Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্বিতীয় সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের আন্দোলন: আধুনিক গণতন্ত্রের ষষ্ঠ ঢেউ

প্রকৃতির রাজ্যের অনাচার আর নিরাপত্তাহীনতা থেকে বাঁচতে মানুষ একত্রিত হয়ে সামাজিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্র তৈরি করে। রাষ্ট্র নামের রাজনৈতিক সংগঠনটি এরপর থেকে মানবসভ্যতার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়েছে রাষ্ট্রের প্রকৃতি। শুরুর দিকে রাষ্ট্রগুলো ছিল আকৃতিতে ছোট, জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে ছিল কম, শাসনতন্ত্রের আয়তন ছিল ক্ষুদ্র, রাষ্ট্রগুলো পরিচিত ছিল নগররাষ্ট্র নামে।

মধ্যযুগে এসে রাষ্ট্রগুলোর আকার বড় হওয়া শুরু হয়, শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদের যুগ। রাষ্ট্রব্যবস্থার এই পুরো সময় জুড়ে শাসনক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত ছিল অল্প কিছু মানুষের কাছে, ক্ষমতার পালাবদল হতো উত্তরাধিকার সূত্রে। রাজার মৃত্যুর পর নতুন রাজা হতেন রাজার উত্তরাধিকারেরা, একই সমীকরণ ছিল অন্যান্য শাসনতান্ত্রিক ইউনিটের জন্যও। রাজবংশের বাইরে কেউ ক্ষমতায় আরোহন করতে চাইলে আশ্রয় নিতে হতো রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের, হত্যা করতে হতো রাজা ও তার সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের। প্রতিষ্ঠিত হতো নতুন রাজবংশ, আবার নতুন করে শুরু হতো উত্তরাধিকারের ধারা।

রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্রমাগত বিবর্তনের মধ্যে আধুনিক যুগে এসে পরিবর্তন হয় ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়া। উত্তরাধিকার কিংবা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরিবর্তে আধুনিক যুগের গণতান্ত্রিক কাঠামো সুযোগ তৈরি করেছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদলের, শাসকগোষ্ঠীকে সুযোগ করে দিয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে নৈতিক বৈধতা অর্জনের। অনিশ্চিত ক্ষমতার পালাবদল থেকে নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতার পালাবদলের যুগ আনতে আধুনিক গণতন্ত্র গিয়েছে অনেকগুলো বিপ্লবের মধ্য দিয়ে, হাজারো বিদ্রোহ আর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আন্টলান্টিক রেভ্যলুশন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক এই ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে অধ্যাপক সেভা গুনিস্কায়ের  ‘ডেমোক্রেটিক ওয়েভস ইন হিস্ট্রিকাল পার্সপেকটিভ’ আর্টিকেলে। আজকের আলোচনা সেভা গুনিস্কায়ের তেরোটি পর্বের মধ্যে ষষ্ঠ পর্ব নিয়ে, যেটি পরিচিতি পেয়েছে দ্বিতীয় সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের আন্দোলন নামে।

দ্বিতীয় সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের আন্দোলন (১৯০৫-১২)

১৯০৫ সাল। রাশিয়ার ক্ষমতায় তখন জার দ্বিতীয় নিকোলাই। একদিকে ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাশিয়াতে, অন্যদিকে রাজতন্ত্র ব্যর্থ হচ্ছিল নতুন আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক হতে। রাশিয়াতে একটা দীর্ঘ সময় ধরে কৃষকদের মধ্যে ধূমায়িত ক্ষোভ ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে, ভূমিহীন কৃষকদের ক্ষোভ ছিল সামন্তবাদের ব্যাপারেও। রুশ সমাজে ছিল তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য, জারের আমলাতন্ত্র ছিল স্বৈরাচারী মনোভাবের। এর মধ্যে রাশিয়া পরাজিত হয় জাপানের সাথে যুদ্ধে, যার প্রভাব পড়ে রুশ জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে। সব মিলিয়ে ১৯০৫ সালের জানুয়ারিতে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে রাশিয়াতে শুরু হয় বিক্ষোভ, কৃষকরা বিদ্রোহ করে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে, সামরিক অভ্যুত্থান হয় সামরিক ছাউনিগুলোতেও। ধীরে ধীরে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে কৃষকদের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ে শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা, রেনেসাঁর ধারণায় উদ্ধুদ্ধ তরুণেরা, জড়িয়ে পড়ে ধর্মীয় সংগঠনগুলোও।

রাশিয়াতে ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ফলে পরিবর্তন আসে শাসনকাঠামোতে; Image Source: People’s World

আড়াই বছরের এই বিপ্লবের ফলে নিরবচ্ছিন্ন রাজতন্ত্র থেকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় রাশিয়াতে, প্রতিষ্ঠিত হয় স্টেটস ডুমা, অনুমোদিত হয় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো। পরিবর্তন হয় জার, বিদায় নেন জার দ্বিতীয় নিকোলাই। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করে বিপ্লবীরাই। তথাপি, জাতীয়তাবাদের ধারণায় সংকট, বিপ্লবীদের মধ্যে বিভাজন সম্ভাবনাময় এই বিপ্লবকে দীর্ঘমেয়াদে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে এবং দলীয় একনায়কতন্ত্র তৈরি করে ১৯১৭ সালের বিপ্লবের

রাশিয়াতে ১৯০৫ সালের বিপ্লব দীর্ঘমেয়াদে ব্যর্থ হয় লেলিনের সমর্থকের অক্টোবর বিপ্লবের কারণে; Image Source: Britannica

রাশিয়ার কাছাকাছি সময়েই সংস্কারের ঢেউ লাগে এশিয়া মহাদেশের আরেক দেশ ইরানে। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ইরান বারবার সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হলেও কখনোই যায়নি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই রক্ষণশীল এ দেশে বাড়ছিল রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। ক্রমবর্ধমান বিদেশী প্রভাব, প্রধান উজির আয়ীন উদ-দৌলার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনযন্ত্রের স্বৈরাচারী মনোভাব, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রভাব চাঙা করে রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব। ইরানে শাসনতন্ত্রের সংস্কারের দাবির আন্দোলন শুরু হয় তৎকালীন প্রধান উজির আয়ীন উদ-দৌলার অপসারণের দাবি নিয়ে, দাবি ছিল আলেমদের নিয়ে আদালতখানা প্রতিষ্ঠারও। জুলাই মাসে পুলিশ বাহিনীর আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ ছড়িয়ে দেয় আন্দোলনকে, প্রধান উজিরের অপসারণের দাবি রূপ নেয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দাবিতে। আন্দোলনের ব্যাপকতায় জুলাই মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধান উজির আয়ীন উদ-দৌলা, পরের মাসেই শুরু হয় সংবিধান তৈরির কার্যক্রম।

ইরানের প্রথম মজলিসের এমপিরা; Image Source: Islamic History

ইউরোপ আর এশিয়ার মিলনস্থলে থাকা তুরস্কে ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রভাব পড়ে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতেই, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সাথে শুরু হয় ইউরোপীয় চিন্তাধারার বিকাশ। সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচার, শিল্পে আধুনিকায়নের অভাব, বাণিজ্যে অপারদর্শীতা আর কৃষিতে পশ্চাদচারণ বেগবান করে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা। ১৯০৮ সালে মেসিডোনিয়াতে সেনাদের বিদ্রোহ তুরস্কের সুলতানকে বাধ্য করে সংস্কারপন্থীদের দাবি মেনে নিতে তুরস্কে পুনরায় চালু হয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র।

চীনে হাজার বছরের রাজতন্ত্র নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেছে, পরতিহত করেছে শত-শত বিদ্রোহ আর প্রাসাদের ষড়যন্ত্র। রাজতন্ত্রের আমলে মোটাদাগে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী সময় পার করেছে চীন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অংশ ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সাথে তাল মেলায়ে ব্যর্থ হয় চীন, পড়ে রাজনৈতিক সংকটেও। রাজতন্ত্রের অদক্ষতা আর দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠতে থাকে গোপন বিপ্লবী সংগঠন, যার একটির নেতৃত্বে ছিলেন আধুনিক চীনের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. সান ইয়াৎ সেন

১৯০৬ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে এই বিপ্লবী দলটি এগারোবার রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেষ্টা করে, ব্যর্থ হয় প্রতিবারই। পরিস্থিত বদলে যায় ১৯১২ হুবেই শহরে শুরু হওয়া উ-চাং বিদ্রোহে। বিপ্লবীদের এক সেফ হাউজে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে আসে বিপ্লবীদের কর্মকান্ড, শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। ফলে নিজেদের বাঁচাতে পাল্টা আঘাতের সিদ্ধান্ত নেন বিদ্রোহীরা, শুরু হয় রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিপ্লব। মোটাদাগে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পায় বিপ্লবীরা, ড. সান ইয়াৎ সেন নিশ্চিত করেন ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সমর্থন। রাজতন্ত্রের অযোগ্যতায় সফল হয় বিপ্লবীরা, চীনে সমাপ্তি ঘটে রাজতন্ত্রের। 

ড. সান ইয়াৎ সেন; Image Source: Britannica

দ্বিতীয় সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের ঢেউ প্রভাব ফেলে এশিয়ার বাইরেও, রাশিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোর সাথে সাথে প্রভাব পড়ে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে থাকা পর্তুগালেও। রাজপরিবারের সীমাহীন ব্যয়, পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা, রাজপরিবারে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিরক্ত করে তোলে পর্তুগিজদের, ক্ষুব্ধ হয় সামাজিক ও ধর্মীয় ধারণা পরিবর্তনেও চেষ্টাতেও। এর সাথে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর রাজতন্ত্রের স্বৈরশাসনের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা জনগণকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে রাজতন্ত্রের অস্তিত্বের ব্যাপারে। ১৯১০ সালের অক্টোবর মাসের বিপ্লব পর্তুগালে সমাপ্তি ঘটায় রাজতন্ত্রের, রাজাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পর্তুগাল যাত্রা শুরু করে রিপাবলিক হিসেবে।

আধুনিক গণতন্ত্রের ষষ্ঠ ঢেউ

কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেভা গুনিস্কাইয় আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছেন তেরোটি পর্বে, প্রতিটি পর্বেই ছিলো অনন্য কিছু ঘটনা, ছিলো গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠায় যুগোত্তীর্ণ কিছু ভূমিকা। আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনের আলোচনায় ষষ্ঠ পর্বও এর ব্যতিক্রম নয়, এই পর্বেরও রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব।

প্রথমত, আধুনিক গণতন্ত্রের প্রথম পাঁচটি ঢেউ দ্বারা প্রভাবিত হয় আটলান্টিক সাগর পাড়ের দেশগুলো, স্বাধীনতা অর্জন করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো, প্রভাবিত হয় মধ্য আর পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো। ষষ্ঠ পর্বে এসে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের আবেদন পৌঁছায় আয়তন আর জনসংখ্যায় বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়াতে। এর শুরুটা হয় রাশিয়া দিয়ে, ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রভাব পড়ে অটোমানদের শাসনে থাকা তুরস্কে, সাংবিধানিক পরিবর্তন আসে ইরানে, চীনে উৎখাত হয় হাজার বছরের পুরনো রাজতন্ত্র। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে পরবর্তীতে রাশিয়া, চীনে বিপ্লবের দুঃখজনক পতন হলেও, বিপ্লবীদের প্রাথমিক আদর্শিক অবস্থান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষেই ছিল এবং এই মূল্যবোধগুলোই তাদেরকে বিপ্লবের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

ড. সান ইয়াৎ সেন মেমোরিয়াল হল; Image Source: Getty Images

দ্বিতীয়ত, আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনে অন্যতম একটা প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থেকেছে প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজার ক্ষমতাকে সীমিত করা, রাজার স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করা, রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি ভাবার ভুল ধারণা ভাঙানো। আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনের ষষ্ঠ পর্বে এসেও বজায় ছিলো এই চ্যালেঞ্জ। রাশিয়াতে সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে সীমিত করা হয় রাজার ক্ষমতাকে, ইরানেও আসে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। প্রধান উজীরকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বে আসার প্রথা শুরু হয় ইরানে। রাজতন্ত্রের চূড়ান্ত রাজনৈতিক ব্যর্থতাইয় চীনে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয় রাজতন্ত্র, ক্ষমতাচ্যুত হন ছয় বছর বয়সী সম্রাট। একই সময়ে ক্ষমতাচ্যুত হন পর্তুগালের রাজাও।

তৃতীয়ত, আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম মূল বৈশিষ্ট্য হলো রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগকে পৃথক রাখা। রাজতন্ত্রের সময় এই তিনটি বিভাগই সাধারণত থাকত রাজার অধীনে। রাজাই নির্ধারণ করতেন তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের, তিনিই ডিক্রির মাধ্যমে জারি করতেন আইন, আর বিচার বিভাগও থাকতো তারই নিয়ন্ত্রণে। আধুনিক গণতন্ত্রের ষষ্ঠ পর্বে ইরানের উদাহরণকে সামনে রাখলে এই  পৃথকীকরণের চাহিদা পর্যালোচনা সম্ভব। ইরানে সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় আদালতখানা প্রতিষ্ঠার দাবির আন্দোলন নিয়ে। পরবর্তীতে সেখানে আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা রাজার আইন তৈরির ক্ষমতাকে সীমিত করে, আদালতখানা পৃথক করে বিচার বিভাগকে। নির্বাহী বিভাগ ইরানের শাহের অধীনে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী রাজার ক্ষমতাকে সীমিত করার সুযোগ পান।

ইরানের প্রথম মজলিসের সদস্যরা; Image Source: Photo ISNA

চতুর্থত, দীর্ঘমেয়াদে এই ষষ্ঠ ঢেউয়ের অনেক কিছুই টিকে থাকেনি। রাশিয়াতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও শাসনকাজে অভিজ্ঞতা না থাকায় বিপ্লবীরা রাজার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা আটকাতে পারেননি, নিজেরাও জড়িয়ে পড়েন দলীয় একনায়কতন্ত্রে। পরবর্তীতে রাশিয়াতে ১৯১৭ সালে আরেকদফা বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন হলেও এই বিপ্লবগুলো বিপ্লবীদের সুযোগ করে দিয়েছে আরো কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার জন্য, বৈধতা দিয়েছে রাজনৈতিক অধিকার হরণের চেষ্টাকে। পরবর্তী কয়েক দশকে রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করলে বলা যায়, ১৯০৫ সালের পরে রাশিয়া ক্রমাগত আরো কর্তৃত্ববাদের দিকে গেছে। একই ঘটনা ঘটেছে চীনের ক্ষেত্রেও। রাজতন্ত্রের সময়ের চেয়েও রাজনৈতিকভাবে সংকীর্ণ সংস্কৃতিতে ঢুকেছে বিপ্লবীদের সময়ে, আনুপাতিকভাবে বেশি ঘটেছে রাজনৈতিক অধিকারের ঘটনা।

আধুনিক গণতন্ত্র ষষ্ঠ পর্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সংস্কারের দাবির মধ্যেই। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকেই আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনে একটি বৈশ্বিক কাঠামো পরিবর্তনের দিকে যাওয়া শুরু করে। এই সংক্রান্ত আলোচনা থাকবে পরবর্তী পর্বগুলোতে।  

This article is written in Bangla. It is about the second constitutional wave of democracy, according to Professor Seva Gunitsky.

All the necessary references are hyperlinked inside the article. 

Featured Image: History.com

Related Articles