মানবজাতি স্বভাবগতভাবেই কৌতূহলী, সভ্যতার প্রথম থেকেই আমরা যেকোনো ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে এসেছি। একটি ঘটনার ফলে আরেকটি ঘটনা ঘটছে, এরকম দুইটি ঘটনার মধ্যে ‘কজ অ্যান্ড ইফেক্ট’ সম্পর্ক স্থাপন করে দর্শনবিদ্যায় সেটাকে ‘কজ্যালিটি’ (causality) বলা হয়। মানবজাতি নিজেদের অতীত ও বর্তমান ব্যাখ্যা করার জন্যে এই কজ্যালিটির উপরে নির্ভর করে আছে। আবার, অতীত ও বর্তমানের ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটাও কজ্যালিটির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়।
মানবজাতির যুক্তিগত বিচারবুদ্ধি উন্নত হওয়ার সাথে সাথে কজ্যালিটির ধারণাও অগ্রসর হয়েছে। এভাবে যেকোনো ব্যাপারেই কারণ অনুসন্ধান করা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের প্রবৃত্তি হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান, গণিত, দর্শন, পরিসংখ্যান ও সামাজিক বিজ্ঞানে তাই এটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হয়ে উঠেছে। তবে সাধারণ মানুষের জন্যে গণিত ও দর্শনগত দিক থেকে ‘কজ্যালিটি’ চিন্তা করা একটা কঠিন কাজ। কারণ, এর জন্যে যেরকম জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন, তা অর্জন করা সবার জন্য সম্ভব হয়ে উঠে না। এজন্য, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে ‘কজ্যালিটি’ আমরা প্রয়োগ করি তা অনেক ক্ষেত্রেই ভুলপ্রবণ।
তবে, এরকম ভুলগুলো দীর্ঘসময় ধরে বিজ্ঞানী, গবেষকগণও করে এসেছিলেন এবং পরবর্তী গবেষণাগুলোতে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। যখন একটি কারণ ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়, তখন সেটাকে ‘ফলস কজ ফ্যালাসি’ (false cause fallacy) বলা হয়। ফ্যালাসি হচ্ছে বিভিন্নরকমের ভুল যুক্তি, যেগুলো স্বাভাবিক চোখে ধরা পড়ে না। ফলস কজ ফ্যালাসি বিভিন্নরকম হয়।
যে কোনো দুইটি ঘটনার মধ্যে বিভিন্নভাবে সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সম্পর্কটি অনেকসময়ে ‘কজ অ্যান্ড ইফেক্ট’-এর সম্পর্ক হতে পারে। আবার, অনেকসময় তা শুধুমাত্র কাকতালীয়ও হতে পারে। এরকম সম্পর্ককে ‘কোরিলেশন’ (correlation) বলা হয়। এরকম কোরিলেশন দেখেই তাদের মধ্যে কজ্যালিটির সম্পর্ক আছে অর্থাৎ, একটির জন্যে আরেকটি ঘটছে এরকম উপসংহারে পৌঁছানো একটি যুক্তিগত ভুল।
তাদের মাঝে কজ্যালিটির সম্পর্ক থাকতে পারে, তবে যথেষ্ট অনুসন্ধান করে এরকম সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। শুধুমাত্র সম্পর্ক বিচার করে সিদ্ধান্তে পৌঁছালে তা একটি অপযুক্তি তৈরি করবে। কারণ, যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঝে কোরিলেশনের পাশাপাশি আরো অনেকগুলো উপাদান রয়েছে। যেমন: ঘটনাগুলোর প্রবাহ অর্থাৎ, কোন ঘটনাটির পরে কোনটি হয়েছে, ‘কারণ ঘটনা’টি ‘ফল ঘটনা’ তৈরি করতে একটি বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা অনুসরণ করে। তাছাড়াও, অনেকগুলো ঘটনার পেছনে শুধুমাত্র একটি কারণ কাজ করে না, অনেকগুলো কারণের একটি জটিল সন্নিবেশ থাকে। তাই শুধুমাত্র কোরিলেশন দিয়ে কোনো একটি ঘটনার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।
দুইটি ঘটনা ‘ক’ ও ‘খ’য়ের মধ্যে কয়েক ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে। যেমন: ‘ক’য়ের কারণে ‘খ’ ঘটেছে, ‘খ’য়ের কারণে ‘ক’ ঘটেছে, ‘ক’ এবং ‘খ’ উভয় ঘটনাই ভিন্ন কোনো ঘটনা ‘গ’য়ের কারণে ঘটেছে। ‘ক’ এবং ‘খ’ পরস্পর একটি অপরটির কারণে ঘটেছে অথবা ‘ক’ ও ‘খ’য়ের মধ্যে কোনোরকম সংযোগ নেই, তাদের মধ্যকার কোরিলেশনটা শুধুমাত্রই একটি কাকতালীয় ঘটনা। তাই, বড় পরিমাণ ডেটা থেকেও যদি দুইটি ঘটনার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ কোরিলেশন পাওয়া যায়, চট করেই কজ্যালিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা ভুল হবে। কিছু উদাহরণ দেখা যাক।
খয়ের কারণে ক ঘটেছে (reverse causality)
এই ফ্যালাসিতে ‘কজ অ্যান্ড ইফেক্ট’-এর ক্রমকে উলটে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ‘কারণ ঘটনা’কে ‘ফল ঘটনা’ হিসেবে দেখা হয় এবং ‘ফল’কে ‘কারণ’ হিসেবে। একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যাদের বার্ষিক আয় অনেক বেশি, তাদেরকে বেশি সুখী অবস্থায় দেখা যায়। এখান থেকে সহজেই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, বেশি আয়ের ফলে তারা জীবনে সুখী হয়। কিন্তু, সুখী মানুষ যেকোনো কিছুতে সহজে মনোনিবেশ করতে পারে। ফলে, যেকোনো দক্ষতা তৈরিতে তারা বাকিদের চেয়ে দ্রুত হয়। এরকম দক্ষতাগুলোই বাকিদের তুলনায় তাদের বেশি আয়ের পথ সুগম করে দেয়। তাই, বেশি আয় সুখী হওয়ার কারণ নয়, বরং সুখী মানুষের জন্যেই বেশি আয়ের পথ সুগম হয়।
ক এবং খ উভয়েই গ’য়ের কারণে ঘটেছে (the common-causal variable)
এই ফ্যালাসিতে মনে করা হয় যে, ‘ক’ ঘটনার কারণে ‘খ’ ঘটেছে যেখানে ‘ক’ এবং ‘খ’ উভয়েই ভিন্ন একটি ঘটনা ‘গ’য়ের ফলাফল। অনেক সময় ‘গ’ ঘটনাটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই কারণে, এই ঘটনাটির ব্যাপারে সাধারণত মানুষের ধারণা কম থাকে।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ছোট বাচ্চার ঘুমের সময়ে বাতি জ্বালানো থাকে, তাদের মায়োপিয়া (হ্রস্বদৃষ্টি, কাছের জিনিস দেখতে পেলেও দূরের জিনিস দেখতে পায় না) হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখান থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্ত নিলেন, বাতি জ্বেলে ঘুমানো মায়োপিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ। পরবর্তীতে গবেষণার ফলাফলটি নেচার সাময়িকীর ১৯৯৯ সালের একটি সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছিল। ঐ সময়ে গবেষণাটি সংবাদ মাধ্যমে বেশ ভালো কভারেজ পেয়েছিল।
পরবর্তীতে ওহায়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাডিতে পাওয়া যায় যে, যেসব মা অথবা বাবার মায়োপিয়া রয়েছে, তাদের বাচ্চাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার, মায়োপিয়া আক্রান্ত মা-বাবার তাদের বাচ্চাদের রুমে আলো জ্বেলে রাখার অভ্যাস রয়েছে। এভাবে, মা-বাবার মায়োপিয়া একইসাথে তাদের বাচ্চাদের রুমে আলো জ্বেলে রাখা এবং বাচ্চাদের মায়োপিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে কাজ করে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটি এই কারণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
সিংগেল কজ ফ্যালাসি
অধিকাংশ ঘটনা পরিক্রমাতেই একটি নির্দিষ্ট ঘটনার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রবৃত্তিগতভাবেই কারণগুলোকে অনেক সহজভাবে বুঝার চেষ্টা করে। ফলে, তারা ঘটনাগুলোর পেছনে একটিমাত্র কারণই খুঁজে পায়। একে ‘সিংগেল কজ ফ্যালাসি’ বলা হয়। প্রাসঙ্গিকভাবেই, বিখ্যাত রাশিয়ান লেখক লিও টলস্টয়ের উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ থেকে একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা যায়। একটি আপেল মাটিতে পড়ার মতো সহজ ঘটনাও কতোগুলো ঘটনার জটিল সন্নিবেশ তিনি তা চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন।
When an apple has ripened and falls, why does it fall? Because of its attraction to the earth, because its stalk withers, because it is dried by the sun, because it grows heavier, because the wind shakes it, or because the boy standing below wants to eat it?
Nothing is the cause. All this is only the coincidence of conditions in which all vital organic and elemental events occur. And the botanist who finds that the apple falls because the cellular tissue decays and so forth is equally right with the child who stands under the tree and says the apple fell because he wanted to eat it and prayed for it.
বিখ্যাত দার্শনিক থমাস হবস চিহ্নিত করেছেন, মানুষ শুধুমাত্র সবচেয়ে প্রত্যক্ষ কারণটি উপলদ্ধি করতে পারে। বিবর্তনগত মনোবিদ্যা থেকে এই ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের মন সেই বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি মনে রাখে এবং গুরুত্ব দেয়, যেগুলো আমরা নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করতে পারি। যে বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা মনে রাখতে পারি না।
টলস্টয়ের আপেলের উদাহরণটি ব্যাখ্যা করে বলা যায়, যে উপাদানগুলো স্থির ছিল এবং আমাদের পরিবর্তন করার সাধ্যের বাইরে সেগুলো কারণ বিশ্লেষণের সময়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা চিন্তা করতো না। যেমন: মহাকর্ষ। কিন্তু বাতাসের প্রবাহের মতো ভ্যারিয়েবলগুলো, যেগুলো নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করার সুযোগ অনেক বেশি, সেগুলোর মধ্যেই শুধু আমাদের মস্তিষ্ক কারণ খোঁজার চেষ্টা করে। এভাবে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমরা শনাক্ত করতে পারি না। এই ধরনের বিবর্তনগত ভাবনা আমাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধকে নিঃসম্বল করেছে।
পোস্ট হক ফ্যালাসি
একটি ঘটনার পরে আরেকটি ঘটনা ঘটার ফলে, প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা আরেকধরনের ফ্যালাসি, যার নাম ‘পোস্ট হক ফ্যালাসি’। এখানেও যুক্তিগত মূল সমস্যাটি হচ্ছে, কোরিলেশন এবং কজেশনের মধ্যেকার অপ্রমাণিত সাদৃশ্য স্থাপনের চেষ্টা। একটি বিখ্যাত উদাহরণ দেওয়া যাক।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সম্রাট একজন ভক্তকে একটি নির্দিষ্ট জার্সি উপহার দেওয়ার পরে, তার পারফরম্যান্সে কিছু ভাটা পড়ে। পরবর্তীতে, জার্সিটি ফেরত নেওয়ার পরে তার পারফরম্যান্স আবার ভালো হয়ে যায়। এই কারণে জার্সিটি উপহার দেওয়া তার পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে অনেক জায়গায় দাবি করা হয়েছিল। একইরকমভাবে, জার্সিটি ফেরত নেওয়া পারফরম্যান্স ঠিক হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে, ফেরত পাওয়া জার্সিটি নকল ছিল।
বিজ্ঞান গবেষণার অনেক ঘটনায় পোস্ট হক ফ্যালাসি খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন: দীর্ঘসময় ধরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পর্যবেক্ষণে দেখা গেল, যারা রাতে খুব বেশি সময় বাইরে কাটায়, তারাই ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে। এর পরে, পোস্টহক যুক্তি দিয়ে ধারণা করা হয়েছিল, রাতের বাতাস ম্যালেরিয়ার কারণ। শুধুমাত্র কিছু বিজ্ঞানীর সন্দেহপ্রবণতা ও তাদের অনেকগুলো এক্সপেরিমেন্টের ফলে ধারণাটি পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। আজকে আমরা সবাই জানি যে, অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়ায়।
পোস্টহক রিজনিংয়ের কারণে অনেকসময়ে অনেক যুক্তি ‘সিংগেল কজ ফ্যালাসি’তে রূপ নেয়। কিন্তু, যুক্তিটি যেহেতু পুরোপুরি মিথ্যা না, তাই একে ‘ইনফ্লেটেড কজ্যালিটি’ (inflated causality) বলা হয়। এরকম কিছু উদাহরণ হচ্ছে:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পেছনে কারণ ছিল হিটলারের ইহুদী ঘৃণা।
জন এফ. কেনেডি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিচার্ড নিক্সনকে হারিয়েছিলেন শুধুমাত্র টেলিভিশনের বিতর্কটি জেতার ফলে।
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ হয়েছিল দাসত্ব সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে।
টেক্সাস শার্পশ্যুটার ফ্যালাসি
এই ফ্যালাসিকে অনেকসময় ‘ক্লাস্টারিং ইল্যুশন’ও বলা হয়। একটি কাল্পনিক ঘটনা থেকে এর নামকরণ হয়েছে। একজন বন্দুকধারী কোনো একটি গুদামঘরের দেয়ালে এলোপাথাড়ি কিছু গুলি করলো। এরপরে সে টার্গেটটি আঁকলো এমন জায়গায়, যেখানে তার গুলিগুলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আঘাত করেছে। লক্ষ্যণীয় যে, বন্দুকধারী এই টার্গেট বরাবর গুলি করেনি কিন্তু বাইরে থেকে কেউ এসে তা দেখলে ভাববে যে, ওইটাই তার নিশানা ছিল এবং সে চমৎকারভাবে নিশানা করতে পেরেছে। এভাবে ভুল উপসংহারে পৌঁছানো খুব সহজ।
যখন ডেটার মধ্যে পার্থক্যগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সাদৃশ্যগুলোতে জোরদার করা হয় তখন এভাবে ভুল উপসংহার তৈরি হয়। বাস্তব পৃথিবীতে ডেটা অনেক এলোমেলো হয়। সবরকম ডেটার মধ্যে সাদৃশ্য বা প্যাটার্ন থাকে না। কিন্তু এই ফ্যালাসির মাধ্যমে এরকম এলোমেলো ডেটাতেও জোর করে প্যাটার্ন খুঁজে বের করা হয়। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
ইলেকট্রিক পাওয়ার লাইন কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে কিনা, সে ব্যাপারে সুইডেনে একটি জরিপ হয়েছিল। ২৫ বছর ধরে হাই ভোল্টেজ লাইনের ৩০০ মিটার আশেপাশে তারা জরিপটি চালিয়েছিল। তাদের পর্যবেক্ষণে এসেছিল, যারা পাওয়ার লাইনের সবচেয়ে কাছে বাস করে, সেসব বাচ্চার চাইল্ডহুড লিউকেমিয়া চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু, তারা ৮০০টি রোগের ব্যাপারে নজর রেখেছিল। এই তালিকার একটি রোগও যদি কাকতালীয়ভাবে ঐ এলাকাগুলোতে ধরা পড়ে, তাহলেও জরিপটিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এরকম ফলাফল দেখা যাবে। এতগুলো রোগের মধ্যে কাকতালীয়ভাবে হলেও যেকোনো একটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এভাবে, জরিপটি ফলাফল ভুল আসা খুবই স্বাভাবিক। এরকম ব্যাপারকে ‘মাল্টিপল কমপ্যারিজন প্রবলেম’ বলা হয়। সুইডেনের গবেষকদের জরিপটি ডিজাইন করার মধ্যে ভুল ছিল। পরবর্তীকালের অনেকগুলো গবেষণাই চাইল্ডহুড লিউকেমিয়ার সাথে পাওয়ার লাইনের সম্পর্কের দাবিটি প্রত্যাখ্যান করেছিল।
অ্যাসোসিয়েশন ফ্যালাসি
দুইজন ব্যক্তি অথবা দুইটি ঘটনার মধ্যে কোনোরকম সাদৃশ্য থাকলে, তাদের অন্যসব কিছুতে জোর করে সাদৃশ্য স্থাপন করলে সেটাকে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফ্যালাসি’ বলে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
‘A’ হচ্ছে ‘B’য়ের অন্তর্ভুক্ত।
আবার, ‘A’ হচ্ছে ‘C’য়ের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, সকল ‘B’ এবং ‘C’ একই।
ভেন ডায়াগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ করলে এই যুক্তির মধ্যকার ফ্যালাসিটি বুঝতে সহজ হবে।
এখানে, ‘A’ হচ্ছে ‘B’ ও ‘C’ সেটের সাধারণ (common) অংশ। কিন্তু ‘B’ ও ‘C’ উভয়ের সীমাই ‘A’ এর চেয়ে অনেক বড়। এবং সে জায়গাগুলোতে তারা ভিন্ন। শুধুমাত্র ‘A’য়ের সীমার মধ্যেই তাদের সাদৃশ্যটুকু বজায় রয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফ্যালাসির সাধারণত দুইরকম রূপ দেখা যায়। একটি হচ্ছে, ‘গিল্ট বাই অ্যাসোসিয়েশন’ (guilt by association) এবং অন্যটি হচ্ছে ‘অনার বাই অ্যাসোসিয়েশন’ (honor by association)। গিল্ট বাই অ্যাসোসিয়েশনের একটি বহুল প্রচলিত উদাহরণ হচ্ছে।
তাহমিদ প্রতিভাবান।
তাহমিদ বাঁ হাতি।
বাঁ হাতি মানুষেরা প্রতিভাবান।
অন্যদিকে, অনার বাই অ্যাসোসিয়েশনের সবচেয়ে বেশি প্রচলন দেখা যায় বিজ্ঞাপন মাধ্যমগুলোতে। সাধারণত, বিখ্যাত সেলেব্রিটি অথবা আকর্ষণীয় মডেলদের মাধ্যমে যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন করা হয়। সেখানে তারা পণ্যটির নানা গুণগান গায়। এরকম সেলেব্রিটিদের জনপ্রিয়তা অথবা, মডেলদের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণের ফলে পণ্যটিকেও গুণগতভাবে ভালো মনে হয়। সাধারণভাবে মানুষের মনে হয় যে, তারা সত্য বলছে।
ফলস কজ ফ্যালাসি আমাদের যুক্তিগত চিন্তাগুলো দূর্বল করে দেয়। সত্যিকার পৃথিবী সম্পর্কে আমাদের ধারণাটি অনেক বেশি কৃত্রিম হয়ে যায়। তাই, যেকোনো চিন্তা ও যুক্তিচর্চায় এই ফ্যালাসি সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা উচিত।