Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০২২ সালে বিদায় নেয়া প্রযুক্তিগুলো

Dead tech of 2022

বর্তমানের প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিষয়টি প্রযুক্তি নিজেই। বিগত বছরগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং উদ্ভাবনের এই গতিকে উপেক্ষা করা একেবারেই অসম্ভব। ২০২২ সালে এই পরিবর্তনের ধারা যেন আরো বেগ পেয়েছে। এলন মাস্কের টুইটারের কর্তৃত্ব গ্রহণ থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাজত্ব বিস্তার আরম্ভ করা আমাদের চিরচেনা প্রযুক্তি জগতকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে।

পরিবর্তনশীলতাই প্রযুক্তির ধর্ম, সৌন্দর্য। আর এই দৌড়ে কিছু প্রযুক্তির উন্নতি ঘটলেও অন্যগুলো ডিজিটাল বিশ্বের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবহারকারীদের যথেষ্টভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি অথবা সময়ের সাথে সেগুলো হয়ে ওঠে অপ্রয়োজনীয়। এর মধ্যে কোনোটা আমাদের স্মৃতির পাতায় ফিরে আসে মাঝে মাঝে, আবার কোনোটা হয়তো হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে।

বছরের শেষে এসে আমরা ফিরে তাকাবো এমনই কিছু প্রযুক্তির দিকে যেগুলো বিদায় নিয়েছে ২০২২ সালজুড়ে, জানার চেষ্টা করবো তাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ।

অ্যাপলের আইপড 

স্পটিফাই আসার আগে মিউজিক জগতে বিপ্লব ঘটানো কোনো প্রযুক্তির নাম ভাবলেই আগে মাথায় আসে আইপডের নাম। ২০০১ সালে স্টিভ জবসের তত্ত্বাবধানে অ্যাপল বাজারে আনে আইপড। সঠিক মার্কেটিং, আকর্ষণীয় ডিজাইন আর বেশি স্টোরেজ সুবিধা নিয়ে বাজারে আসে আইপড। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য মিউজিক ডিভাইসের থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পায় এই ডিভাইস।

Image Source: Mashable

এরপর মিউজিকের নতুন এক ইতিহাস রচনা করে গেলেও ২০০৭ সালে অ্যাপল আইফোন বাজারে আনার পরই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ডিভাইসটির।

কিন্তু প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন আপডেট বাজারে ছাড়তে থাকে অ্যাপল। যদিও বেশ কয়েক বছর থেকেই শোনা যাচ্ছিল এর বিদায় ঘণ্টার কথা, তবে গত মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি অফিসিয়ালি আইপড তৈরি বন্ধের ঘোষণা দেয়। সর্বশেষ ভার্সন ছিল আইপড টাচ, আইফোন-৪ মডেলের আদলে নির্মিত এই ডিভাইসের মাধ্যমেই যাত্রা শেষ করলো আইপড।

গুগল স্টাডিয়া

গেমিং জগতে প্লেস্টেশন বা এক্সবক্সের পর নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছিল গুগল ২০১৯ সালে স্টাডিয়া বাজারে আনার মাধ্যমে। ক্লাউড গেমিং সার্ভিসের মাধ্যমে যেকোনো ডিভাইসে একই গেম একই অ্যাকাউন্ট থেকে খেলার সুযোগ পাওয়া যেত এই প্রযুক্তিতে। ফলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন- কনসোল গেমিংকে সরিয়ে একসময় সেই জায়গা দখল করবে স্টাডিয়া। কিন্তু গেমিং মার্কেটের হিসাব কষতে সামান্য গড়মিল হয়েছিল গুগলের।

গুগল গেমারদের ভবিষ্যত গেমিংয়ের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। পাশাপাশি গুগলের কথা আর কাজের মধ্যেও মিল ছিল সামান্যই। মোবাইল এবং পিসিতে ভাল পারফর্মেন্স দেখালেও স্টাডিয়াকে ‘বেস্ট ফিটিং’ হিসেবে দেখেননি গেমাররা।

গুগল স্টাডিয়া; Image Source: Mashable

রেড ডেড রেডাম্পশন ২, সাইবারপাঙ্ক ২০৭৭ এর মতো জনপ্রিয় গেমগুলো আনলেও দেখা যায় গেমাররা ইতোমধ্যেই অন্যান্য প্লাটফর্মের জন্য গেমগুলো কিনে ফেলেছে।

অন্যদিকে, গুগলের স্টাডিয়া সরিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ হতে পারে গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে গুগলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফট। গুগলের মতোই একই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে মাইক্রোসফটও- প্রজেক্ট এক্সক্লাউড। গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে মাইক্রোসফটের তুলনায় গুগল একেবারেই নতুন।

গত জানুয়ারি মাসে অফিসিয়ালি এই প্রযুক্তির ডেভেলপমেন্ট বন্ধ ঘোষণা করে গুগল। পাশাপাশি, ব্যবহারকারীদের রিফান্ডের ঘোষণাও দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

ফেসবুক ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল

২০১৫ সালে ফেসবুকের নিউজফিডে থেকেই কোনো ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়তে স্মার্টফোনের অ্যাপের জন্য ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল ফিচার আনে ফেসবুক। লিংকে ক্লিক করে পড়ার থেকে ১০ গুণ দ্রুততর লোড টাইমের জন্য এই ফিচারটি জনপ্রিয়তা পায়, দরকার পড়ে না আলাদা ব্রাউজারে লিংক ওপেন করার। ফেসবুকে বরাবরই চায় ব্যবহারকারীরা যাতে আরও বেশি সময় নিউজফিডে কাটান। তারই ফলশ্রুতিতে এই প্রযুক্তির আবির্ভাব হয়।

ফেসবুককে অনুসরণ করে এরপরই গুগল আনে ওয়েবসাইটকে এএমপি (অ্যাক্সিলারেটেড মোবাইল পেজ) মোডে আনার ফিচার।

Image Source: META

তবে চলতি বছরের অক্টোবরে ফেসবুক জানায়, ৩ শতাংশেরও কম ব্যবহারকারী নিউজফিড থেকে অন্যান্য ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ে থাকে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই ফিচারের পেছনে বিনিয়োগ করা তাই অর্থহীন। ২০২২ এর অক্টোবর মাসে মেটা ঘোষণা দেয় ২০২৩ থেকে এই ফিচার বন্ধ করে দেয়া হবে।

ব্ল্যাকবেরি

স্মার্টফোন জগতে বিপ্লব সৃষ্টিকারী এই ফোনের বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। যদিও অনেক আগেই ব্ল্যাকবেরির বিদায় ঘটেছে, তবে ২০২২ এর শুরুতেই আনুষ্ঠানিকভাবে এর শেষ বিদায় ঘণ্টা বাজায় ফোনটির কানাডিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এর সকল ধরনের সার্ভার বন্ধ করে দেয়া হয়। মূলত, আইফোন এবং অন্যান্য টাচস্ক্রিন ফোন বাজারে আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে ব্ল্যাকবেরি। ২০১৬ সালে হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সফটওয়্যার ও সাইবার সিকিউরিটির দিকে আরো মনোযোগী হবার কথা জানান সিইও জন চেন। অফিসিয়ালি এই প্রযুক্তির ইতি টানলেও অনেক পুরনো স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মনে বিশেষ জায়গাজুড়ে থাকবে ব্ল্যাকবেরি।

Image source: BlackBerry

মেটা পোর্টাল

২০১৮ সালের শেষদিকে বাজারে আসা স্মার্ট ডিসপ্লে ডিভাইস মেটা পোর্টালের মূল লক্ষ্য ছিল গুগল হোম, অ্যামাজন একোর মতো জায়গা ব্যবহারকারীর বেডরুম বা কমনরুমে জায়গা করে নেয়া। বিভিন্ন ভার্সনে, যেমন- পোর্টাল+, পোর্টাল মিনি, পোর্টাল টিভি বাজারে আনে মেটা (ফেসবুক ইনক.)। তবে ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি রক্ষায় ফেসবুক বরাবরই ব্যর্থ। আর এই তথ্যের নিরাপত্তাহীনতাই ডিভাইসটির কাল হয়ে দাঁড়ায়।

মেটা পোর্টাল; Image Source: META

শুরুতে ফেসবুকের ভাষ্যমতে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত কোনো তথ্য বিজ্ঞাপনের জন্য সংগ্রহ করা হবে না জানানো হয়েছিল। তবে এক সপ্তাহ পরেই তারা এই পলিসি পরিবর্তন করে, এবং ব্যবহারকারীকে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য ‘জেনারেল ইউসেজ ডাটা’ সংগ্রহ করা শুরু করে। 

এরপর থেকে প্রায় সময় বিতর্ক আর সমালোচনার মুখে পড়ে ডিভাইসটি। এমনকি, সর্বক্ষণের জন্য ব্যবহারকারীর ভিডিও এবং অডিও ডেটা সংগ্রহের অভিযোগও ওঠে ডিভাইসের বিরুদ্ধে।

স্বাভাবিকভাবেই পোর্টালের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। গত জুনে কনজিউমার ভার্সন বাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেও সম্প্রতি পুরোপুরিভাবে পোর্টাল বন্ধের ঘোষণা দেয় মেটা।

আরও কিছু ছোট প্রযুক্তির বিদায়

গুগল হ্যাংআউট: ২০১৩ সালে গুগল চালু করে মেসেজিং সার্ভিস হ্যাংআউট। ২০২০ থেকে অ্যাপটির ইউজারবেজ গুগল চ্যাট-এ স্থানান্তর করা শুরু করা হয়। নভেম্বর ২০২২ এ প্লাটফর্মটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গুগল স্ট্রিটভিউ অ্যাপ: ২০১৫ সালে অ্যাপস্টোর ও প্লেস্টোরে উন্মুক্ত করা হয় স্ট্রিট ভিউ অ্যাপ। বর্তমানে গুগল ম্যাপে এই ফিচারগুলো সব সমন্বিত থাকায় স্ট্রিট ভিউ অ্যাপটি সরিয়ে নেবে গুগল।

Image Courtesy: Google

গুগল ডুপ্লেক্স: গুগলের মোবাইল-ওয়েবভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগী ডুপ্লেক্সের সেবা বন্ধ করতে যাচ্ছে গুগল। ডুপ্লেক্স নিয়ে রোর বাংলায় বিস্তারিত পড়তে পারেন এই লেখা থেকে।

গুগল ডুপ্লেক্স; Image Courtesy: Google

ইউটিউব গো: ২০১৬ প্লেস্টোরে উন্মুক্ত করা হয় ইউটিউবের লাইট ভার্সন ইউটিউব গো। ইউটিউবের মূল অ্যাপের পারফর্মেন্স আরো উন্নত করায় ২০২২ এর আগস্টে এই প্লাটফর্মও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে গুগল।

ইন্সটাগ্রাম আইজিটিভি: ইন্সটাগ্রামের রিলসে আরো বেশি মনোযোগ দেয়ার জন্য আইজিটিভি ফিচার বন্ধ করে দিয়েছে টেক জায়ান্টটি।

২০২৩-এ প্রযুক্তিজগতে আসতে যাচ্ছে আরো অনেক নতুন চমক, উত্তেজনা। যার সিংহভাগ হয়তো দখল করে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আধিপত্য। ততদিনের জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকবো নতুন কোনো প্রযুক্তির, নতুন কোনো পরিবর্তনের।

Language: Bangla
Topic: Technologies that stopped working in 2022

Related Articles