বিজ্ঞানীরা যখন নতুন কিছু আবিষ্কার করেন, তখন প্রয়োজন হয় প্রাণীর দেহে এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করার। এই পর্যবেক্ষণ ছাড়া সেই আবিষ্কার অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। এজন্য বিভিন্ন সময়ে গিনিপিগ, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রাণী ব্যবহৃত হচ্ছে পৃথিবীর ছোট-বড় ল্যাবরেটরিগুলোতে। এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি বছর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য প্রায় ১০ কোটি ইঁদুর বা গিনিপিগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পরের ধাপে বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট জনসংখ্যা বা নির্বাচিত কোনো মানুষের দেহে সেই আবিষ্কারের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন।
কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে কোনো ইঁদুর বা নির্বাচিত মানুষের উপর নির্ভর করেননি। বরং আবিষ্কারের নেশায় তারা নিজের দেহকে ব্যবহার করেছেন পর্যবেক্ষণের জন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা সফল হয়ে বিজ্ঞানমহলে আলোচনার ঝড় তুলে দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা পড়েছেন দুর্ঘটনার কবলে। অনেকক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে তাদের। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এই দুঃসাহস থেকে উন্মোচিত হয়েছে দুর্লভ আবিষ্কারের পথ। বেঁচে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ। সবদিক বিবেচনা করে এই Self Experimenting বিজ্ঞানের ইতিহাসে বেশ পুরানো এবং সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক পন্থা। আমাদের আজকের প্রবন্ধে চলুন জেনে আসি ইতিহাসখ্যাত সেই ঘটনাগুলো, যেখানে বিজ্ঞানীরা নিজেই নিজের গিনিপিগ হয়েছিলেন।
সান্তোরিও সান্তোরিও
ষোড়শ শতাব্দীর বিজ্ঞানী সান্তোরিও সান্তোরিও পেশায় একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি মানবদেহের বিভিন্ন কলাকৌশল নিয়ে বেশ কৌতূহলী ছিলেন। সেই কৌতূহলের জের ধরেই তিনি ১৫৬১ সালে শুরু করেন এক অদ্ভুত পরীক্ষা। তিনি ভর পরিমাপের মাপকাঠি সম্বলিত একটি চেয়ার নির্মাণ করেন। এরপর তিনি সে চেয়ারে বসে খাবার গ্রহণ করা শুরু করেন এবং মাপকাঠির পাঠ পরিবর্তন লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। তার উদ্দেশ্য ছিল- তিনি দৈনিক কতটুকু খাবার গ্রহণ করেন এবং খাবার হজমের ফলে দেহ কতটুকু ভর হারায়, তা পরিমাপ করা।
দিনের পর দিন তিনি সেই চেয়ারে বসে নিজের ভরের তারতম্য অবলোকন করতে থাকেন। তার এই অদ্ভুত পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ঘোষণা করলেন, খাবার হজমের পর প্রতিদিন গড়ে তার দেহের ভর প্রায় ০.৫ পাউন্ডের মতো হ্রাস পেয়েছে। তার এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের তেমন আগ্রহী করতে পারল না। প্রশ্ন উঠলো, তিনি যতটুকু খাবার গ্রহণ করলেন, তার থেকেও বেশি ভর হ্রাস পেল কীভাবে? সান্তোরিও এই প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি ধারণা করলেন, হয়তো শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভর হ্রাসের ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু, অনেকটা ধোঁয়াশা অবস্থায় এই আবিষ্কার সবার আগ্রহের কেন্দ্র থেকে হারিয়ে গেল। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের মঞ্চে এই আবিষ্কার বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সেদিন সান্তোরিও চেয়ারে বসে যা অবলোকন করেছিলেন, তা ছিল খাদ্য বিপাকের সাথে আমাদের প্রাথমিক পরিচয়। তার এই আবিষ্কারের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে জটিল খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গরূপে আবিষ্কারের পথ সুগম হয়েছে।
উইলিয়াম স্টার্ক এবং স্কার্ভি
অষ্টাদশ শতাব্দীতে নৌপথ ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান পথ। আর এই নৌপথে বছরের পর বছর জাহাজ ভাসিয়ে চলা নাবিকদের প্রাণ হারাতে হতো স্কার্ভি নামক এক রহস্যময় রোগের কারণে। স্কার্ভি নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের অন্ত ছিল না। স্কার্ভি নিরাময় আবিষ্কার করতে পারলে রাতারাতি বিখ্যাত বনে যাবেন যে কেউ। স্কার্ভির নিরাময় সন্ধানে নিয়োজিত ছিলেন জন প্রিঙ্গল, উইলিয়াম স্টার্কসহ আরো অনেকে। উইলিয়াম স্টার্ক বিশ্বাস করতেন, স্কার্ভি রোগীদের এক পদের আহার প্রদানের চেয়ে বিভিন্ন রকম সুষম আহার গ্রহণ করালে রোগের নিরাময় দ্রুততর হয়। তার এ তত্ত্ব প্রমাণের জন্য তিনি নিজেই সমুদ্র ভ্রমণের সময় এক পদের আহার গ্রহণ করা শুরু করেন। তার খাবারের তালিকায় ছিল মধুর পুডিং এবং পনির।1
১৭৬৯ সালে তিনি প্রথম স্কার্ভির উপসর্গ দেখতে পান নিজের দেহে। এরপর তিনি খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলেন এবং তার স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নত হয়। তিনি চেয়েছিলেন কিছু ফলমূল এবং শাকসবজি তার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করে স্কার্ভির উপর এদের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে। কিন্তু, তিনি পুনরায় সেই পুডিং-পনির রুটিনে ফেরত যান। দিন দিন তার অবস্থা অবনত হতে থাকে। শেষপর্যন্ত এই পরীক্ষা চালানো অবস্থায় তিনি ১৭৭০ সালে স্কার্ভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার এই করুণ পরিণতি বিফলে যায়নি। পরবর্তী সময়ে তার খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে স্কার্ভির সাথে ভিটামিন ‘সি’ এর যোগসূত্র প্রমাণ করা সম্ভবপর হয়েছিল।2
পীতজ্বরের সন্ধানে স্টাবিন্স ফার্থ
ইয়েলো ফিভার বা পীতজ্বর ঊনবিংশ শতাব্দীতে আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা মহাদেশে মহামারী আকারে প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছিল। তখন বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ছিল, পীতজ্বর সংক্রামক। বিজ্ঞানীদের এই বিশ্বাসকে পরীক্ষা করে দেখতে এক অদ্ভুত অভিসারে নামলেন ফিলাডেলফিয়ার মেডিকেল শিক্ষার্থী স্টাবিন্স ফার্থ। তিনি রোগীর বমি সংগ্রহ করে নিজের বাহুতে ক্ষত সৃষ্টি করে প্রয়োগ করলেন। তিনি এখানে থেমে যাননি। তিনি রোগীর রক্ত, প্রস্রাব, লালা সংগ্রহ করে দেহের বিভিন্ন ক্ষতে বিভিন্ন মাত্রায় প্রয়োগ করেন।
এমনকি সেগুলো আগুনে উত্তপ্ত করে ধোঁয়া সৃষ্টি করে তা নাক দিয়ে টেনে নেন। শুনতে যতই বেঢপ লাগুক, ফার্থের এই সাহসী পরীক্ষা ছিল বিজ্ঞানের জন্য মাইলফলকস্বরূপ। এই পরীক্ষার পর তিনি বেশ সুস্থ দেহে চলাফেরা করে প্রমাণ করেছিলেন, পীতজ্বর সংক্রামক নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তিনি ভুল আবিষ্কার করেছিলেন।3
পরে ১৮৯০ সালে জেসে লাজির নামক এক বিজ্ঞানী ফার্থের ভুল শুধরে দেন। মজার ব্যাপার হলো, জেসে লাজিরও নিজেকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি পীতজ্বর ছড়ানোর কারণ হিসেবে Aedes aegypti মশাকে সন্দেহ করতেন। ফার্থের ন্যায় তিনি নিজে এডিস মশার কামড় খান এবং নিজের দেহে পীতজ্বরের উপসর্গ আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে তিনি আবিষ্কার করেন, পীতজ্বর সংক্রামক। কিন্তু বিনিময়ে তিনি বিসর্জন দেন নিজের প্রাণ। তার এই বিসর্জন পরবর্তী সময়ে পীতজ্বর মহামারী মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।4
পিয়েরে এবং মেরি কুরির রেডিয়াম
নিজের উপর পরীক্ষা চালানোর তালিকায় আছেন এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদ্বয়। পিয়েরে এবং মেরি কুরি রেডিয়াম নিয়ে গবেষণাকালে এর দাহ্যতা নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। রেডিয়ামের দাহ্যতা ব্যবহার করে একে ক্যান্সার নিরাময়ে ব্যবহার করে যেতে পারে, এই ছিল তাদের বিশ্বাস। তাই পিয়েরে কুরি নিজের ডান হাতের উপর রেডিয়াম ঢেলে দিয়ে এক ভয়ঙ্কর পরীক্ষা চালান। রেডিয়াম তার ডান হাতের বেশ খানিকটা অংশে মাংস পুড়িয়ে ফেলে।
তিনি ১৯০৩ সালে রয়্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের তার হাতের ক্ষত দেখিয়ে রেডিয়ামের উপযোগ্যতা নিয়ে এক যুগান্তকারী বক্তৃতা প্রদান করেন। তাদের এই দুঃসাহস থেকে ক্যান্সার নিরাময়ে রেডিয়ামের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সেবছর রেডিয়াম নিয়ে গবেষণার জন্য এই বিজ্ঞানীযুগলকে সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ক্লেইটমানের দেহঘড়ি
নাথানিয়েল ক্লেইটমান একজন বরেণ্য ঘুমবিজ্ঞানী। ঘুম নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত নেই। আমাদের ২৪ ঘণ্টার দৈনিক যাত্রায় আমরা দেহের বিশ্রামের প্রয়োজনে ঘুমকে বেছে নিই। সারাদিন কাজ করে আমরা রাতের আঁধারে বিছানায় নিজেকে সঁপে দিয়ে নিদ্রা যাই। বিজ্ঞানী নাথানিয়েল চিন্তা করলেন, যদি আমরা এমন অবস্থার মুখোমুখি হই, যেখানে রাত বা দিন আলাদা করার উপায় থাকবে না এবং ২৪ ঘণ্টার চেয়ে দীর্ঘদিনের মুখোমুখি হতে হবে, তাহলে আমাদের ঘুমের চক্র কি অপরিবর্তিত থাকবে? এ প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে তিনি ১৯৩৮ সালে কেন্টাকির ম্যামথ গুহায় কাঁথা-বালিশ নিয়ে হাজির হন।
মাটির প্রায় ১২০ ফুট গভীরে অবস্থিত এই গুহার ভেতর থেকে দিন বা রাত বোঝার উপায় নেই। এই আদর্শ পরিবেশে তিনি তার পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর এই পরীক্ষার গিনিপিগ তিনি নিজে এবং তার ছাত্র রিচার্ডসন। শুরু হলো তাদের পরীক্ষা, ঘুমিয়ে গেলেন তারা।
গুহার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইঁদুর, মূষিকের সাথে প্রায় ১ মাস ধরে অবস্থানের পর তারা বেরিয়ে আসেন। এই দীর্ঘ সময়ে নাথানিয়েল বহু চেষ্টা করেও তার ঘুমের রুটিন বদলাতে ব্যর্থ হন। কিন্তু তার ছাত্র ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হন। তাদের এই মজার পরীক্ষার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ফলে তৎকালীন বহু কারখানা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের কর্মঘণ্টার পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছিল।
আলবার্ট হফম্যানের এলএসডি আবিষ্কার
LSD বা লাইসার্জিক এসিড ডাই-ইথাইল অ্যামাইড এর নাম আমরা কমবেশি শুনেছি। মার্কিন ভবঘুরে সম্প্রদায়ের নিকট বেশ জনপ্রিয় এই মাদক স্বল্পমাত্রায় ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই এলএসডি’র আবিষ্কারক যিনি, তার নাম আলবার্ট হফম্যান। স্কুইল নামক এক ঔষধি গাছের বিভিন্ন উপাদানের সাথে লাইসার্জিক এসিড মিশিয়ে তিনি দুর্ঘটনাবশত এই মাদকটি আবিষ্কার করেছিলেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এলএসডি প্রস্তুতের পর তিনি সেটি গবেষণাগারে ফেলে রেখেছিলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি সেটি নিয়ে আবার পরীক্ষা করতে গিয়ে ভুলে সামান্য পরিমাণে সেবন করে ফেলেন। এরপর তার মাথা ঘুরতে থাকে। তিনি চোখ বন্ধ করার পর নানান উদ্ভট ছবি, রঙের মিশ্রণ আর আঁকিবুঁকি দেখতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এই রাসায়নিক পদার্থ অন্যান্য পদার্থের মতো নয়।
আগ্রহবশত তিনি পরদিন বেশ খানিকটা এলএসডি সেবন করেন এবং তারপর বাইসাইকেলে চড়ে বাড়ি ফেরত আসেন। এবারও তিনি আগের মতো উদ্ভট সব আঁকিবুঁকির সম্মুখীন হন। কিন্তু একইসাথে তিনি বেশ হালকা বোধ করছিলেন। তিনি অনেক পরিষ্কার চিন্তা করতে পারছিলেন। সেদিনের আলবার্ট হফম্যানের এই মাদক সেবন পরীক্ষা পরবর্তী সময়ে এলএসডি মাদকের জন্ম দেয়। প্রথমদিকে মাদক হিসেবে প্রচলন হলেও এর বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলী ধীরে ধীরে আবিষ্কৃত হয়।
ব্যারি মার্শালের ব্যাকটেরিয়া পান
বিংশ শতাব্দীতে আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো অ্যান্টাসিড। তখন বিজ্ঞানীদের কাছে আলসার হওয়ার মূল কারণ ছিল আহারে অনিয়ম করা। এর পেছনে কোনো ব্যাকটেরিয়া দায়ী থাকতে পারে, এ প্রস্তাবনা ছিল অমূলক- কারণ পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান সম্পর্কে কারো ধারণা পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু বিজ্ঞানী ব্যারি মার্শাল বেশ কিছু আলসার রোগীর পাকস্থলী থেকে Helicobacter pylori নামক ব্যাকটেরিয়া আলাদা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু এর সাথে আলসারের যোগসূত্র প্রমাণের জন্য প্রয়োজন কোনো সুস্থ দেহ।
তিনি এবার বেশ বিপদজনক কাজ করে বসলেন। আলসার রোগী থেকে আলাদা করা ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ নিজে শরবতের মতো পান করে ফেললেন। তিনদিনের মাথায় তার দেহে আলসারের উপসর্গ দেখা দেয়। তবে তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে ধাবিত হলে তিনি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে আরোগ্য হন। এই সাহসিকতার জন্য আলসারের সাথে ব্যাকটেরিয়ার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয় এবং রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। ২০০৫ সালে এই গবেষণার জন্য তাকে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উপরে বর্ণিত বিজ্ঞানীদের বাইরেও আরো শত শত উদাহরণ বিদ্যমান রয়েছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা ভয়াবহ সব পরীক্ষার জন্য নিজের দেহকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কিছুক্ষেত্রে সেগুলো নিরাপদ পরীক্ষা হলেও অনেকক্ষেত্রে তা বিজ্ঞানীদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটিয়েছে। অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। অনেকে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও স্বেচ্ছায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাদের উৎসর্গে অগণিত মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। এর নৈতিকতা নিয়ে বিজ্ঞানমহলে বেশ তর্কবিতর্ক চলেছে, চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে।
কিন্তু, বর্তমানে এধরনের পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যেসব বিজ্ঞানী জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নিজেকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাদের অবদান অগ্রাহ্য করা যাবে না।