Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ম্যাক্স ওয়েবার ও জন লকের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব

সভ্যতার শুরু থেকে মানুষের সমাজবদ্ধ জীবনের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়েছে রাষ্ট্র নামের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সময়ের সাথে রাষ্ট্রের মূল্যবোধে পরিবর্তন এসেছে, রাষ্ট্রের দায়িত্বে পরিবর্তন এসেছে, পরিবর্তিত হয়েছে শাসনকাঠামোও। এত বিবর্তনের মধ্যেও সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত তিন ধরনের রাষ্ট্রকাঠামোর প্রমাণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আলোচনায় উঠে এসেছে- গোষ্ঠীতন্ত্র, সামন্তবাদী রাষ্ট্র এবং আধুনিক রাষ্ট্র।

আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা সাধারণত গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। এর মধ্যে কিছু কিছু গোষ্ঠী আছে এমন, যেগুলোতে কোনো স্বীকৃত গোষ্ঠীপ্রধান থাকে না। ফলে গোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণত ইনফরমাল আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্তে পৌঁছান, সামষ্টিক স্বার্থ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। এভাবেই তারা নিজেদের প্রতিরক্ষার রূপরেখা নির্ধারণ করে, গোষ্ঠীর সকলের স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে সেটি করে। গোষ্ঠীর সকল সদস্যই মোটাদাগে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়, গোষ্ঠীর প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করে, আবার অংশ হয় অন্য কোনো গোষ্ঠীকে আক্রমণ প্রক্রিয়াতেও। এই গোষ্ঠীগুলোতে সাধারণভাবে কোনো আইনী কাঠামো নেই। বরং, বিভিন্ন ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংঘাত সমাধানে ডুয়েল আহবান করা হয়, ডুয়েলে বিজয়ী ব্যক্তি হত্যা করে পরাজিত ব্যক্তিকে।

গোষ্ঠীতন্ত্রের কাঠামো এখনো রয়েছে গেছে আফ্রিকাতে; Image Source: Britannica. 

গোষ্ঠীতন্ত্র প্রকৃত রাষ্ট্র হয়ে ওঠার অনেক মৌলিক প্রয়োজনই পূরণ করে না, নিশ্চিত করতে পারে না নাগরিক অধিকার। বরং বিরাজ করে হবসিয়ান দর্শনের ‘প্রকৃতির রাজ্যের’ মতো অরাজকতা, চলে সকলের বিরুদ্ধে সকলের যুদ্ধ। ফলে ই. ই. ইভান্স-প্রিচার্ডের মতো অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই (নৃবিজ্ঞানী হিসেবে অধিক পরিচিত) গোষ্ঠীতন্ত্রে কোনো রাষ্ট্রের উপস্থিতি দেখেন না। ১৯২২ সালে প্রকাশিত ফ্রেডরিক ল্যুগার্ডের ‘দ্য ড্যুয়েল ম্যান্ডেট ইন ব্রিটিশ ট্রপিক্যাল আফ্রিকা’ বইয়েও আলোচিত হয়েছে আফ্রিকার গোষ্ঠীতন্ত্রের বিভিন্ন উপাদান, আলোচিত হয়েছে ১৯৯৬ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে মাহমুদ মামদানীর ‘সিটিজেন এন্ড সাবজেক্ট: কন্টেম্পরারি আফ্রিকান এন্ড দ্য লিগাসি অব লেট কলোনিয়ালিজম’। 

সামন্তবাদী রাষ্ট্রের কাঠামোর আলোচনা অনেক রাষ্ট্রচিন্তকের আলোচনাতেই এসেছে। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হেনরি লয়েনের ‘দ্য গভর্ন্যান্স অব এংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড’ বইয়ে ইংল্যান্ডের সামন্তবাদী রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে আলোচনা এসেছে, একই আলোচনা এসেছে ২০০৯ সালে প্রকাশিত জে. আর. ম্যাডিকটের ‘অরিজিনস এন্ড বিগিনিং টু ১২১৫’ বইয়েও। সামন্তবাদ সাধারণভাবে রাজতন্ত্রের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হয়, সহযোগী প্রতিষ্ঠান হয় কতিপয়তন্ত্রেরও। এই কাঠামোতে, রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে থাকে, রাজা সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে থাকেন। কিন্তু নির্দিষ্ট অঞ্চলের শাসন আর অর্থনৈতিক কাজের নিয়ন্ত্রণ থাকে সামন্তের কাছে। নির্ধারিত অঞ্চলের সকল ভূমির উপর একক নিয়ন্ত্রণ থাকে সামন্তের, তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন উৎপাদন, বিভিন্ন পণ্য আর কাঁচামালের উৎপাদকেরা কাজ করে তার ভূমিদাস হিসেবে।

সামন্তবাদী রাষ্ট্রকাঠামো; Image Source: Britanicca.

আধুনিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক থেকেই এই বৈশিষ্ট্যগুলোর চেয়ে ব্যক্তিক্রম। আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে ওঠে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ থাকে কেন্দ্রের হাতে, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমও নেয় রাষ্ট্রীয় কাঠামোই। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে নিতে হয় শিক্ষা আর চিকিৎসার দায়িত্বও। এই দায়িত্বগুলোর আলোকে রাষ্ট্রের অনেকগুলো মৌলিক দায়িত্বের অবতারণা করছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। এই লেখায় আলোচনা করা হবে বিখ্যাত তিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

ম্যাক্স ওয়েবার: শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

হবসের দর্শনানুয়ায়ী, প্রকৃতির রাজ্যের অনাচার থেকে বাঁচতে মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্র তৈরির মাধ্যমে মানুষ কিছু আইনি কাঠামো তৈরি করে, শাসনকাঠামো তৈরি করে, যাতে সবল দুর্বলের অধিকার হরণ করতে না পারে। আবার শক্তিশালী শত্রুর বিপরীতে যাতে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়, সেজন্য তৈরি হয় সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রও। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

রাষ্ট্রকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে হয় বহিঃশত্রুর হাত থেকেও। বাইরের শক্তির হাত থেকে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয় সামরিক বাহিনী, তৈরি হয় কূটনৈতিক কাঠামো। আবার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তৈরি হয় বিচার বিভাগ, তৈরি হয় আমলাতন্ত্র। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করলে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করা সহজ হয়ে ওঠে।

জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার; Image Source: Britannica.

জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের দর্শনানুযায়ী, রাষ্ট্রের নৈতিক এবং আইনি যে ক্ষমতা রয়েছে, সেটির যথাযথ ব্যবহার করা আধুনিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র শারীরিক শক্তির ব্যবহার করতে পারে, নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক গ্রুপকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে, অপরাধীদের বিচার আওতায় এনে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

তবে রাষ্ট্রীয় এই সক্ষমতার অপব্যবহার যেকোনো রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় তুলে আনতে পারে আধুনিক যুগে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্রেথ আর মিলসের মতে, সংঘাত উৎপাদনে রাষ্ট্র মনোপলি উপভোগ করে। ফলে রাষ্ট্র চাইলে অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে ক্রিয়াশীল যেকোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে, সিভিল সোসাইটির কাঠামোকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে, যেকোনো জাতিগত গোষ্ঠীর উপর চালাতে পারে নির্যাতন। আবার, সংঘাত উৎপাদনের অসীম ক্ষমতা থেকে রাষ্ট্র বহিঃশত্রুর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে অপ্রয়োজনীয়ভাবে। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার আধুনিক রাষ্ট্রের কাঠামোতে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

জন লক: ব্যক্তিগত সম্পত্তির নিরাপত্তা

মানবসভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা গড়ে ওঠে। এতে মানুষের জৈবিক প্রেরণার সাথে জড়িয়ে গেছে সম্পত্তি অর্জনের প্রেরণা। ফলে সভ্যতার অগ্রগতির সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে মানুষের সম্পত্তি অর্জনের তাড়না, জড়িয়ে আছে ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির অর্জনের আশা। মানুষের রাষ্ট্র তৈরির তাড়না হিসেবেও কাজ করেছে এটি, যাতে শৃঙ্খল সামাজিক কাঠামোতে মসৃণভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে পারে মানুষ। এই প্রেক্ষাপট থেকেই জন লকের দর্শনে রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

জন লক; Image Source: Essential Scholars.

লকের দর্শনানুযায়ী, রাষ্ট্র যদি ব্যক্তির শ্রমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো হুমকির মুখে পড়বে। আবার, যদি ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের সুযোগ না থাকে, তাহলে ব্যক্তি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রেরণা পাবে না, বাধাগ্রস্ত হবে রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধি। ফলে রাষ্ট্র যদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায় এবং সমসাময়িক রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকতে চায়, তাহলে রাষ্ট্রকে বিনিয়োগ করতে হবে ব্যক্তিগত সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিকে।

This articel is written in Bangla, about the role of state according to political philosphy of Max Wever and John Locke. 

All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image: The Guardian. 

Related Articles