মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক কী? ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা? নাকি কোনো কিছু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা? এসব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে মানুষের মস্তিষ্ক নামক জাদুর বাক্সে। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা তাই বার বার হাত বাড়িয়েছেন এই জাদুর বাক্সেই। প্রতিনিয়তই হচ্ছে নানা গবেষণা। তবে এবার ল্যাবরেটরিতে বেড়ে ওঠা মস্তিষ্ক কোষ যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিডিও গেমস খেলতে পারে- এমনটিই দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সায়েন্স ফিকশনের এমন এক জগৎকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বায়োটেক স্টার্টআপ ‘কর্টিক্যাল ল্যাবস’। কর্টিক্যাল ল্যাবসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ব্রেট কাগান ও তার দলের এ গবেষণা সম্প্রতি ‘নিউরন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের গবেষণা বলছে- ল্যাবরেটরিতে বেড়ে ওঠা মানুষ ও ইঁদুরের মস্তিষ্ক কোষ ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ একসময়ের সাড়া জাগানো ভিডিও গেমস ‘পং’ খেলতে সক্ষম।
১৯৭২ সালে বাজারে আসা পং (Pong) প্রথমদিকের সাড়া জাগানো ভিডিও গেমসগুলোর একটি। এখানে স্ক্রিনে একটি প্যাডেল উপরে-নিচে ওঠা নামা করে বলকে যথা সম্ভব স্ক্রিনের মাঝে রাখার চেষ্টা করা হয়। এক প্রতিযোগীর প্রতিবার প্যাডেলে বল লাগানোর ব্যর্থতায় একটি করে পয়েন্ট পায় অপরজন।
ব্রেট কাগানের দল কয়েক সারি ইলেকট্রোডের উপরে প্রায় আট লাখ মস্তিষ্ক কোষের সাথে একটি কম্পিউটারের সংযোগ দেন। তারা এই ব্যবস্থার নাম দেন ‘DishBrain’। এ ইলেকট্রোডগুলো মস্তিষ্ক কোষের উদ্দীপনা গ্রহণে ও কোষকে উদ্দীপনা পাঠাতে সক্ষম। এবার কম্পিউটারে ভিডিও গেমসে প্যাডেল ও বলের অবস্থানের একটি সংকেত মস্তিষ্ক কোষে পাঠানো হয় ও মস্তিষ্কের ফিডব্যাক লক্ষ্য করা হয়। প্রথমদিকে বল প্যাডেলে লাগানো কিংবা মিস করার দিকে লক্ষ্য না করে এলোমেলোভাবে মস্তিষ্ক কোষের প্যাডেল নাড়ানোর একটা উদ্দীপনা পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ‘বল প্যাডেলে লাগানোই যে সফলতা’ এমন একটি সংকেত মস্তিষ্ক কোষকে দেওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দেখা যায় এটি অনেকটাই মানুষের মতো গেমসটি খেলতে সক্ষম। তবে পার্থক্য হচ্ছে- মানুষ যেখানে স্বয়ং বুঝতে পারে সে একটা গেমস খেলছে, সেখানে মস্তিষ্ক কোষ নিজেকেই খেলার প্যাডেল হিসেবে মনে করে। তবে এ কাজ ঠিক কতটা মস্তিষ্কের ‘স্বতঃস্ফূর্ত’- এ নিয়েও বিজ্ঞানীমহলে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
তবে এ গবেষণাকে ভৌত জগৎকে জীবজগতের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার এক অনন্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন ঔষধের কার্যকারিতা পরীক্ষা ও সিলিকনের সাথে মস্তিষ্ক কোষের এমন ক্ষমতার মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রযুক্তি খাতে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সম্ভাবনাও দেখছেন বিজ্ঞানীরা।