ম্যান্ডেলা ইফেক্ট: এতদিনের জেনে আসা সত্য যখন সত্য নয়!

“What If I told you everything you knew was a lie.”

আপনি যদি সিনেমাপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো বুঝে ফেলেছেন, এই বাক্যটি ম্যাট্রিক্স মুভির সেই বিখ্যাত পিল দৃশ্যটি থেকে নেওয়া। মরফিয়াসের বলা এ বাক্যটি এতটাই বিখ্যাত যে, এখনো বিভিন্ন মিডিয়ায় বা ইন্টারনেটে অসংখ্য মিমে এর ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এ বাক্যটি ম্যাট্রিক্স মুভিতেই নেই, কখনোই ছিল না। মরফিয়াস কখনোই নিওকে এমন কিছু বলেইনি।

কী? একটু অবাক হলেন? হওয়াটাই স্বাভাবিক। এবার আরেকটি উদাহরণ দেই। দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস মুভির সেই দৃশ্যের কথা কি মনে আছে, যেখানে ক্লারিস স্টার্লিং প্রথমবারের মতো হ্যানিবল লেকটারের সাথে দেখা করতে যায়। যদি মনে থাকে তাহলে বলুন তো- সেই দৃশ্যে হ্যানিবল ক্লারিসকে কী বলে সম্বোধন করে?

আপনার উত্তর যদি “হ্যালো ক্লারিস” হয়, তাহলে আপনি ভুল করেছেন। হ্যানিবল লেকটার বলেছিল, “গুড মর্নিং।”

এগুলো হচ্ছে ম্যান্ডেলা ইফেক্টের উদাহরণ। বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ যখন কোনো বিষয় বা ঘটনাকে এমনভাবে মনে রাখে কিন্তু আসলে বাস্তবে তেমন কিছু নেই বা সেভাবে ঘটেনি, তখন তাকে ম্যান্ডেলা ইফেক্ট বলে। ম্যান্ডেলা ইফেক্টের আরেকটি বিখ্যাত উদাহরণ হলো, অসংখ্য মানুষ শতভাগ নিশ্চিত স্টার ওয়ার্স: এপিসোড পাঁচে ডার্থ ভেডারের সেই বিখ্যাত উক্তিটি ছিল, “লুক আই এম ইউর ফাদার।” কিন্তু বাস্তবে মুভিতে সে বলেছিল, “নো, আই এম ইউর ফাদার।” আবার ফরেস্ট গাম্প মুভিতে চকলেট নিয়ে বলা সেই বিখ্যাত লাইনটি মনে আছে? “My mom always said life is like a box of chocolates. You never know what you’re gonna get”। কিন্তু আপনি যদি মুভিটি আবার দেখতে বসেন তাহলে আবিষ্কার করবেন, গাম্প সেই দৃশ্যে বলেছে, life was like a box of chocolates।

ম্যান্ডেলা ইফেক্ট -এই নামটি এসেছে স্ব-ঘোষিত প্যারানরমাল কনসালটেন্ট ফিওনা ব্রুমের কাছ থেকে। ব্রুম ২০০৯ সালে ড্রাগন কনে যখন অনেকের সাথে আলোচনা করছিলেন, তখন অদ্ভুতভাবে দেখা গেল তার মতো অনেকেরই স্পষ্টভাবে মনে আছে, ১৯৮০ সালের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগারে মারা গিয়েছিলেন। এমনকি জাতীয় টেলিভিশনে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি তার স্ত্রীর হৃদয়বিদারক ভাষণের কথাও বলেছেন অনেকে। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগারে মারা যাননি। বরং তিনি ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি মারা যান ২০১৩ সালে।

নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যু, তবে এটা ১৯৮০ এর দিকে না। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান, Image source: CNN

ব্রুম খুবই অবাক হলেন এটি জেনে যে, নির্দিষ্ট একটি ঘটনাকে এতগুলো মানুষ একইভাবে মনে রেখেছে, যেটা আসলে কখনো ঘটেনি। তারপর তিনি তার বই প্রকাশকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করেন যাতে ম্যান্ডেলা ইফেক্ট (নামকরণ করা হয়েছে নেলসন ম্যান্ডেলার নামের অনুকরণেই) এবং এরকম ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়। তারপর ইন্টারনেটে খুব দ্রুতই ম্যান্ডেলার মৃত্যুর মত অসংখ্য ঘটনা সবার সামনে আসতে থাকে।

এখন প্রশ্ন হলো কেন এমন হয়? কেন একই ঘটনা যা কখনোই ঘটেনি তা অনেক মানুষ একইভাবে মনে রাখে? এর উত্তর অনেকভাবেই এসেছে।

প্যারালাল ইউনিভার্স

প্যারালাল ইউনিভার্সের থিওরি অনুযায়ী, আমাদের মত কিন্তু কিছুটা ভিন্ন অসংখ্য পৃথিবী বিদ্যমান; Image source: Victor Habbick/Shutterstock

এই থিওরিটির উৎপত্তি হয়েছে কোয়ান্টাম ফিজিক্স থেকে। এই থিওরিটি মূলত কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সেই ধারণার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, যেখানে বলা হয়, অন্য কোনো ডাইমেনশনের কোনো ঘটনা এই মুহূর্তেই হচ্ছে, কিন্তু আমরা সেটি দেখতে পারছি না। ফিওনা ব্রুমের মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন, অন্য রিয়েলিটি কিংবা ইউনিভার্স আমাদের টাইমলাইনের সাথে মিশে যাচ্ছে। যার ফলে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ যারা কোনো ঘটনা ভুলভাবে স্মরণ রেখেছেন, কারণ, তাদের টাইমলাইন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এবং তাদের সেই স্মৃতি অন্য রিয়েলিটিতে প্রবেশ করেছে যেখানে এসব কিছুই হয়নি। এই থিওরি অনুযায়ী, অন্য কোনো রিয়েলিটি বা ইউনিভার্সে নেলসন ম্যান্ডেলা আসলেই মারা গিয়েছিলেন, কিংবা ডার্থ ভেডার আসলেই বলেছিল লুক, আই এম ইউর ফাদার। কিন্তু অন্য রিয়েলিটিতে প্রবেশ করায় তা এখন ভুল বলে সর্বস্বীকৃত।

অনেকেই মনে করে, অন্য রিয়েলিটিতে এভাবে চলে যাওয়ার পেছনে দায়ী হলো সার্ন (ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)। সার্নের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে গতানুগতিক তিনটি স্থানিক মাত্রা ছাড়াও অন্য আরও ডাইমেশনশন খুঁজে বের করার উপায় হতে পারে মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি করা। একারণে কিছু কন্সপিরেসি থিওরি সাজেস্ট করে সার্ন চাইছে অন্য কোনো রিয়েলিটিতে যাওয়ার জন্য পোর্টাল সৃষ্টি করতে এবং তাদের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে আলোর গতিতে ক্ষুদ্র কণার সংঘর্ষের কারণে ম্যান্ডেলা ইফেক্টের মতো ঘটনা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সার্ন জানিয়েছে, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য এই মহাবিশ্ব এবং এর জন্ম সম্পর্কে জানা।

সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার; Image source: theverge

আমাদের স্মৃতি

অনেকেই ভেবে থাকে আমাদের স্মৃতি কোনো হার্ড ড্রাইভ কিংবা রেকর্ডিং ডিভাইসের মতো কাজ করে, যেখানে আপনি কোনো তথ্য সংরক্ষণ করবেন, তারপর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে কিংবা কাউকে শনাক্ত করতে সেটি ব্যবহার করবেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, এটি সত্য নয়।

এলিজাবেথ লোফটাসের এই কথাতেই উঠে এসেছে যে, আমাদের স্মৃতি অতটা নির্ভরযোগ্য নয় যতটা আমরা ভেবে থাকি। আমরা যখন কোনো স্মৃতি তৈরি করি, সেটি আমরা হুবহু স্মরণ রাখতে পারি না। সেই স্মৃতির বিভিন্ন বস্তু আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটাই জিগ-স পাজলের আলাদা টুকরোর মতো করে সংরক্ষণ করে রাখে। যখন আমরা সেই স্মৃতিকে অনুস্মরণ করি, তখন মূলত আমরা সেই স্মৃতিকে পুনর্গঠন করি। কিন্তু হুবহু পুনর্গঠন করা সম্ভব হয় না। ফলে পাজলের যে জায়গাটা ফাঁকা থাকে, আমরা সেটা নিজেরা কল্পনা করে নেই। ফলে যতবারই একটি স্মৃতিকে আমরা অনুস্মরণ করি, প্রত্যেকবারই সেটাকে আমরা পরিবর্তন করে ফেলি (২০১৪ সালের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একটি স্টাডি থেকে)।

আমরা যেভাবে ভাবি আমাদের মস্তিষ্ক সেভাবে কাজ করে না; Image source: DebbiSmirnoff

লোফটাস আমাদের স্মৃতিকে তুলনা করেছেন উইকিপিডিয়া পেজের সাথে। যেটার কোনো তথ্য যেমন আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন, তেমনি অন্য কেউ সেটি পরিবর্তন করে দিতে পারবে। এর মাধ্যমে উঠে আসে ম্যান্ডেলা ইফেক্টের বড় একটি কারণ, মিসইনফরমেশন ইফেক্ট। এটি ঘটে থাকে যখন কোনো ঘটনা নিয়ে একজন মানুষের স্মৃতি পরিবর্তন হয়ে যায় সেই ঘটনার তথ্য সামনে আসার পর। এই কারণে অনেকসময় দেখা যায় প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে ভুল সাক্ষ্য দিচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আমাদের স্মৃতি আমরা নিজেরাই কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম পরিবর্তন করে দিতে পারে। এলিজাবেথ লোফটাস এই ঘটনা প্রমাণে গাড়ির গতি নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর একটি পরীক্ষা চালান, যেখানে শুধু একটি শব্দ পরিবর্তনেই বিশাল পার্থক্য দেখা যায়।

আরেকটি কারণ হতে পারে ফলস মেমোরি, যেখানে একজন মানুষ কোনো ঘটনা এমনভাবে অনুস্মরণ করে, যেটা আসলে কখনোই ঘটেনি অথবা যেভাবে সে স্মরণ রেখেছে তার চাইতে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে হয়েছে। এর একটি উদাহরণ পাওয়া যায় যখন আমেরিকানদের জিজ্ঞেস করা হয়, আলেকজান্ডার হ্যামিলটন কে? অনেকেই ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছে, তিনি আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। কিন্তু তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিয়ে তাদের প্রশ্ন করলে অনেকেই তার নাম উল্লেখ করে বসেন। কারণ, তারা ভুলে বিশ্বাস করে ফেলেছিলেন তিনিও প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

ফলস মেমোরির ফলে মানুষ সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনার মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারে না। ম্যাট্রিক্স মুভির সেই বিখ্যাত উক্তির পিছনে এটি একটি কারণ হতে পারে। এলিজাবেথ লফটাস ফলস মেমোরি নিয়েও একটি পরীক্ষা চালান যেটাকে বলা হয় লস্ট ইন দ্য মল এক্সপেরিমেন্ট।

কনফাবুলেশনের কারণেও ম্যান্ডেলা ইফেক্ট হয়ে থাকে। কনফাবুলেশনের অর্থ কোনো স্মৃতিকে বিকৃত করে ফেলা অথবা ভুলভাবে স্মরণ রাখা। অর্থাৎ স্মৃতিতে যে ফাঁকা স্থান থাকে তা ভুল তথ্য দিয়ে পূরণ করা। কনফাবুলেশনের কারণে কোনো মানুষ তার স্মৃতি নিয়ে সন্দিহান থাকে না। কনফাবুলেশন অনেক কারণেই হতে পারে, যেমন: মস্তিষ্কে আঘাত, স্কিসোফ্রিনিয়া, আলঝেইমার’স। তবে এই সমস্যা সুস্থ মানুষেরও হতে পারে।

ইন্টারনেট

ইন্টারনেট বড় ভূমিকা রাখে ম্যান্ডেলা ইফেক্ট সৃষ্টিতে; Image source: Chris Jackson / Staff

কোনো তথ্য বা সংবাদ ছড়িয়ে দিতে ইন্টারনেট খুবই শক্তিশালী একটি মাধ্যম। সেসব তথ্যের কয়টি সত্য আর কয়টি মনগড়া তা অনেকসময় কারো নজরে আসে না। তাই আমরা অনেকসময় যাচাই বাছাই না করে ভুলকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করি। বেশিরভাগ সময় সেসব ভুল তথ্য আমাদের স্মৃতিতে এমনভাবে মিসইনফরমেশন ইফেক্ট সৃষ্টি করে, আমরা ভেবে নেই, এ বিষয়টি আমরা ছোটবেলা থেকেই এভাবে জানতাম কিংবা এ ঘটনাটি ঠিক এভাবেই ঘটেছিল। এছাড়াও এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, টুইটারের কোনো এক বছরে প্রায় ১ লক্ষ প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে আলোচনার পর দেখা গেছে, প্রায় ৭০ ভাগ সময় সত্যি খবরের চাইতে মিথ্যা সংবাদ বেশি সাড়া পেয়েছে। আর আমরা যখন আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয়, এমন কারো কাছ থেকে কোনো তথ্য পাই সেটাকে সত্য ভেবে নেই। যার ফলে জন্ম নেয় ম্যান্ডেলা ইফেক্ট।

এই কারণগুলো ছাড়াও ইলুমিনাতি কিংবা টাইম ট্রাভেল করে অতীত পরিবর্তনের মতো ব্যাখ্যা কেউ কেউ দিলেও সেগুলোর কোনোটিই যুক্তিসঙ্গত হিসেবে গৃহীত হওয়ার মতো নয়।

কয়েকটি ম্যান্ডেলা ইফেক্টের কারণ ব্যাখ্যা

১৯৮০ সালের দিকে নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগারে মারা গেছেন, এমন স্মৃতি সৃষ্টি হবার পিছনে কারণ হতে পারে ১৯৭৭ সালে আরেক আন্দোলনকারী স্টিভ বিকোর কারাগারে মারা যাওয়া। তার শেষকৃত্যও ছিল একটি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন, যাতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে।  তাকে নিয়ে ১৯৮৭ সালে ক্রাই ফ্রিডম নামে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়। এদিকে ১৯৮৮ সালে কারাগারে নেলসন ম্যান্ডেলা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার স্ত্রী তখন তার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন মিডিয়ায় অনুরোধ জানিয়েছিল। এসব বিষয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ করার হয়েছিল। ধারণা করা যায়, একই আন্দোলনের এই সংবাদগুলোর কারণে অনেকেই স্টিভ বিকোর মৃত্যুকেই ম্যান্ডেলার মৃত্যু হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন।

স্টিভ বিকোর শেষকৃত্যে অংশ নেয়া এক আন্দোলনকারী; Image source: EPA

এদিকে স্টার ওয়ার্সে ডার্থ ভেডারের উক্তিটি স্বয়ং জেমস আর্ল জোনস এবং মার্ক হ্যামিল, দুটি ভিন্ন টিভি প্রোগ্রামে বলেন লুক, আই এম ইউর ফাদার। এর ফলে তখন অনেকেই ধরে নিয়েছে আসলে উক্তিটি এভাবেই বলা হয়েছিল মুভিতে। আবার ইন্টারনেটে বিভিন্ন মিমেও লুকের ব্যবহার থাকায় আমাদের মনে স্থায়ীভাবেই সেটি জায়গা করে নিতে পারে। একই বিষয় দেখা যায় ফরেস্ট গাম্পের উক্তিটির ক্ষেত্রেও। প্রথমত বাক্যটিতে was এর ব্যবহার সঠিক কোনো অর্থ প্রদান করে না। আবার টম হ্যাংকস নিজেও দ্য লেইট লেইট শোতে is বলেছিলেন এবং মুভিটির VHS এর গায়েও is লেখা ছিল। সুতরাং সেজন্য was এর পরিবর্তে is আমরা মনে রেখেছি।

আমরা উক্তিটিকে এভাবেই মনে রেখেছি; Image source: VHSCollector

সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, কীভাবে আমরা কোনো ঘটনাকে যেভাবে ঘটেছে সেভাবে স্মরণ না রেখে অন্যভাবে স্মরণ রাখি। প্যারালাল ইউনিভার্সের ত্বত্ত্ব এখনও সত্য প্রমাণিত হয়নি, কখনও হবে কিনা তা-ও বলা যায় না। তবে বর্তমানে সবগুলো ম্যান্ডেলা ইফেক্টের ঘটনাকেই ফলস মেমোরি এবং মিসইনফরমেশন ইফেক্টের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়। তবে এর শেষ এখানেই নয়। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ম্যান্ডেলা ইফেক্ট আমাদের চোখে পড়বে। কারণ, আমরাই আমাদের জানা ভুল তথ্যগুলো আরেকজনকে জানাচ্ছি, মুভিতে শোনা ভুল উক্তি, কিংবা গানের ভুল লাইন আরেকজনকে শোনাচ্ছি। এর ফলে আমরা সেই ভুল স্মৃতিটিকে আরো শক্তিশালী করে তুলছি। কারণ, আমাদের কারো মস্তিষ্কই নিখুঁত নয়।

শেষ করার আগে ম্যান্ডেলা ইফেক্টের আরও কিছু উদাহরণ জেনে নেওয়া যাক।

১. কুইনের বিখ্যাত গান উই আর দ্য চ্যাম্পিয়ন্স গানের একেবারে শেষ লাইনে বলা হয়, উই আর দ্য চ্যাম্পিয়নস। কিন্তু অনেক মানুষ মনে করে গানটির শেষে অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস কথাটি আছে।

২. বোর্ড গেইম মনোপলির মাস্কট রিচ আংকেল পেনিব্যাগসের চোখে কখনোই মনোকল ছিল না। কিন্তু অনেক মানুষ বিশ্বাস করে তারা তার চোখে মনোকলস দেখেছিল।

৩. আপনিও জেনে হয়তো অবাক হবেন কিট ক্যাটের মাঝে কোনো হাইপেন নেই।

৪. অনেক স্টার ওয়ার্স ভক্তই বিশ্বাস করত রোবট C-3PO এর পুরো শরীর সোনালী। কিন্তু আসলে তার একটি পা রুপালী।

৫. স্নো হোয়াইট এন্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস মুভিতে দুষ্ট রাণী আয়নার দিকে তাকিয়ে কখনোই বলেনি মিরর, মিরর অন দ্য ওয়াল। সে বলেছিল ম্যাজিক মিরর অন দ্য ওয়াল।

বিজ্ঞানের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is in bengali language. It is about 'Mandela Effect', a phenomenon that supposedly occurs when large groups of people believe something happened even though evidence shows it isn’t true. Necessary sources of information have been hyperlinked inside the article.

Feature Image: Art by DrAfter123

Related Articles

Exit mobile version