সারা বছর ধরে চড়া দামের যে পণ্যগুলো কিনতে না পেরে মন খারাপ করে থাকতে হয়, সেগুলো কিনবার মোক্ষম সময় হলো ব্ল্যাক ফ্রাইডে। বছরের সব থেকে বড় ছাড়ের উৎসবের এ সময়টাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মার্কিনীরা, আর সেই সাথে বিশ্বের বাকিরাও। বাংলাদেশেও এখন সেই ব্ল্যাক ফ্রাইডের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চলছে ঠিক এখনই! বিশাল সব ছাড়, এমনকি প্রায় অর্ধেক দামেও প্রিয় জিনিসটা লুফে নিতে পারেন এখন দেশে বসেই। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য আজ জানাচ্ছি তেমনই কিছু অফার, বিদেশের জিনিস খুব সহজে কিনতে পারবেন ঘরে বসেই! তার আগে জানা যাক ব্ল্যাক ফ্রাইডের ছোট্ট একটা ইতিহাস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার পালিত হয় থ্যাংকসগিভিং এর ছুটির দিন হিসেবে। সেই ১৭৮৯ সাল থেকে আমেরিকায় জাতীয়ভাবেই চলে আসছে এ ছুটি, মূলত যার উৎপত্তি আসলে ঘরে ফসল তোলার উৎসব হিসেবে। ম্যাসাচুসেটসে প্রথম বসতি গড়া ব্রিটিশেরা (যাদের আবার প্রিলগ্রিম ডাকা হয়) ১৬২১ সালের অক্টোবরে ঘরে তোলে প্রথম ফসল, নতুন দুনিয়াতে এসে তাদের প্রথম ফসলের গুরুত্বই আলাদা। এ আনন্দকেই স্মরণ করে আসলে ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ বা থ্যাংকসগিভিং পালন করা হতো।
থ্যাংকসগিভিং এর পরদিন যে শুক্রবার, সেদিনই আসলে ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এদিন থেকেই বছরের ক্রিসমাস শপিং মৌসুম শুরু হয়ে যায়। ১৯৫২ সাল থেকে এমনটা পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামটা প্রথম আশির দশকে চালু হয়। সে নামের পেছনে আছে মজার কারণ। শুক্রবার ছুটি নিয়ে নিলে টানা চারদিনের সাপ্তাহিক ছুটি পাওয়া যায়, তাই শ্রমিকেরা এদিন ‘অসুস্থ’ দেখিয়ে ছুটি নিত। তাছাড়া সেদিন কেনাকাটার জন্য রাস্তাঘাটে এত জ্যাম লেগে যেত যে, সেটাকে রীতিমতো দুর্যোগ হিসেবে দেখা হতো। তখন থেকেই এই শুক্রবারকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ ডাকা শুরু হয়। ফিলাডেলফিয়াতে প্রথম এ কথাটি চালু হয়। এমনকি তার পরেরদিনকে ব্ল্যাক স্যাটারডে-ও বলা হতো।
আরেকটি অদ্ভুত তত্ত্ব হলো, অর্থনীতির খাতায় লাভশূন্যতাকে দেখানো হতো ‘লাল’ হিসেবে, আর ‘লাভ’ হলে সেটি তখন লাল থেকে হতো কালো। থ্যাংক্সগিভিং এর পরদিন কেনাকাটার তোড়ে এক ধাক্কায় অনেকের লাল থেকে কালোর খাতায় নাম লেখানো হতো, আর তাই এই দিনটির নাম হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে। ২০০৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় এ দিনেই।
তবে সেই সুদূর অতলান্তিকের ওপারের এই বিষয়গুলো অনেকদিন পর্যন্ত তেমন একটা ভাবায়নি আমাদের দেশের মানুষদের। কারণ একটাই, ঘরে পৌঁছাবে কী করে? আমাজন বা একই গোত্রের সাইটগুলো তো তখনও বাংলাদেশে জিনিস পৌঁছে দিত না! তবে সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবার পর থেকে ব্ল্যাক ফ্রাইডের অফারে মাতেন বাঙালিরাও। আর গত চার বছরে ধরে সে পালে হাওয়া দিয়ে আসছে ব্যাকপ্যাক বাংলাদেশ। সারা বছর তো বটেই, এমনকি ব্ল্যাক ফ্রাইডের দুর্দান্ত সব ডিল কয়েক ক্লিকেই পৌঁছে দিচ্ছে ব্যাকপ্যাক, আপনারই ঘরে। চলুন দেখে আসা যাক তাদের অজস্র ডিলের মাঝে চমকপ্রদ কয়েকটির খোঁজ।
Google Pixel 3 XL 64GB
গুগলের পিক্সেল থ্রি-কে এ মুহূর্তে বাজারের সেরা অ্যান্ড্রয়েড ফোনই বলা চলে। তবে চড়া দামের কারণে পিক্সেল থ্রির দিকে হাত বাড়াতেও ভয় হয় মধ্য আয়ের ফোনপ্রেমীদের। তবে ব্যাকপ্যাকে এখন ব্ল্যাক ফ্রাইডে উপলক্ষ্যে খুবই সীমিত সময়ের জন্য সাদা পিক্সেল থ্রি এক্সএলে চলছে সাড়ে দশ হাজার টাকা ছাড়! এর দাম এখন ৯০,০৫০ টাকা।
কিনতে ক্লিক করুন এখানে।
কালো পিক্সেল থ্রি এক্সএল কিনতে ক্লিক করুন এখানে।
তবে বেশি দামের জন্য এক্সএল না কিনতে চাইলে, শুধু পিক্সেল থ্রি-ও কিনতে পারেন।
সাদা রঙের জন্য দাম পড়বে এখন ৭৯,৯৯৯ টাকা; পাবেন এখানে।
কালো রঙের জন্যও একই দাম। পাবেন এখানে।
Fitbit Ionic GPS Smart Watch
ব্যায়ামপ্রেমীদের জন্য ফিটবিট স্মার্টওয়াচের কোনো জুড়ি নেই। প্রতিদিন হাঁটছেন কত কদম, সারা দিনের কাজ, ঘুম, হার্টবিট সবই ট্র্যাক রাখে এ ঘড়িটি। এক চার্জে চলে যাবে চার দিন! তাছাড়া গান শোনার নিত্য সঙ্গী হিসেবে তো থাকছেই অসাধারণ এ যন্ত্রটি। ২৬% ছাড়ে শেষ হয়ে যাবার আগেই কিনতে ক্লিক করুন এখানে।
এর দাম পড়বে ২২,৯৯৯ টাকা।
Fire TV Stick 4K with all-new Alexa Voice Remote
নতুন ওয়াইফাই অ্যান্টেনাসহ 4K তে স্ট্রিমিং এর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মিডিয়া স্টিক হলো এই ফায়ার টিভি স্টিক। সাথে তো আছেই অ্যালেক্সার নিত্য সাহচর্য।
২৯% ছাড়ে কিনতে ক্লিক করুন এখানে। দাম পড়বে ৪,০৯৯ টাকা।
Samsung 256GB 100MB/s (U3) MicroSDXC EVO Select Memory Card with Adapter
সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মেগাবাইট পর্যন্ত রিড ও রাইট করতে সক্ষম স্যামসাং-এর ২৫৬ জিবি এ মেমোরি কার্ডের স্বাভাবিক সময়ের দাম প্রায় ১৪,০০০ টাকা। কিন্তু এখন চলছে ৬২% ছাড়! সাথে অ্যাডাপ্টার তো আছেই।
সব মিলিয়ে দাম পড়বে ৫,১৯৯ টাকার মতো। কিনতে ক্লিক করুন এখানে।
DualShock 4 Wireless Controller for PlayStation 4
পিএসফোরের এই ওয়্যারলেস কন্ট্রোলারের দাম আসবে মাত্র ৪,৪৯৯ টাকা!
কিনতে হলে ক্লিক করুন এখানে।
Ultimate Ears WONDERBOOM Waterproof Super Portable Bluetooth Speaker
ওয়াটারপ্রুফ এ ব্লুটুথ স্পিকারের সাউন্ড আসলেই অবাক করা রকমের ভালো। ১০ ঘণ্টার ব্যাটারি লাইফসহ এই স্পিকারের দাম আসবে প্রায় ৫,৭৯৯ টাকা।
কিনতে হলে ক্লিক করুন এখানে।
SanDisk 1TB Ultra 3D NAND SATA III SSD
এক টেরাবাইটের এই এসএসডির দামে অবিশ্বাস্য রকমের ছাড় চলছে। ৬৫%! তাই আগের প্রায় ৪৬ হাজার টাকার এ হার্ডডিস্কের দাম এখন মাত্র ১৬,০৯৯ টাকা!
এর মডেল হলো SDSSDH3-1T00-G25। কিনতে হলে ক্লিক করুন এখানে।
Sony WI-C300 Wireless In-Ear Headphones
সনির চমৎকার কালো রঙের তারহীন এয়ারফোনের দাম কমেছে ২১%।
এর দাম এখন ৪,৩৯৯ টাকা। এর মডেলটা হলো WIC300/B। কিনতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।
Sony XB950N1 Extra Bass Wireless Noise Canceling Headphones
সনির এই হেডফোনের দাম পড়বে এখন ২৮,৪৯৯ টাকা।
কিনতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।
এ তো গেল কেবল ব্যাকপ্যাকে সাজিয়ে রাখা বিশেষ অফারগুলো। এছাড়াও রয়েছে অজস্র অফার, সেগুলো দেখার জন্য ঘুরে আসতে পারেন ব্যাকপ্যাকের সাইটটি, এখানে ক্লিক করে। আরেকটি দারুণ ব্যাপার হলো, আমেরিকার যেকোনো ওয়েবসাইটে যেকোনো পণ্য কিনতে চাইলে কেবল সেই লিংকটি ব্যাকপ্যাকের সার্চবারে পেস্ট করে রিকুয়েস্ট দিলেই আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে, কত টাকা পরিশোধ করলেই পণ্যটি পৌঁছে যাবে আপনার দোড়গোড়ায়!
আর এ চমৎকার একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা ফাহিম মাসউদ আজিজ আর সাকিব হাসান। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর তারা পণ্য আনা নেওয়া করার দূরত্ব ঘোচানোর জন্য একটা কিছু করার পরিকল্পনা হাতে নেন। সিলিকন ভ্যালির ওয়াই কম্বিনেটরের (ওয়াইসি) থেকে দারুণ একটা বিনিয়োগ পেয়ে যান তারা, আর তখনই হাঁটি হাঁটি পা পা করে গড়ে ওঠে ব্যাকপ্যাকব্যাং। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়াতে সেবা দেওয়ার জন্যই কাজ শুরু করে ব্যাকপ্যাক। ধরুন আপনি আমেরিকা থেকে কোনো একটি জিনিস কিনতে চান। আপনি এখানে সেই পণ্যের অর্ডার দেবার পর সেটি কিনে পৌঁছে দেওয়া হবে একজন মার্কিন ট্রাভেলার বা পর্যটকের কাছে, যার কিনা খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে আসতে হবে। তিনি তার সাথে করে নিয়ে আসেন পণ্যটি, যার বিনিময়ে তিনি পান নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। যত ভারী পণ্য, খরচ তত বেশি। মূলত ডলারে মূল দামের সাথে টাকায় পরিশোধ করা চূড়ান্ত দামের পার্থক্যের কারণ এটিই। তবে যাদের আত্মীয়স্বজন বা কাছের কোনো মানুষ খুব শীঘ্রই দেশে আসছেন না, দিনশেষে তাদের জন্য এই ট্রাভেলারদের বিকল্প নেই, বিশেষ করে পণ্যটি যখন পাওয়াই যায় না বাংলাদেশের বাজারে।
থ্যাংক্সগিভিং নিয়ে বাংলাদেশে কোনো মাতোয়ারা না থাকলেও, ব্ল্যাক ফ্রাইডের উন্মাদনার রেশ শুরু হয়ে গেছে বটে। খুব শীঘ্রই হয়তো সারা বছর ধরে এ সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা শপিংপ্রেমীদের সংখ্যা বেড়ে উঠবে। আর ব্যাকপ্যাক তো আছেই সে উন্মাদনার সঙ্গী হিসেবে, শুধু অফারের সময়ে নয়, বছরজুড়েই!