হাজার হাজার বছর ধরে, মানুষ সিলেক্টিভ প্রজনন এবং ক্রস-প্রজননের মতো বিভিন্ন পরিবর্তন পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে আরও পছন্দসই বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশবৃদ্ধি করতে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম যুগের কৃষকরা বিভিন্ন রঙ, আকার এবং ব্যবহারসহ ভুট্টা জন্মানোর জন্য ক্রস-প্রজনন পদ্ধতি তৈরি করেছিল। আজকের স্ট্রবেরি উত্তর আমেরিকার একটি স্ট্রবেরি প্রজাতি এবং দক্ষিণ আমেরিকার একটি স্ট্রবেরি প্রজাতির মধ্যে একটি ক্রস। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রায়ই ট্র্যাডিশনাল প্রজননের সাথে একত্রে ব্যবহার করা হয় জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড উদ্ভিদের বিভিন্ন জাত তৈরি করতে।
আমরা আজ যে খাবার খাই, তার বেশিরভাগই ট্র্যাডিশনাল প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে গাছপালা এবং প্রাণী পরিবর্তনে অনেক সময় লাগতে পারে এবং খুব নির্দিষ্ট পরিবর্তন করা কঠিন। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরি করার পরে, আরও নির্দিষ্ট উপায়ে এবং অল্প সময়ের মধ্যে অনুরূপ পরিবর্তন করতে সক্ষম হন।
কীভাবে জিএমও তৈরি করা হয়?
জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম) বর্তমানে বেশ পরিচিত শব্দ হয়ে উঠেছে ভোক্তাদের মাঝে, এবং জনপ্রিয় বিভিন্ন মিডিয়াতে জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা খাবারের বর্ণনা করতে। এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে:
- জেনেটিক তথ্য বা জিন শনাক্ত করা যা একটি জীবকে (উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব) একটি পছন্দসই বৈশিষ্ট্য দান করে,
- বৈশিষ্ট্য আছে এমন জীব থেকে পছন্দসই তথ্য অনুলিপি করা,
- সেই তথ্য অন্য জীবের ডিএনএতে প্রবেশ করানো, এবং
- নতুন জীবের বৃদ্ধি।
একটি জিএমও প্ল্যান্ট তৈরির বিভিন্ন ধাপ
নিম্নলিখিত উদাহরণটি একটি জিএমও প্ল্যান্ট তৈরি করতে যে পদক্ষেপগুলো থাকে তার একটি সাধারণ ধারণা দিতে পারে। এই উদাহরণে ‘বিটি কর্ন’ নামক একধরনের পোকা-প্রতিরোধী ভুট্টা ব্যবহার করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, ভিন্ন ভিন্ন জিএমও উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব তৈরির প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে।
- শনাক্তকরণ
একটি জিএমও প্ল্যান্ট তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে শনাক্ত করেন যে তারা উদ্ভিদের কোন কোন বৈশিষ্ট্য রাখতে চান, যেমন- খরা, হার্বিসাইড বা পোকামাকড়ের প্রতিরোধ। তারপর তারা এমন একটি জীব (উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব) খুঁজে বের করেন যার জিনের মধ্যে ইতিমধ্যেই সেই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই উদাহরণে বিজ্ঞানীরা কীটনাশক স্প্রে করার প্রয়োজনীয়তা কমাতে পোকা-প্রতিরোধী ভুট্টা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তারা ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (বিটি) নামক একটি মাটির ব্যাকটেরিয়াতে একটি জিন শনাক্ত করেছেন, যা একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক তৈরি করে যা ট্র্যাডিশনাল এবং জৈব কৃষিতে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- অনুলিপি তৈরি
বিজ্ঞানীরা পছন্দসই বৈশিষ্ট্যের সাথে জিন খুঁজে পাওয়ার পর সেই জিনের অনুলিপি করেন। বিটি কর্নের জন্য তারা বিটি-তে উপস্থিত জিনের অনুলিপি করেছেন যা পোকা-প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য প্রদান করবে।
- প্রবেশ করানো
এরপর বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদের ডিএনএতে জিন ঢোকানোর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। ভুট্টা গাছের ডিএনএ-তে বিটি জিন ঢোকানোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা একে পোকামাকড় প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন। এই নতুন বৈশিষ্ট্য গাছটিতে বিদ্যমান অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
- বৃদ্ধি
ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীরা নতুন ভুট্টা গাছটি বৃদ্ধি করেন যাতে এটি পছন্দসই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন (পোকা প্রতিরোধ) হয়ে ওঠে। সফল হলে, বিজ্ঞানীরা প্রথমে গ্রীনহাউজে নতুন ভুট্টা উদ্ভিদের (এখন বিটি কর্ন বলা হয়, কারণ এতে ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস থেকে একটি জিন রয়েছে) বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারপরে বড় জমিতে পরীক্ষায় স্থানান্তর করার আগে ছোট ফিল্ড টেস্ট করে নেন। জিএমও উদ্ভিদ কৃষকদের কাছে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগে গভীরভাবে পর্যালোচনা এবং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। এজন্য একটি জিএমও প্ল্যান্ট বাজারে আনার পুরো প্রক্রিয়া বেশ কয়েক বছর সময় নেয়।
জিএমও ফসলের ভবিষ্যৎ
ইউএসডিএ-র মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩০ মিলিয়ন একর চাষ করা ফসলের জমির মধ্যে আনুমানিক ৪০% (১৭০ মিলিয়ন একর) বর্তমানে জিএমও ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত জিএমও ফসলের বর্তমান লাইনগুলো প্রাথমিকভাবে কৃষকদের উপকারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই জিএমও ফসলের উৎপাদনে খরচ কম (বার বার চাষের পরিবর্তে হার্বিসাইড প্রয়োগের মাধ্যমে আগাছা নিয়ন্ত্রণে শ্রমিক খরচ কম হয়) অথবা নির্দিষ্ট পোকামাকড় দ্বারা আক্রমণ থেকে রক্ষা করে উচ্চ ফলন আশা করা যায়। এই প্রযুক্তির লক্ষ্য প্রাথমিকভাবে প্রধান (বেশি জমিতে চাষ হয় এমন ফসল) ফসল, যেমন- ভুট্টা, সয়াবিন, তুলা এবং ক্যানোলা ইত্যাদির গুনগত মান বৃদ্ধি; যদিও ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৪টি জিএমও ফসল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। বায়োটেকনোলজি কোম্পানি, যারা এই জিএমও পণ্যগুলো তৈরি করেছে, তারা কৃষকদের কাছে বীজ বিক্রি করে এই প্রযুক্তিতে তাদের বিনিয়োগ থেকে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে। পূর্বোক্ত বাণিজ্যিক সুবিধার কারণে কৃষকরাও এই বীজ কেনার জন্য বেছে নিচ্ছে। ভোক্তা জনসাধারণ কৃষকদের দ্বারা জিএমও বীজ ব্যবহারের আর্থিক সুবিধাগুলো পুরোপুরি ভোগ করতে পারে না, কারণ খাদ্যের খরচের মধ্যে খামারভিত্তিক উৎপাদন খরচ ছাড়াও অন্যান্য অনেক খরচ রয়েছে। এই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা দৃষ্টান্তকে জিএমও ফসলের ‘প্রথম’ প্রজন্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পোকামাকড় প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য (বিশেষ করে বিটল এবং মথ জেনারার শস্য আক্রমণকারী পোকামাকড়) মার্কিন ফসলের জমিতে কীটনাশকের সামগ্রিক প্রয়োগ হ্রাস করেছে। এছাড়া হার্বিসাইড প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জিএমও ফসলের উপর খামার শিল্পের নির্ভরতা কৃষিতে হার্বিসাইডের ব্যবহার বাড়িয়েছে। সামগ্রিকভাবে, প্রথম প্রজন্মের জিএমও শস্য গ্রহণের ফলে সামগ্রিকভাবে কৃষিতে রাসায়নিক ব্যবহার সামান্য (এক গবেষণায় ৬%) বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি লক্ষ্য করা উচিত যে, মানবস্বাস্থ্যের উপর (উভয় ভোক্তা এবং কৃষি শ্রমিক উভয়েরই) বিভিন্ন শ্রেণীর রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত অনেক রাসায়নিক মানুষসহ পোকামাকড় এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্নায়ুকোষের ক্রিয়াকলাপের মৌলিক দিকগুলোকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, ভেষজনাশকগুলো সাধারণত উদ্ভিদের বিপাকের অনন্য প্রক্রিয়ার দুর্বলতার মাধ্যমে আগাছার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং এজন্যে এরা বিভিন্ন শ্রেণীর পোকামাকড়ের কীটনাশক থেকে প্রাণীদের জন্য যথেষ্ট কম বিষাক্ত।
এই প্রথম প্রজন্মের জিএমও ক্রপ প্ল্যান্টের সম্প্রসারণ বা পরিবর্তন এখন চলছে। জৈবপ্রযুক্তি সংস্থাগুলো এমন ফসলের উন্নয়ন করছে যেগুলোর ‘স্ট্যাকড’ বৈশিষ্ট্য রয়েছে (একাধিক জিনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফসলের রূপান্তরকে বোঝায়)। কিছু ক্ষেত্রে, হার্বিসাইড এবং পোকামাকড়ের প্রতিরোধ একই জিএমও লাইনে প্রকাশ করা হয়, যা কৃষকদের এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে একত্রিত করে ফসলের লাইন ব্যবহার করার বিকল্প সুযোগ দেয়। এটি একধরনের ‘স্ট্যাকিং’। আগাছা এবং পোকামাকড়ের পরবর্তিতে জিনগত প্রতিরোধের সমস্যা সমাধানের জন্যও স্ট্যাকিং ব্যবহার করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোকামাকড় এবং আগাছা প্রতিরোধী জিএমও ফসলের ব্যাপক গ্রহণ অনিবার্যভাবে আগাছা এবং পোকামাকড়ের মধ্যে জেনেটিক প্রতিরোধের বিকাশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করছে। বায়োটেকনোলজি কোম্পানিগুলো এমন জিএমও লাইন তৈরি করছে, যা জিনের মধ্যে বহু সংখ্যায় বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন তৈরি করে, যা এমন প্রোটিনকে এনকোড করে যা জিএমও প্ল্যান্টের ক্ষতিকর পোকামাকড় আক্রমণ করে। এটি পোকামাকড় দ্বারা জেনেটিক প্রতিরোধের বিকাশকে বিলম্বিত করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু সমস্যার অন্তর্নিহিত স্থায়িত্বের মৌলিক সমাধান করে না।
জিএমও শস্য উদ্ভিদের পরবর্তী বা ‘দ্বিতীয়’ প্রজন্মের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবর্তন করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ফসলের গাছের গুণমানের উন্নতি এবং পরিবর্তন। এটি বায়োটেকনোলজি শিল্পের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো থেকে পরিবর্তনের নিয়ে আসছে। এই গুণমান বলতে উৎপাদিত ফসলের দ্বারা প্রাপ্ত পুষ্টির পরিবর্তন/উন্নতিকে বোঝায়। উপরন্তু, জৈবপ্রযুক্তি শিল্পের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে জটিল বৈশিষ্ট্যগুলো (অর্থাৎ একাধিক জিন দ্বারা প্রভাবিত) মোকাবেলা করার প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ফসলের দক্ষতার সাথে বিভিন্ন উপাদানের (মাটি, পানি, নিউট্রিয়েন্ট ইত্যাদি) ব্যবহার করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে খরা সহনশীলতা (২০১১ সালে ভুট্টায় প্রবর্তিত) এবং নাইট্রোজেন-ব্যবহারের দক্ষতা। ২০১৭ সাল থেকে আমরা জিএমও ক্রপ লাইনের বাণিজ্যিক রিলিজ দেখতে শুরু করেছি, যা এই দ্বিতীয় প্রজন্মের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে একটি আলফালফা জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে যা লিগনিনকে হ্রাস করেছে এবং এভাবে পশুদের হজম ক্ষমতা উন্নত করেছে। পেঁপের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক দশক আগে জিএমও প্রযুক্তির প্রথম প্রয়োগগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
যা-ই হোক, প্রধান রোগের রোগজীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে শস্য উদ্ভিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করার জন্য জিএমও প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রকৌশলী প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন শস্য উদ্ভিদের তালিকা প্রসারিত হচ্ছে, এবং এতে আলু, বরই এবং স্কোয়াশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউএসডিএ সম্প্রতি আলুর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক জাত অনুমোদন করেছে যা চাষকৃত আলু সম্পর্কিত একটি বন্য প্রজাতি থেকে একটি জিন বহন করে, যা ছত্রাকজনিত রোগের লেট ব্লাইটের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ১৯ শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয় আলুর দুর্ভিক্ষের পর থেকে এটি আলুর সুপরিচিত এক রোগ। এটা আশা করা যেতে পারে যে, রোগ প্রতিরোধের জন্য উদ্ভাবিত শস্য উদ্ভিদের প্রজাতির পরিসর ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও, জিএমও ক্রপ প্ল্যান্টের সাম্প্রতিক গবেষণার মধ্যে রয়েছে ক্যানোলা এবং সয়াবিনের তেল প্রোফাইলে পরিবর্তন করা, যাতে খাদ্যপণ্যে ট্রান্স-ফ্যাট (প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় উৎপন্ন হয়), এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায় (সয়াবিনের ক্ষেত্রে)। নন-ব্রাউনিং আপেল এবং আলু (শিপিং লস কমানো) সম্প্রতি বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলুর বৃহত্তম প্রসেসরগুলোর মধ্যে একটি নন-ব্রাউনিং আলু তৈরি করেছে; মার্কিন জিএমও শস্য শিল্পে এক নতুন দৃষ্টান্ত।
গুরুত্বপূর্ণ ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদনের জন্য উদ্ভিদকে ‘বায়োফ্যাক্টরি’ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি এবং উদ্ভিদের জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যান্য উদ্ভাবনী প্রয়োগকে কেউ কেউ জিএমও প্রযুক্তি বিকাশের তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে বিবেচনা করেন। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই প্রয়োগ কতটা গৃহীত হবে তা স্পষ্ট নয়। বায়োটেকনোলজির এই উদ্ভাবনী ফ্রন্টে কিছু সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে। এমনই একটি ক্ষেত্রে, একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি দ্বারা উদ্ভিদে মানব প্রোটিনের উৎপাদন সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ এবং ধারণ করা হয়নি। সমস্যাটি মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকির সমস্যা ছিল না, বরং তা ছিল কোম্পানিটির পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিবেদনের জন্য সম্মত প্রোটোকল অনুসরণ না করা। অন্যদিকে, উদ্ভিদে উৎপাদিত মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ইবোলা ভাইরাস থেকে সংক্রমিত চিকিৎসকদের বাঁচানোর গল্প প্রকাশ করে। অনুন্নত দেশগুলোর লোকেদের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জিএমও ফসলের বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে, এই পুষ্টি তৈরির জন্য তৈরি করা ‘গোল্ডেন রাইস’ মানবদেহের উপর ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত অন্ধত্ব এবং মৃত্যুর (প্রায় প্রতি বছর এক মিলিয়ন) মতো প্রভাব কমাতে পারে। উদ্ভিদ জিএমও ব্যবহারের এই উদ্ভাবনী প্রয়োগগুলো অবশ্যই ভবিষ্যতের উন্নয়নের একটি ক্ষেত্র হতে পারে।