১৯৩০ সাল; কৃষক উইলিয়াম বেটির বন্দুকের গুলিতে পৃথিবীর শেষ বন্য থাইলাসিনও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল! ১৯৩৬ সালে হোবার্টের বিউমেরিস চিড়িয়াখানায় মারা যাওয়া একটি থাইলাসিনকে অবশ্য পৃথিবীর সর্বশেষ জীবন্ত থাইলাসিন মনে করা হয়। উনিশ শতকে অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের সময়ই মূলত থাইলাসিন নিধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভেড়া প্রতিপালনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অদ্ভুত এই মাংসাশী প্রাণী। কুকুরের মতো মাথা আর ক্যাঙারুর ন্যায় থলে থাকলেও পিঠের দিকে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগের কারণে ব্রিটিশদের কাছে ‘তাসমানিয়ান টাইগার’ নামেই পরিচিতি পায় থাইলাসিনরা।
মানুষের কর্মকাণ্ডে বিলুপ্ত এই প্রাণীকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যানড্রিউ পাস্ক ও তার সহকর্মীরা এবং আমেরিকান বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ‘কলোসাল’ এর যৌথ উদ্যোগে চলছে গবেষণা। ইতোমধ্যে ১১০ বছর আগের সংরক্ষিত একটি থাইলাসিনের নমুনা থেকে এর সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্স করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথমবার বিলুপ্ত থাইলাসিনের ডিএনএ জীবিত কোষে প্রবেশ করান বিজ্ঞানীরা। জিনোম সম্পাদনার মাধ্যমে ইঁদুরের দেহে থাইলাসিনের ডিএনএ প্রবেশ করিয়ে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেন- রীতিমতো কাজ করছে বিলুপ্ত এই থাইলাসিনদের ডিএনএ!
পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ থাইলাসিনকে ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানীরা ডুনার্ট (Dunnart) নামের ক্ষুদ্র এক মারসুপিয়াল প্রাণীর জিনোম সম্পাদনার সিদ্ধান্ত নেন। ডুনার্ট ও থাইলাসিন উভয়েই মারসুপিয়াল প্রাণী ও এদের জিনোমে শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি মিল রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ডুনার্টের স্টেম কোষ সংগ্রহ করে ৫ ভাগ জিনোমের এ অমিলকে সম্পাদনা করে থাইলাসিনের অনুরূপ করার চেষ্টা করবেন। এরপর ডুনাটের ডিম্বাণুতে সম্পাদিত এ স্টেম কোষের নিউক্লিয়াস প্রবেশ করিয়ে তৈরি ভ্রূণকে একটি বাহকের দেহে স্থাপন করা হবে, যেখান থেকেই জন্ম নেবে একটি তাসমানিয়ান টাইগার! মারসুপিয়ালদের গর্ভকাল মাত্র ১৪ দিন হওয়ায় বিজ্ঞানীরা আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে একটি পূর্ণাঙ্গ থাইলাসিন ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন বলে মনে করছেন!
থাইলাসিনদের যদি ফিরে আনা সম্ভবও হয়, তাহলে কি তারা আগের মতো বিস্তার লাভ করতে পারবে? নাকি আবারও থাইলাসিনদের ব্যাপক বিস্তৃতি অস্ট্রেলিয়াবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে?