১৮৬১-৬৩; যুক্তরাষ্ট্রে তখন চলছে গৃহযুদ্ধ, ফেডারেল বাহিনীর সাথে লড়াই চলছে বিদ্রোহীদের। গৃহযুদ্ধের সময়কে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সাংগঠনিকভাবে এক নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। গৃহযুদ্ধ চলাকালে ফেডারেল সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জেনারেল ইউলিসেস এস. গ্রান্ট, নৌবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন এডমিরাল ডেভিড ডি. পর্টার। বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই দুই মিলিটারি কমান্ডার সমন্বয় করে অভিযান চালান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, সমন্বিত কার্যকর পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুতই দমন করেন বিদ্রোহীদের। গৃহযুদ্ধকালীন এই অভিজ্ঞতা সামরিক বাহিনীতে যৌথ কমান্ড তৈরির মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির নতুন উপায় হিসেবে হয়, বিবেচিত হয় সামরিক বাহিনী সম্পদগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্যকর অভিযান তৈরির পরিচালনার পদ্ধতি হিসেবে।
বিভিন্ন ধরনের যৌথ কমান্ড
সাধারণভাবে, সামরিক বাহিনীতে তিন ধরনের যৌথ কমান্ড দেখা যায়।
প্রথমত, সাধারণত, কোনো নির্দিষ্ট ধারণা, বিদ্রোহী গোষ্ঠী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদ সংগঠনগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত সংঘাত চালাতে হয় সামরিক বাহিনীর, সামরিক অভিযান চালিয়ে নিশ্চিত করতে হয় নাগরিকদের নিরাপত্তা। কখনো এই ধরনের অভিযানগুলো কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হয়, কখনো চলে যুগের পর যুগ ধরে। সামরিক বাহিনীর সবগুলো অংশই সাধারণত এসব অভিযানের অংশ হয়, অভিযান চালাতে হয় জলে-স্থলে, নিয়ন্ত্রণ নিতে হয় আকাশেরও। সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অংগের সকল সৈন্য আর যুদ্ধাস্ত্র একক কমান্ডারের অধীনে নিয়ে এসে সম্মিলিত অভিযান পরিচালনার ধারণাকে ইউনিফাইড কমান্ড বলে।
দ্বিতীয়ত, অনেক সময়ই বিশেষ ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। সেই অভিযান কখনো ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে শেষ হয়, আবার কখনো ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে যেতে হয়। বিশেষ ধরনের অভিযানগুলো পরিচালনার জন্য সাধারণত সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফের নির্দেশনায় তৈরি হয় যৌথ কমান্ড, যেটি পরিচিতি পায় স্পেশাল কমব্যাটান্ট কমান্ড হিসেবে।
ধরা যাক, কাল্পনিক রাষ্ট্র ‘ক’তে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সেই দেশে নিরাপত্তার সংকট তৈরি করছে, প্রতিনিয়ত হুমকি তৈরি করছে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি। এই অবস্থায় সেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে মোকাবেলার জন্য বিশেষভাবে কোনো প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি করতে পারেন কমান্ডার-ইন-চিফ, প্রতিরক্ষা সচিবের তত্ত্বাবধানে। সেই প্রতিরক্ষা কাঠামো পরিচিতি পায় ‘স্পেশাল কমব্যাটান্ট কমান্ড’ নামে।
তৃতীয়ত, অনেক সময় নিয়মিত বা বিশেষ ধরনের অপারেশন পরিচালনা করতে হয় নির্দিষ্ট অঞ্চলজুড়ে, মোকবেলা করতে হয় সংঘবদ্ধ শক্তিকে। সাধারণত, রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের বাইরের সংঘবদ্ধ শক্তি ত্রিমাত্রিক আক্রমণ চালায়, নিয়মিত বাহিনীগুলোর সবগুলো অংশকেই তখন যুক্ত হতে হয় অভিযানে।
এমন ক্ষেত্রে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর সকল সদস্য আর সম্পদের নিয়ন্ত্রণ একজন মাত্র কমান্ডারের কাছে ন্যস্ত করা হয়। নির্দিষ্ট অঞ্চলের এই সমন্বিত কমান্ড পরিচিত ‘থিয়েটার কমান্ড’ নামে।
সামরিক পরাশক্তিগুলোতে যৌথ কমান্ড
গৃহযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী আর নৌবাহিনীর সমন্বিত অভিযানে সাফল্য আসলেও, যৌথ কমান্ড তৈরির প্রচেষ্টা তখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব চালায়নি। পরবর্তী দশকগুলো বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে আন্তঃবাহিনী দূরত্ব বেড়েছে, তৈরি হয়েছে মনস্তাত্ত্বিক প্রতিযোগিতা। সাংগঠনিক কাঠামোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আন্তঃবাহিনী মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বের কারণে যৌথ কমান্ড গড়ে তোলা যায়নি। বিভিন্ন বাহিনীর বিচ্ছিন্নভাবে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য অনেকগুলো বার্তা রেখে যায়, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বার্তা রেখে যায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্যও। অভিজ্ঞতার আলোকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যানরি এস. ট্রুমান সামরিক নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে বলেন:
গত দুটি যুদ্ধ আমরা যেভাবে করেছি, সেভাবে আর কোনো যুদ্ধ করা আমাদের উচিত হবে না। যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয়েছে, আমাদের সেনাবাহিনী আর নৌবাহিনী শত্রুর বিরুদ্ধে যতটা লড়াই করেছে, ততটাই লড়াই করেছে নিজেদের বিরুদ্ধে। নিজেদের মধ্যে এই লড়াইটা না হলে, শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ আরো তাড়াতাড়ি শেষ হতো।
ট্রুমানের এই অভিজ্ঞতা একদিকে যৌথ কমান্ড তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে তুলে আনে, অন্যদিকে সামরিক নেতৃত্বকে প্রভাবিত করে যৌথ কমান্ড তৈরিতে সাংগঠনিক সংস্কারের পথে হাঁটতে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ারের সময়ে গতি পায় সাংগঠনিক সংস্কারের প্রচেষ্টা। প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার ছিলেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, জাপানের সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবার আক্রমণের সময় তিনি ছিলেন অপারেশন ডিভিশনের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ। যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে জেনারেল আইজেনহাওয়ার আফ্রিকা অঞ্চলের সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিকৃত জার্মানের অঞ্চলগুলোতে।
পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেনারেল আইজেনহাওয়ার, ছিলেন ন্যাটোর সর্বাধিনায়কও। যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারকে যৌথ কমান্ড তৈরিতে প্রেরণা জোগায়, তার সময়েই ১৯৫৮ সালে পাস হয় ডিফেন্স রিঅর্গানাইজেশন অ্যাক্ট। ১৯৪৭ সালের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে সংশোধন করে তৈরি করা এই আইনে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেওয়া হয় যৌথ কমান্ড তৈরির, সেক্রেটারি অব ডিফেন্স আর জয়েন্ট চিফ স্টাফের পরামর্শ সাপেক্ষে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেওয়া হয় স্পেসিফাইড কমান্ড তৈরিরও।
প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সময় থেকে শুরু হওয়া কাঠামোগত সংস্কার স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে, বিভিন্ন অভিযানে আসে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ১৯৮৯ সালে পানামাতে চালানো ‘JUST CAUSE’ অভিযান সফলভাবে চালায় যৌথ কমান্ড, সাফল্য আসে ১৯৯১ সালের ‘DESERT STROM’ অপারেশনেও। ১৯৯৫ সালে বসনিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর চালানো ‘DELIBERATE FORCE’ অভিযানেও আসে সাফল্য। এই শতকে যৌথ কমান্ডের অধীনেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করেছে, রাজনৈতিক সাফল্য সীমিত হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাবুল দখল করেছে, বাগদাদে সাদ্দামের পতন ঘটিয়ে সমাপ্তি টেনেছে একনায়কতন্ত্রের।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি যৌথ কমান্ড রয়েছে। আফ্রিকার সামরিক বাহিনীগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করে আফ্রিকা কমান্ড, এর সদর দপ্তর জার্মানিতে। মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তার হুমকি আর সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সব অভিযান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান হয় সেন্ট্রাল কমান্ডের মাধ্যমে, যার সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথভাবে কাজ করে ইউরোপীয় কমান্ড, এই কমান্ডের দায়িত্বের মধ্যে আছে ইউরেশিয়া অঞ্চলও। বৈশ্বিক রাজনীতির হটস্পট হয়ে উঠছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, এর দায়িত্বে আছে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড।
সম্প্রতি সাইবার হামলা প্রতিরোধে গঠিত হয়েছে সাইবার কমান্ড, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে নর্দান কমান্ড, সাউদার্ন কমান্ড। মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় তৈরি হয়েছে স্পেস কমান্ড, যাদের দায়িত্ব জলে, স্থলে, আকাশের মতো মহাকাশেও প্রজন্ম ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে রয়েছে স্ট্র্যাটিজিক কমান্ড, রয়েছে ট্রান্সপোর্টেশন কমান্ড। এর মধ্যে আফ্রিকা কমান্ড, সেন্ট্রাল কমান্ড, ইউরোপীয় কমান্ড, ইন্দো-প্যাফিসিক কমান্ড, নর্দান কমান্ড, সাউদার্ন কমান্ড, স্পেস কমান্ড কাঠামোগত ও সাংগঠনিকভাবে থিয়েটার কমান্ডও। কমান্ডগুলোর নেতৃত্বে থাকেন একজন করে চার তারকা জেনারেল।
সামরিক সামর্থ্য আর দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের বদৌলতে একসময় পৃথিবীর সবপ্রান্তে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে যুক্তরাজ্য। সামরিক সামর্থ্যে যুক্তরাজ্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হোঁচট খায়, বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বাস্তবতায় ছাড়তে হয় উপনিবেশগুলোর নিয়ন্ত্রণও। একসময়ের সর্বজয়ী যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীতে একীভূত কমান্ড তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয় বেশ দেরিতে, ১৯৬৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সামরিক সংস্কারের অভিজ্ঞতা নিয়ে যুক্তরাজ্য একীভূত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তৈরি করে, তৈরি করে সেক্রেটারি অব ডিফেন্সের পদ। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীতে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের পদ তৈরি করা হয়, তৈরি করা হয় পার্মানেন্ট আন্ডার-সেক্রেটারির পদও। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তিন বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ ছিল বাহিনীর প্রধানদের।
২০১১ সালে লর্ড লেভেনের নেতৃত্বাধীন ‘ডিফেন্স রিফর্ম রিভিউর’ রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীতে আরো ধারাবাহিক কিছু কাঠামোগত সংস্কার আনতে। রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জয়েন্ট ফোর্সের কমান্ড তৈরির, পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য।
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যুক্তরাজ্যের সকল অপারেশনের দায়িত্বে আছে চিফ অব জয়েন্ট অপারেশনস (সিজেও) আর পার্মানেন্ট জয়েন্ট হেডকোয়ার্টারস (পিজেএইচকিউ), অপারেশনের পরিকল্পনাও তৈরি করে তারাই।সিজেও সরাসরি রিপোর্ট করেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের (সিডিএস) কাছে।
গত চার দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিস্ময়কর উত্থান ঘটেছে চীনের। গত শতাব্দীর আশির দশকে বৈশ্বিক জিডিপিতে চীনের অংশ ছিল মাত্র ২ শতাংশ, রাজনৈতিকভাবেও চীন ছিল অনেকটাই নির্ভৃতচারী। আশির দশকের শুরুতেই অর্থনৈতিক কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার আনেন চীনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাড়তে থাকে চীনের অংশগ্রহণ, বড় হতে থাকে তাদের অর্থনীতির আকার। চার দশকে বৈশ্বিক জিডিপিতে চীনের অংশ বেড়েছে দশগুণ, ২০২০ সালে জিডিপির ২০ শতাংশ তাদের। অর্থনৈতিক এই উত্থানের প্রভাব পড়েছে চীনের সামরিক খাতেও, বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এসেছে এই খাতে।
বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে চীন যৌথ কমান্ড গড়ে তোলার মনোযোগ দিয়েছে গত দশকে, তৈরি করেছে ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস (আইজেও)। চীন আগে নিজেদের অভিযানগুলো পরিচালনা করত জয়েন্ট অপারেশনসের মাধ্যমে, যে কাঠামোতে বাহিনীগুলো আলাদা আলাদা নিজেদের সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্যের মধ্যে থেকে অভিযান চালাত। ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনসের মাধ্যমে তারা পিপলস লিবারেশন আর্মির সবগুলো অংশের একসাথে অভিযান চালানোর কাঠামো তৈরি করেছে, বাহিনীগুলোতে এনেছে কাঠামোগত সংস্কার।
চীন এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীতে কতগুলো যৌথ কমান্ড তৈরি করেছে, তা নিরপেক্ষ সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের প্রকাশিত তথ্যানুসারে, পিপলস লিবারেশন আর্মিতে এখন পর্যন্ত পাঁচটি থিয়েটার কমান্ড রয়েছে। ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের হেডকোয়ার্টার নানজিংয়ে, সাউদার্ন থিয়েটার কমান্ডের হেডকোয়ার্টার গুয়াংজুতে, ওয়েস্টার্ন কমান্ডের হেডকোয়ার্টার চেংডুতে, নর্দান কমান্ডের শেনঝাংয়ে এবং সেন্ট্রাল কমান্ডের সদর দপ্তর বেইজিংয়ে।
কেন যৌথ কমান্ড গঠন করে সামরিক পরাশক্তিগুলো?
প্রথমত, প্রায় সকল রাষ্ট্রেরই বাজেটের একটি বিপুল অংশ ব্যয় করতে হয় সামরিক খাতে, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। যেসব দেশ বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, তাদের নিজেদের ও আঞ্চলিক মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তেই সামরিক অভিযান চালাতে হয়, দীর্ঘসময় ধরে চালিয়ে নিতে হয় ছায়াযুদ্ধগুলোও। পরাশক্তির মর্যাদা টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রগুলো তাই চায় সকল সামরিক রিসোর্স একীভূৎ করে শত্রুদেশকে নির্মূল করতে। যৌথ কমান্ডের মাধ্যমে সেটি করা সাংগঠনিকভাবে সহজ হয়।
দ্বিতীয়ত, অভিযান পরিচালনার সময় সাধারণত দেশগুলোকে ত্রিমাত্রিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়। ত্রিমাত্রিক আক্রমণ মোকাবেলায় প্রয়োজন স্থল, বিমান ও নৌবাহিনীর সমন্বিত প্রতি-আক্রমণ প্রয়োজন হয়। যৌথ কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর রিসোর্সের মধ্যে কমিউনিকেশন গ্যাপ কমিয়ে আনা যায় এবং একক অধিনায়কের অধীনে সৃজনশীল উপায়ে আক্রমণ প্রতিরোধ চালান যায়।
তৃতীয়ত, যৌথ কমান্ডের মাধ্যমে একটি সমন্বিত সামরিক ইমপেক্ট তৈরি করা সম্ভব হয়, সকল রিসোর্স ব্যবহার করে একজন সৃজনশীল সামরিক কমান্ডার প্রথাগত এবং অপ্রথাগত অভিযান পরিচালনা করতে পারেন। সকল বাহিনী একজন কমান্ডারের অধীনে থাকায় তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, যোগাযোগের সময় কমে আসে এবং তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়।