‘অ্যান্টিবায়োটিক’, বর্তমান সময়ে এই শব্দটি শোনে নি এরকম লোক খুঁজে পাওয়া সত্যিই দায়। বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল এই অ্যান্টিবায়োটিক।
অ্যান্টিবায়োটিক কী?
অ্যান্টিবায়োটিক বলতে এমন এক ধরনের জৈব রাসায়নিক যৌগকে বোঝানো হয়ে থাকে, যারা অণুজীবের বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টিবায়োটিক তৈরী হয় একটি নির্দিষ্ট অণুজীব থেকে, কিন্তু নিজেদের কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করে অন্য একটি অণুজীবের ক্ষেত্রে।
যেভাবে এলো অ্যান্টিবায়োটিক
আজকের দিনে আমরা যে আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকি সেটা নিশ্চিতভাবেই একদিনে চলে আসে নি। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার যথেষ্ট প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। গ্রীক এবং ভারতীয়রা মোল্ড (সাধারণভাবে আমরা যাকে ছত্রাক বলে থাকি) ব্যবহার করত যেকোনো ধরণের সংক্রমণ হলে। প্রথাগতভাবে সার্বিয়াতে ছত্রাকযুক্ত পাউরুটি ব্যবহার করা হত কোনো আঘাত বা সংক্রমণ হলে। ব্যাবিলনিয়ান ডাক্তাররা ব্যাঙের পিত্ত এবং টকে যাওয়া দুধের মিশ্রণ ব্যবহার করতে চোখের অসুখের চিকিৎসায়। শ্রীলঙ্কান সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে এক ধরনের বিশেষ মিষ্টান্ন দ্রব্যের ব্যবহার দেখা যেত জীবাণুনাশক হিসেবে।
অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। স্যার অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং, যিনি ছিলেন একজন স্কটিশ জীববিজ্ঞানী, ১৯২১ সালে আবিষ্কার করলেন লাইসোজাইম নামক একটি এনজাইম এবং ১৯২৮ সালে এই একই ব্যক্তির দ্বারা শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। আবিষ্কার হয় পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক- পেনিসিলিন। পরবর্তীতে যদিও ছত্রাকের বেশ কয়েকটি প্রজাতি থেকে পেনিসিলিন উৎপাদন করা হয়েছে, তবে শুরুর দিকে এটি সীমাবদ্ধ ছিল পেনিসিলিয়াম নোটাটাম প্রজাতিটির মাঝেই। পেনিসিলিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই সিফিলিস, গ্যাংগ্রিন এবং যক্ষ্মার মতো রোগসমূহের চিকিৎসায় অভাবনীয় সাফল্য আসে। এছাড়াও স্যার অ্যালেকজান্ডার ব্যাকটেরিওলোজি, ইমিউনোলোজি এবং কেমোথেরাপি প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপকভাবে অবদান রেখেছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে।
১৮৮১ সালের ৬ আগস্ট স্কটল্যান্ডের এক কৃষক পরিবারে অ্যালেকজান্ডারের জন্ম। ১৯০৬ সালে শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সেন্ট ম্যারি মেডিক্যাল স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব স্যার অ্যালম্রোথ রাইটের গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০৮ সালে স্বর্ণ পদকসহ তিনি অর্জন করেন এম.বি.বি.এস ডিগ্রী এবং ১৯১৪ সাল নাগাদ সেন্ট মার্টে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করা। সে সময় তিনি ফ্রান্সে যুদ্ধক্ষেত্রের হাসপাতালগুলোতে কর্তব্যরত ছিলেন। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ১৯১৮ সালে তিনি ফিরে আসেন আবার তাঁর পুরোনো কর্মস্থলে অর্থাৎ সেন্ট মার্টে এবং ১৯২৮ সালে প্রফেসর অফ ব্যাকটেরিওলোজি হিসেবে মনোনীত হন।
“কখনও কখনও মানুষ তারই সন্ধান পায় যা সে আসলে খুঁজছিল না”,
– স্যার অ্যালেকজান্ডার।
সামরিক বাহিনীতে থাকাকালীন সময়ে তাঁর গবেষণা এবং পড়ালেখা তাঁর আবিষ্কারের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি ১৯২১ সালে আবিষ্কার করেন লাইসোজাইম, যেটি প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন টিস্যু এবং ক্ষরণকারী পদার্থে লাইসোজাইম পাওয়া যায়। যেমন- মিউকাস, অশ্রু এবং ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি। তবে লাইসোজাইমের একটি অসুবিধা হল এট যথেষ্ট শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। সৌভাগ্যবশত তিনি কিছু অনাহূত সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হন। ছয় বছর পরের কথা, সময়টা ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ; ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি খেয়াল করেন যে, একটি সাধারণ ছত্রাক পেনিসিলিয়াম নোটাটাম, স্ট্যাফাইলোকক্কাস কালচার প্লেটে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দিচ্ছে। পরবর্তী আরও গবেষণার পর তিনি দেখতে পান যে, মোল্ড জুস কালচার প্লেটে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারকে ব্যাহত করছে। সদ্য আবিষ্কৃত এই পদার্থটির ঘনমাত্রা ৮০০ গুণ পর্যন্ত কমিয়ে আনলেও এটি কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে। ফ্লেমিং এর নামকরণ করলেন পেনিসিলিন।
অ্যান্টিবায়োটিকের শ্রেণীবিভাগ এবং ক্রিয়াকৌশল
অ্যান্টিবায়োটিকের শ্রেণীবিন্যাস প্রকৃতপক্ষে করা হয়ে থাকে তাদের কাজ করার পদ্ধতির উপর। একদম প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিবায়টিককে শ্রেণীবিভাগ করতে হলে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
- ব্যাকটেরিসাইডাল অ্যান্টিবায়োটিকসমূহ কোষ প্রাচীর অথবা যেকোনো কোষীয় অঙ্গাণু তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধা দানের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম ব্যাহত করে। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিক- পেনিসিলিন একটি ব্যাকটেরিসাইডাল অ্যান্টিবায়োটিক।
- অন্যদিকে ব্যাকটেরিওস্ট্যাটিক অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়ার যাবতীয় বিপাকীয় কার্যাদির যেকোনো একটিতে হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিকে বন্ধ করে দেয়। বিপাকীয় কার্যাদি হতে পারে প্রোটিন সংশ্লেষ বা ডিএনএ অনুলিপন। যেমন- টেট্রাসাইক্লিন।
অ্যান্টিবায়োটিক সেন্সিটিভিটি টেস্ট
অ্যান্টিবায়োটিক সেন্সিটিভিটি বা সাসেপ্টিবিলিটি বলতে বোঝানো হয় যে, ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট প্রজাতি একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি ঠিক কতটা সংবেদনশীল। ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলোজি ল্যাবের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক সেন্সিটিভিটি টেস্ট। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরী করা, যারা একটি নির্দিষ্ট অণুজীব অথবা অণুজীব কর্তৃক সৃষ্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেন্সিটিভিটি টেস্টের বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। দেখে আসা যাক সেগুলোর মাঝে কয়েকটি।
ব্রথ ডাইলিউশন
ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত ব্রথের ঘনমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে টেস্টটি সম্পন্ন করা হয়।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াম গ্র্যাডিয়েন্ট মেথড
অ্যাগারে উপস্থিত অণুজীবের ঘনমাত্রার পার্থক্য সৃষ্টির মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা নির্ণয় করা হয়।
ডিস্ক ডিফিউশন টেস্ট
অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি অণুজীবের সংবেদনশীলতা বোঝার জন্য এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ এবং প্রমাণিত।
সংবেদনশীলতা পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা
প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা জানা তো আবশ্যিক। কারণ আমাদের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যবহৃত অণুজীব প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল কি না সেটা জানা। ফলাফলের অর্থ বোঝার আগে একটা বিষয়ের সাথে পরিচিত হয়ে নেওয়া উচিৎ, তা হলো ‘MIC’।
অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজের সাথে তো আমরা সবাই অভ্যস্ত, অর্থাৎ কী পরিমাণে সেটা ব্যবহার করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের সর্বাপেক্ষা কম যে ডোজ, ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে সক্ষম তাকে বলা হয় মিনিমাল ইনহিবিটরি কনসেন্ট্রেশন (এমআইসি)।
অ্যান্টিবায়োটিক সেন্সিটিভিটি টেস্টের ফলাফল ব্যাখার জন্য একজন ডাক্তারের ফার্মাকোকাইনেটিক এবং ফার্মাকোডায়নামিক তথ্যের উপর ভাল দখল থাকতে হবে। কারণ মানবদেহ এবং ওষুধের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে এই বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান থাকা অবশ্যই উচিৎ।
- যদি ফলাফল আসে সাসেপটিবল অথবা সংবেদনশীল, তাহলে বোঝা যাচ্ছে রোগীর যে অঙ্গ থেকে অণুজীব নমুনা নেয়া হয়েছে, সেটি প্রেসক্রাইবড অ্যান্টিবায়োটিকের ঐ নির্দিষ্ট মাত্রার প্রতি সাড়া দিবে। অর্থাৎ তার অসুখের জন্য শুধুমাত্র ঐ নির্দিষ্ট মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক উপযুক্ত।
- ফলাফল যদি প্রতিরোধী আসে, তাহলে এর মানে দাঁড়ায় যে ঐ ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিটির জন্য প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিকটি উপযুক্ত না। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি ব্যাহত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
- যদি ফলাফল আসে ইন্টারমিডিয়েট, তাহলে বোঝা যায় যে হয় পরীক্ষাটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয় নি অথবা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল আর বাস্তবিক ক্লিনিক্যাল ফলাফলের মাঝে কিছুটা ফারাক থাকবে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স
অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে এমন এক শ্রেণীর ওষুধ যেগুলো ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলে, তখনই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স জন্ম নেয়।
খেয়াল করা দরকার যে, মানুষ বা কোনো প্রাণী কখনোই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সহনশীল হয়ে ওঠে না। এই ধর্মটি ব্যাকটেরিয়ার। এর ফলে অধিক মৃত্যুর হার, বাড়তি চিকিৎসা খরচ এবং দীর্ঘ মেয়াদে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে আক্রান্তদেরকে। ব্যাকটেরিয়ার এই পরিবর্তনের ভেতরের চিত্রটি স্পষ্ট করা দরকার।
ধরা যাক একজন ব্যক্তির স্টাফ সংক্রমণ হয়েছে। অতীতেও তিনি এই ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন এবং পেনিসিলিন ব্যবহারে তিনি ভাল হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আজ যদি পেনিসিলিন ব্যবহারের পরও তিনি ভাল না হন, তাহলে সেটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু হবে না। কারণ তার শরীরে হওয়া স্টাফ সংক্রমণটি প্রকৃতপক্ষে MRSA (অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সহনশীল একটি ধরণ) এবং তার চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে যে এখন স্টাফ সংক্রমণের মাঝে মাত্র ১০% MRSA নয়। অর্থাৎ পেনিসিলিন এখন আর স্টাফের ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নয়।
খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বা অন্যান্য প্রজাতির মত ব্যাকটেরিয়ারও জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল অর্থাৎ ডিএনএ আছে। মানুষের মতই ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ-তেও পরিবর্তন আসতে পারে অর্থাৎ মিউটেশন ঘটতে পারে। এরপর যখন বাইরে থেকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেটি আর তার কাজ করার ক্ষেত্র খুঁজে পাচ্ছে না কারণ তার নকশা করা হয়েছিল ব্যাকটেরিয়ার পূর্ববর্তী জিনোটাইপ বিবেচনায় রেখে। যোগ্যতমের বেঁচে থাকা অর্থাৎ সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট নীতি অনুযায়ী যে ব্যাকটেরিয়ার মাঝে বৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি, তারই টিকে থাকা হবে আর বাকিরা মারা যাবে। বেঁচে থাকার নিমিত্তেই ব্যাকটেরিয়া তার নিজের মাঝে মিউটেশন ঘটায় এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সহনশীল হয়ে ওঠে।
যখন মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছে সুস্থ হওয়ার জন্য, তখন ব্যাকটেরিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমনভাবে মিউটেশন ঘটায় যার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারা কনজুগেশনের মাধ্যমে এই মিউটেশন তাদের উত্তর প্রজন্মেও প্রবাহিত করে দেয় এবং পুরো একটি প্রজাতি এভাবে একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে পড়ে।
বর্তমান অবস্থা আমাদের এখনই অনুধাবন করা উচিৎ, বোঝা উচিত পুরো পৃথিবী কতটা ঝুঁকির মুখে আছে। তাহলে কি আগামী দিনের বিশ্ব পুরোপুরি নিশ্চল হয়ে পড়বে বা একেবারেই কি আমরা অ্যান্টিবায়োটিক সংকটে ভুগব?
পৃথিবীর অবস্থা এখনও এতটা খারাপ হয়ে যায় নি যে ভেবে নিতে হবে অসংখ্য মানুষ মারা যাবে বিনা চিকিৎসায়। বিজ্ঞানীরা এখন আগের চেয়ে মলিক্যুলার বায়োলোজি, ব্যাকটেরিয়ার জীবনাচরণ, মাইক্রোবায়োলোজি, জেনেটিক্স নিয়ে অনেক বেশি জানেন। সুতরাং সমাধানের পথ পানে চেয়ে আশায় বুক বাঁধা যায়। তবে ব্যাকটেরিয়ার যথেচ্ছ ব্যাবহার বন্ধ করত হবে অতি শীঘ্রই। সব মিলিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যা যা করণীয়
- শুধু একজন প্রত্যয়িত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন।
- ঠিকঠাকভাবে চলার পরও কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক না নেওয়া।
- সংক্রমণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে সবসময়। সবসময় পরিষ্কার থাকা, নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং সময়মত টিকা গ্রহণ করা।
নীতি নির্ধারকদের যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে
- অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে সচেতনতা তৈরী করা।
- অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের ভয়াবহতা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের প্রভাব যে শুধু অসুস্থ ব্যক্তির উপরই পড়ছে তা কিন্তু না। খুব সাধারণ কিছু ব্যাকটেরিয়াকে দমনের জন্যও এখন অনেক বেশি খরচ করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ,কারণ পূর্ববর্তী অনেক জেনারেশনই অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অসুখের সাথে পাল্লা দিয়ে একই হারে কিন্তু সমাধান আসছে না। তবে কথায় আছে- যত মুশকিল তত আসান। বিজ্ঞানকে একেবারে জনসাধারণের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে, যাতে মানুষ সচেতন হয়, আর প্রতিটি ওষুধের সঠিক ব্যবহারে আগ্রহী হয়। তাহলেই বাড়তি মৃত্যুর হার কমে আসবে, আরও কার্যক্ষম টিকা আবিষ্কার আসবে, নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী।
ফিচার ইমেজ- prostatit.guru