনের আমলে হয়েছে অকাস চুক্তি, একক কাঠামোর মধ্যে চলে এসেছে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক তিন সামরিক বাহিনী। প্রেসিডেন্সির প্রথম এক বছরে বাইডেনকে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হয় অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কাঠামোকে ঠিক করতেই, মনোযোগ দিতে হয়েছে কোভিড নিয়ন্ত্রণ আর কর্মসংস্থান তৈরির মতো বিষয়গুলোতে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অধিক সময় ব্যয় করতে হওয়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে বাইডেন প্রশাসনের মনোযোগ ছিল কম, এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশই আমন্ত্রণ পায়নি ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসিতে’।
তবে, এরমধ্যেও এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রভাব দ্রুতগতিতে বাড়িয়েছে, বাড়িয়েছে সামরিক আর কূটনৈতিক উপস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায় লভি ইন্সটিটিউটের ২০২১ সালের প্রতিবেদনেও। প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়া অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় বিপুল অস্ত্র সরবারহ করছে, বিভিন্ন মাধ্যমে খবর এসেছে তাইওয়ানের সেনাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টিও। তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প-কারখানার লাইফলাইন হিসেবে কাজ করছে।
ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ চীন
২০২২ সালেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যস্ত এক বছর পার করতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন আছে এই বছর, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাতে বেড়েছে রিপাবলিকান পার্টি আর ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে দলীয় বিভাজন। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাইডেন প্রশাসনকে বেশকিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের উপস্থিতি গুঁটিয়ে নিয়েছে, উপস্থিতি কমেছে মধ্যপ্রাচ্যেও। ইউক্রেন সংকট চলছে মাসদুয়েক ধরে, ইঙ্গিত দিচ্ছে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়া, সম্ভাবনা আছে সংঘাতপ্রবণ হওয়ারও।
এরমধ্যে বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে মূল মনোযোগের জায়গা হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, যেখানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বাস করে, মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অর্ধেক হয় এই অঞ্চলে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রথাগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি কম ছিল, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর করেছে তার কূটনীতিবিদদের উপর, নির্ভর করেছে আঞ্চলিক মিত্র দেশগুলোর উপরও। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে চীন, চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে নতুন এক কর্তৃত্ববাদী ও অনুদার বিশ্বব্যবস্থা দাঁড় করাতে।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও চীন হুমকিস্বরূপ। উত্তর কোরিয়ার যেসব হ্যাকার বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিসেবা আর অবকাঠামোগুলোতে সাইবার হামলা চালিয়েছে, তার বড় অংশই চীন থেকে প্রশিক্ষণপ্রান্ত। আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া উত্তর কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক মিত্রও চীন, যারা নিয়মিত দূরপাল্লার মিসাইল পরীক্ষা করছে, হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে হামলা চালানোর। পারমাণবিক অস্ত্র ছড়িয়ে যাওয়ারও ভয় আছে উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে।
বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের টিকে থাকতে হলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার করা দরকার, দরকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্যিক মিত্র হয়ে ওঠা। যুক্তরাষ্ট্রের মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দ্রুত করতে ইন্দো-প্যাসিফিকের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজন, প্রয়োজন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মুক্ত ও উদার বাণিজ্যিক সম্পর্কের দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও।
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চীনকে মোকাবেলা করবে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে প্রভাব বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চলা স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিয়েছে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র লড়াই করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে, নাইন-ইলেভেনের পরে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হয়েছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন, যারা ইন্দো-প্যাসিফিকে প্রভাব বিস্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, চেষ্টা করছে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারকে আটকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে, রাজনৈতিকভাবে দক্ষ হতে হবে, বিচক্ষণ হতে হবে সামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।
চীনের প্রভাব বিস্তার আটকানো
কুমিটাং সরকারের কাছ থেকে চীনের নিয়ন্ত্রণ কমিউনিস্ট পার্টির কাছে আসার পরবর্তী কয়েক দশক চীন ছিল পুরোপুরি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দেশ, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীন ছিল বিচ্ছিন্ন এক দেশ। সত্তরের দশক থেকে রাজনৈতিকভাবে চীন মূলধারায় ফিরে আসা শুরু করে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হয় তাইওয়ানকে সরিয়ে। পরের দশকেই চীনের অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের বিস্তার শুরু হয়, চীন হয়ে উঠে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশগ্রহণকারী। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত চীনের মনোযোগ আবর্তিত হয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে কেন্দ্র করেই, চীনের মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি।
পটপরিবর্তন ঘটে শি জিন পিং চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি চীন প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে রাজনৈতিকভাবেও, দেখতে শুরু করে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত প্রসারিত করে, দক্ষিণ এশিয়াতেও ঋণের মাধ্যমে শুরু হয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। নেপাল, মায়ানমারের মতো দেশগুলো বর্তমানে পুরোপুরি চীনপন্থী। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোও ঢুঁকে যাচ্ছে চীনের প্রভাব বলয়ের ভেতরে। এই দেশগুলো অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বলছে, তারা পাশ্চাত্য এবং চীনের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখতে চায়।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রভাব নিশ্চিত করতে এসব দেশকে চীনের প্রভাববলয় থেকে বের করে আনতে চাইবে, তৈরি করবে নতুন নতুন মিত্র দেশ।
চীনের ‘ঋণের ফাঁদ’ সম্পর্কে জনমত তৈরি
চীন এশিয়া এবং আফ্রিকার যেসব দেশে বিনিয়োগ করছে, যেসব দেশকে ঋণ দিচ্ছে, তাদের অধিকাংশ দেশেই কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এসব দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা বিকশিত হয়নি, বিকাশ লাভ করেনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ধারণা। এসব দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো জনগণকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে নিজেদের শাসনের বৈধতা আদায় করতে চায়, বৈধতা নিতে চায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখিয়ে। চীনের ঋণ স্বল্পমেয়াদে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথ তৈরি করে, পথ তৈরি করে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর ক্ষমতায় টিকে থাকার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই দেশগুলো চিরস্থায়ী কর্তৃত্ববাদের ফাঁদে আঁটকে যেতে পারে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধা সীমাবদ্ধ থাকবে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর কাছে। ঋণের সুদ একসময় দেশগুলোর জন্য ফাঁদ তৈরি করবে, যেরকম ফাঁদে ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ পড়েছে, ফাঁদে পড়ছে আফ্রিকার দেশগুলোও।
চীনের প্রভাব বিস্তার আটকাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ সম্পর্কে বৈশ্বিক জনমত তৈরি করবে, সচেতনতা আনতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজের মিত্রদের রক্ষা করবে
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো নির্ভরযোগ্য মিত্র রয়েছে, রয়েছে ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার মতো কৌশলগত মিত্র। এর পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে দুই পক্ষেরই কৌশলগত স্বার্থও। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে আসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়। ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তার করতে ট্রাম্প বেশকিছু উদ্যোগ নিলেও, মিত্রদের প্রতি ট্রাম্পের ব্যবহার অনেক সময়ই বিমাতাসুলভ আচরণ করেছেন। গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত যখন চীনের সাথে সংঘাতে জড়ায়, ট্রাম্প প্রশাসন সেই সময় ভারতের পাশে মিত্রের মতো দাঁড়ায়নি, গালওয়ান ভ্যালির সংঘাত নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য হয়েছে হাসির খোরাক। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সাথে ট্রাম্প যখন সংলাপে বসেন, সেই প্রক্রিয়াতেও ট্রাম্প পূর্ব এশিয়ার মিত্রদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়নি।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে হলে, যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো নিজের মিত্রদের পাশে থাকতে হবে।
চীনের সাথে সহযোগিতা
চীন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী, যুক্তরাষ্ট্রের বহু শিল্প কাঁচামালের জন্য চীনের উপর নির্ভর করে, চীনের উপর নির্ভর করে ম্যানুফেকচারিং শিল্পের প্রাথমিক আর মাধ্যমিক পর্যায়ের পণ্যের জন্যও। পাশাপাশি, খ্রিস্টান মিশনারিজ দলগুলোর সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ আছে চীনের, যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বিপুল চীনা অভিবাসী। বিশ্বায়নের এই যুগে এক রাষ্ট্র যেমন আরেক রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল, যুক্তরাষ্ট্রেরও বহুমাত্রিক নির্ভরতা আছে চীনের উপর। এই নির্ভরতাগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতা। বাস্তবতা ভূগোল আর কূটনৈতিক নিয়ামকগুলোর জন্যও। ফলে, যেখানে সম্ভব যুক্তরাষ্ট্র সেখানে চীনের সাথে সহযোগিতা করবে, চীনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখবে। এদিক থেকে, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজিতে চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেকটাই মধ্যপন্থী।
সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো
বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকেও তারা পৃথিবীর অন্য যেকোনো সামরিক বাহিনীর চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে আছে। তবে, পরাশক্তি হিসেবে প্রায় এক শতাব্দী কাটিয়ে ফেলার পরও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি কম, জরুরি অবস্থায় মিত্রদের সাহায্য করার সক্ষমতাও কম। জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জেমস ম্যাটিস প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় চাচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে সংস্কার আনা, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অস্ত্র আর সেনাদের নিয়ে থিয়েটার কমান্ডগুলো মুভ করতে পারে, সামরিক বাহিনীর ‘ইউটিলিটি’ বাড়ে।
জেমস ম্যাটিস প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়েছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চলে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। ফলে, জেনারেল ম্যাটিসের ফর্মূলাকে ছেড়ে স্থায়ীভাবেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র, এর মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে চাইবে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাবকে খর্ব করার চেষ্টা করবে, মসৃণ করতে চাইবে দক্ষিণ চীন সাগরকে কেন্দ্র করে হওয়া বাণিজ্যকে। পাশাপাশি, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার চাহিদা তো থাকছেই। সবমিলিয়ে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে চীন জল আর আকাশসীমায় রুখে দিতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র।