জননাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা। কখনো ভেবেছেন এই বিষয়ে? সারা শরীরের সমস্ত অঙ্গের মতোই জননাঙ্গও একটি জরুরি অংশ, যা কিনা আমাদের সমাজের নানাবিধ ট্যাবুর কারণে কখনো ‘অশ্লীল’, কখনোবা ‘অচ্ছ্যুত’ বলে বিবেচিত হয়- যার কারণে এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার স্বাভাবিক বিষয়টিও রয়ে যায় আমাদের অজানা।
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন বিষয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনার সুযোগ এখনও অনেক কম। একটা সময় তো কথা বলাও একপ্রকার নিষিদ্ধই ছিলো অলিখিতভাবে। যদিও সেই ট্যাবু এখন আস্তে আস্তে ভাঙছে, কিন্তু অসচেতনতা ও অশিক্ষার যে প্রলেপ সমাজে পড়েছে, তা দূর করতে এখনো পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ।
নারীর শরীরের এই অংশের সাথে যেহেতু জড়িত সন্তান জন্মদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই একে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি, এবং সেজন্যই আজকের এই পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক লেখা।
নারীর জননাঙ্গের পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখার শুরুটা হতে হবে কৈশোর থেকেই। সংবেদনশীল এই অঙ্গের যত্নে প্রয়োজন যথাযথ জ্ঞান ও সতর্কতা। অপরিচ্ছন্নতার কারণে যোনিতে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা পরবর্তীতে আরও অনেক ভয়াবহ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অপরিচ্ছন্নতার কারণে সৃষ্ট কিছু সংক্রমণের মধ্যে আছে:
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস
সাধারণত যোনিতে অনেকরকমের ব্যাকটেরিয়া থাকে। ল্যাকটোব্যাসিলি নামে পরিচিত একধরনের ব্যাকটেরিয়া যোনিপথের স্বাভাবিক অম্লতা বজায় রাখে। ল্যাকটোব্যাসিলি যোনিপথের আস্তরণকে সুস্থ রাখতে, এবং সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে। যখন এই প্রতিরক্ষামূলক ল্যাকটোব্যাসিলির সংখ্যা হ্রাস পায়, এবং সাধারণত উপস্থিত অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা (যেমন: গার্ডনারেল্লা ভ্যাজিনালিস এবং পেপটোস্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া) বৃদ্ধি পায়, তখন ফলস্বরুপ ব্যাকটেরিয়ায়াল ভ্যাজিনোসিস ঘটে। এই রোগের সংক্রমণ অত্যন্ত মারাত্মক, যা দেহের নানা ক্ষতির কারণ তো হয়ই, এমনকি বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
ইস্ট ইনফেকশন (ক্যান্ডিডিয়াসিস)
যোনিতে বেশিরভাগ ইস্ট সংক্রমণের জন্য দায়ী ক্যান্ডিডা অ্যালবিক্যান্স ছত্রাক। যোনিতে প্রাকৃতিকভাবে ইস্টের উপস্থিতি রয়েছে, যাতে ক্যান্ডিডা ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া (যেমন: ল্যাকটোব্যাসিলাস) ইস্টের অত্যধিক বৃদ্ধি রোধ করতে কাজ করে। ক্যান্ডিডা বা বর্ধিত যোনি কোষ স্তরগুলোতে ছত্রাকের অনুপ্রবেশ বেড়ে গেলে, অর্থাৎ ইস্টের ভারসাম্য যদি ব্যাহত হয়, তাহলে ইস্ট ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ইনফেকশন পরবর্তীতে তৈরি করতে পারে বড় ধরনের জটিলতা।
নারীর যোনিপথের পরিচ্ছন্নতা যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি খেয়াল রাখা দরকার কী ব্যবহার করে তা পরিষ্কার করা হচ্ছে সেদিকে। কেননা, পরিষ্কার করার উপাদানটির ক্ষারীয় মাত্রা কম হলে তা যেমন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অণুজীবকে ধ্বংস করতে পারবে না, তেমনি এর ক্ষারীয় মাত্রা বেশি হলে তা উপকারি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা অণুজীবকে উল্টো ধ্বংস করে ফেলে যোনিপথের নানা ভয়ঙ্কর রোগের উপক্রম ঘটাবে।
স্বাভাবিকভাবেই এদেশের অনেক নারীই জানেন না এই বিষয়টি নিয়ে। তাই অনেকে নিজেদের অজান্তেই ডিটারজেন্ট সাবানের মতো উপাদান ব্যবহার করে ফেলেন পরিচ্ছন্নতায়, যা অতিরিক্ত ক্ষারীয় হয়ে দাঁড়ায় যোনিপথের জন্য- যেটি কিনা তাদের জন্য হতে পারে হিতে বিপরীত। সংক্রমণ, ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া এড়াতে যোনিপথ পরিষ্কারের সময় কিছু কিছু জিনিস ব্যবহার না করাই ভালো, যেমন: ডিওডোরেন্ট স্প্রে, পারফিউম, ডিটারজেন্ট সাবান ইত্যাদি। সেইসাথে ডুশ, এমনকি যেগুলোকে নির্মাতারা দাবি করেন নিরাপদ বা প্রাকৃতিক হিসেবে, সেসবও ব্যবহার করা উচিত নয়।
একটি বিষয় মনে রাখা উচিত, তা হলো, নারীর যোনিপথের ভেতরের দিকটা নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তার মানে, যোনির ভেতরটা পরিষ্কারের জন্য কোনো ধরনের পণ্যই ব্যবহারের দরকার নেই।
তাই যা প্রয়োজন তা হলো, যোনিপথের বাইরের দিকের পরিচ্ছন্নতা, এবং এর জন্য দরকার এমন পরিষ্কারক উপাদান, যা যোনিপথে প্রবেশ করবে না বা অল্প প্রবেশ করলেও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।
যোনিপথের বাইরের দিক পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার উপযোগী বেশিরভাগ পণ্য বিদেশি হওয়ায় এগুলো বিক্রি হয় চড়ামূল্যে, আবার সবগুলো সহজলভ্যও নয়। দেশেই উৎপাদিত হয় এমন পরিষ্কারক হিসেবে নিরাপদ ও সহজলভ্য পণ্য হলো এসিআই-এর ফ্রিডম ইন্টিমেট ওয়াশ। ফ্রিডম অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ইন্টিমেট ওয়াশ, যেটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় লিকুইড থাইম, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসাবে কাজ করে, যোনি অঞ্চলে ক্ষারের মাত্রা ঠিক রাখে, যোনির আশেপাশের জায়গাগুলো দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে সহায়তা করে, আর জ্বালাপোড়া কিংবা চুলকানি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে। এর ক্ষারীয় মাত্রা হলো ৩.৫, যা যোনিপথের আশেপাশের জন্য সঠিক মাত্রা। দেশীয় পণ্য হিসেবে এর দামও হাতের নাগালে।
শুরুতেই আমরা বলেছিলাম, নারীর স্বাস্থ্যবিধির নানা বিষয়, তা পিরিয়ড হোক কিংবা যোনিপথে জ্বালাপোড়া হোক- কোনো বিষয়েই খোলাখুলি আলোচনা এখনও আমাদের সমাজে সর্বত্র স্বাভাবিক না। অথচ সুস্থভাবে, ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য এসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকাটা খুবই জরুরি। যোনিপথের চারদিক পরিষ্কার রাখা সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, সেজন্য নারীদের উচিত সচেতন হওয়া, এবং কোন পণ্যটি ব্যবহার করা উচিত সেই সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। প্রতিদিনের সতেজতা আর সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে তাই সচেতন হোন আজকে থেকেই।