মাথা গোঁজার ঠাই
বাসস্থানকে কেন বেঁচে থাকার জন্য একটি অপরিহার্য মৌলিক উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়? প্রশ্নটা ছুঁড়লাম এজন্যে যে ছোটবেলা থেকে বাঁচবার জন্য অপরিহার্য এমন পাঁচটি মৌলিক অধিকারের নাম শুনে এসেছি আমরা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা (এখানে আমাদের ধারণায় একটু ভুল আছে। এ পাঁচটি জিনিস আমাদের বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণ হতে পারে বড়জোর; ‘অধিকার’ নয়। অন্তত বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের তাই বলে। যদি কেউ বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় পরিচ্ছেদের ২৬ থেকে ৪৪ নং অনুচ্ছেদ দেখে থাকেন তবে নিঃসন্দেহে বলতে পারবেন উল্লেখিত পাঁচটি জিনিস কোনোটিই সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞায় পড়ে না)।
খাদ্য ও চিকিৎসা সরাসরি মানুষের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত। এ দুটি জিনিস যদি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্যে সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে গণহারে মানুষ মৃত্যুবরণ করতে থাকবে যা কোনো রাষ্ট্রের জন্যে কখনোই কল্যাণকর কিছু হতে পারে না। বস্ত্রের চাহিদা পূরণ না হলে বর্তমান সভ্যতার মাপকাঠিতে একজন মানুষ ‘বর্বর’ হিসেবে পরিগণিত হবেন। শিক্ষা না থাকলে একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্য প্রকট আকার ধারণ করতে বাধ্য। এ চারটি জিনিসের সাথে একই সারিতে যদি বাসস্থানকে দাঁড় করানো হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে- একটি সুনির্দিষ্ট মাথা গোঁজার ঠাই যেখানে হয়তো প্রতিদিন কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এসে একজন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত জীবনসৈনিক চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প করবেন আর সারাদিনের ব্যস্ততা ঝেড়ে ফেলবেন। যেখানে হয়তো তিনি রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মাথার উপর একটা কনক্রিট ছাদ পাবেন আর চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে আবদ্ধ রেখে জাগতিক কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে নিজের ব্যাষ্টিক জগতকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করবেন। এমন একটি ঠাই কি মানব জীবনের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তা অন্য চারটি মৌলিক উপকরণের সাথে তুলনীয় হবার যোগ্যতা রাখে?
উত্তর খুঁজতে হলে দেখে আসা যাক আন্তর্জাতিকভাবে বাসস্থানের অধিকারকে কীভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ঘোষিত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়-
“প্রত্যেকের নিজের ও তার পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গলের জন্য সমুচিত মানের জীবনধারণের অধিকার রয়েছে, যাতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবাসমূহ অন্তর্ভুক্ত হবে, এবং সেই সাথে বেকারত্ব, অসুস্থতা, বিকলত্ব, বৈধব্য, বার্ধক্য এবং তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা পরিস্থিতিতে জীবিকার ঘাটতির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাবার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত হবে।”
এছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্রের (আইসিইএসসিআর) (১৯৬৬) ১১(১) অনুচ্ছেদে বাসস্থানের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
আসলে মানুষের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মানসম্পন্ন থাকার জায়গা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বিচার করতে হলে আমাদের পুরো ব্যাপারটাকে একটু অন্য চোখে দেখতে হবে। হ্যাঁ এটা নিঃসন্দেহে স্বীকার করছি এর অভাবে অন্তত কেউ ঐ মূহুর্তেই মৃত্যুবরণ বা শারীরিক অন্য কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না। তবে এর সাথে আরো কিছু ব্যাপার যুক্ত আছে। একজন মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত মানুষের কাছে এর মূল্য যতটুকু; পদ্মার স্রোতে ভিটে-মাটি হারিয়ে ঢাকায় ভাসমান জনগোষ্ঠীর একজন হয়ে ঘুরে বেড়ানো কোনো মানুষ কিংবা আন্তর্জাতিক একটি দাঙ্গার বলি হয়ে পরদেশে আশ্রয়প্রার্থী কোনো উদ্বাস্তুর কাছে সেই মানসম্পন্ন একটি বাসস্থানের গুরুত্ব ঢের বেশি।
এটা শুধু বাহ্যিকভাবে একজনকে সামাজিক দিক থেকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্নই করে না বরং সাথে সাথে তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে থাকে। যেমনঃ ঢাকা শহরের অধিকাংশ বস্তিতেই বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। আমরা দালানকোঠায় থাকতে থাকতে অনেক সময়ই ভুলে যাই শুধুমাত্র এ রকম উন্নতমানের বাসস্থান ও পরিবেশে থাকার সুযোগ পেয়েছি বলেই আমাদের বাসায় প্রতিদিন ঢাকা ওয়াসার পরিশোধিত পানি আসে। যে পানি বিশুদ্ধ করতে হয়তো সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। যে পানি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে হয়তো শত কষ্ট সহ্য করে সরকারি কোনো পানির এটিএম বা অন্য কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
অথচ বস্তির সেই মানুষগুলো প্রতি স্কয়ার ফুটে বিত্তবানদের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া প্রদান করে। পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই মানুষ সেই উৎস থেকেই খাবার পানি সংগ্রহ করে যেখানে হয়তো তাদের পয়ঃবর্জ্য পতিত হয়। এ মানুষগুলোর কাছে একটি মানসম্পন্ন থাকার জায়গার গুরুত্ব অনেক বেশি। আর এটা শুধু তাদের জন্য প্রয়োজনীয়ই নয়, এটা পাওয়া তাদের অধিকারও বটে।
খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করা আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু মানুষদের জন্যেও একটি মানসম্পন্ন আবাসন নিশ্চিত করার কথা বলেছে জাতিসংঘ। ১৯৫১ সালের ২৮ জুলাই আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তুদের অবস্থা সম্পর্কে আয়োজিত এক সম্মেলনে চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রসমূহকে উদ্বাস্তুদের জন্য যথাযথ আবাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। বাংলাদেশে যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রথম আশ্রয় নিতে শুরু করে তখন তাদের বাসস্থানগুলোতে প্রয়োজনীয় পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে অনেক দাতব্য সংস্থাই এগিয়ে এসেছিল।
মানুষের বেঁচে থাকার সাথে মানসম্পন্ন আবাসনের সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে পরোক্ষভাবে এটি যে আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। আধুনিক আবাসন ব্যবস্থার মূল চ্যালেঞ্জটি হলো পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বসবাসযোগ্য জায়গার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। একবিংশ শতকে এসে কীভাবে এ জটিলতা মোকাবিলা করছে বর্তমান বিশ্ব? মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আবাসন সমস্যার সাথে অভিযোজিতই বা হচ্ছে কী করে?
গল্পের শুরু
যদি প্রশ্ন আসে, সভ্যতার সূচনাকে কীভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে? বা কোন মাপকাঠির ভিত্তিতে বলা হবে যে এ মূহুর্ত থেকেই মানব সভ্যতার সূচনা ঘটেছে? এর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবে আলোচনার খাতিরে এক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছি যখন থেকে মানুষ স্থায়ীভাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই সভ্যতা সূচিত হয়েছে। মানুষ বলতে কিন্তু এখানে সাধারণ মানুষের কথা বোঝানো হচ্ছে। কোন রাজা বাদশাহ কখন থেকে তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে একটি কেল্লা বানিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেছে তা এ আলোচনার গণ্ডির বাইরে।
আমাদের একটি জিনিসের প্রতি তীক্ষ্ণভাবে নজর দেয়া জরুরি, প্রাচীন সভ্যতায় পুরকৌশলীয় উদাহরণ দিতে গেলে আমরা সবসময় কিছু উচ্চমার্গীয় ও অভিজাত স্থাপনার নাম তুলে আনি। এগুলো হয়তো ব্যবহার করতেন সেসময়কার রাজপরিবার কিংবা অতি ধনবান কিছু ব্যক্তি, যারা এক্ষেত্রে সংখ্যালঘিষ্ঠ। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করি, জনসাধারণ বা আমজনতা কখন থেকে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় বসবাসের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে? তাদের বাসস্থানের স্বরূপই বা কেমন ছিল?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস পরিচালিত একটি গবেষণা মতে, কৃষির আবিষ্কারের অনেক আগে শিকার সংগ্রহকারীরা তুলনামূলক স্থায়ী বাসস্থানে থাকতে শুরু করে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে। প্রশ্ন হলো, এত আগের ঘটনা থেকে কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এই সময় থেকেই মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে? গবেষক দল তখন খুব চমকপ্রদ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে। আমরা জানি, যদি কোনো জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষ বসবাস করতে থাকে তবে সেখানে গৃহভিত্তিক বিভিন্ন প্রাণী বসবাস শুরু করে, বিশেষত ইদুর।
গবেষণাটি হয়েছিল ইসরাইলের জর্ডান ভ্যালিতে। সেখানে ঘরে ঘরে যে ইঁদুরটি পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম Mus Musculus domesticus. খনন কাজের মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক যুগের নাটুফিয়ান (Natufian) সংস্কৃতির শিকার সংগ্রহকারীদের বাসস্থান পর্যবেক্ষণ করা হয়। খননকাজ থেকে প্রাপ্ত ইঁদুরের দাঁতের জীবাশ্ম নমুনা থেকে বোঝা যায় তা প্রায় দুই লক্ষ বছর পূর্বের। নমুনা সংখ্যা থেকে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় নাটুফিয়ান শিকার সংগ্রহকারীরা যখন থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই ঘরে থাকে এমন ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যদি মানুষ সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস না করতো তাহলে এত বেশি গৃহবাসী ইঁদুর এক জায়গায় জড়ো হতো না। গৃহ ইঁদুরের আপাত বৃহত নমুনা সংখ্যা প্রমাণ করে, ঠিক ওই সময় থেকেই সাধারণ মানুষ স্থায়ীভাবে একটি জায়গায় বসবাস শুরু করে।[1]
যদি একটি মাত্র পেশা দিয়ে মানব সভ্যতার সূচনাকে সংজ্ঞায়িত করতে বলা হয় তবে তা হবে পুরকৌশল। খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ৩০০০ অব্দে যখন মিসর ও মেসোপটেমিয়ায় রাজসিক দালানকোঠা নির্মাণ শুরু হলো, পুরকৌশলের আনুষ্ঠানিক যাত্রাও ঠিক তখন থেকে ধরে নেয়া যায়। যদিও সাধারণ মানুষ আরো আগে থেকেই গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু করে।[2] এত প্রাচীন সময় থেকে প্রকৌশলবিদ্যার অস্তিত্ব প্রমাণ করে মানব জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি।
পুরকৌশলী বা Civil Engineer শব্দটি শোনার সাথে সাথে আমাদের দৃশ্যপটে যে অবয়বটি ভেসে উঠে তা হলো, একজন মানুষ যার মাথায় একটি হলুদ, কমলা বা অন্য কোনো উজ্জ্বল রংয়ের পোক্ত হেলমেট থাকবে, গায়ে থাকবে একটি সেফটি জ্যাকেট যা হবে উজ্জ্বল রংয়ের, সাথে জ্যাকেটের উপর ‘শাইনিং স্ট্রিপ’ দেয়া থাকবে এবং অবশ্যই তার পিছনে থাকবে কোনো নির্মাণাধীন দালানের ছবি। কারণ স্বভাবত আমরা ধরে নিই একজন পুরকৌশলী শুধুমাত্র দালান বানানোর কাজ করে থাকেন।
নিজে একজন পুরকৌশলী হিসেবে বলতে পারি পুরকৌশল সম্পর্কে আমজনতার এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা নিতান্তই অসম্পূর্ণ। এক্ষেত্রে তাদেরকে খুব একটা দোষও দেয়া যাবে না। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি শুধুমাত্র অবকাঠামো (যেমনঃ বড় বড় আবাসিক দালানকোঠা, বাণিজ্যিক ভবন, ফ্লাইওভার, বৃহদাকার সেতু, মহাসড়ক প্রভৃতি) নির্মাণকে আমরা যেভাবে জাতিগত উন্নয়নের সমার্থ হিসেবে দাঁড় করিয়েছি তাতে এটা ভাবা স্বাভাবিক যে পুরকৌশলীরা শুধু অবকাঠামোই নির্মাণ করেন অথবা যারা অবকাঠামো নির্মাণের বিদ্যা জানেন শুধু তারাই পুরকৌশলী। বাস্তবে পুরকৌশলের গণ্ডিটা আসলে আরো অনেক বড়। এর ভেতর মূলত চারটি ভাগ রয়েছে। সংক্ষেপে এ চারটি ভাগ বর্ণনা করছি।
কাঠামোগত প্রকৌশল (Structural Engineering)
প্রকৌশলের এ শাখা মূলত অবকাঠামো নির্মাণ বিষয়টি নিয়ে কাজ করে, আরো স্পষ্টভাবে বললে মানুষের বাসস্থান, পেশাগত কাজ, হাসপাতাল, শপিং মল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি জায়গা যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ কোনো নির্দিষ্ট কাজের নিমিত্তে জড় হয় এমন স্থাপনাসমূহ নিয়ে কাজ করে। এছাড়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প কারখানা, পানি শোধনাগার, গুদামঘর প্রভৃতি স্থাপনা নির্মাণও কাঠামোগত প্রকৌশলের অন্তর্ভুক্ত যেখানে হয়তো অধিক সংখ্যক মানুষের আনাগোনা হয় না। এ সিরিজে কাঠামোগত প্রকৌশল নিয়েই মূলত আলোচনা হবে।
যোগাযোগ প্রকৌশল (Transportation Engineering)
এ শাখায় মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের সাথে সম্পর্কিত মোটামুটি সকল বিষয় নিয়ে কাজ হয়। এর মধ্যে মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার প্রভৃতি নির্মাণ যেমন অন্তর্ভুক্ত তেমনি যাতায়াত জনিত যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তা কেন ঘটে এবং তা কীভাবে রোধ করা যায় এমন গবেষণাও অন্তর্ভুক্ত। একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কোন কোন জায়গা দিয়ে নিয়ে গেলে তা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রয়োজন মেটাবে, একটি সেতু কোন কাঠামোতে নির্মাণ করলে সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ উপযোগ পাওয়া যাবে, কোথায় কোন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করলে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম কম হবে এ ধরনের আরো নানা বিষয় নিয়ে কাজ হয় এখানে। আধুনিক বিশ্ব এ জায়গাটিতে আরো উন্নতমানের গবেষণা করছে।
একটি মজার উদাহরণ দেয়া যাক। অস্ট্রেলিয়ায় ৯০ মাইল লম্বা একটি মহাসড়ক রয়েছে যার নাম এয়ার মহাসড়ক (Eyre Highway)। পুরো ৯০ মাইল লম্বা পথে যানবাহনের চালক একটিও বাঁক বা মোড় পাবেন না, সড়কটি একেবারে নাক বরাবর সোজা যাকে বলে একদম সেরকম। সাধারণ চোখে মনে হতে পারে, এরকম সোজা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে তো দিব্যি আরাম পাওয়ার কথা; কোনো বাঁক নেওয়ার চিন্তা নেই, ডান বা বামের রাস্তা থেকে কোনো গাড়ি আসছে কিনা তা দেখা লাগছে না, কত সুবিধা।
কিন্তু সমস্যাটা আসলে এখানেই। আমাদের মানব মস্তিষ্ক সবসময় বিচিত্র কিছু চায়। একই জিনিস, তা যতই চমকপ্রদ ও আরামদায়ক হোক না কেন, বারবার তা করতে আমরা মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। এক্ষেত্রেও তাই। এতো লম্বা রাস্তা গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়িচালকরা মানসিকভাবে ক্লান্ত ও একঘেয়ে অনুভব করা শুরু করেন। ফলে দেখা যায় এ রাস্তায় অনেক বেশি যান দুর্ঘটনা ঘটছে। কারণ চালকরা মনোযোগ ধরে রেখে গাড়ি চালাতে পারছে না। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে তখন চালকদের জন্য বিনামূল্যে কফি পানের ব্যবস্থা করা হলো। জরুরি জায়গাগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল ফ্লাইং ডক্টর সার্ভিস সেবা প্রদান শুরু করলো যাতে ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা রক্ষিত হয়। কিছু জায়গায় সাইনপোস্ট বসানো হলো যেখানে চালকদের বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ি চালানো থামিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হলো।
এছাড়াও সড়কটির কিছু কিছু জায়গায় অস্ট্রেলিয়ান ক্যাঙ্গারু, উট, এমু পাখির আনাগোনা রয়েছে যারা চলাচলের সময় যাতায়াতকারী যানবাহনের ক্ষতি করতে পারে এবং নিজেরাও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এ কারণে অনেক জায়গাতেই সাইনপোস্ট বসিয়ে চালকদের সতর্ক করা হলো কোন জায়গায় এসব প্রাণীকূলের বিচরণ রয়েছে তা নির্দেশ করে। পুরো ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত। বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সরল মহাসড়ক হবার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার এই এয়ার মহাসড়ক বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক একটি মহাসড়কও বটে।
উদাহরণটি দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো যোগাযোগ প্রকৌশলের ব্যাপ্তি বোঝানো। একজন যোগাযোগ প্রকৌশলীকে শুধুমাত্র রাস্তা বানিয়ে ছেড়ে দিলেই হয় না। রাস্তাটি দিয়ে যারা গাড়ি চালাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও তাকে ভাবতে হয়; রাস্তাটি থেকে কী পরিমাণ অর্থনৈতিক লাভ হবে তা নিয়েও জানতে হয়। ইদানীং যোগাযোগ মনোবিদ্যা (Transportation Psychology), যোগাযোগ অর্থনীতি (Transportation Economics) প্রভৃতি নামে যোগাযোগ প্রকৌশলের আরো কিছু শাখা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এর বিপুল চাহিদার কারণে। এ সংক্রান্ত গবেষণাও দিন দিন বাড়ছে।
পরিবেশগত প্রকৌশল (Environmental Engineering)
আমার মতে আমাদের দেশের অনেক মানুষই পুরকৌশলের এ শাখাটি সম্পর্কে বিশদভাবে জানেন না কিংবা জানলেও এটি যে পুরকৌশলের অন্তর্ভুক্ত এ ব্যাপারে অবগত না। শুধু আমাদের দেশে বললে ভুল হবে। বৈশ্বিকভাবেই এ ব্যাপারটি সত্য। পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই পুরকৌশল বিভাগের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘পুরকৌশল ও পরিবেশগত প্রকৌশল বিভাগ’ (Department of Civil and Environmental Engineering)।
এখানে দুইটি ব্যাপার লক্ষণীয়। প্রথমত, যদি পুরকৌশলের ভেতরেই পরিবেশগত প্রকৌশল অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে আলাদা করে একে পুরকৌশল বিভাগের নামের পাশে উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? দ্বিতীয়ত, কেন শুধু এ শাখাটিকেই আলাদাভাবে এত গুরুত্ব দিয়ে ‘পুরকৌশল’ নামের পাশে জায়গা দেয়া হলো? কেন আমরা বললাম না, ‘পুরকৌশল ও কাঠামোগত প্রকৌশল’ কিংবা ‘পুরকৌশল ও যোগাযোগ প্রকৌশল’? দ্বিতীয় ব্যাপারটি দিয়ে শুরু করা যাক। বর্তমান পৃথিবীতে পরিবেশগত বিপর্যয় একটি অন্যতম সমস্যা। এর শুরুটা হয়েছিল আমাদের হাত ধরেই। সারা বিশ্বে অন্ত ও আন্তরাষ্ট্রীয় বড় বড় শিল্প কারখানার প্রসার শুরু হওয়ার সাথে সাথে মানুষ দেখলো পরিবেশের এক অভাবনীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহের তেমন একটা ভ্রুক্ষেপ থাকে না। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন। মুনাফা পাওয়া শেষ হলে অন্য যা কিছু হওয়ার হোক তাদের কিছুই যায় আসে না।
এমতাবস্থায় সামনে এগিয়ে আসে রাষ্ট্র। জনগণের জন্য নিবেদিত যেকোনো রাষ্ট্র নিদেনপক্ষে এটি বোঝে যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ক্ষতি সাধন করে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা নৈতিকভাবে কখনোই ঠিক নয়। ফলে তারা সেসব প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করে এমনসব প্রযুক্তি অবলম্বন করতে যাতে করে তাদের উৎপাদিত পণ্য উৎপাদনের প্রারম্ভে, উৎপাদনের সময় কিংবা উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়ে পরিবেশের ক্ষতি না করে। উদাহরণস্বরূপ যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের ট্যানারি ব্যবসা থাকে তাহলে তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের কারখানা থেকে আসা বর্জ্য পদার্থ যেন পরিবেশে সরাসরি উন্মুক্ত না হয়; এটাকে যথাযথ পরিশোধনের পরেই যেন ছাড়া হয়।
প্রশ্ন হলো, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ তো তাদের উৎপাদন উদ্ভূত পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে অজ্ঞ নয়। তাহলে কেন তারা যথাযথ পরিশোধন না করেই তা পরিবেশে ছেড়ে দেয়? বর্জ্য পরিশোধন বেশ ব্যয়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। যদি এর পেছনে বিশাল একটি অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় করতে হয় তাহলে তারা যে পণ্যটি উৎপাদন করছে তার দাম বাড়িয়ে দিতে হবে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য। দাম বাড়ালে আবার আরেক বিপদ। দাম বেশি বলে মানুষ তখন ঐ পণ্যটি কিনতে ইচ্ছুক হবে না। ফলে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এ কারণেই কেউ বর্জ্য পরিশোধন করতে চায় না। কিন্তু রাষ্ট্র যদি বর্জ্য পরিশোধনকে প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে তা করা ছাড়া তাদের বিকল্প আর কোনো উপায় নেই।
পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহ তখন রাষ্ট্রীয় বাঁধার মুখে (কিংবা অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের সদিচ্ছায়) এমন সব প্রযুক্তি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে যা দিয়ে সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব। কিন্তু এ রকম প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় গবেষণার। আর এই গবেষণাটির সাথেই সরাসরি যুক্ত থাকে পরিবেশ প্রকৌশলীরা। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ (Research and Development, R&D) যেমন থাকে, তাছাড়াও তারা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার জন্য অর্থায়ন করে যেন বর্জ্য পরিশোধনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি তাদের হাতে চলে আসে।
বর্তমান পৃথিবীতে যেহেতু রাষ্ট্রীয় বাঁধা ও পরিবেশের নাজেহাল অবস্থা মিলিয়ে এ ধরনের বর্জ্য পরিশোধনমূলক প্রযুক্তির চাহিদা তুঙ্গে, সেহেতু অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালছে। প্রচুর পরিমাণে চাহিদা ও আর্থিক নিশ্চয়তা থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীরই পছন্দের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করে ‘পরিবেশগত প্রকৌশল’ বিষয়টি। একটি বিষয়ে চাহিদা বেশি থাকলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আগ্রহী হয় এবং সে বিষয়টি আলাদা প্রাধান্য পেতে থাকে। আর এ কারণেই পরিবেশগত প্রকৌশলকে আলাদা করে বিভাগের নামের সাথে স্থান দিয়ে ‘পুরকৌশল ও পরিবেশগত প্রকৌশল’ নামে ডাকা হয়।
প্রথম যে ব্যাপারটি উল্লেখ করেছিলাম, পুরকৌশলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও এ বিষয়টিকে আলাদা করে পুরকৌশল নামের পাশে কেন উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ল? বৈশ্বিকভাবে অনেক শিক্ষার্থীই জানে না পুরকৌশলের ভেতরেই পরিবেশগত প্রকৌশল পড়ানো হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের যে বড় একটি অংশ পরিবেশগত প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় তারা শুধুমাত্র ‘পুরকৌশল’ নাম দেখে ভাবে এখানে বুঝি বিষয়টি পড়ানো হয় না। এ কারণেই ঐসব শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা করে ‘পুরকৌশল’ নামের পাশে ‘পরিবেশগত প্রকৌশল’ নামটিও জুড়ে দেয়। এতে করে তারা আর বিভাগের নাম নিয়ে বিভ্রাটে পড়ে না এবং পুরকৌশল বিভাগেই ভর্তি হয়।
ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশল (Geotechnical Engineering)
পুরকৌশলের এ শাখাটির বিকাশ শুরু হয় মূলত বিংশ শতাব্দীতে। এর পেছনে প্রকৌশলী কার্ল ভন তেরজাঘির খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো এই, তিনি কোনো পুরকৌশলী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন যন্ত্রপ্রকৌশলী (Mechanical Engineer)। একজন যন্ত্রপ্রকৌশলী যখন পুরকৌশলের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এর থেকে বেশ বড় একটি শিক্ষা নেয়ার আছে। আজকের পৃথিবী আর খণ্ড খণ্ড বিভাগীয় জ্ঞানের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। একটা সময় এমনও হতো তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের লোকজন প্রায়োগিক পদার্থবিদদের ছায়া মাড়াতেন না। কিন্তু এখন বাস্তবতা পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষ বুঝতে শিখেছে একা একা কিছু করতে গেলে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য চাই আন্তঃবিভাগীয় জ্ঞানের সমন্বয়। জনাব তেরজাঘি যেমন তার যন্ত্রপ্রকৌশলের জ্ঞান পুরকৌশল ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে পুরকৌশলের নতুন এক দিকই উন্মোচন করে ফেলেছেন আর তা হলো ‘ভূপ্রযুক্তিগত পুরকৌশল’।
এ শাখায় কোন কোন জিনিস নিয়ে আলোচনা করা হয় তা ব্যাখ্যা করা যাক। প্রায়োগিক কারণে এ শাখাটির সাথে পুরকৌশলের অন্য একটি শাখা ‘কাঠামোগত পুরকৌশল’ এর যোগাযোগ রয়েছে। যখন কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, তা থেকে প্রচুর পরিমাণে ‘ভার’ (Load) আসে। যেমন মনে করি, একটি দালান নির্মিত হলো। এ দালানটিতে যদি কোনো মানুষ নাও উঠে এবং তাদের যাবতীয় আসবাবপত্র নাও রাখা হয়, তারপরেও দালানটির নিজস্ব একটি ভার বা ওজন থাকবে যাকে বলে ‘নিজস্ব ওজন’ (Self Weight)।পরবর্তীতে দালানের নিজস্ব ওজনের সাথে মানুষের ওজন এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য ওজন মিলে তা আরো বেড়ে যায়। প্রশ্ন হলো, চূড়ান্ত পর্যায়ে যেয়ে এ ভারটি আসলে কে বহন করে? অবশ্যই মাটি। পৃথিবীর যাবতীয় অবকাঠামোর ভার বা ওজন সার্বক্ষণিকভাবে মাটিতে চালান হচ্ছে। আমরা যদি মাটিকে না বুঝি, তার আচরণ অনুধাবন না করে নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিই, তাহলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে।
‘ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশল’ এ মাটি নিয়েই মূলত কাজ করা হয়। যেমন একটি বাড়ি বানাতে গেলে নিচে তার ‘ভিত্তি’ (Foundation) দিতে হয়। একজন কাঠামোগত প্রকৌশলী যেমন বাড়িটির কামরার আকার, বিম বা কলামের অবস্থান, রডের পরিমাণ ও অবস্থান প্রভৃতি নিয়ে কাজ করেন; একজন ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশলীর কাজ হলো বাড়িটি কোন ধরনের ভিত্তির উপর নির্মিত হবে, মাটির কতটুকু গভীরে খনন করতে হবে, মাটির স্বরূপের উপর নির্ভর করে কত তলা উঁচু দালান নির্মাণ করা সম্ভব হবে এসব বিষয় নিরূপণ করা। বড় আকারের প্রকল্পের কাজে কাঠামোগত ও ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশলী আলাদা করে নিয়োগ দেয়া হলেও ছোট আকারের দালান নির্মাণে একজন প্রকৌশলীই সাধারণত এ দুইটি ভূমিকা যুগপৎ পালন করে থাকেন। তবে এটা ভাবার মোটেই কোনো অবকাশ নেই যে একজন ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশলী শুধুমাত্র দালান নির্মাণ সংক্রান্ত ভূমি বিষয়াদি নিয়েই কাজ করেন।
আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে ‘ভূমিধ্বস’ (Landslides) একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাহাড়ে কেন এই ভূমিধ্বস হয় তার কারণ বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান এবং এর থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণাও একজন ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশলীর কর্মপরিধির আওতায় পড়ে। তাছাড়া আমাদের দেশের ভাঙ্গনপ্রবণ নদীগুলোর পাড় অধিকাংশই মাটির তৈরি। কীভাবে এ পাড়গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ তদারকি করে উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়েও তারা কাজ করে থাকেন। এছাড়া তাদের কাজের আরো নানা ক্ষেত্র রয়েছে। দালান নিয়ে কাজের বাইরে এসে অন্য উদাহরণগুলো টানার উদ্দেশ্য হলো একজন ভূপ্রযুক্তিগত প্রকৌশলীর কাজের সার্বিক চিত্রটি সকলের সামনে তুলে ধরা।
(এরপর দেখুন ২য় পর্বে)