Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আপনার রক্তের গ্রুপ অনাগত সন্তানের মৃত্যুশঙ্কার কারণ নয় তো?

মানুষের জন্মের এমন একটি পরিস্থিতি নিয়ে আজকের লেখায় আলোচনা করা হবে, যেটি জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলেও অনেকেই জানেন না। আমাদের দেশে বিয়ের সময় দুই পক্ষের অনেক কিছুই পরস্পরের বোঝাপড়ার বিষয় হয়ে থাকে, কিন্তু এই ব্যাপারটি উপেক্ষিত হয় সবসময়। শুরুতেই জানা যাক লেখার সেই মূল বিষয়টি- স্বামী-স্ত্রীর রক্তের একটি কম্বিনেশনে সন্তানের জন্ম হতে পারে মারাত্মক প্রাণঘাতী জন্ডিস রোগ নিয়ে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে বলা হয় ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস (Erythroblastosis Fetalis)।

মায়ের রক্ত নেগেটিভ আর গর্ভের সন্তানের রক্ত পজিটিভ; Source: www.medindia.net

এই রোগটি সন্তানে কেবল তখনই হয়, যখন পিতার রক্ত হয় পজিটিভ গ্রুপের, আর মায়ের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপের। Rh Factor-এর রক্তে উপস্থিতি-অনুপস্থিতির ভিত্তিতে এই পজিটিভ-নেগেটিভ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। Rh Factor উপস্থিত থাকলে রক্তটি পজিটিভ গ্রুপের, অনুপস্থিত থাকলে রক্তটি নেগেটিভ। পজিটিভ রক্তবাহী স্বামী ও নেগেটিভ রক্তবাহী স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রে সমস্যাটি দেখা দেয় না। তাছাড়া আমাদের দেশে নেগেটিভ রক্তবাহী খুবই কম, নারীর ক্ষেত্রে সেই হিসেব আরো কমে আসে। তাই না জেনে বিয়ে করলেও দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই পজিটিভ রক্তবাহী। আমাদের দেশের মানুষের জন্য বিষয়টি শাপে-বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যেহেতু সচরাচর চোখে পড়ে না মানুষের মাঝে রোগটি, আমরা রয়ে যাই অজ্ঞতার মাঝে। আমাদের আর জানা হয়ে উঠে না, আমাদেরই অবিবেচনায় সন্তানের শরীরে দেখা দিতে পারে প্রাণঘাতী এক রোগ, এই রোগ নিয়েই সে জন্মায়, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেখানে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। সন্তানের শরীরের পুরো রক্ত বদলে দিয়ে যদিও বাঁচানো সম্ভব, আপনিই ভেবে বলুন, এমন জটিল পদ্ধতি আপনার সন্তানের জন্য বেছে নেবেন কিনা। চিকিৎসা বিজ্ঞান চিকিৎসা বাতলে দিয়েছে, সমাধান দিয়েছে। তবে এই সমাধানের চেয়ে প্রতিরোধ করে নেওয়াটাই সর্বোত্তম।

এই রোগের ব্যাপারটি বুঝতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিষয়গুলো। এগুলো আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত। একজন মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। আমরা প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ জীবাণু আর ধুলাবালি নাক-মুখ, হাত, খাবার, কিংবা পানির মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকি, আমাদের এতদিন পর্যন্ত বাঁচা সম্ভব হতো না যদি শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকতো। আমাদের যে সামান্য জ্বর হয়, যাকে আমরা রোগ বলে জানি, এটি আসলে রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। শরীরের তৃতীয় এবং সর্বশেষ স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর একটি হলো এই জ্বর। জ্বর হলো শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুগুলো ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া মাত্র। প্রতিরক্ষার ব্যাপারে বিস্তারিত বলা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে আজকে যে রোগটি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি তা পুরোপুরি বুঝতে হলে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি ব্যাপারগুলো নিয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

 

এই রোগটি সন্তানে কেবল তখনই হয়, যখন পিতার রক্ত হয় পজিটিভ গ্রুপের, আর মায়ের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপের; source: hotelwkrakowie.info

শরীরের কোনো অংশ কিংবা অঙ্গ হলো শরীরের নিজস্ব সম্পত্তি। আপনি কারো শরীরের একটি কিডনি সরিয়ে অন্য কারো থেকে কিডনি নিয়ে বসিয়ে দিলেন। কিডনি তো কিডনি, তার তো আর বোধশক্তি নেই, সে কীভাবে বুঝবে তাকে অন্য শরীরে নেওয়া হয়েছে, সে তার মতো করে কাজ করে যাবে। কিন্তু কাজে বিঘ্ন ঘটাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি। দেহের T-lymphocyte তাকে শনাক্ত করে ফেলবে যে, এই বস্তু এই শরীরের নয়। তখন সেটি অ্যান্টিবডি সিস্টেমকে সজাগ করে তুলবে। অ্যান্টিবডি সিস্টেমকে নির্দেশ দেওয়াই আছে, কোনো বস্তুকে নিজস্ব সম্পত্তি বলে শনাক্ত না করা গেলেই সেটিকে ধ্বংস করে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলে এভাবেই ব্যবস্থা নেয় অ্যান্টিবডি। এখন অ্যান্টিবডি কীভাবে বুঝবে যে, তার ভালোর জন্যেই খারাপ কিডনী পাল্টে ভালো কিডনী রাখা হয়েছে শরীরে, সে তো তার দায়িত্ব পালন করে যাবে।

শরীরে বাইরে থেকে যা প্রবেশ করলো কিংবা প্রবেশ করানো হলো, জীবাণু হোক অথবা কোনো অঙ্গ, তারা হলো অ্যান্টিজেন। অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেনকে শনাক্ত করা মাত্রই আর বাঁচতে দেবে না।

এই অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডির সংঘর্ষেই তৈরি হয় Erythroblastosis Fetalis নামক রোগটি। বিষয়টি পুরোটাই রক্তের সাথে সম্পর্কিত।সন্তানের দেহে এই রোগ তৈরি হবে কিনা, তা নির্ভর করে পিতা-মাতার রক্তের গ্রুপের উপর। রক্তের গ্রুপগুলো তৈরি করে রক্তে অবস্থানকারী কিছু অ্যান্টিজেন। কথা উঠতে পারে যে, তাহলে এই অ্যান্টিজেনগুলো অবস্থান করে কীভাবে। সেটা অন্য ব্যাপার; সংক্ষেপে বলা যায়, শরীরের কিছু নিজস্ব অ্যান্টিজেন রয়েছে, যা মানুষে মানুষে ভিন্নরূপে থাকে, এগুলোকে শনাক্ত করে মনে রাখাটাও T-lymphocyte-এরই কাজ।

মায়ের রক্তে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি গর্ভের সন্তানের রক্তে প্রবেশ; Source: citybeauty.info

একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, পিতা-মাতার মাঝে যেকোনো একজন পজিটিভ রক্তবাহী হলেই সেটি সন্তানের রক্তে সঞ্চালিত হবে। এই কারণটিই সন্তানের রক্তে জটিলতা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। একজন নেগেটিভ রক্তবাহী নারীর অবশ্যই উচিৎ একজন নেগেটিভ রক্তবাহী পুরুষকে বিয়ে করা। কেবলমাত্র তখনই সন্তানের রক্ত সম্পর্কিত কোনো রোগের ঝুঁকি থাকে না। নেগেটিভ রক্তবাহী নারী যদি পজিটিভ রক্তবাহী পুরুষকে বিয়ে করে, তাহলে সন্তানের রক্তে জটিলতাটি দেখা দেয়। উল্টোটা যদি হয়, মানে পুরুষ নেগেটিভ, নারী পজিটিভ, তবে কোনো ভয় নেই। কেননা সন্তান থাকে মাতৃগর্ভে। সন্তানের রক্ত পজিটিভ গ্রুপের, মায়ের রক্তও পজিটিভ, এখানে অ্যান্টিবডি সিস্টেম কিছুই করতে পারবে না। কেননা সন্তানের রক্তে যেমন পজিটিভ সৃষ্টিকারী অ্যান্টিজেন রয়েছে, তা মায়ের রক্তেও রয়েছে। সুতরাং অ্যান্টিবডি সিস্টেম এখানে পার্থক্য করতে পারবে না।

অ্যান্টিবডি সিস্টেম তখনই কার্যকর হয়, যখন সে কোনো অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি টের পায়। ধরা যাক, পিতার রক্ত পজিটিভ আর মায়ের রক্ত নেগেটিভ হওয়াতে সন্তানের রক্ত পজিটিভ। পজিটিভ রক্ত নিয়ে সন্তান মাতৃগর্ভে অবস্থান করে আছে। মায়ের সাথে সন্তানকে যুক্ত করে Placenta, Umbilical Cord দিয়ে। এই Umbilical Cord একপ্রান্তে মায়ের Placenta-তে আর অপরপ্রান্তে সন্তানের Umbilicus অর্থাৎ নাভীর সাথে যুক্ত থাকে। এটাই মাতৃগর্ভে আমাদের সবার পরিবহন ব্যবস্থা। মায়ের শরীর থেকে রক্ত-পুষ্টি সবই সন্তানে আসে এর দ্বারা। এখন এই অবস্থায় মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে আসা রক্ত যদি পুনরায় ফিরে যায় মায়ের প্রবাহে, তখনই বিপত্তি বাঁধে, এমনটা হয় সাধারণত সন্তান জন্মের সময়তেই।

রক্তের লোহিত কণিকা মূলত প্রধান পরিবাহক রূপে কাজ করে থাকে; Source: wallpaperscraft.com

প্রত্যেক জীবিত প্রাণীর শরীরে সবকিছু পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে থাকে রক্ত। মা ও সন্তানে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের দু’জনের রক্ত। মায়ের রক্ত যখন নেগেটিভ আর সন্তানের রক্ত পজিটিভ, তখন মায়ের রক্ত সন্তানের রক্তে খাবার নিয়ে যাওয়ার পর ফিরে আসবে এক নতুন অ্যান্টিজেনের তথ্য নিয়ে। অ্যান্টিবডি সিস্টেম কিন্তু এটা সহ্য করবে না। সেই অ্যান্টিজেনকে হত্যা করতে উপযুক্ত অ্যান্টিবডি তৈরিতে হাত দেবে। এটাই একমাত্র কারণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে প্রথম সন্তানটির কোনো ক্ষতি না হওয়ার। কেননা পূর্ব থেকে অ্যান্টিবডি সিস্টেমের জানা নেই যে, এমন পজিটিভ কোনো অ্যান্টিজেন থাকতে পারে। সে অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে গিয়েই তবে চিনতে পারে, সাথে সাথে উপযুক্ত হত্যাকারী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে। প্রথম সন্তানের অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা কিছু সময়সাপেক্ষ ও ধীরগতির ব্যাপার। কিন্তু একই অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তান হলে তখন কিন্তু আর অ্যান্টিবডি প্রস্তুতের প্রয়োজন নেই, অ্যান্টিবডি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা আছে।

মানুষের এমন কিছু রোগ হয়, যেগুলো জীবনে একবার হলে আর হয় না। এমন অনেকগুলো রোগের নাম আপনারাই বলতে পারবেন। এই রোগগুলো শরীরে দেখা দিলে, অ্যান্টিবডি সিস্টেম উপযুক্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করে সেই রোগগুলোকে প্রতিহত করে। সেই সাথে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুগুলোকেও চিনে রাখে ভালোমতো। পরের বার এদের উপস্থিতি শরীর টের পেলেই ধ্বংস করে দেয়, কারণ অ্যান্টিবডি আগে থেকেই যে তৈরি হয়ে আছে।

প্রথম সন্তান গর্ভে থাকাকালীন মায়ের রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি মায়ের রক্ত হয়ে দ্বিতীয় রক্তে প্রবেশ করছে; Source: nursetecmilenio.blogspot.com

যে রোগটি নিয়ে আজকের লেখা, ফিরে আসি সেটির ব্যাপারে। রোগটি মূলত নবজাতকের দেহে জন্ডিস আর অ্যানিমিয়ার সংমিশ্রণ। মানুষের শরীরের রক্তে লোহিত কণিকা রয়েছে, এগুলোর কারণেই রক্ত লাল দেখায়। লোহিত কণিকা যদি পরিমাণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিসের ক্ষেত্রেও লোহিত কণিকা কম থাকে। মা-সন্তানের পজিটিভ-নেগেটিভ জটিলতায় সন্তানের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো ভাঙতে শুরু করে। লোহিত কণিকার ভেতর হিমোগ্লোবিন অবস্থান করে। হিমোগ্লোবিনগুলো মুক্ত হয়েই বিলিরুবিনে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আর এই বিলিরুবিনের উপস্থিতি কীভাবে বোঝা যায়, সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই আপনাদের জানা আছে। বিলিরুবিনের রং হলুদ, তাই এটি ত্বকের নিচে যখন জমা হয়, ত্বক কিংবা চোখ হলুদ দেখি আমরা। বিলিরুবিনের উপস্থিতিতে হলুদ রঙের আবির্ভাবই কিন্তু জন্ডিস রোগ। মা-বাবার রক্তসংক্রান্ত জটিলতায় সন্তানটি মারাত্মক প্রাণঘাতী জন্ডিস রোগ নিয়ে জন্ম নেয় এভাবে। এই রোগ হলে অধিকাংশ সময়েই বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। যদি সন্তান মাতৃগর্ভে থাকাকালীন টের পাওয়া যায় সন্তানে জন্ডিসের আবির্ভাব ঘটেছে, তখন বাচ্চাটিকে নির্দিষ্ট সময়ের যতটুকু পূর্বে সম্ভব ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হয়, জন্মের পর তাকে বাঁচাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাতৃগর্ভে অবস্থানকারী একটি সন্তানের Viable Age হলো আটাশ সপ্তাহ। অর্থাৎ আটাশ সপ্তাহের পূর্বে সন্তান জন্মালে সেই সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

গর্ভবতী অবস্থায় যদি একজন নেগেটিভ রক্তবাহী নারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, চিকিৎসক প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করতে চাইবেন। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে, পূর্ববর্তী সন্তান জন্মদানের কারণে রক্তে অ্যান্টি-Rh অ্যান্টিবডি রয়েছে কিনা। নারীর রক্তে যদি চিকিৎসক এই অ্যান্টিবডি খুঁজে পান, তবে তিনি বুঝে নেবেন, উনার বর্তমান সন্তান মৃত্যুঝুঁকির মাঝে রয়েছে, অতিসত্ত্বর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। মাতৃগর্ভে অবস্থানকারী সন্তানকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফিটাস বলা হয়। ফিটাসের আটাশ সপ্তাহ পূর্ণ হলে, মায়ের রক্তে Rh Immunoglobulin ইনজেকশন দেয়া হয়। মায়ের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টি-Rh-কে প্রতিহত করে এই ইনজেকশন। সন্তান জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার মাঝে আবারো এই ইনজেকশন প্রদান করা হয়, এটি দেওয়া হয় নিশ্চিতকারকরূপে। কারণ সন্তান জন্মদানের সময় Umbilical Cord কাটার কারণে রক্তক্ষরণ হয়, তখন যেন মায়ের রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি না হতে পারে তাই ইনজেকশন আবার দেওয়া হয়।

ইরাইথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস এর লক্ষণ; source: medindia.net

আর একটি ফিটাসের যদি Viable Age এর আগেই অ্যানিমিয়া দেখা দেয়, তখন ফিটাসের শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হয়। হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি এমন প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো গঠিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হয়। এগুলো গঠিত হলেই ফিটাসের নির্দিষ্ট সময় পূর্বেই ডেলিভারি করা হয়।

সন্তানকে বাঁচাতে সর্বশেষ যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা হলো শরীরের রক্ত পরিবর্তন। আগেই বলা হয়েছে, প্রথম সন্তানটি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয় না এক্ষেত্রে। দ্বিতীয় সন্তানটি যদি প্রচণ্ড মাত্রায় জন্ডিস নিয়ে জন্মায়, পুরো শরীর হলুদ হয়ে থাকবে তার, দেখেই বোঝা যাবে। সেই সন্তানের রক্ত পজিটিভ গ্রুপের, প্রতিনিয়ত লোহিত কণিকা ভেঙে যাচ্ছি অ্যান্টিবডির উপস্থিতিতে। এমতাবস্থায় শিশুটিকে বাঁচাতে এক জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। শরীর সমস্ত রক্ত বের করে নেগেটিভ রক্ত দিয়ে পূর্ণ করা হয়; তবু যদি বাঁচানো যায়। সম্পূর্ণ রক্ত একেবারে বের করা হয় না, অল্প অল্প রক্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন করা হয়। এছাড়াও বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে।

দ্বিতীয় সন্তানটি যদি প্রচণ্ড মাত্রায় জন্ডিস নিয়ে জন্মাতে পারে; source: citybeauty.info

মায়ের শরীরে যদি একবার অ্যান্টি-Rh উৎপন্ন হয়ে যায়, তাহলে Rh Immunoglobulin ইনজেকশন কোনো কাজে আসবে না। এটাই প্রথম চিকিৎসা, এর মাধ্যমে প্রতিহত করা মঙ্গলজনক। তাই স্বামী-স্ত্রীর রক্ত যদি এই পজিটিভ-নেগেটিভ কম্বিনেশনের হয়ে থাকে, তবে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।

দিন যতই যাবে, বিজ্ঞান নিত্য-নতুন পদ্ধতি উপহার দেবে আমাদের। একসময় এর সমাধান ছিলো না, সন্তান তীব্র জন্ডিসের কারণে জন্মের পর পরই মারা যেত কিংবা মায়ের গর্ভপাত হয়ে যেত। এখন সমাধান এসেছে এই জটিল রোগের। বলছি না যে, সমাধানগুলো কার্যকর নয়, যথেষ্ট কার্যকর। তবু ঝুঁকি ও কৃত্রিমতা থেকে বেরিয়ে এসে সমস্যাটি প্রতিরোধ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তথ্যসূত্র: E. Hall, John (2016). Textbook of Medical Physiology. Issue 13. p. 479-480

ফিচার ইমেজ- darkchildh.deviantart.com

Related Articles