মৃত্যুর পর মা-বাবার পাশে বা দেশের বাড়িতে দাফন হতে, গঙ্গার পবিত্র জলে ভেসে যেতে- কতরকম উপায়েই তো নিজের সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে মানুষ। আর পরিবেশকে ভালোবেসে মানুষের মাথায় ঘুরে ফেরে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও। কিন্তু কাঠের কফিন বা চুল্লীর আগুন, কোনোটাই কিন্তু এত দ্রুত পরিবেশের সান্নিধ্যে যেতে দেয় না মানুষকে। অন্যসব কথা বাদ দিন, কাঠের তৈরি সাধারণ কফিনই তো মাটিতে মিশে যেতে সময় নেয় কয়েক যুগ।
তবে জীবিত সময়ের মতোই মৃত্যুর পরেও পরিবেশকে সাহায্য করতে চান এমন মানুষগুলোর জন্য নেদারল্যান্ডের এক আবিষ্কারক নিয়ে এসেছেন মাশরুম কফিনের ব্যবস্থা। সাদা রঙের এই কফিন তৈরি হয় মাশরুমের শেকড় তৈরিতে সাহায্যকারী মাইসেলিয়াম আর হেম্পের আঁশ দিয়ে। দেখতে অনেকটা মিশরীয় স্যারকোফ্যাগাস বা মমির কফিনের মতো এই মাশরুমের কফিন মাটিতে পুরোপুরি মিশে যেতে সময় নেয় মাত্র ৩০-৪৫ দিন। পচনশীল এই কফিন তাই একজন মানুষকে পরিবেশের সাথে মিশে যেতে সাহায্য করে সবচেয়ে বেশি!
একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে মৃত্যু ব্যাপারটি শুধু শেষকৃত্য বা বিদায়ের ব্যাপার নয়, মানুষের কাছে যেন আরো একটু বেশি কিছু। কাছের মানুষকে ধরে রাখার আকুতি থেকেই তাকে পরিবেশের মাধ্যমে একাত্ম করে পেতে চায় সবাই। সেই চিন্তা থেকেই এমন উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগিয়েছেন লুপ বায়োটেক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বব হেন্ড্রিক্স ও লগ্নীকারক শন হ্যারিস। বব হেন্ড্রিক্সের বয়সটা মাত্র ২৯। তবে এই বয়সেই জীবনের সম্পূর্ণটা পুরোপুরি বেঁচে, মৃত্যুর পরেও কোনো একভাবে পরিবেশের মাধ্যমে বেঁচে থাকা যে অসম্ভব আনন্দ, সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তিনি।
পরিবেশ ও পরিবেশের নানা উপাদান, বিশেষ করে মাশরুম নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন বব।
মাশরুম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রিসাইক্লার। তাই ভাবলাম, আমরা আমাদের জীবনচক্রে কেন ওদেরকে ব্যবহার করি না? আর তারপরেই আসে মাশরুম কফিন বানানোর চিন্তা।
শুধু মাশরুম কফিন না, একইসাথে মুখাগ্নি করার পর আসা ছাইকেও সুন্দর করে ব্যবহার করছেন বব মানুষকে পরিবেশের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার অংশ হিসেবে। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে ছাইয়ের উপরেই লাগানো হয় পছন্দের গাছ। একটু একটু করে ছাই থেকে আসা পুষ্টি রসদ জুগিয়ে বড় করে তোলে গাছকে।
বর্তমানে মাসে লুপ বায়োটেক ৫০০টি মাশরুম কফিন বা ছাইয়ের পাত্র বানাতে পারে। তবে সেটার সংখ্যা যে খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে সেটাও জানাতে ভুললেন না বব হেন্ড্রিক্স। ইতিমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে নানা স্থানে এই কফিন বিক্রি করছেন তিনি। আশা করছেন মৃত্যুর পরেও পরিবেশকে সুন্দর করে তোলার এই কাজে আগ্রহী হবে অনেকেই!