ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া: যে রোগে আক্রান্ত হলিউড তারকা ব্রুস উইলিস

‘ডাই হার্ড’ মুভি ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ব্রুস উইলিস পরিচিত এক নাম। নব্বইয়ের দশকে অ্যাকশন তারকা হিসেবে নাম কামিয়েছেন তিনি। তার অভিনীত ছবিগুলো সব মিলিয়ে আয় করেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার। যদিও নানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রুস, তারপরও পর্দায় তার অ্যাকশনই মানুষ মূলত মনে রেখেছে।

ব্রুস উইলিস; image source: cbsnews.com

যদিও হিট নায়ক হিসেবে তার সৌভাগ্যের সূর্য অস্তমিত হয়েছে বহু আগেই, তারপরও ষাটোর্ধ্ব এই অভিনেতা করোনার সময়েও কাজ করে যাচ্ছিলেন। তবে তাতে ছেদ পড়েছে গত মার্চে। তার পরিবার থেকে ঘোষণা দেয়া হয়- তিনি অভিনয় থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে তিনি অ্যাফাশিয়ায় (Aphasia) ভুগছেন, যার কারণে ঠিকভাবে কথাবার্তা বলতে সমস্যা হচ্ছে তার। অ্যাফাশিয়া নিজে কিন্তু রোগ নয়, বরং রোগের লক্ষণ। স্ট্রোকের রোগীদের অনেক সময়েই এটা দেখা যায়। ব্রুস উইলিসের অ্যাফাশিয়া শনাক্ত হবার পর চিকিৎসকেরা এর পেছনের কারণ বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

গত সপ্তাহে ব্রুস উইলিসের প্রাক্তন স্ত্রী অভিনেত্রী ডেমি মুর, তার বর্তমান স্ত্রী এমা হেমিং ও তার পাঁচ সন্তান অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিজেনারেশন (Association for Frontotemporal Degeneration) সংস্থার ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে জানানো হয়- চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেছেন ব্রুস উইলিস আক্রান্ত ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া (Frontotemporal dementia) নামে এক রোগে, যেখান থেকে তার অ্যাফাশিয়ার সূত্রপাত।

ব্রুস উইলিসের পরিবার তার রোগের ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছেন; image source: lindaikejisblog.com

ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া

আমাদের মাঝে অনেকেই ডিমেনশিয়া বিষয়ে কিছুটা হলেও ওয়াকিবহাল। ডিমেনশিয়া নির্দিষ্ট কোনো রোগ নয়, বরং একটি অবস্থা যখন মানুষের স্মরণশক্তি, কথাবার্তা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, সামাজিক রীতিনীতি পালন ইত্যাদিতে সমস্যা দেখা দেয়। এতে দৈনন্দিন কাজকর্মে অক্ষম হয়ে পড়তে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি। যেসব কারণে ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে তার একটি এই ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬৫ বছরের নিচে ডিমেনশিয়ার দ্বিতীয় প্রধান কারণ এই রোগ। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে শতকরা ২৫ ভাগ ডিমেনশিয়াও এর কারণে হয়ে থাকে।

কেন হয় এই রোগ?

এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়নি রোগের ইতিবৃত্ত। তবে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন- মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল এবং টেম্পোরাল অংশ বা লোবের ক্ষয় হয় এই রোগে। ফলে নিউরনের সংখ্যা কমে যায় এবং টিকে থাকা নিউরনগুলোও ক্রমশ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। এজন্য তারা দায়ী করেছেন সেখানে টাউ এবং টিডিপি (Tau and TDP-43) প্রোটিন জাতীয় পদার্থের অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হওয়াকে। এক-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জিনগত কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে।

ফ্রন্টাল ও টেম্পোরাল লোব; Image source: nih.gov

প্রকারভেদ

লক্ষণ চিন্তা করলে প্রধানত দুই রকমের ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া হতে পারে। বিহেভিয়রাল (Behavioral) বা আচার-আচরণগত রোগে সামজিক দক্ষতা কমে যায়। রোগী ছোটখাট সমস্যা, যা কিনা আগে সহজেই সমাধান করতে পারেন, সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ক্রমানুসারে সাজিয়ে কিছু করতে কষ্ট হয় তার। বার বার একই কাজ করতে পারেন তিনি, কখনও কখনও অতি আগ্রাসী মনোভাবও প্রকাশিত হয়। পারিবারিক ও সামাজিক নানা ইস্যুতে আগে যেখানে সক্রিয় ছিলেন তিনি, সেখানে তৈরি হয় অদ্ভুত উদাসীনতা।

দ্বিতীয় প্রকার, যা কিনা ব্রুস উইলিসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষাগত। এক্ষেত্রে কথাবার্তা বলতে রোগীর কষ্ট হয়। কথা জড়িয়ে যেতে পারে, সমস্যা হতে পারে শব্দ তৈরিতে। সিম্যান্টিক (Semantic dementia) নামে এক বিশেষ রকম ডিমেনশিয়াও দেখা দেয়, যখন রোগী খুব সাধারণ জিনিসপত্রের নাম মনে করতে ব্যর্থ হন।  উদাহরণস্বরূপ, তাকে কলম দেখালে তিনি এর কাজ বলতে পারেন, কিন্তু জিনিসটাকে কী নামে ডাকা হয় সেটা মনে করতে পারেন না।

চিকিৎসা

ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া অনেক সময়েই অন্যান্য স্নায়ুরোগের সাথে সঙ্গী হিসেবে দেখা যায়, যেমন- মোটর নিউরন ডিজিজ অথবা পার্কিনসন্স। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যতীত এর শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। বিভিন্ন ইনভেস্টিগেশন, যেমন- মস্তিষ্কের এমআরআই করে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেলেও রোগীর ইতিহাস শুনেই আসলে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

চিকিৎসক এমআরআই করতে বলতে পারেন; Image source: practicalneurology.com

নিরাময়যোগ্য নয় এই রোগ। লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়, তবে বন্ধ করা যায় না রোগীর ক্রমাবনতি। ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে রোগী সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে যান। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রেখে সেবা দেয়াই তখন উত্তম, কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারী ব্যতীত রোগীর দেখাশোনা অত্যন্ত কঠিন। যদি অন্যান্য স্নায়বিক রোগ, যেমন- মোটর নিউরন ডিজিজও থাকে রোগীর, তাহলে সাধারণত দুই বছরের বেশি তারা বাঁচেন না। অন্যান্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিচর্যা করলে হয়তো দশ বছর বা ততোধিককাল জীবিত থাকতে পারেন রোগী।

This is a Bengali language article about frontotemporal dementia. Necessary references are hyperlinked and also mentioned below.

References
• Bruce Willis Biography; IMDB.
• Moreau, J. (2023). Bruce Willis Diagnosed With Dementia After Retiring Due to Aphasia. Variety.
• Butterfield, M. (2023). ‘This is painful’: Bruce Willis’ family says his condition has worsened. Global News.
• Warren JD, Rohrer JD, Rossor MN. Clinical review. Frontotemporal dementia. BMJ. 2013 Aug 6;347.
• Young JJ, Lavakumar M, Tampi D, Balachandran S, Tampi RR. Frontotemporal dementia: latest evidence and clinical implications. Ther Adv Psychopharmacol. 2018 Jan;8(1):33-48.

Feature Image: cnn.com

Related Articles

Exit mobile version