Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যারেসিবো মানমন্দির: মহাজাগতিক এক স্বপ্নের পরিসমাপ্তি

শুরুর আগে

বিখ্যাত অ্যারেসিবো টেলিস্কোপ ভেঙ্গে পড়েছে। ৫৩ বছর ধরে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বেতার টেলিস্কোপের গৌরব মুকুট ধারণ করে ছিল এটি। অর্জনের দীর্ঘ তালিকায় আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রমাণ থেকে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল- সবই আছে। শুধু ফুরিয়ে গেছে সময়।

২০২০ সাল একের পর এক দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো অ্যারেসিবো টেলিস্কোপ। এই গল্প এমন এক মানমন্দিরের, যার বার্তা বুকে নিয়ে বেতার তরঙ্গ ছুটে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রপুঞ্জ ক্লাস্টার মেসিয়ার ১৩-এর উদ্দেশ্যে।

অ্যারেসিবো টেলিস্কোপ, যার বিশাল রিফ্লেক্টর ডিশটির ব্যাস ১০০০ ফিট; Image Source: tripsavvy.com

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বারবার আকাশে চোখ রেখেছে, জানতে চেয়েছে নক্ষত্রদের। খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না দেখে বানিয়েছে দূরবীন। সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যমান আলোর সীমা পেরিয়ে মানুষ কৌতুহলী হয়ে উঠেছে অদৃশ্য আলোদের নিয়ে। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেতার তরঙ্গ। অনেক অনেক দূরে ছুটে যায় বেতার তরঙ্গ। সাথে বয়ে নিয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। দূর, বহুদূর নক্ষত্র কিংবা গ্যালাক্সির গোপন রহস্য লেখা থাকে তার বুকে। কিন্তু এ ধরনের তরঙ্গদের শনাক্ত করা কঠিন। এর জন্য দায়ী আধুনিক জীবনের নানা ধরনের শব্দদূষণ।

গ্যারাজ বা দোকানের শাটার খোলা থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট টিভি, রেডিও চ্যানেলের সিগন্যাল- সবকিছুই নয়েজ বা দূষণ হিসাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বহুদূর থেকে ছুটে আসা বেতার তরঙ্গের সামনে। ফলে, এসব তরঙ্গ মৃদু হতে থাকে, বিকৃত হতে থাকে দূষণের সঙ্গে মিশে। তাহলে? এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায়?

বিজ্ঞানীরা ভাবেন। তাদের চিন্তায় দোলা দিয়ে যায় নিশ্চুপ প্রকৃতি। দক্ষিণে, প্রকৃতির বুকে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিশটা বসানো যায় বহুদূর থেকে ছুটে আসা মৃদু সিগন্যালগুলো ধরার জন্য, তাহলে কেমন হয়? এই ভাবনাকে পুঁজি করেই ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে অ্যারেসিবো মানমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হতে হতে লেগে যায় প্রায় ৩ বছর। ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে শেষ হয় এই মানমন্দির নির্মাণের কাজ। মাথা তুলে দাঁড়ায় তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেতার টেলিস্কোপ।

বিশাল এই ‘ডিশ’ (পড়ুন রিফ্লেক্টর বা প্রতিফলক) এর ব্যাস ১০০০ ফিট এবং গভীরতা ১৬৭ ফিট। বিশ একরের মতো জায়গা দখল করে ডিশটি। এর পৃষ্ঠতল তৈরি হয়েছে ৬ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফিট প্রস্থের ৩৮,৭৭৮টি অ্যালুমিনিয়াম প্যানেল দিয়ে। প্রাথমিক রিফ্লেক্টরের পাশাপাশি টেলিস্কোপটিতে আছে দুটি সহকারী রিফ্লেক্টর। আর, এর ওপরে ১৮টি কেবল বা তার দিয়ে ঝুলানো আছে অ্যান্টেনা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ। যার ওজন ৯০০ টন!

রিফ্লেক্টরের ওপরে ঝুলছে ৯০০ টন ওজনের যন্ত্রাংশ; Image Source: tripsavvy.com

মূলত প্রাথমিক রিফ্লেক্টর বা ‘বিশাল ডিশ’টিই অ্যারিসেবোকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সহজ করে বললে এটাকে বলা যায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বক্রতলীয় (curved) ফোকাসড অ্যান্টেনা। অর্থাৎ, এক কথায় এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সংবেদনশীল বেতার টেলিস্কোপ। অন্য কোনো টেলিস্কোপের যে বেতার তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে (ক্ষীণ তরঙ্গকে যথেষ্ট অ্যামপ্লিফাই করে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তিশালী করে তুলতে এই সময় লাগে), অ্যারিসেবো দিয়ে সেই কাজ কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেরে ফেলা যায়। বলে রাখা ভাল, এটি পরাবৃত্তাকার নয়, গোলীয়।

মানমন্দিরের গেইটে লোগো; Image Source: Mutante/Wikimedia Commons

৫০ মেগাহার্টজ (৬ মিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য) থেকে ১০,০০০ মেগাহার্টজ (৩ সে.মি. তরঙ্গদৈর্ঘ্য) পর্যন্ত কম্পাংক নিয়ে কাজ করতে পারে অ্যারেসিবো। যেটা বোঝা প্রয়োজন, রিফ্লেক্টর বা প্রতিফলক সিগন্যাল সরাসরি গ্রহণ করে না। সেজন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের সংবেদনশীল বেতার গ্রাহক যন্ত্র। প্রতিফলকের ওপরে তাই অনেকগুলো অ্যান্টেনা ঝোলানো আছে। এই অ্যান্টেনাগুলো নিম্নমুখী। অর্থাৎ, প্রতিফলক থেকে সিগন্যাল এসব অ্যান্টেনার মধ্যে এসে পড়ে। এসব অ্যান্টেনার একেকটা আবার একেক ফ্রিকোয়েন্সি বা কম্পাঙ্কের তরঙ্গ নিয়ে কাজ করে। আর, এই অ্যান্টেনাগুলোর মধ্যেই বসানো আছে বিশেষ ধরনের সংবেদনশীল গ্রাহক যন্ত্র। এই গ্রাহক যন্ত্রগুলোকে তরল হিলিয়ামের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য, গ্রাহক যন্ত্রগুলোর তাপমাত্রা অসম্ভব কম রাখা। যাতে গ্রাহক যন্ত্রের মধ্যেকার ইলেকট্রনগুলো খুবই কম নড়াচড়া করে। ফলে, নয়েজ বা দূষণ তৈরি হয় খুবই কম (হ্যাঁ, ইলেকট্রন নড়াচড়া করলেও তরঙ্গ পর্যায়ে দূষণ তৈরি হয়)। সেজন্যই বহুদূর থেকে ছুটে আসা অসম্ভব ক্ষীণ বেতার তরঙ্গকে দ্রুত পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যামপ্লিফাই করা সম্ভব হয়।

অ্যারেসিবো মানমন্দির জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্যে ছিল সত্যিকার এক তীর্থস্থান। ৫৭ বছর ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানীরা ছুটে এসেছেন এই মানমন্দিরে। এর মাধ্যমে জানা গেছে চমৎকার সব তথ্য। অ্যারেসিবোর গবেষণা ও আবিষ্কারের তালিকাটি তাই দীর্ঘ।

চালু হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে, ১৯৬৪ সালের ৭ এপ্রিল গর্ডন পেতেংলির দল এই মানমন্দিরের সাহায্যে নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরতে মঙ্গলের কতদিন লাগে, তা সঠিকভাবে হিসাব করেন। আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এই সময়টা ৮৮ দিন। অ্যারেসিবো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়টা আসলে পৃথিবীর ৫৯ (৫৮.৬৫) দিনের মতো।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী আছে, আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা। এই ক্র্যাব নেবুলার পর্যাবৃত্তিও আবিষ্কৃত হয়েছে অ্যারিসেবোর হাত ধরে, ১৯৬৮ সালে। বিজ্ঞানী লাভলেইস ও আরো কয়েকজন গবেষক মিলে এই পর্যাবৃত্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রমাণ করেন, নিউট্রন তারার অস্তিত্ব আছে।

সহজ করে বললে, নিউট্রন তারা হচ্ছে সুপারনোভা বা অতিনবতারা বিস্ফোরণের পরে রয়ে যাওয়া নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশ। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এর মূল উপাদান নিউট্রন। ১০-২৫ সৌরভর (সূর্যের ভরের ১০-২৫ গুণ ভর) কিংবা আরো বেশি ভরের কোনো অতিদানবীয় তারার কেন্দ্র (Core) নিজেরই মহাকর্ষের চাপ সহ্য করতে না পারলে প্রবলভাবে বিস্ফোরিত হয়। এটিই সুপারনোভা বিস্ফোরণ। আর, বিস্ফোরণের পরে নক্ষত্রের টিকে যাওয়া অবশিষ্ট কেন্দ্রটিই নিউট্রন তারা। এই কেন্দ্র প্রচণ্ডরকম ঘন এবং এর মহাকর্ষ প্রবল শক্তিশালী। অতিসরলীকরণ করে বলা যায়, নিউট্রন তারা আরো ঘন হয়ে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হতে পারে। (নিউট্রন তারা নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।)

হালস এবং টেইলরের আবিষ্কৃত বাইনারি পালসার সিস্টেম; Image Source: astrobites.org

এই নিউট্রন তারার একটি প্রকারের নাম পালসার। এ ধরনের নক্ষত্ররা একটি নির্দিষ্ট দিকে নির্দিষ্ট কম্পাংকের সুতীব্র তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করে। এই তরঙ্গকে ‘পালস’ হিসাবে দেখা যায় বলেই এর নাম পালসার। পালসার বা যেকোনো দুটো নক্ষত্র যদি একইসঙ্গে একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘোরে, তাহলে তাদেরকে বাইনারি সিস্টেম বলে। বাইনারি সিস্টেমের বাংলা যুগ্ম জমজ তারা বা জোড়া-তারা। ১৯৭৪ সালে অ্যারেসিবো মানমন্দিরের মাধ্যমে হালস এবং টেইলর নামে দুজন বিজ্ঞানী প্রথম বাইনারি পালসার সিস্টেম আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য পরবর্তীতে তাদেরকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়।

এরকম আরো অনেক অনেক নক্ষত্র, গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে অ্যারেসিবো মানমন্দিরের মাধ্যমে। গ্যালাক্সির রোটেশন বা নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘোরার তথ্য এবং এর সত্যিকার উজ্জ্বলতা (আপেক্ষিক উজ্জ্বলতা নয়) সম্পর্কিত তথ্যসমৃদ্ধ সর্ববৃহৎ একক সংরক্ষাণাগার ছিল এই অ্যারেসিবো। ২০০৭ সালে বহুদূর Arp 220 গ্যালাক্সি থেকে ছুটে আসা বেতার তরঙ্গে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেছে হাইড্রোজেন সায়ানাইডের চিহ্ন, জানা গেছে মেথানিমাইন (CH2NH) অণুর অস্তিত্বের কথা।

অ্যারেসিবো বার্তা ছুটে যাচ্ছে  নক্ষত্রপুঞ্জ মেসিয়ার ১৩-এর উদ্দেশ্যে; Image Source: Roth Ritter/astronomytrek.com

তবে, এসব কিছুর চেয়ে অ্যারেসিবো বেশি বিখ্যাত নক্ষত্রপুঞ্জ মেসিয়ার ১৩-এর উদ্দেশ্যে পাঠানো বার্তার জন্য। ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরের ওই নক্ষত্রপুঞ্জের উদ্দেশ্যে পাঠানো এই বার্তাটি অ্যারেসিবো বার্তা নামে খ্যাত। বাইনারি সংখ্যা, অর্থাৎ ০ ও ১ এ লেখা এই বার্তাটি ২৩টি সারি ও ৭৩টি কলামে বিন্যস্ত। এতে ১-১০ পর্যন্ত সংখ্যা, হাইড্রোজেন-নাইট্রোজেনসহ আরো কিছু মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা, ডিএনএর দ্বিসুত্রাকার আকৃতি, মানুষের আকৃতি, সৌরজগতের আকৃতি ইত্যাদি লেখা আছে। সেই সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে প্রেরকের ঠিকানা- অ্যারোসিবো টেলিস্কোপের আকৃতি, ব্যাস ও বার্তাটির তরঙ্গদৈর্ঘ্য! আজও এই বার্তা ছুটে যাচ্ছে মহাকাশের নিঃসঙ্গ পথে। (অ্যারেসিবো বার্তা নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।)

অ্যারেসিবো বার্তা মূলত সাজানো হয়েছে বাইনারি সংখ্যায়, যাকে চিত্রিত করলে দাঁড়াবে মাঝের সাদাকালো আকৃতিতে: Image Source: dakhinhawa.com

 

এ বছরের অক্টোবরে প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে। রিফ্লেক্টর ডিশের ওপরে ৯০০ টনের যন্ত্রাংশকে ঝুলিয়ে রাখা ১৮টি তারের একটি তার ছিঁড়ে যায়। দ্য ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) এটি মেরামত করে নতুন তার লাগায়। তারপর, নভেম্বরের ৬ তারিখ ছিঁড়ে যায় দ্বিতীয় আরেকটি তার। এই মেরামত যে খুব সহজ কাজ নয়, তা বোধ হয় পাঠক আন্দাজ করতে পারছেন। ফলে, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে পরামর্শ করে মানমন্দিরের কিছু অংশ সীমিত পরিসরে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রশ্ন ওঠে, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মানমন্দির ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত এত দ্রুত নেওয়া ঠিক হলো কি না কিংবা আরো কিছু করা যেত কি না।

ভেঙ্গে পড়েছে অ্যারেসিবো টেলিস্কোপ, ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রিফ্লেক্টরের কী মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; Image Source: RICARDO ARDUENGO/Getty Images

সব প্রশ্নের ইতি ঘটিয়ে ডিসেম্বরের ১ তারিখ কয়েক শ টন ওজনের যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে পড়ে রিফ্লেক্টর ডিশের ওপর। ফলে, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ডিশটি। ঘটনাস্থলের ৫০০ ফিটের মধ্যেই অনেক মানুষ কর্মরত ছিল। ভাগ্যবশত, এই দুর্ঘটনায় একজনও মারা যায়নি। কিন্তু যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারপর এই মানমন্দির আবার মেরামত করে সচল করে তোলার চিন্তা একরকম অবান্তর। কিন্তু এত ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মানমন্দির ভেঙে ফেলার কথা ঠিক মেনে নিতে পারছেন না পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ এমনকি একই জায়গায় নতুন করে আবারো মানমন্দির নির্মাণের প্রস্তাবও দিয়েছেন। এদিকে, এনএসএফ পুয়ের্তো রিকো সরকারকে কথা দিয়েছে, মানমন্দির বন্ধ করে দিলে জায়গাটিকে আবার আগের মতো করেই সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

শেষের আগে

৫৭ বছর ধরে সচল ছিল অ্যারেসিবো মানমন্দির। এরমধ্যে ৫৩ বছর এটি ধরে রেখেছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বেতার টেলিস্কোপের গৌরব মুকুট। ২০১৬ সালে চীনের গুয়াংঝুতে ফাইভ-হান্ড্রেড-মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল টেলিস্কোপ (FAST) বানানো হলে অ্যারেসিবো পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বেতার টেলিস্কোপে পরিণত হয়। তারপরও, অ্যারেসিবো নিজের কাজ করে গেছে। তীর্থস্থানের মতোই দেশ-বিদেশের আগ্রহী জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানীরা ছুটে এসেছেন পুয়ের্তো রিকোয়।

বলে রাখা ভাল, মানমন্দিরে মূল অ্যারেসিবো টেলিস্কোপের পাশাপাশি আরেকটি ৩৯ ফিট ব্যাসের বেতার টেলিস্কোপ এবং অন্যান্য আরো কিছু সুবিধা ও গবেষণাগার রয়েছে।

অ্যারেসিবোকে পুনঃনির্মাণ করার কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই। ইট-পাথর-যন্ত্রাংশের এই স্থাপনাটি হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু এর গুরুত্ব অক্ষয় হয়ে থাকবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে।

পৃথিবী থেকে বহু বহু আলোকবর্ষ দূরে যদি কখনো কোনো মহাজাগতিক প্রাণী অ্যারেসিবো বার্তা পায়, সে জানবে না, এর প্রেরক আজ আর নেই। কোনো প্রাণী যদি এই বার্তা নাও পায়, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই। অ্যারেসিবো টেলিস্কোপ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু নিজের চিহ্ন ঠিকই রেখে গেছে মহাবিশ্বের নিঃসীম নিঃসঙ্গ পটভূমে।

This article is in Bangla language. It is about Arecibo Observatory & Arecibo Telescope, the world's second-largest radio telescope which was collapsed on December 1, 2020. Necessary References have been hyperlinked inside. 

Featured Image: RICARDO ARDUENGO/Getty Images

Related Articles