Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যারেসিবো বার্তা: যে বার্তা ছুটে চলেছে ভিনগ্রহের উদ্দেশ্যে

মানুষ বা পৃথিবীর কেউ নয়, অ্যারেসিবো বার্তার লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবী থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রপুঞ্জ ক্লাস্টার মেসিয়ার ১৩! পাঠানোর পর থেকে ১,৬৭৯ বাইনারি সংখ্যার ৩ মিনিটের বার্তাটি গত ৪৪ বছর ধরে ছুটে চলছে তার লক্ষ্যপানে। এই বার্তাটিকেই ধরা হয় পৃথিবীর প্রথম আন্তঃনক্ষত্রীয় বার্তা হিসেবে।

বার্তাটি যখন পাঠানো হয়, তখন এটিই ছিল সে সময় পর্যন্ত উৎপাদিত সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ সংকেত, যা ছিল ২০ ট্রিলিয়ন ওয়াট সর্বতোমুখী সম্প্রচারের সমতুল্য। ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসে এটি প্রেরণ করেন পুয়োর্তো রিকোর অ্যারেসিবো মানমন্দিরের বিজ্ঞানীগণ। ভিনগ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পাঠানো এই বার্তাটি নানা কারণেই ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

অ্যারেসিবো মানমন্দির: যেখান থেকে পাঠানো হয়েছিল অ্যারেসিবো বার্তা: Image Source: commons.wikimedia.org
অ্যারেসিবো মানমন্দির: যেখান থেকে পাঠানো হয়েছিল অ্যারেসিবো বার্তা: Image Source: commons.wikimedia.org

কেন পাঠানো হয়েছে বার্তাটি?

মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম একটি গ্রহ পৃথিবী। এরকম লক্ষ, কোটি গ্রহ রয়েছে মহাবিশ্বে। ধারণা করা হয়, তার মধ্যে হয়তো কোনোটিতে রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব। থাকতে পারে মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান প্রাণীর আবাস। যদি মহাবিশ্বের কোথাও থেকেই থাকে প্রাণের অস্তিত্ব, তবে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দরকার বার্তা বিনিময়। আর এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই মানুষ ও পৃথিবী সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য বাইনারি সংখ্যার সংকেত আকারে  পাঠানো হয় মহাকাশে। বার্তাটি পাঠানোর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল অ্যারেসিবো রেডিও টেলিস্কোপের শক্তি পরীক্ষা করা। সেই সাথে মানুষকে বিজ্ঞানের দিকে আকৃষ্ট করা

অ্যারেসিবো বার্তার ৪৪ বছর উপলক্ষ্যে গুগলের ডুডল; Image Source: google.com
অ্যারেসিবো বার্তার ৪৪ বছর উপলক্ষ্যে গুগলের ডুডল; Image Source: google.com

তবে এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন, এমন একজন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডোনাল্ড ক্যাম্পবেল বলেন, “এটি একটি প্রতীকি পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য এটি দেখানো যে, আমরা এটাও করতে পারি।” বার্তাটি পাঠানোর উদ্দেশ্য হিসেবে শেষের  মতটিই সবচেয়ে বেশি বাস্তবসম্মত হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, কারণ মেসিয়ার নক্ষত্রপুঞ্জের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এই শব্দ সংকেতটি যদি সেই নক্ষত্রের কোনো প্রাণীর কাছে পৌঁছায়ও, আর তারা যদি সেদিনই সেই সংকেতটির উত্তর পাঠায়, সেটিকে আবার পৃথিবীতে আসতে আবারো পাড়ি দিতে হবে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ পথ! 

ড. ফ্রাংক ড্রেক ও কার্ল সেগান: অ্যারোসিবো বার্তা তৈরি হয়েছিল যাদের হাত ধরে; Image Source: cosmicdiary.org
ড. ফ্রাংক ড্রেক ও কার্ল সেগান: অ্যারেসিবো বার্তা তৈরি হয়েছিল যাদের হাত ধরে; Image Source: cosmicdiary.org

বার্তাটি পাঠানোর কাজে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন ড. ফ্রাংক ড্রেক আর তাকে সহযোগিতা করেন জৌাতিবিজ্ঞানী কার্ল সেগান। জৌাতির্বিদ ও গবেষক হিসেবে ফ্যাংক ড্রেক,  মহাবিশ্বের এলিয়েন গণনার সূত্র “ড্রেক ইকুয়েশন” প্রতিপাদন করার জন্য সমধিক পরিচিত। মেসিয়ার ১৩ নক্ষত্রপুঞ্জকে লক্ষ্য করে সম্প্রচারিত ১৬৭৯ বিটের শক্তিশালী বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল ২,৩৮০ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে। আর সে সময়ে অ্যারেসিবো রেডিও টেলিস্কোপটিই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপ।

কী আছে এই বার্তায়?

অ্যারেসিবো বার্তাটি লেখা হয়েছে মূলত বাইনারি সংখ্যায়। অর্থাৎ ০ ও ১ এর মাধ্যমে। মোট ২৩টি সারি ও ৭৩টি কলামের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে বার্তাটি। বার্তাটি ৭টি অংশে বিভক্ত। ক্রমানুযায়ী তালিকা করলে হবে নিচের তালিকার মতো-

অ্যারেসিবো বার্তা মূলত বাইনারি সংখ্যায় যাকে চিত্রিত করলে দাড়াবে মাঝের সাদাকালো আকৃতিতে
অ্যারেসিবো বার্তা মূলত সাজানো হয়েছে বাইনারি সংখ্যায়, যাকে চিত্রিত করলে দাঁড়াবে মাঝের সাদাকালো আকৃতিতে: Image Source: dakhinhawa.com

১. একেবারে উপরের অংশে রয়েছে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা অনুভূমিকভাবে। 

২. দ্বিতীয় কলামে রয়েছে হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাসের পারমাণবিক সংখ্যা। এই মৌলিক পদার্থগুলো দিয়েই তৈরি হয় ডিএনএ।

৩. তৃতীয় কলামে রয়েছে ডিএনএ’র নিউক্লিওটাইডগুলোর মধ্যকার সুগার ও বেসগুলোর ফর্মুলা।

৪. ডিএনএ’র নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা এবং  ডিএনএ’র দ্বিসূত্রাকার পেঁচানো আকৃতিটি দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে দেওয়া হয়েছে ভুল বার্তা। ডিএনএ-তে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা সেসময় যেহেতু মনে করা হত ৪.৩ বিলিয়ন, কাজেই সেই তথ্যই এখানে সন্নিবেশিত করা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণায়  প্রমাণিত হয়েছে যে, এর সংখ্যা মূলত ৩.২ বিলিয়ন

৫. পঞ্চম কলামে যোগ করা হয়েছে মানুষের আকৃতি। আকৃতির বাঁমে দেওয়া হয়েছে মানুষের গড় উচ্চতার তথ্য ও ডানে পৃথিবীর তৎকালীন জনসংখ্যা যথাক্রমে ১২৬ মিলিমিটার ও ৪.৩ বিলিয়ন।

৬. ষষ্ঠ কলামে রয়েছে সৌরজগতের আকৃতি। প্রথমে সূর্য, তারপর ক্রমান্বয়ে গ্রহগুলোর আকৃতি বোঝানো হয়েছে এবং পৃথিবীকে বিশেষভাবে বোঝাতে এর অবস্থানকে এক ঘর উপরে দেওয়া হয়েছে।

৭. সর্বশেষ কলামে রয়েছে প্রেরকের ঠিকানা! মানে অ্যারোসিবো টেলিস্কোপের আকৃতি, এর ব্যাস ও বার্তাটির তরঙ্গদৈর্ঘ্য। 

নক্ষত্রপুঞ্জ মেসিয়ার ১৩; Image Source: Roth Ritter /astronomytrek.com
অ্যারেসিবো বার্তার উদ্দেশ্য নক্ষত্রপুঞ্জ মেসিয়ার ১৩; Image Source: Roth Ritter /astronomytrek.com

উত্তর আসার গুজব

২০০১ সালে হঠাৎ গুজব রটে অ্যারেসিবো বার্তাটির উত্তর পাওয়া গেছে। তবে তা রেডিও সংকেতের মাধ্যমে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাম্পশায়ারে একটি ফসলের ক্ষেতে বিরাট চিত্রকর্ম বা ক্রপ সার্কেল দৃষ্টিগোচর হয়, যা ছিল অ্যারোসিবো বার্তার অনুরুপ। রহস্যময় সেই ক্রপ সার্কেলটিতেও অ্যারেসিবো বার্তার অনুরুপ ১-১০ পর্যন্ত সংখ্যা বিদ্যমান ছিল, তবে তাদের ডিএনএ’র গঠনে দেখানো হয়েছিল তৃতীয় আরেকটি স্তর! সেই সাথে দেখানো হয়েছিল কথিত বার্তা প্রেরকের গঠন, তাদের সৌরজগতের গঠন, তাদের উচ্চতা ও কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে সেটির চিত্র। আর দ্বিতীয় আরেকটি ক্রপ সার্কেলে আঁকা হয়েছিল একটি মুখাবয়ব। রহস্যময় এ ক্রপ সার্কেলটি যদিও স্পষ্টতই একটি নিখাঁদ ধোঁকা ছিল, কিন্তু একে বিশ্বাস করার জন্যও অনেক মানুষ ছিল এবং এখনো অনেকেই মনে করেন এই প্রত্যুত্তরটি মিথ্যা নয়। 

alienresearch.wikia.com
২০০১ সালে হ্যাম্পশায়ারে অ্যারেসিবো বার্তার অনুরুপ ক্রপ সার্কেল; Image Source: alienresearch.wikia.com

অ্যারোসিবো বার্তার ভবিষ্যৎ

এই বছরই ১৬ নভেম্বর অ্যারেসিবো বার্তাটির বয়স যখন ৪৪ বছর পূর্ণ হয়েছে ততক্ষণে তা পাড়ি দিয়েছে ২৫৯ ট্রিলিয়ন মাইল, যেখানে তাকে পৌঁছাতে হবে ১৪৬,৯৬৫,৬৩৮,৫৩১,২১০,২৪০ মাইল! যা তার মূল যাত্রার খুবই ক্ষুদ্রতম অংশ। জানা নেই শব্দ সংকেতটির যাত্রা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কিংবা সফলভাবে কারো কাছে গিয়ে পৌঁছাবে না হারিয়ে যাবে মহাকাশের অতল গহবরে। তবে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও কোনো প্রাণীর আবাস থাকলে তাদের প্রযুক্তি কেমন, তাদের চিন্তার ধরনই বা কেমন তার কোনো তথ্য যেহেতু পৃথিবীতে নেই, কাজেই এই বার্তাকে একটি প্রতিকী বার্তা হিসেবে ধরে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

অ্যারেসিবো বার্তা কি কোন ঠিকানা পাবে? কেউ জানেনা সেই উত্তরটি; Image Source: Space.com
অ্যারেসিবো বার্তা কি কোনো ঠিকানা পাবে? কেউ জানে না সেই উত্তরটি; Image Source: Space.com

সেকারণেই কিছু কৌতূহলের উদ্রেক করা ছাড়া এই বার্তাটির আপাতত আর কোনো মহিমা নেই। যদি ধরেও নেওয়া যায় মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণীর বাস আছে আর বার্তাটি যদি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর কাছে পৌঁছায়ও, তারা যদি সেই বার্তাটি বুঝতে পারে ও উত্তরও পাঠায়, সেটি পৃথিবীতে পৌঁছা পর্যন্ত পৃথিবী টিকে থাকবে কি না তা-ই বা কে বলতে পারে!

ভিনগ্রহের প্রাণীদের জন্য আমাদের বার্তাটি তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই হয়তো হাজার-কোটি বছর আগে পাঠানো তাদের কোনো বার্তা আমরা পেয়েও যেতে পারি! তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, সে পর্যন্ত আমরা থাকবো তো?

This is a bangla article about arecibo message. Necessery Sources have been hyperlinked.

Feature Image Source: thescienceexplorer.com

Related Articles