পানির পরে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উপাদান হিসেবে যে বস্তুর নাম ধরা হয় তা হলো কনক্রিট। পুরো সিমেন্ট শিল্পকে যদি একটি দেশের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে এটি হতো পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ যার আগে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থাকতো (পুরো বিশ্বে শুধু এই সিমেন্ট শিল্প থেকেই প্রায় ২.৮ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঘটে)।
মানব ইতিহাসে কনক্রিটের অবদান অনস্বীকার্য। এর ইতিহাসটাও বেশ চমকপ্রদ। কনক্রিট আবিষ্কারের আগে খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০ অব্দের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দালান নির্মাতারা তাদের কাঁদামাটির ঘরগুলোকে বাইরে থেকে সাধারণত পোড়া চুনাপাথরের স্যাঁতসেঁতে প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দিতেন। হঠাৎ তারা খেয়াল করেন, চুনাপাথর পানি আর বাতাসের কিছু গ্যাসের উপস্থিতিতে রাসায়নিকভাবে বিক্রিয়া করে বেশ শক্ত একটি সুরক্ষামূলক আবরণ তৈরি করে ফেলে। এটি সিমেন্ট নয়, তবে এটিকে সিমেন্টের পূর্বসূরি বলা যায়।
আধুনিক কনক্রিটে যে সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় তা প্রায় ১২ মিলিয়ন বছর পূর্বে আজকের যেখানে ইসরায়েল অবস্থিত সেখানে চুনাপাথর ও তেলের আকরিকের মধ্যে বিক্রিয়ার ফলে স্বতঃস্ফূর্ত দহনের মাধ্যমে উৎপন্ন হতো। (নোটঃ এখানে একটু পরিষ্কার করে রাখা জরুরী যে কনক্রিট, সিমেন্ট, মর্টার এ জিনিসগুলো কিন্তু এক না। সিমেন্টের সাথে যদি শুধু বালি মেশানো হয় তাহলে সেটাকে বলে মর্টার। আর সিমেন্টের সাথে বালি ও তার সাথে কিছু পাথর বা ইটের টুকরা, যাকে স্টোন চিপ্স বা ব্রিক চিপ্স বলা হয়, মিশিয়ে দিলে যে শক্ত কৃত্রিম পাথরের ন্যায় বস্তু তৈরি হয় সেটাকেই কনক্রিট বলা হয়ে থাকে। মর্টার ও কনক্রিট দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু সাথে পানি মেশানো লাগে)।
এ ব্যাপারে বেশ কমই বিতর্ক আছে যে রোমানরাই প্রথম আধুনিকভাবে কনক্রিট ব্যবহার করা শুরু করেছিল। রোমানদের বানানো অ্যাকুইডাক্ট থেকে শুরু করে কলোসিয়াম সব জায়গাতেই তাঁরা কনক্রিট ব্যবহারের ছাপ রেখেছে। মজার ব্যাপার হলো তাদের সেই সময়ের কনক্রিটের স্থায়িত্ব এত বেশি ছিল যে তা আজও টিকে আছে। বলে রাখা ভালো, আমরা এখনকার যুগে যে কনক্রিট ব্যবহার করছি তা রোমানদের মতো এতদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে না, ফলে স্থাপনাগুলোও টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় এতো বেশি দিন ধরে যদি না খুব গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল সংস্কার কাজ করা না হয়। কারণ আমাদের এখনকার কনক্রিটের ভেতর ইস্পাতের রড ব্যবহার করা হয় যে কারণে এই কনক্রিটকে আলাদা করে ডাকা হয় ‘রিইনফোর্সড কনক্রিট’ নামে। যতই কনক্রিটের আবরণে ঢাকা থাকুক না কেন ভেতরের রড আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে (বিশেষত সাগরের কাছাকাছি অনেক দালানে এও শোনা গেছে, কলামের ভিতরে রড ক্ষয় হতে হতে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে! এটি দালানের জন্য বেশ বিপজ্জনক। কারণ ভেতরে রড যদি ক্ষয়ে হয়ে যায় তাহলে সেই কলাম বা বিম আর দালানের ভার তেমনভাবে বহন করতে পারবে না যেমনটা ধরে দালানের নকশা করা হয়েছিল। সাগরের পাড়ের বাতাসে লবণাক্ততার পরিমাণ অধিক থাকে বিধায় এ দশা)।
স্থপতি ভিট্রুভিয়াস খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে কনক্রিট বানানোর যে রেসিপি দিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে ‘পোজোলানা’ (আগ্নেয়গিরির ছাই বা ভলক্যানিক অ্যাশ) ব্যবহার করা হতো, যা তৎকালীন কনক্রিটের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। সামুদ্রিক এলাকায় যখন রোমানরা কিছু নির্মাণ করতো তখন সমুদ্রের পানি ব্যবহার করতো যা কনক্রিটের কাঠামোগুলোকে শক্ত ও স্থায়ী করতো। এখানে উল্লেখ্য যে এখনকার রিইনফোর্সড কনক্রিটে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ব্যবহার হিতে বিপরীত হতে পারে কারণ লবণের প্রভাবে রড ভিতরে তখন ক্ষয় হতে থাকবে। রোমানদের কনক্রিটে ভেতরে রড ব্যবহৃত হতো না।
আধুনিককালের রিইনফোর্সড কনক্রিটের ব্যবহার উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই ফ্রান্সে শুরু হয় তবে তা জনপ্রিয় করেন একজন ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক প্রকৌশলী জনাম আরনেস্ট র্যানসাম। তিনি কনক্রিটের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ভেতরে ইস্পাতের বার ব্যবহার করা শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে তার বানানো প্রথম রিইনফোর্সড কনক্রিটের স্থাপনা ছিল আর্কটিক অয়েল কোম্পানি ওয়ার্কস ওয়্যারহাউজ, যা স্যান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত। এর পাঁচ বছর পরেই তিনি গোল্ডেন গেট পার্কের কাছে ‘অ্যালভার্ড লেক সেতু’ নির্মাণ করেন যা পৃথিবীর প্রথম রিইনফোর্সড কনক্রিটের সেতু। ওয়্যারহাউজটি ১৯৩০ সালে ভেঙে ফেলা হলেও, সেতুটি এখনো টিকে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো রিইনফোর্সড কনক্রিটের স্থাপনা হিসেবে।
১৮৯১ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক জর্জ বার্থলেমিউ ওহায়োর বেলফন্টেনে পৃথিবীর প্রথম কনক্রিটের রাস্তা নির্মাণ করেন। আধুনিক রাস্তা সাধারণত দুই ধরনের হয়, ১. অ্যাসফল্ট বা পিচের কালো রাস্তা (বিটুমিনাস রোড) এবং (২) রিনফোর্সড সিমেন্ট কনক্রিটের রাস্তা, যা সাধারণত সাদা রঙয়ের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বিটুমিনাস রোড (কালো পিচ ঢালা রাস্তা) বেশি দেখা যায়।
উদ্ভাবক থমাস আলভা এডিসনকে আমরা মূলত চিনি তার বৈদ্যুতিক বাতি ও ডিসি কারেন্ট আবিষ্কার, এবং তার অধ্যবসায়ের জন্য। তবে এসবের বাইরেও কনক্রিটের বাড়ি নির্মাণকে ঘিরে তিনি এক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। তিনি কনক্রিটের আসবাবপত্র, কনক্রিটের রেফ্রিজারেটর, এমনকি কনক্রিটের একটি রেকর্ড প্লেয়ার পর্যন্ত বানানোর চেষ্টা করেছিলেন! ১৯০৬ সালের দিকে তিনি পরিকল্পনা করেন, যদি কনক্রিটকে শিল্পভিত্তিক উৎপাদন করা যায় তাহলে তার দাম অনেক কমে আসবে। তিনি বলেছিলেন, “আমি সেই দিন দেখতে চাই যখন একজন সাধারণ মানুষের বাড়ি এক সপ্তাহের ভেতর কনক্রিট দ্বারা নির্মাণ করা সম্ভব হবে।” তিনি ঘোষণা করেন, তিনি তার পেটেন্ট করা প্রযুক্তি এই শর্তে উন্মুক্ত করে দেবেন যদি বেশিরভাগ কনক্রিট নির্মিত বাড়ি শ্রমিক শ্রেণির জন্য বরাদ্দ থাকে এবং ১০ শতাংশের বেশি কেউ মুনাফা অর্জন না করে।
রিইনফোর্সড কনক্রিট যে আসলে কতটা সম্ভাবনাময় জিনিস তা বুঝতে পেরেছিলেন ফ্র্যাংক লয়েড রাইট (যিনি ক্যান্টিলিভার কাঠামোতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন)। ১৯০৮ সালে তার বানানো প্রথম কনক্রিট দালান ‘ইউনিটি টেম্পল’ (ওক পার্ক, ইলিনয়, যুক্তরাষ্ট্র)-কে ধরা হয় পৃথিবীর প্রথম আধুনিক দালান। তার আরেকটি বিখ্যাত কাজ হলো মিল রান, পেনসিলভানিয়ায় নির্মিত ‘ফলিংওয়াটার’। দালানটির সামনে একটি ছোট জলধারা আছে। দালান থেকে যে ক্যান্টিলিভার অংশটুকু জলধারার উপর পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে, রিইনফোর্সড কনক্রিটের শক্তি আর বিশেষত্ব ছাড়া তা কোনোদিনই সম্ভব হতো না।
কনক্রিট যেভাবে আমাদের ক্ষতি করছে
জলাবদ্ধতা
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এখনকার বন্যা আর আগের মতো নেই। যখন আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড় আসে এবং সাথে উপকূলবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানিও থাকে তখন মোট মিলিয়ে পানির উচ্চতা এতটা ভয়াবহ হয় যে উপকূলবর্তী প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো সেই পানিকে আর আটকাতে পারে না। সম্প্রতি বিশ্বের জলবায়ু সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিরূপণের বাইবেল ‘আইপিসিসি’ (ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) এর ষষ্ঠ বিশ্লেষণী প্রতিবেদন অনুসারে দক্ষিণ-এশীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত পূর্বের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে জলাবদ্ধতার প্রভাব আরো বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠবে।
মাটিতে পানির অনুপ্রবেশের সাথে কনক্রিটের একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। সাধারণত পানি যদি মাটির উপরে থাকে তাহলে তা আস্তে আস্তে মাটির ভিতরে ঢুকতে শুরু করে (এ ব্যাপারটাকে বলা হয় ‘ইনফিলট্রেশান’, আর মাটিতে ঢুকে যাওয়ার পরে মাটির ভিতরে পানির যে চলাফেরা হয় এটিকে বলে ‘পারকোলেশান’)। বালুতে পানি তাড়াতাড়ি ঢোকে, আর কাঁদামাটি বা ক্লে তে পানি ঢুকতে বেশ খানিকটা সময় লাগে, তবে ঢুকে যায় কোনো না কোনোভাবে। মুশকিল টা হয়, মাটির উপরে কনক্রিট ঢেলে দিলে। পানি কিন্তু কনক্রিটের ভেতর দিয়ে যেতে পারে না। তাহলে ব্যাপারটা কী হলো? ধরা যাক ঢাকা শহরে বৃষ্টি হবার পরে যে পানিটা মাটির নিচে ঢুকতো সেটা কিন্তু মাটিতে ঢুকতে পারছে না। কারণ বিশাল বিশাল সব কনক্রিট নির্মিত দালান দাঁড়িয়ে আছে বিরাট জায়গা জুড়ে, আমাদের রাস্তাগুলো হয় পিচের বিটুমিনাস রোড (কালো রঙ এর রাস্তা) অথবা রিইনফোর্সড সিমেন্ট কনক্রিটের বা আরসিসি’র সাদা রঙের রাস্তা। দুটোর কোনোটাই পানিকে মাটিতে ঢুকতে দেয় না। বৃষ্টির পানি যে ড্রেনেজ আউটলেটগুলো দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেগুলো অনেকক্ষেত্রে আটকে থাকে, পানি আর যেতে পারে না, ফলে বিশাল জলাবদ্ধতা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার পরে নিউ অরলিন্সে যে বন্যা হয় তার পেছনে সরাসরিভাবে কনক্রিটকে দায়ী করা হয় কারণ এর কারণে প্লাবনভূমিগুলোতে মাটি পানিকে যথাযথভাবে শুষে নিতে পারেনি। (*নোটঃ আধুনিককালে এমন কনক্রিটও আবিষ্কার করা হয়েছে যার ভেতরে দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে, এগুলোকে ‘পারভিয়াস কনক্রিট’ বলা হয়। তবে এ ধরনের কনক্রিটের রাস্তা খুব ভারী যানবাহন, যেমন- ট্রাক, বাস প্রভৃতির ভার নিতে পারে না। হালকা যানবাহন যেমন- রিকশা, সাইকেল, মানুষের পায়ে হাঁটার জন্য হলে কোনো সমস্যা হয় না।)
কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ও হিট আইল্যান্ড
উৎপাদনের সকল ধাপ বিবেচনায় নিলে কনক্রিট পুরো পৃথিবীর ৪-৮% কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য দায়ী। পৃথিবীতে শিল্পভিত্তিক কাজে যে পানি ব্যবহার করা হয় তার প্রায় ১০ শতাংশ হয় কনক্রিটের ক্ষেত্রে। তাছাড়া কনক্রিট একটা খারাপ কাজের জন্য দায়ী যাকে বলা হয় ‘হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট’। একসাথে অনেকগুলো কনক্রিটের দালান যখন পাশাপাশি নির্মাণ করা হয় তখন তা বিপুল পরিমাণে সূর্যের তাপ, গাড়ির ধোঁয়ার সাথে কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের তাপ শোষণ করতে থাকে এবং গরম হয়ে ওঠে। এই যে কনক্রিটের তাপ শোষণের ফলে গরম হয়ে দালানগুলো তাপের এক দ্বীপ হয়ে উঠলো, এটাকেই বলা হয় ‘হিট আইল্যান্ড’।
কনক্রিট নিয়ে রাজনীতি
জাপান কনক্রিট ব্যবহার শুরু করে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধ থেকে। তারা কনক্রিটকে নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে এতই ব্যবহার করতে থাকে যে তখনকার তাদের প্রশাসন কাঠামোকে ডাকা হতো ‘ডোকেন কোক্কা’ (নির্মাণ রাষ্ট্র) নামে। ১৯৯৭-৯৮ সালে যখন এশীয় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় তখন কিনেসীয় অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা বলতেন এখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে মাটিতে একটা গর্ত করা এবং সেখানে টানা কনক্রিট ঢালতে থাকা। কনক্রিটের ব্যবসায় প্রচুর টাকা মুনাফা আসে এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। ১৯৩৩ সালের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের যে ‘নিউ ডিল’ ছিল সেখানেও প্রচুর কনক্রিটের কাঠামো তৈরি করা হয়। এক হুভার ড্যাম নির্মাণ করতেই প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন ঘনমিটার কনক্রিট ঢালা হয় যা তখন একটি বিশ্বরেকর্ড ছিল।
জাপানে তখন অর্থনীতি খুব দ্রুত বর্ধনশীল ছিল। ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকের জন্য নতুন স্টেডিয়াম, নতুন সিটি হল, স্কুল, খেলাধুলার জায়গা, নতুন সেতু- সবকিছুতেই ব্যাপক পরিমাণে কনক্রিট ব্যবহার করা হতো। আশির দশকের শেষ দিকে জাপানে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি কনক্রিট কাঠামো নির্মাণের পিছনে বিশাল পরিমাণে অর্থ ঢালা শুরু করে এবং ছয়টি দালান নির্মাণ সংস্থার ভিতর একচেটিয়া ব্যবসা শুরু হয় (সংস্থাগুলো হলো শিমিযু, তাইসেই, কাযিমা, তাকেনাকা, ওবায়াশি, কুমাগাই)।
কিন্তু কনক্রিট কাঠামো বেশি নির্মাণ করা হলে বেশ কিছু সমস্যা আছে। জাপানের উপকূলবর্তী এলাকায় পাহাড়ের পার্শ্বদেশে ও নদীতীরের ভাঙ্গন রোধে ব্যাপক পরিমাণে কনক্রিটের ব্যবহার শুরু হয়, আমাদের দেশে যেমন নদীতীরে ভাঙ্গন রোধে সিমেন্ট কনক্রিট ব্লক বা সি সি ব্লক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটিকে পরিবেশবিদগণ জাপানের পরিবেশের জন্য হানিকারক বলে মন্তব্য করেন। জাপানে প্রতি বর্গমিটারে যে পরিমাণ কনক্রিট ঢালা হয় তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ! জাপানের কনক্রিট লবি বেশ শক্তিশালী। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পরবর্তীতে আবারো ক্ষমতায় এলে তারা সরকারি নির্মাণ কাজে পরবর্তী পুরো দশক জুড়ে প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ইউরো খরচ করে যা জাপানের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ।
জাপানের উপকূলে বিশাল সব ‘সমুদ্র প্রাচীর’ (বা সি ওয়াল) নির্মাণ করে রাখা আছে যেখানে প্রচুর পরিমাণ কনক্রিট ঢালা হয়েছে। এই দেয়ালগুলো মূলত উপকূলের বন্যা ও সুনামি থেকে জাপানকে রক্ষা করবার জন্য। কিন্তু জাপানের উপকূলবর্তী মানুষের কাছে মনে হয় তারা এই দেয়ালের ভেতর এক ধরনের জেলে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে! দেয়ালগুলো প্রায় ১২ মিটার উঁচু। পরিবেশবিদেরা বলে থাকেন এতো বড় দেয়াল নির্মাণ করার কোনো দরকার ছিল না। এর চেয়ে যদি ‘ম্যানগ্রোভ বাফার’ নির্মাণ করা যেত তাহলে আরো কম খরচে কার্যকর ও প্রাকৃতিক সমাধান পাওয়া যেত।
ম্যানগ্রোভ বাফারের অন্যতম উদাহরণ হলো বাংলাদেশ ও ভারতের অংশের সুন্দরবন। ২০২০ সালের মে মাসে যখন ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল, তখন সুন্দরবনের বাঁধার কারণে তার গতিবেগ কমে যায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। উল্লেখ্য, একই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কোলকাতায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। প্রায় ২৮.৬ লক্ষ বাড়িঘর ধ্বংস হয় এবং প্রায় ৩২,৯০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।