ছারপোকার নাম শোনেনি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে অনেকেই হয়তো শুধু নামই শুনেছেন ছারপোকার, কিন্তু রক্তচোষা এই পোকাটিকে চোখে দেখার সৌভাগ্য (কিংবা দুর্ভাগ্য) এখনো হয়নি। আর যারা ছারপোকাকে ইতোমধ্যে চেনেন, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তাদের সাথে ছারপোকার পরিচয় পর্বটা মোটেই সুখকর কিছু ছিলো না। যারা নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে ছারপোকা চেনেন কিংবা ছারপোকার বিষয়ে লোকমুখে কিছু কথা অন্তত শুনেছেন, তাদের অবশ্যই জানার কথা, এ পোকাটি দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে ব্যাচেলরদের জীবনে এক সাক্ষাৎ আতঙ্কের নাম!
চলুন, রক্তপিপাসু এ প্রাণীটি সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক তথ্য আবার নতুন করে জেনে নেওয়া যাক।
পরিচয়
ছারপোকার বেশ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে আমাদের ঘরবাড়িতে যে দুটি প্রজাতিকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তারা হলো Cimex lectularius ও Cimex hemipterus।
ছারপোকার একমাত্র খাদ্য রক্ত। তবে এটি শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি সদৃশ প্রাণীদের রক্তই পান করে থাকে। এরা উড়তে অক্ষম। কখনো কখনো ছারপোকাকে তেলাপোকার বাচ্চা বা উঁইপোকা মনে করে ভুল হতে পারে। তবে ছারপোকাকে আঘাত করে মেরে ফেললে কিংবা পিষে ফেলা হলে তীব্র ও কটু গন্ধ পাওয়া যায়, যা তেলাপোকার বাচ্চা বা উঁইপোকার সাথে এদের স্পষ্ট পার্থক্য নির্দেশ করে।
আবাস, জীবনচক্র ও বংশবিস্তার
ছারপোকারা নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে বাস করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। এরা অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে পারে না; তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে এদের জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে ওঠে। ২১-২৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছারপোকাদের বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুকূল। ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় কিছুক্ষণের মধ্যেই এরা মারা যায়।
ছারপোকার প্রজনন ক্ষমতা মধ্যম প্রকারের। অর্থাৎ, অন্যান্য পোকামাকড়ের মতো খুব বেশি না, আবার তাচ্ছিল্য করার মতো নিতান্ত কমও নয়। অনুকূল পরিবেশ ও পর্যাপ্ত খাদ্য পেলে একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ছারপোকা যৌনমিলনের পর প্রতিদিন ২-৮টি করে ডিম দিতে পারে এবং তার গোটা জীবদ্দশায় মোট ২০০-৫০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৬-১৫ দিন সময় লাগে, এবং সে বাচ্চাটি প্রায় ৫-৭ সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ছারপোকায় পরিণত হয়। একটি ছারপোকা মোটামুটি ৬-১২ মাস কিংবা অনুকূল পরিবেশ পেলে তারচেয়েও বেশি সময় বাঁচতে পারে।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকার সাধারণত ৬-১০ দিন পর পর রক্ত খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একদমই রক্ত পান না করেও একটি ছারপোকা প্রায় ২-৩ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। আবার, পরিবেশ খানিকটা ঠান্ডা হলে এরা না খেয়ে ১০-১২ মাসও বেঁচে থাকে!
শিশু অবস্থায় একটি ছারপোকার রঙ থাকে ঈষদচ্ছ ও কিছুটা হলদেটে-সাদা। ডিম থেকে বের হওয়ার পর একটি ছারপোকা তার জীবনের পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করে পূর্ণবয়স্ক ছারপোকায় রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি পর্যায়ে এটি তার পুরনো খোলস ত্যাগ করে। ছারপোকার বয়স যতই বাড়তে থাকে, তার গায়ের রঙ ততই লালচে-খয়েরী বর্ণের হতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকার গায়ের বর্ণ সাধারণত কালচে-খয়েরী হয়।
এরা একটি ঘরের প্রায় সকল স্থানেই বসবাস করতে পারে। দেয়ালের ফাটল বা ছিদ্র, কাঠের ফার্নিচারের ফাঁক-ফোকরে বা চিপায়, কাপড়-চোপড়, ব্যাগ, লাগেজ, স্যুটকেস, বালিশ, কুশনের কভারের ভেতর, লেপ, কম্বল, কাঁথার ভাজে এদেরকে বসবাস করতে দেখা যায়। তবে এদের সবচেয়ে প্রিয় আবাসস্থল হচ্ছে তোশকের নিচে ও মশারির কিনারায়।
আবার গণপরিবহন, যেমন- বাস-ট্রেন বা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, লঞ্চ, জাহাজ, এমনকি বিমানের সিটেও ছারপোকা বসবাস করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন আবাসিক হোটেলেগুলোর আসবাবপত্র বা সিনেমা হলের বসার আসনও ছারপোকার আবাসস্থল।
উপদ্রব
ছারপোকার কাছে দেশ বা মহাদেশ, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সীমারেখা বলে কিছু নেই; বিশ্বের প্রায় সকল প্রান্তে, সকল পরিবেশে ছারপোকার দেখা মিলবে। এমনকি উন্নত দেশগুলোর কিছু শহরেও ছারপোকার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
সাধারণত কোনো ঘরবাড়িতে ছারপোকার উপদ্রব শুরু হওয়ার পর সাথে সাথেই সে ঘরের বাসিন্দারা তা টের পায় না। এটা যে ছারপোকারই উপদ্রব, তা বুঝে উঠতে তাদের কিছুটা সময় লাগে। তবে এই সময়টুকুর মধ্যেই সাধারণত ছারপোকারা সে ঘরটিতে তাদের আবাস অনেকটাই পাকাপোক্ত করে নেয়।
কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঘরে ছারপোকা আছে:
- যেহেতু তারা রক্ত পান করে, তারা মশার মতোই কামড়াবে। তবে দিন দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কামড়ানোর হারও বাড়তে থাকবে।
- মশারি টানালে মশারা একদমই কামড়াতে পারে না। কিন্তু মশারি টানানোর পর ছারপোকাদের কামড়ানো আরও বেড়ে যায়। কেননা, তারা মশারির ভেতরেই থাকে। মশারির উপরের চারদিকের চারটি কোণা ছারপোকাদের অন্যতম প্রিয় বাসস্থান।
- মশার কামড়ের সাথে ছারপোকার কামড়ের অন্যতম পার্থক্য হলো, মশার তুলনায় ছারপোকার কামড়ের পর বেশি চুলকানি অনুভূত হয়। এরা সাধারণত ত্বকের একই স্থানে পাশাপাশি কয়েকটি জায়গায় কামড়ায়। নিয়মিত ছারপোকার কামড় খেতে থাকলে কারও কারও বিশেষ মানসিক উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
- ছারপোকারা আলো খুব একটা সহ্য করতে পারে না বলে রাতেই এদেরকে বেশি দেখা যায়। তবে রক্ত পান করার প্রয়োজন হলে দিনেও বের হতে দ্বিধা করে না এরা।
- কামড়ানোর ঠিক পর পরই বালিশ বা বিছানার তোশক উপরে তুললে এদেরকে পালাতে দেখা যায়।
- যেখানে ছারপোকারা বসবাস করে, সেখানে কালচে রঙের ছোপ দেখা যায়। এগুলো দেখে ঘরে ছারপোকার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- সোফায় বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই উরু অঞ্চলের আশেপাশে ও পায়ে কামড়ানো শুরু হয়।
- বিছানার চাদর বা বালিশের কভারে রক্তের ছোপ দেখা যায়।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে সামনের বেশ কয়েক সপ্তাহ, এমনকি বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত প্রচন্ড রকমের শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক দুর্ভোগ পোহানোর মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। কারণ, ছারপোকা একবার আবাস গেড়ে বসলে, তাদেরকে চিরতরে নির্মূল করাটা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার! তবে অসম্ভব নয়।
ছারপোকা যে স্থানে কামড়ায়, সেই স্থানটি সাধারণত লাল হয়ে যায় (সবার ক্ষেত্রে না)। কারও কারও ত্বক ফুলেও যায়। ছারপোকার কামড়ের একটি বিশেষত্ব হলো, এরা ত্বকের একই স্থানে পাশাপাশি কয়েকটি কামড় বসিয়ে রক্ত পান করে। ফলে যে অঞ্চলে কামড়ায়, সেখানে কয়েকটি দাগ দেখা যায়। আবার, ছারপোকারা প্রতি রাতেই কামড়াবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। তাই একই জায়গায় কয়েকটি ছারপোকার কামড় পড়তে পারে। ছারপোকারা সাধারণত কনুই ও কাঁধের আশেপাশে, পিঠে এবং পায়ে বেশি কামড়ায়। এছাড়াও ঘুমন্ত মানুষের শরীরের খোলা ত্বকের যেকোনো জায়গায় এরা সহজেই কামড় বসাতে পারে।
রোগ ও ক্ষতিকর প্রভাব
দিনের পর দিন ছারপোকার কামড় খাওয়াটা খুব যন্ত্রণাদায়ক। তবে গবেষকরা এমন কোনো প্রমাণ পাননি যে, ছারপোকা বড় ধরনের কোনো মহামারী বা সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটায়।
তবে এর কামড়ের ছোট ছোট কিছু ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- ছারপোকা ত্বকের একই জায়গার পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে কামড়ায় বলে সেখানে বেশ চুলকানি হয়। আবার কয়েকটি ছারপোকা বিভিন্ন সময়ে একই স্থান থেকে কামড়ে রক্ত পান করতে পারে। ফলে সে স্থানে সামান্য ক্ষত সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সে স্থানটিতে নখ দিয়ে অতিরিক্ত চুলকানো হলে ত্বক ছিলে গিয়ে ক্ষত আরও বড় হতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।
- এককভাবে একটি ছারপোকার লালাতে যেসব রাসায়নিক উপাদান থাকে, তা মানুষের শরীরের জন্য তেমন একটা ক্ষতিকর বা বিষাক্ত নয়। কিন্তু ত্বকের একই অঞ্চলে যখন বহুসংখ্যক ছারপোকা কামড়ায়, তখন সে সামান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলোর তীব্রতা বেড়ে গিয়ে কিছু অসুখ-বিসুখ ঘটাতে পারে। যেমন, আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বরে ভুগতে পারেন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে চর্মরোগের সামান্য কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
- ছারপোকার কামড়ের তীব্রতা বেশি হওয়ায় কোনো ব্যক্তির বাসায় এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে তিনি ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না; বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠতে বাধ্য হন। এর প্রভাব তার দৈনন্দিন জীবনে পড়ে। ঘুমের ঘাটতি হওয়ায় কর্মস্থলে সেই ব্যক্তিটি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন না। কোনো একটি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছারপোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে নিশ্চিতভাবেই সে অঞ্চলের পেশাজীবী মানুষজনদের মাঝে কর্মোদ্দীপনা ও উৎপাদনশীলতা কমে যায়। তাই উন্নত দেশগুলোর নগর কর্তৃপক্ষ ছারপোকার বিস্তার ঠেকাতে বেশ তৎপর। এমনকি কিছু দেশে আইনও আছে যে, কোনো আবাসিক হোটেলে ছারপোকা পাওয়া গেলে এর মালিককে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে।
- ছারপোকার উপদ্রব চরম পর্যায়ে গেলে এদের যন্ত্রণায় কিছু কিছু মানুষের মৃদু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দেখা দেয়। দিনের পর দিন কামড় খেতে খেতে তারা ছারপোকার জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং ছারপোকার কামড় খাওয়ার আতংকে থাকে সবসময়। এই ভয়টা তাদের মনে পাকাপাকিভাবে ঢুকে যায় এবং সেটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় রূপ নেয় একসময়। এরকম উপসর্গকে ডাক্তারি ভাষায় ডিলিউশনাল প্যারাসাইটোসিস বলা হয়ে থাকে। কোনো ব্যক্তির এই উপসর্গ দেখা দিলে তিনি সবসময় মনে করতে থাকেন, তার দেহের কোনো অংশে বা ত্বকে কোনো পরজীবী (যেমন: মশা, ছারপোকা, উঁকুন ইত্যাদি) হেঁটে বেড়াচ্ছে বা কামড় বসাচ্ছে, যদিও প্রকৃতপক্ষে তার ত্বকে তখন কোনোকিছুই হেঁটে বেড়ায় না। এরকম পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যেতে কিংবা কোনো কাজে গভীর মনোযোগ দিতে পারেন না।
বিস্তার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মানবসভ্যতার ইতিহাসে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছিলো। অনেকগুলো কার্যকরী কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়েছিলো তখন। বিভিন্ন দেশের সেনারা প্রতিকূল পরিবেশে, বনে-জঙ্গলে বা দুর্গম অঞ্চলে অবস্থান করার সময় ক্ষতিকর পতঙ্গের হাত থেকে বাঁচতে নানা ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করতো। এ সময় থেকে বিভিন্ন ধরনের কীট-পতঙ্গের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে বা কমে যায়। ছারপোকার উপদ্রবও তখন থেকে কমে এসেছিলো।
সাম্প্রতিককালে, একদম নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোটামুটি ১৯৯৫ সালের পর থেকে ছারপোকারা পুনরায় শক্তভাবেই তাদের অস্তিত্বের কথা জানান দিয়ে আসছে এবং তাদের বিস্তার আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।
এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে বলে গবেষকগণ মনে করেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, বর্তমান যুগে যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও সহজতর যাতায়াতব্যবস্থা। এই দ্রুততর যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে মানুষের যাতায়াতের সাথে ছারপোকারাও অঞ্চল থেকে অঞ্চলে, দেশ থেকে দেশে, এমনকি মহাদেশ থেকে মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।
আরেকটি কারণ হলো, বর্তমানকালে মানুষের মধ্যে পুরনো বা সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য, বিশেষ করে ব্যবহৃত ফার্নিচার ও অন্যান্য ঘরোয়া ব্যবহার্য জিনিসপত্র ক্রয় করার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এসবের মাধ্যমে এক বাসা থেকে আরেক বাসায়, এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছারপোকারা ছড়িয়ে পড়ছে।
পর্যটক বা অতিথিরাও ভ্রমণের সময় একস্থান থেকে আরেক স্থানে নিজের অজান্তেই ছারপোকা বহন থাকেন।
আবার ছারপোকা দমন করার জন্য কার্যকর কীটনাশকেরও অভাব রয়েছে। বিদ্যমান কীটনাশকগুলো ছারপোকা দমনে খুব একটা কার্যকর নয়। আবার কিছু কিছু কীটনাশক পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সরকার সেগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এটাও একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, যার জন্য ছারপোকার বিস্তার রোধ করাটা দিন দিন কষ্টকর হয়ে উঠছে।
সতর্কতা
এতদিন আপনার ঘরে ছারপোকা ছিলো না, কিন্তু হঠাৎ একদিন ছারপোকার উপস্থিতি টের পেলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এলো ছারপোকা? কোত্থেকেই বা এলো?
খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনার প্রতিবেশীদের কারও ঘরে ছারপোকা নেই তো?
কিংবা এমনও তো হতে পারে, কিছুদিন আগে আপনার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন আপনারই কোনো আত্মীয় বা বন্ধু। তিনি ট্রেনে বা বাসে চড়ে আসার সময় ছারপোকা বহন করে নিয়ে আসেননি তো?
কিংবা আপনিই কি সম্প্রতি কারও বাসায় বেড়াতে গিয়ে ছারপোকা সাথে করে নিয়ে এসেছেন?
এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে ছারপোকার আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।
গণপরিবহনে চড়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ থেকে কিংবা সিনেমা হল থেকে, অথবা আত্মীয়স্বজনদের বাসা, যেখানে ছারপোকা থাকার সম্ভাবনা আছে, সেখান থেকে ফিরে এসে সরাসরি শোবার-রুমে না ঢুকে গোসলখানা বা বাইরের কোনো রুম যেমন গ্যারেজ বা স্টোররুমে পোশাক ত্যাগ করতে হবে এবং সে পোশাকগুলো দ্রুতই গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে ঘরবাড়িতে ছারপোকার আগমন ঠেকানো যাবে।
ছারপোকা গরম সহ্য করতে পারে না বলে আমাদের গায়ের সাথে সেঁটে থাকে না সারাক্ষণ। তবে আমাদের পরনের কাপড়-চোপড় কিংবা ব্যাগ-লাগেজে লুকিয়ে থাকতে পারে ছারপোকা। এবং এভাবে আমাদের সাথেই ফ্রিতে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমণ করতে পারে তারা।
আবার কোনো ফার্নিচার, বিশেষ করে কাঠের ও পুরনো বা ব্যবহৃত ফার্নিচার ক্রয় করার সময় নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে, তাতে ছারপোকা নেই। যদি থাকে, তাহলে তা ঘরে নিয়ে আসার পূর্বে অতি অবশ্যই পুরোপুরি ছারপোকামুক্ত করে নিতে হবে।
প্রতিকার
ছারপোকার উপদ্রব চরম পর্যায়ে পৌঁছালে এর কামড় থেকে মুক্তি পাবার সহজ কোনো উপায় নেই। একমাত্র রাস্তা হচ্ছে ছারপোকা দমন করা। তবে ছারপোকা দমন সময়সাধ্য এবং অত্যন্ত জটিল ও কঠিন একটি ব্যাপার।
বিশ্বব্যাপী ছারপোকার হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকগুলো পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়। সবগুলো পদ্ধতিই যে সমানভাবে কার্যকর, তা কিন্তু নয়। একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে ছারপোকা দমন করা সম্ভব হবে কি না, তা নির্ভর করে আবহাওয়া, তাপমাত্রা, ঘরের পরিবেশ ইত্যাদিসহ আরও অনেকগুলো বিষয়ের উপর।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিশ্বব্যাপী ছারপোকা দমন করার জন্য ব্যবহৃত সাধারণ ও সহজ কিছু পদ্ধতি (জটিল, স্বাস্থ্যের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর ও যথেষ্ট ব্যয়বহুল পদ্ধতিগুলো পরিহার করা হলো এবং লেখকের নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতাও শেয়ার করা হলো):
- কোনো ছারপোকা দেখতে পেলেই সেটিকে মেরে ফেলতে হবে। তবে এটি করতে গেলে বিশ্রী ও উৎকট ঘ্রাণ সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হবে। ছারপোকা দমন করাকে একটি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করলে, আপনি প্রতিপক্ষের, অর্থাৎ ছারপোকাদের দলের যত সংখ্যক সদস্যকে মারতে পারবেন, আপনার যুদ্ধে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়তে থাকবে। ছারপোকা মারার পাশাপাশি তাদের আবাসস্থল খুঁজে বের করে সেখানে থাকা ডিমগুলোও নষ্ট করে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ করার মতো একটি তথ্য হলো, পিঁপড়া ও তেলাপোকা, ছারপোকার প্রাকৃতিক শত্রু; এরা ছারপোকার ডিম খেয়ে ফেলে। তাই ঘরে ছারপোকা থাকলে পিঁপড়ার ওষুধ প্রয়োগ করে পিঁপড়া তাড়ানো উচিত হবে না।
- ন্যাফথালিন বিভিন্ন পোকা-মাকড় দমনে ব্যবহৃত হয়। ছারপোকা দমনেও ন্যাফথালিন ব্যবহারের কথা শোনা যায়। ন্যাফথালিন গুঁড়া করে বিভিন্ন ফার্নিচারের ফাঁক-ফোকর, ফাটল, তোশকের নিচে বা ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করা হয়। এই ন্যাফথালিন ছারপোকা সহ্য করতে পারে না। তবে এ পদ্ধতিটি স্থায়ী নয়। এটি প্রয়োগ করলে ছারপোকা মারা যায় না, বরং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ন্যাফথালিন উদ্বায়ী বলে এটি বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার পর ছারপোকা আবারও ফিরে আসতে পারে। তাই এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করার পাশাপাশি অন্যান্য উপায়সমূহেরও আশ্রয় নিতে হবে, যেন ছারপোকারা চিরতরে নির্মূল হয়ে যায়।
- কাঠের ফার্নিচার বা আসবাবসমূহ ছারপোকার বসবাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এগুলো কয়েকদিনের জন্য ঘরের বাইরে কোথাও রেখে নিয়মিত রোদে দিলে ছারপোকার উপদ্রব কমে আসতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, রোদে দেওয়ার সময় ফার্নিচারগুলোর সকল অংশ ঠিকভাবে রোদের উত্তাপ পায়। ছারপোকা তাপ সহ্য করতে পারে না; ফার্নিচারের সকল অংশে ঠিকভাবে তাপ লাগলে মাত্র কয়েক ঘন্টার মাঝে ডিমসহ সকল ছারপোকা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আবার, ফার্নিচারের কিনারা, ফাঁক-ফোকর, ফাটল, ছিদ্রের মাঝে ছারপোকা বা এর ডিম থেকে যেতে পারে। তাই এগুলো ন্যাফথালিনের গুঁড়া বা মোম দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। সেই সাথে ঘরের লাগেজ-স্যুটকেসগুলো খালি করে এবং পরিষ্কার করে সেগুলোও রোদে দিতে হবে।
- ঘরের বিভিন্ন স্থানে ও আসবাবপত্রের উপরে কেরোসিনের প্রলেপ দেওয়া বা স্প্রে করা যেতে লারে। ঠিকমতো কেরোসিন প্রয়োগ করা গেলে ছারপোকার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে কেরোসিন দাহ্য হওয়ায় এ উপায়টি অবলম্বন না করাই শ্রেয়। তাছাড়া এটি তোশকসহ অন্যান্য কাপড়-চোপড়ে প্রয়োগ করা যায় না।
- কোনো এক ছুটির দিনে একসাথে ঘরের সব কাপড়-চোপড় গরম পানিতে ধুয়ে দিতে হবে। ধুয়ে নেওয়ার বেলায় বেশ খানিকটা সময় গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর সম্ভব হলে সেগুলোকে ‘ড্রায়ার’ দিয়ে বা ঠিকমতো রোদে শুকিয়ে এমন এক স্থানে রাখতে হবে, যেখানে ছারপোকার এখনো পৌঁছাতে পারেনি। এরপর সেখান থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কাপড় ব্যবহারের পর সেটি একই পদ্ধতিতে সতর্কতার সাথে পরিষ্কার করে একইস্থানে রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, যে কক্ষটি ছারপোকার দ্বারা আক্রান্ত, সে কক্ষটিতে যথাসম্ভব কম কাপড়-চোপড় রাখলে ভালো। সেখান থেকে অন্যান্য কাপড়, চাদর, বালিশের কভার, ব্যাগ ইত্যাদি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ও ছারপোকামুক্ত করে করে অন্যত্র স্থানান্তরিত করতে হবে, যেখানে ছারপোকার উপদ্রব নেই। ফলে আক্রান্ত কক্ষটিতে ছারপোকার বসবাসের জায়গা কমে আসবে এবং তাদের বসবাস ও বংশবিস্তার করা কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা, ছারপোকা কাপড়ের তৈরি জিনিসপত্রে বাস করতে বেশি পছন্দ করে।
- কাপড়-চোপড়ের পাশাপাশি ধীরে ধীরে তোশক-কুশন-বালিশ-ম্যাট্রেস ইত্যাদিকে ভালো করে রোদে দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। কারণ এগুলোও ছারপোকার অন্যতম প্রিয় আবাসস্থল। রোদে শোকানোর আগে এগুলোর কভার খুলে নিয়ে গরম পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
- কাঠের ফার্নিচার বাদে অন্যান্য আসবাব, যেমন- ধাতব বা প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবে ছারপোকার উপদ্রব তুলনামূলক কম হয়। তবুও সেগুলোকে আলাদা করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে কিছুদিন কক্ষের বাইরে রাখতে হবে। প্রয়োজনের সেগুলোতে কেরোসিনের প্রলেপ দেওয়া যায়।
- বলকান অঞ্চলে বহু যুগ ধরেই ছারপোকা ধরার কৌশল হিসেবে শিম বা শিমজাতীয় কিছু গাছের পাতাকে (বরবটি, মটরশুঁটি) ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব পাতায় আংটা জাতীয় একধরনের অতি সূক্ষ্ম রোমশ অংশ দেখা যায়, যা পুরো পাতার পৃষ্ঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। একে ‘ট্রাইকোম’ বলা হয়। এর উপর দিয়ে হাঁটতে গেলে ছারপোকার পা আটকে যায় এবং এরা নড়াচড়া করতে পারে না। আক্রান্ত কক্ষের মেঝেতে এবং যে স্থানে ছারপোকাদের চলাচল বেশি, সেখানে শিম বা এ জাতীয় গাছের অনেকগুলো পাতা ফেলে রাখলে সেগুলোতে ছারপোকা আটকা পড়ে যায়। এরপর সেগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এভাবে ছারপোকার সংখ্য দিন দিন কমিয়ে আনা যায়।
- ঘরের যেসব উন্মুক্ত অঞ্চলে ছারপোকার আনাগোনা বেশি, সেখান থেকে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ছারপোকাগুলোকে তুলে নেওয়া যায়। তবে এর দ্বারা খুব কম সংখ্যক ছারপোকাই তাড়ানো যায়।
- ছারপোকা পিচ্ছিল পৃষ্ঠের উপর দিয়ে চলতে পারে না। তাই অনেকেই বিছানার উপর কিংবা তোশকের উপর প্লাস্টিক, রেক্সিন বা পলিথিনের পিচ্ছিল শীট ব্যবহার করে থাকেন, যেন এগুলোর উপর দিয়ে চলাচল করতে ছারপোকার অসুবিধা হয়।
- ছারপোকা দমনের আরেকটি পরিচিত পদ্ধতি হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড প্রয়োগ। আমাদের দেশে এটি বিভিন্ন দোকানে বা হকারদের কাছে ট্যাবলেট হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। ছারপোকা আক্রান্ত কক্ষের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি ট্যাবলেট রেখে দরজা-জানালা বন্ধ করে দুদিন সে কক্ষটাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখতে হয়। ট্যাবলেটগুলো বাতাসে মিশে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে এবং ছারপোকাকে মেরে ফেলে। তবে দুদিন পর কক্ষে ফিরে সবকিছু ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং জামা-কাপড় সব ধুয়ে দিতে হবে। অনেকের মতে, এ পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর হলেও এতে সাফল্যের হার কিন্তু শতভাগ নয়। আবার, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় বলে এটি মানুষের জন্যও ক্ষতিকর।
- বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের শহরাঞ্চলেও কিছু ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে ঘরবাড়ি থেকে কীটপতঙ্গ দমন সংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে। তারা ঘরের বিভিন্ন আসবাব ও ছোটখাট জিনিসপত্রকে একে একে ছারপোকামুক্ত করে সেগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে রেখে, তারপর গোটা একটা কক্ষে জলীয়বাষ্প বা উচ্চতাপ প্রয়োগ করে সে কক্ষকে ছারপোকামুক্ত করে ফেলেন। কিংবা আরও কয়েকটি পদ্ধতি তারা ব্যবহার করে থাকেন। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
উপরোক্ত উপায়গুলোর কোনোটিই পুরোপুরি ছারপোকা দমন করার নিশ্চয়তা প্রদান করে না। তবে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি একসাথে প্রয়োগ করা গেলে এবং ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের সাথে অনেকদিন যাবত ছারপোকার সাথে লড়াই করে গেলে একসময় মুক্তি মিলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ফার্নিচারগুলোকে ছারপোকামুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন একইসাথে কাপড়গুলো সব গরম পানিতে ধুয়ে নিলে এবং গোটা কক্ষকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিষ্কার করা হলে প্রথম প্রচেষ্টাতেই হয়তো সব ছারপোকা চলে যাবে না, তবে নিশ্চিতভাবেই তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। অর্থাৎ প্রথম প্রচেষ্টাতেই ছারপোকাদের সাথে যুদ্ধে অনেকটা এগিয়ে গেলেন আপনি। এটা এমন এক যুদ্ধ, যেখানে হয় আপনি হাল ছেড়ে দেবেন, কিংবা হাল ছাড়বে ছারপোকারা। এবার বাকিটা আপনার হাতে; হার মেনে নেবেন, নাকি চূড়ান্ত জয় ছিনিয়ে আনবেন। পর পর বেশ কয়েক সপ্তাহ (কিংবা মাস) চেষ্টা করতে থাকলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই একসময় মুক্তি মিলবে ছারপোকার হাত থেকে।
ছারপোকা দমনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার করার বদলে অন্যান্য উপায়গুলো অবলম্বন করাই শ্রেয়। অনেক গবেষক দেখেছেন, কীটনাশক আবিষ্কৃত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কীটনাশকের বিরুদ্ধে ছারপোকাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেছে! এছাড়া কীটনাশকগুলো শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এমন কৌশল অবলম্বন করা উচিত, যেন ছারপোকারা পালাতে না পারে; এদেরকে মেরে ফেলা উচিত। কেননা, যদি এরা পালিয়ে পাশের কোনো বাসায় গিয়ে বসবাস করা শুরু করে, তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ, তাদের উপদ্রব আরো বেড়ে যাবে এতে। পরবর্তীতে সুযোগ পেলেই আবারও আপনার বাসায় হানা দেবে এবং আশেপাশের অন্যান্য বাসা-বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়বে।
শেষকথা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছারপোকাদের বিস্তার সাম্প্রতিককালে অনেক বেড়ে গেলেও সামনে আরও ভয়ানক সময় অপেক্ষা করছে; ছারপোকারা হয়তো সামনে বিপ্লবই ঘটাতে যাচ্ছে।
দীর্ঘসময় যাবত এই রক্তখেকো পতঙ্গটি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও ইদানীং এটি আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যান্য অনেক কারণের পাশাপাশি এই যন্ত্রণাদায়ক প্রাণীটির বিষয়ে মানুষের সচেতনতার অভাব একে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।
যদিও এটি মানুষের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে না, তবুও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সকাল আটটায় উঠে অফিস বা ক্লাসে যেতে হবে, অথচ রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে আসার পরও আপনি সামান্য ঘুমের জন্য ছারপোকার সাথে যুদ্ধ করেই যাচ্ছেন- ভাবতে পারেন!