‘ফ্রিল্যান্সিং’ আর ‘আউটসোর্সিং’ শব্দ দুটি একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত। ‘ফ্রিল্যান্স’ বা মুক্তপেশা বলতে এরকম কোনো কাজকে বোঝায়, যা করতে হলে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অধীনস্থ থাকার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার কথাই বলা যাক। যিনি নিজের মতো করে সংবাদ সংগ্রহ করেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেগুলো সরবরাহ করেন, তাকেই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বলা চলে। আউটসোর্সিং ব্যাপারটা অনেকটা এরকমই। যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজ (বিশেষ করে অনলাইনভিত্তিক) অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান (হতে পারে দেশের বাইরের) অর্থের বিনিময়ে করে দেয়, তখন তাকে আউটসোর্সিং বলা হয়। বর্তমান বিশ্বে আউটসোর্সিংয়ের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। গত বছর বিশ্বে আউটসোর্সিংয়ের মোট বাজারমূল্য ছিল ৮৯ বিলিয়ন ডলার! অবশ্য সেটিও সর্বোচ্চ নয়। ২০১৪ সালে আউটসোর্সিং খাতের মোট অর্থ আদানপ্রদানের পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছিল ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। শিক্ষিত তরুণ সমাজের জন্য বেকারত্ব যদি হয় সবচেয়ে বড় অভিশাপ, তাহলে আউটসোর্সিং হচ্ছে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদের নাম। বিশ্ব জুড়ে লাখো তরুণ নিজের ভাগ্য গড়তে বেছে নিচ্ছে আউটসোর্সিংকেই। আজকে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটগুলোর সাথে পরিচিত হবো। আউটসোর্সিং দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে শুরু করতে পারেন এগুলো দিয়েই।
১. গুরু ডটকম
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটের তালিকা করলে প্রথমেই গুরু ডটকমের নাম আসতে বাধ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাড়ে তিনলক্ষাধিক ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে এই অনলাইনভিত্তিক আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের হয়ে। ১৯৯৮ সালে আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এই আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভলাপমেন্ট, লেখালেখি, সবই করা যায়। তবে অপরাপর আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটগুলোর চেয়ে গুরু ডটকম কিছুটা আলাদা। এখানে ফ্রিল্যান্সারদেরকে সরাসরি কাজের লিস্ট ধরিয়ে না দিয়ে বরং তাদেরকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন কয়েকজন ‘গুরু’র অধীনে বিন্যস্ত করা হয়। আর খদ্দেরদের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রাসঙ্গিক বিষয়ে দক্ষ গুরুদের তালিকা। খদ্দের সেখান থেকে নিজের পছন্দসই একজনকে নিজের কাজটি করে দেয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন। আবার কাজ করতে করতে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে একসময় গড়ে পৃথক পৃথক দল। একজন ফ্রিল্যান্সার যখন কোনো বড় প্রজেক্টের কাজ পান, তখন তিনি নিজের দলকে সাথে নিয়ে সে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। অন্যদিকে পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রেও গুরু ডটকমের রয়েছে বিশেষ ‘সেফ-পে’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোনো বড় প্রোজেক্টের পারিশ্রমিকের ২ শতাংশ ‘লয়্যালটি ক্যাশ’ হিসেবে জমা থাকে, যা ভবিষ্যতে কোনো বড় প্রজেক্টে কাজে লাগানো যায়। সবমিলিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে গুরু ডটকম সবচেয়ে সহজলভ্য এবং নিরাপদ। আর বড় বড় প্রোজেক্টের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটও এটি।
২. ফাইভার ডটকম
আউটসোর্সিংয়ে নতুনদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ওয়েবসাইট হতে পারে ফাইভার। কিছুকাল আগেও সবচেয়ে জনপ্রিয় আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটের তালিকায় আরো নিচের দিকেই ছিল এই ওয়েবসাইটটি। কিন্তু সহজলভ্যতা এবং অনায়াসে কাজ করার সুবিধার জন্য এই ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার মূল কারণ লুকিয়ে আছে এর নামের মধ্যেই। মাত্র ৫ ডলার পারিশ্রমিকের ছোট ছোট প্রোজেক্টে কাজ করতে পারা যায় এই ওয়েবসাইটে। এবং অভিজ্ঞ হবার সাথে সাথে কাজের মাত্রাও বৃদ্ধি পায় ৫ ডলার বেতন বৃদ্ধির অনুপাতে।
অন্যান্য ওয়েবসাইটের মতো ফাইভারে প্রথমেই কোনো একটি প্রোজেক্ট জমা দিতে হয় না। বরং শুরুতে কেবল নিজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং কী কাজ করতে চান সে বিষয়গুলো উল্লেখ করলেই চলবে। ফাইভার সেগুলো যাচাই বাছাই করে আপনার কাজের কিছু প্রস্তাব পেশ করবে। সেগুলো আপনার পছন্দ হলে আপনি তখন নিজের প্রোজেক্ট সম্পর্কে ফাইভারকে জানাতে পারবেন এবং শুরু করতে পারবেন আপনার মূল কাজ। ফাইভের এ পদ্ধতি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ করে যারা নতুন এবং অনভিজ্ঞ, তাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন ফ্রিল্যান্সার কীভাবে তার প্রোজেক্ট শুরু করবেন, সে ব্যাপারে দ্বিধান্বিত থাকেন। সেক্ষেত্রে স্বয়ং ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট থেকেই যদি সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। অল্প টাকার জন্য অল্প সময়ে অল্প পরিমাণ শ্রম, এটিই হচ্ছে ফাইভারের মূল কথা। যদি আপনার একটি স্থায়ী চাকরি থেকেও থাকে, আপনি তার পাশাপাশি অনায়াসে ফাইভারে কাজ করে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।
৩. ওডেস্ক ডটকম/ আপওয়ার্ক ডটকম
কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ফ্রিল্যান্সার ভাড়া করার সেরা ওয়েবসাইট হচ্ছে ওডেস্ক। বাস্তব জীবনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে যেভাবে চাকরি দেয়া হয়, অনলাইনে সেভাবে সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সময়ই অযোগ্য প্রার্থীকে কাজ দেয়া হয়। ওডেস্কে সে সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারের নাড়িনক্ষত্র উল্লেখ থাকে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাদির ঘরে। ফলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সার ভাড়া করবার সময় যথেষ্ট যাচাই বাছাই করে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। তাছাড়া ওডেস্কের আরেকটি ভাল ফিচার হচ্ছে এই যে এখানে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়।
বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়োগকারী জেনে যাবেন ‘ডেইলি লগ’ দেখার মাধ্যমে, যেখানে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের অগ্রগতির আপ টু ডেট তথ্য উল্লেখ থাকবে। আবার, কোনো প্রোজেক্টের কাজ শুরুর পর ফ্রিল্যান্সাররা তার প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে করছে কি না তা জানতে ওডেস্কে পাওয়া যাবে প্রোজেক্টের সর্বশেষ অবস্থার স্ক্রিনশটও। ২০১৫ সালে ওডেস্কের নাম পরিবর্তন করে আপওয়ার্ক রাখা হয়। প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কাজ আপওয়ার্কে পোস্ট করে থাকেন খদ্দেরগণ।
৪. এলেন্স
আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে সমৃদ্ধ ওয়েবসাইটের নাম এলেন্স। এখানে আপনি খুঁজে পাবেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ডিজাইনার, প্রোগ্রামার আর লেখক, যারা আপনার যেকোনো ধরনের অনলাইন ভিত্তিক কাজ করে দিতে সক্ষম। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করিয়ে নিতে যদি অভিজ্ঞতাই হয় আপনার প্রধান চাহিদা, তাহলে এলেন্সে ঢুঁ মারাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কাজের চাহিদা অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সার পেতে এলেন্সে গিয়ে প্রথমেই কাজের বর্ণনা, আকাঙ্ক্ষিত প্রার্থীর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং পারিশ্রমিকের যাবতীয় তথ্য প্রদান করতে হবে। বাকি কাজটা বেশ দক্ষতার সাথেই সম্পাদন করবে এলেন্স। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালে ওডেস্কের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল, যদিও দুটি প্রতিষ্ঠানই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে নিয়েছে। ২০১৫ সালের শেষভাগে এসে এলেন্স চলে আসে আপওয়ার্কের অধীনে। বর্তমানে এলেন্সের কার্যক্রম আপওয়ার্কের অধীনেই চলছে এবং ধীরে ধীরে এর সকল কার্যক্রম আপওয়ার্কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এলেন্সের পারিশ্রমিক প্রদানের বিশেষ পদ্ধতি কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবে। সচরাচর আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটগুলোর মতো এলেন্স সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে একেবারে সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করে না। বরং প্রতিটি কাজকে একাধিক স্তরে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি স্তর সম্পন্ন হলে সে স্তরের কাজের অনুপাতে অর্থ প্রদান করে। পারিশ্রমিক প্রদানের এ পদ্ধতি ফ্রিল্যান্সারদের অধিক পরিমাণ সক্রিয় করে তোলে। কেননা, অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারের মাঝেই একটি নির্ধারিত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে কাজে নানান ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কয়েক ধাপে অর্থ প্রদানের নিয়ম থাকায় ফ্রিল্যান্সারদের এরকম প্রবণতা দেখানোর সুযোগ থাকে না। নির্ধারিত সময়ে প্রতিটি কাজের নির্ধারিত অংশ সম্পন্ন করেই অর্থপ্রাপ্তি হয় বলে বসে থাকার উপায় নেই। তাছাড়া এ পদ্ধতিটি ফ্রিল্যান্সারদেরও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান করে। এককালীন পারিশ্রমিক প্রাপ্তির চেয়ে অল্প অল্প করে পেলে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত খরচেও অনেক মিতব্যয়ী হতে পারেন।
৫. পিপলপারআওয়ার ডটকম
আউটসোর্সিং এর জগতে প্রবেশকালে প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি, সেটি হলো দ্বিধা। বিশেষ করে আউটসোর্সিংয়ের ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেই রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হন। যারা এরকম সমস্যার সম্মুখীন হন, তাদের জন্য পিপলসপারআওয়ার। এই তালিকায় উল্লেখ করা অন্য ওয়েবসাইটগুলোর তুলনায় সবচেয়ে সহজে ব্যবহার করা যাবে লন্ডনভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি। ফাইভারের মতো এখানেও কাজ শুরুর জন্য প্রাথমিকভাবে কেবল নিজের কাজের ক্ষেত্র ও পারিশ্রমিক উল্লেখ করলেই হয়। আবার খদ্দেরগণও নিজেদের কাজের বিবরণ এবং পারিশ্রমিক উল্লেখ করে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ করার জন্য আবেদন করতে পারেন। পরবর্তী ধাপটা সহজ। কাজের বিবরণ দেখে ফ্রিল্যান্সারগন খদ্দেরের নিকট নিজেদের কাজের পরিকল্পনা পেশ করেন।
এ বিষয়টি উভয়পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক। একদিকে ফ্রিল্যান্সাররা সিভি জমা দেয়ার মতো করে একাধিক কাজের জন্য আবেদন করে রাখতে পারেন। এতে করে একটি কাজ পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। অন্যদিকে খদ্দেরগণ একাধিক আবেদন ঘেঁটে নিজের চাহিদা অনুযায়ী একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বেছে নিতে পারেন। পিপলপারআওয়ারের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এর সেবাদানের বৈচিত্র্য। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটগুলোই ছোটখাটো অনেক কাজ, যেগুলোর চাহিদা কম, সে সেবাগুলো প্রদান করে না। কিন্তু পিপলপারআওয়ারে পাওয়া যাবে না, এমন সেবা নেই বললেই চলে। হাজারে একজন খদ্দেরের আগ্রহ আছে, এরকম সেবাও এই ওয়েবসাইটে পাওয়া সম্ভব। আর এ কারণে এই ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
৬. সল্যুশনইন ডটকম
আউটসোর্সিং এর প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সল্যুশনইন ডটকম। অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইটের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়ায় এই ওয়েবসাইট সবকিছুতেই অন্যদের তুলনায় অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করার চেষ্টা করে। তবে এর প্রধান বিশেষত্ব, যা একে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে, তা হলো নতুনদের সুযোগ দেয়া। শিক্ষার্থী কিংবা সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা চাকরিপ্রার্থী তরুণদের জন্য সল্যুশনইনই সবচেয়ে বড় সমাধান। তবে ব্যাপারটা এরকমও নয় যে অদক্ষদের দিয়ে কাজ করানোয় সল্যুশনইনের কাজ খারাপ হয়। দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের তদারকির মাঝেই কাজ করে চলে নতুন ফ্রিল্যান্সারগণ। একদিকে খদ্দেরের প্রোজেক্ট সম্পন্ন হয় নিখুঁতভাবে, অন্যদিকে অনভিজ্ঞরা নিজেদের ভুল শুধরে নেয়ার সুযোগ পায়। অনেকটা প্রশিক্ষণপ্রাপ্তির মতো।
ফিচার ছবি: packaging.com