Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির প্রথম পাঠ: অদেখা গ্যালাক্সির পেছনে ছোটা

ডক্টর নাতাশা হার্লে ওয়াকার একজন খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদ (কারটেন র্বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া)। তার প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যা পঞ্চাশোর্ধ এবং সাইটেশন সাড়ে চার হাজারেরও বেশি। ২০১৭ সালে তিনি টেড টকে একটা চমৎকার বক্তব্য রেখেছিলেন তার সদ্য উদ্ভাবিত মহাকাশ পর্যবেক্ষণের একটি পদ্ধতি নিয়ে। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি মহাকাশ পর্যবেক্ষণে একটা নতুন ধারার সূচনা করে। সেই অনবদ্য বক্তব্যেরই অনুবাদ এটি।

বক্তব্য দিচ্ছেন ডক্টর নাতাশা হার্লে ওয়াকার; Image: Ted

“মহাশূন্য, অগ্রগতির চূড়ান্ত শিখর”

আমি যখন এই কথাগুলো শুনেছিলাম তখন আমি মাত্র ছ’বছরের একটা মেয়ে এবং আমার মাঝে যে রোমাঞ্চ-উৎসাহ ভর করেছিল সেটা বলে বোঝাবার নয়। আমি বেরিয়ে পড়তে চাইতাম অজানা বিশ্বের খোঁজে। চাইতাম একেবারে নতুন ধরনের প্রাণের সন্ধান পেতে। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আমাদের যা কিছু দেখার সুযোগ দিচ্ছে তার সবটা একেবারেই দেখতে চাইতাম। এই বাঁধনহারা স্বপ্নগুলোই আমাকে স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় টেনে এনেছে, আমাকে পিএইচডি সম্পন্ন করতে প্রেরণা জুগিয়েছে আর শেষমেষ আমাকে একজন পুরোদস্তুর জ্যোতির্বিজ্ঞানী করে তুলেছে।

এতদূর আসার পরে আমি দুটি দারুণ জিনিস জানলাম, যার মধ্যে একটা অবশ্য খানিকটা দূর্ভাগ্যেরই বলা চলে। প্রথমত, আমি যখন পিএইচডি করছিলাম তখন বুঝলাম যে খুব শিগগিরই কোনো মহাকাশযানে চড়ে মহাবিশ্ব ভ্রমণের আমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে পারব না। আর দ্বিতীয়ত আমি এটাও জানলাম যে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বড়ই অদ্ভুত, ঐশ্বর্যময় আর বিশাল। আদতে এতটাই বিশাল যে সহসাই কোনো মহাকাশযান দিয়ে পুরোটা ঘুরে দেখা হয়ে উঠবে না। তাই আমি পূর্ণ মনোযোগ দিলাম জ্যোতির্বিজ্ঞানে। পুনরায় ব্যাস্ত হয়ে উঠলাম টেলিস্কোপ নিয়ে নাড়াচড়ায়।

এখন আপনাদের একটা রাতের আকাশের ছবি দেখাই, এই ছবি আপনারা অবশ্য প্রতিদিনই দেখেন। এই নক্ষত্রগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটা ছোট্ট অংশ। আপনি যদি মরুভূমি বা এরকম খুব শান্ত কোথাও যান তাহলে হয়তো আপনারা আরো বেশি কিছু দেখতে পাবেন। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র আপনার সামনে দৃশ্যমান হবে, বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের টিমটিমে আলো আপনার চোখে আসবে।

মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগ; Image: NASA

এই দৃশ্য ভূবনমোহিনী, কিন্ত যা-ই হোক এটাও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সামান্যতম একটা অংশ। এই ছবিতে দেখুন, কিছু অংশ অস্পষ্ট, যেটার কারণ ডাস্ট (মহাজাগতিক ধূলিকণা, বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ, যা আলোকে স্তিমিত-বাঁধাগ্রস্থ করে)। কিন্ত তাও আমরা আমাদের খালি চোঁখেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটা অংশ দেখতে পাই, এও বা কম কীসে? এর চেয়েও ভালো দেখা সম্ভব। আমরা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মতো দারুণ জিনিস ব্যবহার করতে পারি। এখন আরেকটা ছবি দেখি আমরা, এটাকে বলে ‘হাবল ডিপ ফিল্ড’।

হাবল ডিপ ফিল্ড; Image: ESA

এটা বানাতে জ্যোতির্বিদরা অনেক লম্বা সময় নিয়েছিলেন, এবং এটা কিন্ত আকাশের খুবই ছোট একটা অংশের ছবি। বলতে পারেন পুরো আকাশের আকারের সাপেক্ষে আকারটা আপনার হাতের নখের সমান হতে পারে। কিন্ত এতটুকুতেই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হাজার হাজার গ্যালাক্সি। আমরা এখন জানি, গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। কিছু গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কি ওয়ের মতো, আবার কতগুলো আমাদেরটার চেয়ে একদমই ভিন্ন রকম। আপনি যদি ভাবেন যে ঠিক আছে আমি শক্তিশালী আরো টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশে আমাদের খোঁজাখুজি চালু রাখব, এতে একটা সমস্যা আছে। এতক্ষণ আমি যা বললাম তার পুরোটাই দৃশ্যমান বর্ণালীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মানে যতটুকু আসলে আমরা দেখতে পাই। আমরা সম্পূর্ণ তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালীর খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র দেখতে পাই। বলা যায় এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বেশিরভাগ জিনিসই আমরা দেখতে পাই না, আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতার কারণে।

তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের পাল্লা; Image: accentsconagua.com

আর দৃশ্যমান বর্ণালী বা দৃশ্যমান আলোতে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে দুটো সমস্যা আছে। প্রথমটা তো বললামই, ডাস্ট। ডাস্ট আমাদেরকে দৃশ্যমান বর্ণালী বা দৃশ্যমান আলোকে বাঁধা দেয় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে। আমরা মহাকাশের যত গভীরে তাকানোর চেষ্টা করি, আলো ততটাই স্তিমিত হয়ে আসে ডাস্টের কারণে। ডাস্ট ছাড়াও মহাকাশ পর্যবেক্ষণে দৃশ্যমান আলোর আরো একটি সত্যিই অদ্ভুত সমস্যা রয়েছে।

শান্তভাবে একটু ভাবুন, ভাবুন একটা ব্যাস্ত রাস্তার এককোণে দাঁড়িয়ে আছেন, হঠাৎ একটা অ্যাম্বুলেন্স আসলো। যত কাছে আসছে আপনি ওটার সাইরেন তত তীব্রভাবে শুনতে পাচ্ছেন। আবার সেটা যত আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আপনার কাছে সাইরেনটার শব্দের তীব্রতা ততই কমছে। এখন অ্যাম্বুলেন্সটার ড্রাইভার কিন্ত আপনাকে দেখে সাইরেনের আওয়াজ কমবেশি করেনি, এটা সম্পূর্ণই আপনার নিজস্ব অনুভূতির ফলাফল বা আপনার কাছেই এমনটা লেগেছে।

প্রকৃতপক্ষে অ্যাম্বুলেন্সটি আপনার দিকে এগোচ্ছিল আর সাইরেন থেকে নির্গত শব্দ তরঙ্গ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল এবং আপনার কাছে শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। আর যখন অ্যাম্বুলেন্স আপনার থেকে দূরে সরছিল তখন শব্দ তরঙ্গ ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছিল এবং আপনার কাছে শব্দের তীব্রতা ক্রমশ কমে আসছিল। অ্যাম্বুলেন্সের মতো একই রকম সংকোচন প্রসারণের ঘটনা ঘটে দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গের ক্ষেত্রেও। কোনো বস্তু যখন আমাদের দিকে অগ্রসর হয় তখন তাদের থেকে নির্গত আলোক তরঙ্গের সংকোচন ঘটে এবং বস্তুটি ক্রমশ নীলবর্ণে দৃশ্যমান হয়। আর ক্রমাগত দূরে সরতে থাকলে আলোক তরঙ্গ প্রসারিত হতে থাকে এবং বস্তুটি ক্রমশ লাল বর্ণ ধারণ করতে থাকে বা লালরঙে দৃশ্যমান হয়। এই ঘটনাগুলোকে আমরা বলি ব্লু-শিফট এবং রেড-শিফট।

ব্লুশিফট ও রেড শিফট; Image: Slide Player

 

মহাবিশ্ব সদা সম্প্রসারণশীল, তাই গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরছে, যার মানে হলো সবকিছু আমাদের কাছে ধীরে ধীরে লাল বর্ণের হয়ে উঠছে। আমরা মহাকাশের যত গভীরে দৃষ্টি দেই, দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো ততই দ্রুতগতিতে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং ক্রমশ লাল থেকে গাঢ় লাল রঙে দৃশ্যমান হচ্ছে। আমরা হাবল টেলিস্কোপে যত দূরে দেখছি ততই গ্যালাক্সিগুলো লাল রঙে দৃশ্যমান হচ্ছে এবং একটা দূরত্বের পরে আমরা আর দেখতেই পাই না, কারণ দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর নির্গত আলোক তরঙ্গগুলো এত বেশি প্রসারিত হয়ে পড়ে যে দৃশ্যমান আলোতে তাদের আর দেখা যায় না। আলোক তরঙ্গ এখানে দৃশ্যমান বর্ণালী থেকে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোর সীমায় প্রবেশ করে।

তো, এখন উপায় কী? ব্রহ্মাণ্ডের পরিভ্রমণে রেডশিফটের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে এতটুকুতেই থেমে যাব? না, একটা উপায় আছে। যাকে বলে রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি (রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান)। কয়েক যুগ ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতির ব্যবহার করে আসছেন। এটা একটা দারুণ পদ্ধতি। পার্কস রেডিও টেলিস্কোপের দিকে একটু দৃষ্টি দিন, এটাকে আমরা ‘দ্য ডিশ’ও বলে থাকি।

পার্কস রেডিও টেলিস্কোপ; Image: CSIRO

রেডিও তরঙ্গ সত্যিই দারুণ। এটা আমাদের আরো সুসংহত পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে। আর এটা ডাস্ট দ্বারা প্রভাবিত হয় না, ডাস্ট ভেদ করে চলে আসতে পারে। যার ফলে আমরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার সুযোগ লাভ করি। আর রেড শিফটও এখানে তেমন সমস্যা নয়, কারণ আমরা এমন রিসিভার বা অ্যান্টেনা বানাতে সক্ষম যেটা অনেক বড় রেঞ্জের তরঙ্গ শোষণ বা রিসিভ করতে পারে।

তাহলে পার্কস টেলিস্কোপে আমরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কেমন দৃশ্য দেখব? আমাদের নিশ্চয়ই নতুন কিছু দেখতে পাবার কথা? আসলে আমরা নতুন কিছুই দেখেছি পার্কস টেলিস্কোপ থেকে নেওয়া ছবিতে। একটু আগেই বললাম রেডিও তরঙ্গ ডাস্টকে ভেদ করতে পারে, তাই ডাস্ট এখানে আর সমস্যা না। কিন্ত দৃশ্যটা একদমই ভিন্ন। এই ছবিতে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে একটা উজ্জ্বল আলোচ্ছটা আমাদের সামনে আবির্ভূত হল।

পার্ক টেলিস্কোপে তোলা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের ছবি; Image: taken from the lecture/Ted

এই আলোকচ্ছটা বা উজ্জ্বল আলো কিন্ত কোনো নক্ষত্রের নয়। এই আলো হলো সিংক্রোটন রেডিয়েশন যেটা ইলেকট্রনের মহাজাগতিক চৌম্বকক্ষেত্রের চারপাশে বিচরণ করার সময় যে শক্তি বিকিরণ করে তার থেকে সৃষ্ট। খালি চোঁখে আমরা যা দেখি তার সাথে এই ছবির কোনো মিলই নেই। এই ছবি থেকে যে আমরা অনেক নতুন কিছু সহজে বুঝে উঠতে পারি তাও না, কারণ ছবিটার রেজুলেশন হয় খুবই নিম্নমানের। রেডিও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক বেশি এজন্য ছবির যে রেজ্যুলেশন সেটার মান ভালো হয় না। আরো একটা সমস্যা হলো ছবিটা হয় সাদাকালো, তাই আমরা এটাও বুঝতে ব্যর্থ হই যে আসলে যে বস্তুগুলো আমরা দেখছি সেটার রং আসলে কেমন।

বর্তমানে আমরা এমন রেডিও টেলিস্কোপ নির্মাণে সক্ষম যেখানে আমরা এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি। এই ছবিটা মার্চেনসন রেডিও অবজারভেটরির, রেডিও টেলিস্কোপ বানানোর জন্য জায়গাটি আদর্শ।

মার্চেনসন রেডিও অবজারভেটরি; Image: taken from the lecture/Ted

এটা একেবারেই সমতল ও শুষ্ক। আর যেটা গুরুত্বপূর্ণ, জায়গাটি সম্পূর্ণ ‘রেডিও নিস্তব্ধ’ (Radio Quite)। কোন মোবাইল, ওয়াইফাই কিচ্ছু না, একদম পুরোপুরি রেডিও নিস্তব্ধতা, একেবারে সঠিক স্থান রেডিও টেলিস্কোপ বসানোর জন্য। আমি গত কয়েকবছর ধরে যে টেলিস্কোপ নিয়ে কাজ করছি সেটার নাম ‘মার্চেনসন ওয়াইড ফিল্ড অ্যারে’।

মার্চেনসন রেডিও অবজারভেটরির সারিবদ্ধ অ্যান্টেনা; Image: Ted

এটা মূলত অনেকগুলো ছোট ছোট অ্যান্টেনার সহযোগে তৈরি এবং এর সার্বিক ব্যাপ্তি প্রায় দশ কিলোমিটারের মতো। অ্যান্টেনাগুলো অনেকটাই টিভি বা এফএম রেডিওর মতো, কেবল সংখ্যাতেই অনেক। সবগুলো অ্যান্টেনা থেকে সংগৃহীত তরঙ্গ বর্ণালী একটা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটে প্রেরণ করা হয়। যেহেতু এই মার্চেনসন ফিল্ড অ্যারের ব্যাপ্তি পার্কস টেলিস্কোপের চেয়ে অনেক বেশি তাই আমরা পার্কস টেলিস্কোপের চেয়ে অনেক পরিষ্কার বা ভালো রেজ্যুলেশনের ছবি পাই।যাহোক সব ডেটা অ্যান্টেনা, ক্যাবল, প্রসেসিং ইউনিট ঘুরে পার্থে (অস্ট্রেলিয়ার একটি শহর) সুপারকম্পিউটারে পৌঁছায়। আর এখান থেকেই আমার প্রধান কাজটা শুরু হয়।

রেডিও ডাটা, আমি গত পাঁচ বছর একইসাথে জটিল ও কৌতূহলোদ্দীপক এই ডেটা নিয়ে কাজ করেছি যেটা আমার আগে আর কারো করার সুযোগ হয়নি। একটা লম্বা সময় আমি কাটিয়েছি এসব ডেটা ক্রমাঙ্কণ (ক্যালিব্রেট) করে। সুপারকম্পিউটারে ডেটাগুলো ক্রমাগত চালিয়ে দেখেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। এই টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া ডেটা দিয়ে আমরা পুরো দক্ষিণ আকাশের (তাদের সাপেক্ষে) একটা পূর্ণাঙ্গ সার্ভে (the Galactic and Extragalactic All-sky MWA Survey) করতে সক্ষম হয়েছি যেটাকে আমি বলি GLEAM।

Image: inverse.com

পেপারটা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশিত হবে (হয়েছে), এখনো এই ছবিটি কেউ দেখেনি তাই আপনারাই মূলত প্রথম যারা এটা দেখবেন, আমি খুব আনন্দিত আপনাদের সাথে কয়েকটি ছবি শেয়ার করতে পেরে।

Credit: Dr Natasha Hurley-Walker (ICRAR/Curtin) and the GLEAM Team

ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন যে আগের মতো আর সাদাকালো, অন্ধকারাচ্ছন্ন কম রেজ্যুলেশনের ছবি নেই। সিংক্রোটন রেডিয়েশনের উজ্জল ছবি এবং হাজার হাজার বিন্দু ছবি আকাশজুড়ে। আমাদের মেজেলানিক ক্লাউড, আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সিগুলো সবই কমলা রঙে ফুটে উঠেছে, যেটা সাধারণ দৃশ্যমান আলোক বর্ণালীতে আমরা সাদাটে-নীল বর্ণের দেখি।

GLEAM ভিউতে দেখতেই পাচ্ছেন রেজ্যুলেশন অন্তত একশো গুণ বেড়েছে, সাদাকালো ছবির বদলে রঙিন ছবি। এটা টেকনিকালার (কোনো জিনিসের রং কেমন হবে সেটা নির্ধারণের একটা পদ্ধতিকে বলে টেকনিকালার)। মানে এই ছবিটা ছদ্ম-রঙিন এমন কিছু নয়। এগুলো সত্যিকারের রেডিও কালার। আমরা যেটা করেছি, সবচেয়ে কম ফ্রিকুয়েন্সির তরঙ্গকে লাল আর সবচেয়ে বেশি ফ্রিকুয়েন্সিগুলোকে নীল রং করেছি এবং মাঝারি মানের ফ্রিকুয়েন্সিকে সবুজ রঙে রাঙিয়েছি। রং ঠিক করার পরেই আমরা এ রকম রঙিন ছবি পেয়েছি। মাঝের লাল রঙা সিংক্রোটন রেডিয়েশনের দিকে নজর দিলে আমরা বেশকিছু ছোট ছোট বিন্দু দেখি। জুম করলে দেখতে পাই যে এই নীল বিন্দুগুলো আসলে খুব উজ্জ্বল নক্ষত্রকে ঘিরে থাকা আয়নিত প্লাজমা যারা লাল আলোকে বাঁধা দেয়, তাই নীল দেখায়। আর এরা আমাদের গ্যালাক্সির কোথায় কোথায় নক্ষত্র জন্ম প্রক্রিয়া চলছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে দেখাতে সক্ষম।

সুপারনোভার অবশেষ; Image: Ted

সাবানের বুদবুদের মতো যা দেখছেন, গ্যালাক্টিক প্লেনে ওই যে ছোট গোলাকার প্রতিচ্ছবি সেগুলো হলো সুপারনোভা র‍্যামনেন্ট বা সুপারনোভা বিষ্ফোরণের পর ছড়িয়ে পড়া নানা পদার্থ যেগুলো পরে একটা গোলাকার শেল তৈরি করে। এটা এতদিন একটা রহস্য ছিল যে সুপারনোভা র‍্যামনেন্ট বা অবশিষ্টাংশগুলো যায় কোথায়। এখন আমাদের ধারণা ওই যে সিংক্রোটন রেডিয়েশনে যে ইলেকট্রনগুলো আছে সেগুলোর সম্ভবত যোগান আসে সুপারনোভার র‍্যামনেন্ট থেকেই। GLEAM ভিউ সুপারনোভা ডিটেকশন করতে পারে খুব দ্রুত, তাই আশা করছি এই ব্যাপারে আমরা আরেকটা গবেষণাপত্র শেষ করব।

আমি এতটুকুতে ক্ষান্ত হলাম না, আমাদের লোকাল ইউনিভার্স ছেড়ে আরেকটু গভীরে, এই মিল্কিওয়ে থেকে দূরে দৃষ্টি দিতে চাইলাম। দেখা গেল এই ছবিতেই উপরে ডানে একটা রেডিও গ্যালাক্সি দেখতে পেলাম। এটার নাম সেন্টরাস এ (Centaurus A), যদি একটু জ্যুম করে দেখি তাহলে পাশাপাশি দুটো প্রকাণ্ড প্রজ্বলিত গ্যাসপিণ্ড মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়, আর এর মাঝে একটা ঠিক আমাদের মতোই আরেকটা গ্যালাক্সি, এই গ্যালাক্সিটাও আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতো স্পাইরাল (সর্পিলাকার) এবং এর একটা বিশাল জেট রয়েছে (কোন গ্যালাক্সির ঠিক মাঝ বরাবর একটা সরু অংশ দিয়ে বেরিয়ে আসা মহাজাগতিক কণার ফোয়ারা) যেটা দৃশ্যমান আলোতে আমরা কোনদিনই দেখতে পাইনি। এটার পরিব্যাপ্তি এর গ্যালাক্সি চেয়েও বড়।

Image: Ted

তাহলে এখানে হচ্ছে কী? এই জেটের উৎপত্তির কারণ কী? আমরা জানি প্রতিটা গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই একটা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থাকে, এবং ছবিতে দেখছেন যে আলোর পথবিচ্যুতি ঘটছে একে ঘিরে। যখন কোনো নক্ষত্র বা গ্যাসপিণ্ড এর ব্ল্যাক হোলের প্রভাব বলয়ের কাছাকাছি চলে আসে, তখন টাইডাল ফোর্সের প্রভাবে এরা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে এবং তখন যে কাঠামোটা তৈরি হয় সেটাকে বলে অ্যাক্রিডেশন ডিস্ক। এই অ্যাক্রিডেশন ডিস্ক সবচেয়ে স্পষ্ট ফুটে উঠে এক্স রে’র তরঙ্গদৈর্ঘের আলোকে। এবং এই অ্যাক্রিডেশন ডিস্ক থেকেই পদার্থগুলো (ভগ্নাংশ) ব্ল্যাক হোল তার চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে প্রায় আলোর গতিতে নিক্ষেপ করতে থাকে। জেটগুলো রেডিও তরঙ্গের আলোতে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

Source: NASA/Goddard Space Flight Centre

তাহলে এই ছবিতে অন্য ডটগুলো কী? এগুলো প্রত্যেকটাই একেকটা রেডিও গ্যালাক্সি। এদের প্রত্যেকের কেন্দ্রেই একেকটা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। এবং যখন আমরা জুম করে দেখেছি তখন এমন তিন লক্ষাধিক গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছি। যেটা দৃশ্যমান আলোতে দেখা হয়তো সম্ভব হতো না।

Image: Ted

এখানেই আমি থামতে চাই না। আমি দেখতে চাই সৃষ্টির শুরুটা, একেবারে বিগ ব্যাং থেকে। বিগ ব্যাং নিউট্রাল হাইড্রোজেনের সৃষ্টির সূচনা করেছিল, পরে যখন প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্র বা গ্যালাক্সি জন্ম নিল তারা তখন নিউট্রাল হাইড্রোজেন থেকে আয়োনাইজড হাইড্রোজেনের জন্ম দিল অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ড নিউট্রাল থেকে আয়োনাইজড অবস্থায় রূপ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সময়েও কিন্ত শক্তি বা সিগন্যাল নির্গত হয়েছিল, যা সবখানেই আছে কিন্ত এত দূর্বল যে সময়ের পরিক্রমায় রেডশিফটেড হয়ে গেছে।

আমার বর্তমান রেডিও টেলিস্কোপ সেটা নিরূপণ করার পর্যায়ে পৌছায়নি, কিন্তু আমার বিশ্বাস একদিন হবে। আমার মহাকাশযান নেই, কিন্ত আমি একদিন এই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ বানাব (স্কোয়ার কিলোমিটার অ্যারে) যেটা এখনকারটার চেয়েও হাজার গুণ বিশালাকার এবং সুবেদী হবে। আমি আরো ভালো রেজ্যুলেশনের ছবি পাব, আরো কোটি কোটি গ্যালাক্সির সন্ধান পাব, আর তাদের মাঝেই হয়তো আমি খুঁজে পাব সময়ের একদম শুরুতে, প্রথম গড়া গ্যালাক্সিকে কিংবা প্রথম জ্বলে ওঠা নক্ষত্রদের অবশেষকে।

সবাইকে ধন্যবাদ।

This Bangla article is a translation of Dr. Natasha Hurley-Walkers' speech 'How radio telescopes show us unseen galaxies' given at TEDxPerth. Natasha Hurley-Walker uses novel radio telescopes to explore the universe at some of the longest wavelengths of light. 

References:

1. https://www.ted.com/talks/natasha_hurley_walker_how_radio_telescopes_show_us_unseen_galaxies

2. Wayth, R.B., Lenc, E., Bell, M.E., Callingham, J.R., Dwarakanath, K.S., Franzen, T.M.O., Gaensler, Hancock, P., Hindson, L., Hurley-Walker, N. and Jackson, C.A., 2015. GLEAM: the galactic and extragalactic all-sky MWA survey. Publications of the Astronomical Society of Australia, 32.

Featured Image: ABC

Related Articles