Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি: সন্তানের প্রতিরক্ষায় করণীয়

লিভারের সাথে সম্পর্কিত একটি রোগ হলো ‘হেপাটাইটিস’। চিকিৎসাবিজ্ঞানে লিভার বুঝাতে ‘হেপাটো’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হেপাটোসাইট মানে লিভারের কোষ, হেপাটিক মানে লিভার সম্পর্কিত কোনো কিছু, হেপাটাইটিস মানে লিভারে কোনো জীবাণু দ্বারা আক্রমণ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক রোগের নামের শেষে ‘আইটিস’ অংশটুকু পাওয়া যাবে, যেমন- আর্থ্রাইটিস, কনজাংক্টিভাইটিস, প্লুরাইটিস। ‘আইটিস’ অংশ থাকা মানেই বুঝতে হবে এই অংশ জীবাণু দ্বারা প্রদাহের সৃষ্টি হয়েছে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস; Source: std-gov.org

হেপাটাইটিস রোগটি হয়ে থাকে হেপাটাইটিস ভাইরাস দ্বারা। যেহেতু আক্রমণটা হয়ে থাকে লিভারের উপর, সেহেতু একে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। হেপাটাইটিস ভাইরাস রয়েছে চার ধরনের; এ, বি, সি, ডি, ই। হেপাটাইটিস বি মানুষের মাঝে খুব দেখা যায়, তাই সারা দেশে ভ্যাক্সিন নিতে উৎসাহ প্রদান করা হয়, যদি সময়মতো সঠিক মাত্রায় ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকে, তাহলে কোনো ভয় নেই। একবার হেপাটাইটিস হয়ে গেলে তখন ভ্যাক্সিনে আসলে কোনো উপকার হবে না, সারা জীবন ভোগাবে। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব প্রচুর, তাই হেপাটাইটিস বি রোগটিও অনেক দেখা যায়, এর মূল কারণ সময়মতো ভ্যাক্সিন না নেওয়া। এই রোগের ভ্যাক্সিনের আবার একটি বিশেষত্ব রয়েছে, পাঁচ বছর পর বুস্টার ডোজ নিতে হয়, এই বুস্টার ডোজের কথা কারো মনে থাকে না। ফলস্বরূপ, আর নেওয়া হয় না। এমন না যে, না নিলে আপনি আজকেই এই রোগে আক্রান্ত হবেন। আপনার শরীরে রয়েছে ভ্যাক্সিন, সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, এই বুস্টার ডোজের উদ্দেশ্যই হলো ভ্যাক্সিনটিকে আবারো সতেজ করে তোলা।

হেপাটাইটিস ভাইরাসের পাঁচটি সাবটাইপের চেহারা; Source: gambarkatakata.xyz

আরো একটি ধারণা রয়েছে, হেপাটাইটিস রোগকে ‘জন্ডিস হয়েছে’ বলে সম্বোধন করার। পেপটিক আলসারকে বলা হয় ‘গ্যাস্ট্রিক’ হয়েছে, অ্যাপেন্ডিসাইটিস কে বলা হয় ‘অ্যাপেন্ডিক্স’ হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘গ্যাস্ট্রিক’ মানে হলো স্টোমাক কিংবা পাকস্থলী। রোগটির আসল নাম পেপটিক আলসার। আর বৃহদান্ত্রের অতিক্ষুদ্র এক অংশের নাম অ্যাপেন্ডিক্স, এতে যখন জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে, তখন চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডাকা হয় ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিস; আবারো সেই ‘আইটিস’।

জন্ডিসের দরুণ শিশুটির ত্বকে হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে আছে; Source: expertchikitsa.com

তবে এমন না যে, ‘জন্ডিস’ কোনো অঙ্গের নাম, কোনো রোগ নয়। জন্ডিসও একটি রোগ, তবে হেপাটাইটিস রোগের একটি লক্ষণ হলো জন্ডিস। বিলিরুবিন জমে ত্বক, চোখ, প্রস্রাব সবই হলুদাভ হতে শুরু করে জন্ডিস হলে। হলুদ রং দেখতে পাওয়াটাই জন্ডিস। হেপাটাইটিস রোগে যেহেতু ত্বক হলুদ দেখতে পাওয়া যায়, তাই এই জন্ডিস লক্ষণ দেখেই হেপাটাইটিস সন্দেহ করে থাকেন চিকিৎসকগণ। এছাড়াও হেপাটাইটিস রোগে আরো অনেক লক্ষণ দেখা যায়, আর জ্বর হলো সকল রোগের সাধারণ লক্ষণ। তাছাড়া জ্বর কোনো রোগ নয়, আমাদের শরীরের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাম জ্বর।

হেপাটাইটিস রোগের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কারো গর্ভাবস্থায় যদি তার রক্তে হেপাটাইটিস বি পজিটিভ পাওয়া যায়, তখন করণীয় কী কী হবে, এই ব্যাপারে এই লেখাটি। সাবধানতার কথা আগেই বলা হয়েছে, মানুষ যদি সাবধান হয়ে চলতে শেখে, আমাদের দেশ থেকে অর্ধেক রোগ বিদায় নেবে। এই হেপাটাইটিস রোগের ক্ষেত্রে অসাবধানতাই ভাইরাসটির মূল অস্ত্র। যা-ই হোক, সকলেরই এই ব্যাপারে জানার আগ্রহ থাকে বেশি যে, মায়ের যদি হেপাটাইটিস বি পজিটিভ থাকে, তাহলে সন্তানে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে কিনা কিংবা সন্তানের রক্তেও জন্মের পর হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পাওয়া যাবে কিনা। যেহেতু মায়ের রক্তে ভাইরাসটি অবস্থান করছে আর মায়ের রক্তই সন্তানে প্রবেশ করে প্লাসেন্টা হয়ে, সেহেতু ভাইরাসটি সন্তানের দেহে প্রবেশ করাটাই স্বাভাবিক। ভাইরাস রক্তে রয়েছে মানে এই ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনও কাজে আসবে না, তাই মাকে হেপাটাইটিস রোগের সাধারণ চিকিৎসা করা হয়ে থাকে, যাতে করে সন্তানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

হেপাটাইটিস ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ মানুষে ছড়ানোর মাধ্যমগুলো; Source: w3phpdug.info

এখানে একটি ‘কিন্তু’ রয়েছে, হেপাটাইটিস ভাইরাসের সুপ্তিকালে যদি সন্তান গর্ভে চলে আসে, তাহলে সন্তানে অতটা ছড়াতে পারে না। সুপ্তিকালকে সোজা বাংলায় বলা যায় ভাইরাসটি ঘুমিয়ে রয়েছে, কোনো কাজ করছে না দেহে, এমনকি বংশবৃদ্ধিও রহিত। যেহেতু কিছুই করছে না, তাই সন্তানের দেহে প্রবেশ করাটাও দুষ্কর। অধিকাংশ সময়েই সন্তান সুপ্তিকালে গর্ভে এসে থাকে, কেননা তখন বাহক মায়ের শরীরে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না এই রোগের। ভাইরাস যদি লক্ষণ প্রকাশ করে, তাহলে সন্তান নেওয়ার কথা নয় কারো।

আর যদি গর্ভবস্থায় রক্তে অ্যাকটিভ ভাইরাস পাওয়া গিয়েই থাকে, তবেও নিশ্চিত করে বলা যায় না, সন্তানে তা ছড়াবেই। রক্তে যদি উচ্চমাত্রায় ভাইরাসের উপস্থিতি থেকে থাকে, তবেই কেবল তা সন্তানের দেহে প্লাসেন্টা পার হয়ে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। এমতাবস্থায় আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করা যেতে পারে Tenofovir Disoproxil Fumarate ট্যাবলেট দ্বারা। সন্তান জন্মের পূর্বে আট থেকে বারো সপ্তাহ এবং সন্তান জন্মের পর চার থেকে বার সপ্তাহ পর্যন্ত এই ট্যাবলেট সেবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে সাধারণত। এই ট্যাবলেটটি রক্তে ভাইরাসকে বংশবৃদ্ধিতে অক্ষম করে তোলে। একই সাথে ভাইরাস যেন প্লাসেন্টা পেরিয়ে ফিটাসের দেহে প্রবেশ করতে না পারে, সেই ব্যাপারটিও নিশ্চিত করে।

Source: globalpharmaceutical.vn

এ তো গেলো মায়ের চিকিৎসা, মায়ের চিকিৎসা করেই পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হয়ে থাকা উচিৎ নয়। সন্তানের দেহে যাতে এই ভাইরাস প্রবেশ করে জন্মের পরপরই কিংবা ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেই ব্যাপারও নিশ্চিত করতে হবে।

জন্মের সাথে সাথেই সন্তানকে দুটি ইনজেকশন দিতে হয়। একটি হলো হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ। প্রথম ডোজ দিয়ে বসে থাকলেই কিন্তু হবে না, নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্ধারিত সময়ে সবগুলো ডোজ দেয়া উচিৎ। নচেৎ এই ভ্যাক্সিন কোনো উপকারেই আসবে না। আরেকটি ইনজেকশন হলো হেপাটাইটিস বি ইমিউনোগ্লোবিউলিন। যেহেতু নবজাতকদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জন্মের সাথে সাথেই শক্তিশালী থাকে না, সেহেতু কৃত্রিমভাবেই এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে হয় ইমিউনোগ্লোবিউলিন সন্তানে প্রবেশ করিয়ে।

Source: sidra.org

আর এই ইনজেকশন দিতে দেরি না করে জন্মের বার ঘণ্টার মাঝে দেওয়াটাই বরং উত্তম। ভাইরাস যদি রক্তে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়, ছড়িয়ে পড়ে, তখন কিন্তু একে দমানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। চিকিৎসাবিজ্ঞান কিন্তু গড়েই উঠেছে এই প্রতিহত করার ব্যবস্থাকে ভিত্তি হিসেবে। না হয় এসব অতিক্ষুদ্র জীবাণুকে ধ্বংস করে ফেলা এতটা সহজ ব্যাপার নয়। এই যে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় শরীরে, এটি কিন্তু কোনো ভালো জিনিস নয়, আপনাকে ক্ষতি করতে অক্ষম এমনি কিছু জীবন্ত হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আপনার শরীরে ভ্যাক্সিনের নামে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। মানুষের রক্তে একধরনের কোষ রয়েছে T-lymphocyte। এই কোষটি ভাইরাসগুলোকে চিনে রাখে, মুখস্থ করে রাখে। শরীরে যখনই এই ভাইরাস দেখা যাবে, কোষটি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জানান দেয়, এই যে পেয়েছি ব্যাটাকে! প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখন নিমিষেই সব ভাইরাস ধ্বংস করে শরীরকে রক্ষা করে। এই হলো ভ্যাক্সিন দেওয়ার সার্থকতা।

Source: wikimedia.org

হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ জন্মের বারো ঘণ্টার মাঝে দেওয়া হলো, বাকি ডোজগুলো ষষ্ঠ সপ্তাহ, তৃতীয় আর পঞ্চম মাসে দিতে হয়। ডোজগুলো দিয়ে পুরো ভ্যাক্সিন কোর্স সচেতনতার সাথে পূর্ণ করা উচিৎ সকলের। একটি কথা, নবজাতক শিশুর জন্য এই পৃথিবী সবথেকে প্রতিকূল অবস্থায় বিরাজ করে, শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠতে উঠতে অনেক সচেতন থাকতে হয় বাবা-মাকে।

হেপাটাইটিস বি সক্রিয় থাকা অবস্থায় সন্তানকে তার মা বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে, মায়ের সাথে সন্তানের রক্তের আদান-প্রদান না হলেই হলো।

সর্বশেষে, মায়ের হেপাটাইটিস বি চিকিৎসায় পূর্বে উল্লেখিত টেনোফোভির ডাইসোপ্রক্সিল ফিউমারেট চলতে থাকে। তবে সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর নির্দিষ্ট পর্ব শেষে টেনোফোভির-এর পরিবর্তে Entecavir দ্বারা চিকিৎসা শুরু করা হয়।

ফিচার ইমেজ- cityofhope.org

Related Articles