
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী পরিচালক (সিইও) সুজান ওজিস্কি তার পদ থেকে সরে দাঁড়াবার ঘোষণা দিয়েছেন, এবং ইউটিউব পেতে চলেছে নতুন একজন সিইও। এই খবর যতটুকু সাড়া ফেলতে পারত, তার চেয়ে অনেকগুণ সাড়া ফেলেছে নতুন সিইও-র নাম, নীল মোহন– যিনি একজন ভারতীয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভারতীয়দের দাপট আরো বাড়ল। মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা, অ্যাডোবির সান্তনু নারায়ণ, আর অ্যালফাবেটের সুন্দর পিচাইয়ের মতো ভারতীয় সিইওদের অভিজাত তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নীল মোহনের নাম। কে এই নীল মোহন?
নীল মোহনের বেড়ে ওঠা ভারতের লক্ষ্ণৌ শহরে। লক্ষ্ণৌয়ের হযরতগঞ্জের সেন্ট ফ্রান্সিস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে মোহন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান উচ্চশিক্ষার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবনের শুরুর দিকে আমেরিকান ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডাবলক্লিকে কাজ করেন মোহন। কোম্পানিটি ২০০৭ সালে কিনে নেয় গুগল। মোহনের ইউটিউবে আসার যাত্রা শুরু পরের বছর, ২০০৮ সালে, যে বছর গুগলে যোগ দেন তিনি। পরবর্তী ৮ বছর তিনি গুগলের ডিসপ্লে এবং ভিডিও বিজ্ঞাপন সেকশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরই মাঝে মোহন অবশ্য মাইক্রোসফটেও কাজ করেছেন, দায়িত্বে আছেন টুয়েন্টিথ্রি অ্যান্ড মি নামক একটি বায়োটেক কোম্পানির বোর্ড সদস্য হিসেবেও। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসেরও সদস্য মোহন।
মোহন ইউটিউবে যোগ দেন ২০১৫ সালে, চিফ প্রোডাক্ট অফিসার হিসেবে। তার নেতৃত্বে বিশ্বমানের ইউএক্স এবং প্রোডাক্ট টিম গঠন করে ইউটিউব, বাজারে আনে ইউটিউব টিভি, ইউটিউব মিউজিক, প্রিমিয়াম এবং শর্টস-এর মতো কিছু জনপ্রিয় ফিচার। বলা বাহুল্য, নিজের কাজের সাফল্যের মাধ্যমেই বৈশ্বিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মটির সর্বোচ্চ পদে বসতে চলেছেন এই ভারতীয়। বিজনেস ইনসাইডারের ২০১৩ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ইউটিউবের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার হবার পূর্বে অনুরূপ পদের জন্য টুইটার নিতে চেয়েছিল মোহনকে। কিন্তু গুগল কর্তৃপক্ষ ইউটিউবের ভবিষ্যৎ কর্মধারকে চিনতে ভুল করেনি। তাই ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে মোহনকে ধরে রাখে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে আরো একজন স্বদেশী সিইও পেয়ে দারুণ খুশি ভারতীয়রা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নীল মোহনের কলেজের সতীর্থরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এই সংবাদে। মোহনের জন্য উচ্ছ্বসিত সমর্থন জানিয়েছেন বিদায়ী সিইও সুজানও। এক টুইট বার্তায় তিনি মোহনকে প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক মানসিকতার বিরল সংমিশ্রণ বলে উল্লেখ করেছেন। শীঘ্রই সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন মোহন।