Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জো ক্যামেরন: যাকে স্পর্শ করতে পারে না কোনো ব্যথা-দুশ্চিন্তা

প্রত্যেক নারী জীবনে একবার হলেও মাতৃত্বের স্বাদ নিতে চান। কিন্তু একজন নারীকে মা হওয়ার জন্য সহ্য করতে হয় অসহনীয় ব্যথা। একজন মানুষ একবারে সর্বোচ্চ যতটুকু ব্যথা সহ্য করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি ব্যথা সন্তান জন্মদানের সময় সহ্য করেন একজন মা। পৃথিবীর প্রায় সকল নারীকে মা হওয়ার জন্য এই সত্যকে মেনে নিতে হয়।

আপনি কি আজ পর্যন্ত শুনেছেন কোনো নারী বিন্দুমাত্র ব্যথা না পেয়েই মা হয়েছেন? সম্ভবত শোনেননি। কিন্তু স্কটল্যান্ডে এমন এক নারীর সন্ধান মিলেছে যে তার ৭১ বছরের জীবনে কখনোই ব্যথা অনুভব করেননি। এমনকি মা হওয়ার সময়ও নয়। জো ক্যামেরন নামের সেই বৃদ্ধ মহিলা স্কটল্যান্ডের ইনভারনেসে বসবাস করেন। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি ব্যথাশূন্য। তার জীবনে অসংখ্যবার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভেঙেছে, কেটেছে এবং পুড়েছে। কিন্তু তিনি একবারও কোনো ব্যথা অনুভব করেননি। তিনি কখনো নিজেকেও প্রশ্ন করেননি কেন তার ব্যথা অনুভূত হয় না।

ক্যামেরনের অলক্ষ্যে হাতের চামড়া অসংখ্যবার পুড়েছে। কিন্তু এরপরও তিনি কোনোপ্রকার যন্ত্রণা অনুভব করেননি। যখন তার চামড়া ছাড়িয়ে মাংস পুড়তে শুরু করে তখনই তিনি বুঝতে পারেন। কারণ ক্যামেরন নিজে একজন নিরামিষভোজী। যার ফলে মাংস পোড়ার গন্ধ তার নাকে দ্রুত ধরা পড়ে। আর তখনই তিনি বুঝতে পারেন কোনো মাংস পুড়ছে। আর সেটা তার নিজের শরীরের!

ক্যামেরন তার শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণা থেকেও মুক্ত। জীবন সায়াহ্নে এসেও কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা কিংবা অবসাদ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি সবসময় সকল পরিস্থিতিতে হাসিখুশি থেকেছেন। দুই বছর আগে ক্যামেরনের গাড়ির ওপর দিয়ে অন্য একটি গাড়ি উঠে যায়। এতে তার বেশ কয়েক জায়গায় কেটেও যায়। এবং তিনি অনেক কষ্টে গাড়ীর মধ্যে থেকে বের হন। কিন্তু তার মধ্যে কোনো প্রকার রাগ, ক্রোধ বা ভয় ছিল না। তিনি খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে চাপা দেওয়া গাড়ীর চালকের সাথে করমর্দন করে চলে যান।

ডাক্তারদের কাছে ক্যামেরন এক বিস্ময়

জো ক্যামেরন একবার তার নিতম্বের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। তার নিতম্বের একপাশ অন্যপাশের চেয়ে নিচু হয়ে যাওয়ায় একদিকে কাত হয়ে হাঁটতে হতো। কিন্তু চিকিৎসকরা তার এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে হিমশিম খান। কেননা ক্যামেরনকে যখনই জিজ্ঞেস করা হতো তিনি নিতম্বে বা কোমড়ে কোনো ব্যথা অনুভব করেন কি না। তখন তিনি সেটা অস্বীকার করতেন। এ সমস্যা নিয়ে তিন থেকে চার বছর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরার পর সর্বশেষ যখন তার এক্স-রে করা হয়, তখন তার কোমড়ের হাড়ে বড় এক ক্ষয় ধরা পড়ে। ক্যামেরন নিজেও বিস্মিত হন। এত বড় হাড় ক্ষয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ তিনি কোনো ব্যথা অনুভব করেননি!

জো ক্যামেরন; Image Source: Rex

এরপর ক্যামেরনের আরো বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এবং চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেন তার নিতম্বের সমস্যা অস্টিওআর্থারাইটিসের দিকে চলে যাচ্ছে। তারা তখনই ক্যামেরনকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাকে এক যন্ত্রণাদায়ক অস্ত্রোপচারের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে বলা হয়। তার এই অস্ত্রোপচারে অ্যানেসথেটিস্ট হিসেবে ছিলেন ডা. দেবজিত শ্রীবাস্তব। ক্যামেরন তার চিকিৎসকদের জানান তার কোনো ব্যথানাশক ঔষুধ লাগবে না। কারণ তিনি কোনো ব্যথা অনুভব করেন না। শ্রীবাস্তব তখন বিস্মিত হন। এবং ক্যামেরনের বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখেন তিনি কখনোই ব্যথানাশক কোনো ঔষুধ কেনেননি।

স্বামী এবং মায়ের সাথে জো ক্যামেরন © Jo Cameron

ডা. দেবজিত শ্রীবাস্তব ক্যামেরনের ব্যথা না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্কচ বোনেট চিলি খাওয়ার চ্যালেঞ্জ করেন। জো ক্যামেরনের সাথে তার স্বামী জিম ক্যামেরনও চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করেন। স্কচ বোনেট চিলি হলো একপ্রকার ঝাল মরিচ। ক্যামেরন এই ঝাল সহ্য করতে পারেন কি না সেটা দেখাই ছিল এই চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্য। ডা. শ্রীবাস্তব ও জিম সামান্য খাওয়ার সাথে সাথে ঝালের কাছে হার মানেন। কিন্তু জো অনায়াসে পুরো একটি বোনেট চিলি হজম করেন। এই ঘটনার পর শ্রীবাস্তব ক্যামেরনের এই রহস্য উদঘাটনের জন্য তাকে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পেইন জেনেটিসিস্টদের কাছে পাঠান। পরবর্তীতে বেশ কিছু জেনেটিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা ক্যামেরনের ব্যথা না পাওয়ার রহস্যভেদ করেন।

ক্যামেরনের ব্যথা না পাওয়ার রহস্য

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল চিকিৎসক জো ক্যামেরনের উপর বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। এরপর তারা এই ব্রিটিশ নারীর ব্যথা অনুভব না করার রহস্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। এবং এ বিষয়ে সকল তথ্য-উপাত্তসহ একটি গবেষণা রিপোর্ট ব্রিটিশ জার্নাল অব অ্যানেসথেসিয়াতে প্রকাশ করেন। গবেষক দল ক্যামেরনের দেহে দুটি উল্লেখযোগ্য জিন মিউটেশন খুঁজে পান। যার ফলে তার মধ্যে ব্যথা ও দুশ্চিন্তার উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। অন্যদিকে দ্রুত ক্ষত সেরে যাওয়া, আনন্দ এবং বিভিন্ন ঘটনা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জিন মিউটেশনের কারণেই জো ক্যামেরনের শরীরের ব্যথার কোনো অনুভূতি নেই; Image Source: Mateoweb

ক্যামেরনের শরীরে প্রথম জিন মিউটেশন ঘটেছে এফএএএইচ (FAAH) নামক জিনের। এটি আমাদের শরীরে একধরনের এনজাইম তৈরি করে যার ফলে অ্যানানডামাইড নামক একপ্রকার ফ্যাটি এসিড ভাঙে। গাঁজায় যে সকল উপাদান রয়েছে, তার সবই এই অ্যানানডামাইডের মধ্যে রয়েছে। অ্যানানডামাইডই আমাদের শরীরে ব্যথা ও দুশ্চিন্তা বুঝতে সাহায্য করে। এবং কোনো কিছু মনে রাখতেও এর প্রভাব রয়েছে। এর পরিমাণ যদি কমে যায় তাহলে মানুষ ব্যথা অনুভব করতে পারে। আর যদি বেড়ে যায় তাহলে এটি ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। ক্যামেরনের জিন মিউটেশনের ফলে FAAH জিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে তার শরীরে অ্যানানডামাইড না ভেঙে ধীরে ধীরে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তার শরীরে ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে তার মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তাও নেই। এবং তিনি কোনো কিছু ভালোভাবে মনে রাখতে পারেন না।

ক্যামেরনের আরো একটি জিন মিউটেশন ঘটেছে। FAAH-OUT নামক একটি জিনের পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি। গবেষকরা এই জিনের একটি অংশ তার দেহে খুঁজে পাননি। এই জিনটি মূলত নতুন ধরনের জিন, যা ক্যামেরনের দেহের FAAH জিনের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু এই জিন অসম্পূর্ণ থাকার কারণে FAAH জিন নিষ্ক্রিয় হয়েছে। এর ফলে ক্যামেরনে শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে অ্যানানডামাইডের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পড়েছে। পরীক্ষাতেও সেটাই ধরা পড়েছে। ক্যামেরনের দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ অ্যানানডামাইড পাওয়া গেছে।

জো ক্যামরনের বর্তমান বয়স ৭১ © Mary Turner

ক্যামেরনের দেহে জিনগত পরিবর্তন কীভাবে হয়েছে সেটা চিকিৎসকদের কাছে বড় একটি রহস্য। তার মা স্বাভাবিক মানুষের মতোই ব্যথা অনুভব করেছেন। কিন্তু ক্যামেরনের ভাই তার মতোই ব্যথা অনুভব করতে পারেন না। বরং তার ব্যথা না পাওয়ার অনুভূতি আরো কম। তিনিও কখনো কোনো ব্যথানাশক ঔষুধ নেননি। এবং তিনি অনায়াসে গরম খাবার বা পানীয় খেতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা দুজন তাদের বাবার কাছে থেকে এই জিন পেয়েছেন। কিন্তু তাদের বাবা অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই এই বিষয়ে এখন আর নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।

স্বামী এবং সন্তানদের সাথে জো ক্যামেরন © Jo Cameron

তবে ক্যামেরনের এই জিনগত পরিবর্তন গবেষকদের আশার আলো দেখাচ্ছে। তারা এখন চেষ্টা করছেন ক্যামেরনের দেহে থাকা নতুন এই জিনকে বিশ্লেষণ করে কীভাবে মানুষকে ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়া যায় সেটা বের করা। বিশেষ করে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের সময় মানুষ যেন ব্যথা না পান সে রকম কিছু আবিষ্কার করা। পৃথিবী জুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা যদি শেষ পর্যন্ত নতুন কোনো ব্যথানাশক আবিষ্কার করতে পারেন তাহলে সেটা মানবকল্যাণে বড় ভূমিকা রাখবে। আর তার জন্য জো ক্যামেরন সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

This article is in Bangla language. It is about Jo Cameron,  a Scottish lady who never feels pain & anxiety.

Featured Image Source: The Guardian 

References:

1. The woman who doesn't feel pain - BBC

2. Scientists find genetic mutation that makes woman feel no pain - The Guardian

3. X-Woman? Gene mutation makes patient Jo Cameron feel no pain, scientists say - SCMP

Related Articles