Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রথা ভেঙে অবসর থেকে কি ফিরছেন বারাক ওবামা?

বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন ২০০৯ সালে, রিপালিকানদের বিপক্ষে ২০০৮ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ওবামা নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন ইলিয়ন রাজ্য থেকে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করেন হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বারাক ওবামা দক্ষতার সাথে সামাল দিয়েছেন ২০০৮ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মহামন্দাকে, দুই মেয়াদে আট বছরের প্রেসিডেন্সিতে চাকরি তৈরি করছেন প্রায় ১১.৩ মিলিয়ন । ইতিবাচক ভাবমূর্তি থাকায় দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছরেই জয় করেন নোবেল পুরস্কার। ওবামার সবচেয়ে অর্থবহ লিগ্যাসি বিবেচনা করা হয় তার এফরডেবল কেয়ার এক্টকে, যেটা ওবামাকেয়ার হিসেবে অধিক পরিচিত। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরাকে আমেরিকার যে সশস্ত্র উপস্থিতি , ওবামা সেটার সমাপ্তির নির্দেশ দিলেও আরব বসন্তের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির জন্যও দায়ী করা হয় তাকে।

বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট; Image Source: Prople.com

বারাক ওবামার আট বছরের প্রেসিডেন্সিতে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসবে দায়িত্ব পালন করেন জো বাইডেন, যিনি আমেরিকার ইতিহাসে অল্পবয়স্ক সিনেটরদের একজন। দীর্ঘদিন সিনেটর হিসেবে দায়িত্বপালনকালে জো বাইডেন যুক্ত থেকেছেন পররাষ্ট্র, বিচার কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দেশপ্রেম আর কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। বাইডেন ২০২০ সালের প্রাইমারিতে বার্নি স্যান্ডার্স, ওয়ারেন এলিজাবেথ, মাইকেল ব্লুমবার্গদের বিপক্ষে বেশ ভালো অবস্থানে থেকে নির্বাচিত হন ডেমোক্রেটিক পার্টির ক্যান্ডিডেট হিসেবে। ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।

বারাক ওবামা ও জো বাইডেন; Image Source: The New York Times

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে জয়লাভ করে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট হিসেবে, যদিও হেরে যান পপুলার ভোটিংয়ে। একসময়ের রিয়েলিটি শো উপস্থাপক ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতিতে উত্থানটা অনেকটাই আকস্মিক। ধনকুবের এ রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী জনগণের নজরে আসা শুরু করেন বিতর্কিত মন্তব্য করে, জাতীয়তাবাদের বিভাজনের ঝান্ডাকে ব্যবহার করে শুরু করেন বিভাজনের রাজনীতি।

Make America Great Again” স্লোগানকে ব্যবহার করে নজর কাড়েন গোঁড়া রক্ষণশীলদের, যারা এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের গোঁড়া সমর্থক। ট্রাম্প সমর্থন পাচ্ছেন ইহুদিদেরও, ইসরায়েলের দূতাবাসও সরিয়ে নিয়েছেন জেরুজালেমে। প্রেসিডেন্সির পুরো সময়টা জুড়ে বিতর্কিত কথা বলে সমালোচিত হয়েছেন, বহুত্ববাদের উদার গণতন্ত্রের বিপরীতে কাজ করেছেন, ধ্বংস করছেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তিও। এর মধ্যেও চাকরি তৈরি আর অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মনে হচ্ছিলো, সুনিশ্চিতভাবেই পুননির্বাচিত হয়ে আসবেন ট্রাম্প।

মার্চে করোনার মুখোমুখি হয় বিশ্ব, যার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যুতে শীর্ষে ছিলো ট্রাম্পের আমেরিকা, অতিমারী ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা নতুন করে সমালোচনার মুখে ফেলেছে ট্রাম্পকে। অতিমারির মধ্যেই হয়েছে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন, এখানেও ট্রাম্প সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন বিরোধিতা করে, রাজপথে নামিয়েছেন সামরিক বাহিনীকে।

সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের প্রথা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট সাবেক হয়েছেন, ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্টরা সাধারণত একটি প্রথা মেনে চলেন তাদের প্রেসিডেন্সি-উত্তর জীবনে। সাবেকরা কখনোই প্রকাশ্য সমালোচনা করেন না উত্তরসূরিদের, অংশগ্রহণ করেন না প্রকাশ্য রাজনীতিতেও। বারাক ওবামার সময়েও এই প্রথা মেনে তার পূর্বসূরীরা, জর্জ ডব্লিউ বুশ শুধু একবার সমালোচনা করেছিলেন ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সময়, করেছিলেন বিরোধিতা।

বারাক ওবামা, আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, আর বর্তমানের প্রথম সাবেক কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, অবসরে যাওয়ার সময়ই জনতুষ্টিবাদী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্সি-উত্তর গত সাড়ে তিন বছরে বারাক ওবামা বেশ কয়েকবারই বেরিয়ে এসেছেন এই প্রথা থেকে, বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাখ্যা করেছেন নিজের অবস্থান, নিজের চিন্তা-ভাবনা। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসার সমালোচনা করেছিলেন, বিরোধিতা করেছিলেন ইরানের সাথে ছয় জাতির চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসারও।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বারাক ওবামা, দায়িত্ব বদল পর্বে; Image Source: The Independent

ওবামাকেয়ার (Affordable Care Act) বাতিল করে ট্রাম্প কয়েকবারই চেষ্টা করছেন ট্রাম্পকেয়ার (Better Care Act) চালু করতে, ওবামা সমালোচনা করেছেন সেটারও, আখ্যায়িত করেছেন ধনীদের সম্পদ পূঞ্জীভূতকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে। সমালোচনা করেছেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়েও। এই সবগুলো সমালোচনায় বারাক ওবামা কোথাও তার উত্তরসূরির নাম উল্লেখ করেননি, সরাসরি জবাব দেননি ট্রাম্পের করা সমালোচনাগুলোরও। কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পরে আমেরিকাব্যাপী ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে বারাক ওবামা তার এই স্ট্র্যাটিজিক জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছেন, এসেছেন ২০২০ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও।

কেন প্রথা ভেঙে ফিরছেন ওবামা

প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা যখন হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করেন, তখন তার অ্যাপ্রুভাল রেটিং ছিল ৬০%, দায়িত্ব ছাড়ার সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ, যা সাম্প্রতিক সময়ে আরো বেড়েছে। আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বারাক ওবামাকে আখ্যায়িত করেছে অষ্টম সেরা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ওবামার এই জনপ্রিয়তার মূলে আছে উদার মূল্যবোধের প্রতি তার শ্রদ্ধা, আর্থসামাজিক ইস্যুগুলোতে তার দায়বদ্ধতামূলক অবস্থান। রাজনৈতিক মূলধন হিসেবে এই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বেশ কিছু কারণে অবসর প্রথা ভাঙছেন বারাক ওবামা, সতর্কতার সাথে ব্যবহার করছেন নিজের কন্ঠস্বরকে।

প্রথমত, রক্ষণশীল ভোটারদের মাথায় রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ আগে থেকেই সমালোচনা করছিলেন ওবামার পলিসির, সমালোচনা করেছেন প্রাইমারি বিতর্কগুলোতেও। ফলে বারাক ওবামা ২০১৬ সালের নির্বাচনে খোলাখুলিভাবেই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন, হোয়াইট হাউজের চাবি রেখে যেতে চেয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারী ক্লিনটনের কাছে। ফলে, সাবেক এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টের মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব রয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ক্রমাগত আক্রমণ করেছেন ওবামাকে, করেছেন সমালোচনা, ফলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হয়েছে ওবামাকে। যেটা তৈরি করেছে প্রথা ভাঙার প্লট।

ট্রাম্প ও ওবামা; Image Source: CNBC.com

দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বাত্মকভাবে চাচ্ছেন ওবামার লিগ্যাসি মুছে দিতে। যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে, প্রত্যাহার করেছেন ইরানের সাথে ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তি থেকে, বাতিল করতে চাচ্ছেন ওবামাকেয়ার। এগুলো ওবামা প্রশাসনের বড় বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয়, দেখা হয় ওবামার লিগ্যাসি হিসেবে। ফলে, ইতিহাসে নিজের অবস্থান আর লিগ্যাসি ধরে রাখতে ফিরতে হয়েছে ওবামাকে।

তৃতীয়ত, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ের শুরু থেকেই জো বাইডেন নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করছেন বারাক ওবামার উত্তরসূরি হিসেবে, ওবামার লিগ্যাসির ধারক হিসেবে। কিন্তু বেফাস কথা বলে ফেলার জন্য দুর্নাম আছে বাইডেনের, যেটা করছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায়ও। অন্যদিকে বারাক ওবামা অসাধারণ বাগ্মী, যার প্রশংসা করেছেন বিশ্বনেতারাও। ফলে নিজের লিগ্যাসিকে ম্যানিপুলেটেড হওয়া থেকে বাঁচাতে ফিরতে হয়েছে ওবামাকে।

চতুর্থত, যে বিভাজনকে ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতি করছেন, সেটা অনেক আগে থেকেই ছিল আমেরিকান সমাজে। বারাক ওবামা এই বিভাজনকে দেখেন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে, যেটা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন ধারাবাহিক এবং দীর্ঘমেয়াদী দিকনির্দেশনার, আদর্শগত চর্চার। ফলে, এদিক থেকে ওবামা আসলে কখনো অবসরে যাননি।

প্রেসিডেন্সি-উত্তর জীবনেও সমান জনপ্রিয় ওবামা; Image Source: Newsweek

ওবামার অবসর থেকে ফেরায় লাভবান হচ্ছে কে?

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওবামার লিগ্যাসি একটি গুরুত্বপূ্র্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রিপাবলিকান ক্যান্ডিডেট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধী ওবামা লিগ্যাসির, অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বাইডেন চেষ্টা করছেন নিজেকে ওবামার উত্তরসূরি প্রমাণের। ফলে, নির্বাচনে অবধারিতভাবেই ওবামাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, হবে।

সমর্থকদের উজ্জ্বীবিত করতে ট্রাম্প বারাক ওবামাকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করছেন, সম্প্রতি কাল্পনিক অভিযোগ তুলেছেন ওবামাগেটের। কিন্তু যে ভুলটা ডোনাল্ড ট্রাম্প করছেন, সেটা হলো ওবামার জনপ্রিয়তাকে আমলে না নেওয়া। বারাক ওবামা এখন পর্যন্ত আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের একজন। ফলে, ট্রাম্পের ওবামাকে আক্রমণ তাকেই ব্যাকফায়ার করছে, লাভবান করছে জো বাইডেনকে। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসের মনোনয়নেও আছে বারাক ওবামার ভূমিকা, আছে ওবামার নিজেকে ইতিহাসের পাতায় আব্রাহাম লিংকনের মতো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার তাড়না।

This article is written in bangla about the returning of Barack Obama, to protect his legacy.  All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image: The New York Times

Related Articles