পিঠের ইনজুরিটা বেশ কিছুদিন ধরে ভোগাচ্ছে। আইপিএলের প্রথম দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। পাঞ্জাবের ঘরের মাঠ ইন্দোরে আইপিএলের দশম আসরের প্রথম ম্যাচ খেলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলে অধিনায়ক শেন ওয়াটসন বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স। তার মাঠে প্রবেশের সাথে সাথেই গ্যালারীতে ‘এবি, এবি’ স্লোগান শুরু হয়ে যায়।
ইনিংসের শুরুটা করেন মন্থরগতিতে। ইনজুরি থেকে ফিরে আসার কারণে নন, দলের বিপর্যয়ের কারণেই দেখে-শুনে খেলেন ভিলিয়ার্স। বেঙ্গালুরু পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। ১৫ ওভার শেষে বেঙ্গালুরুর সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে মাত্র ৭১ রান। আইপিএলে ১৫ ওভার শেষে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ডি ভিলিয়ার্স তখনো ক্রিজে, একপ্রান্ত আগলে রেখে ২৮ বলে করেছেন ৩১* রান। সেখান থেকে শেষ ৫ ওভারে বেঙ্গালুরুর স্কোরবোর্ডে জমা হলো আরো ৭৭ রান। এই ৫ ওভারে ডি ভিলিয়ার্স পাঞ্জাবের পেসারদের উপর তাণ্ডব চালিয়ে করেন ১৮ বলে ৫৮* রান। শেষ ১৮ বলে ৮টি ছয় এবং ১টি চার।
যেখানে বেঙ্গালুরুর অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা উইকেটে খাবি খাচ্ছিলেন, পাঞ্জাবের বোলারদের ভালো জায়গায় বল করার সুযোগ দিচ্ছিলেন, সেখানে ডি ভিলিয়ার্স স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বোলারদের ভালো বলগুলো মাঠ ছাড়া করতে ব্যস্ত ছিলেন। সন্দীপ শর্মা, মোহিত শর্মারা যেখানে প্রথম স্পেলে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, সেখানে ডি ভিলিয়ার্সের সামনে এসে বনে গেলেন সাদামাটা। ভালো জায়গায় বল করেও ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবের হাত থেকে রক্ষা পাননি। মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি দারুণ সব শট খেলে সেই ম্যাচে ৪৬ বলে করেন অপরাজিত ৮৯ রান। ইনিংসে ৩টি চার এবং ৯টি ছয়ের মার ছিল। কে বলবে প্রথম দুই ম্যাচ পিঠের ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি।
ম্যাচ শেষে ডি ভিলিয়ার্স জানান, তিনি নিজেও তার কিছু শট দেখে অবাক হয়েছেন। আইপিএলে ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে ডি ভিলিয়ার্স কতটা ভয়ংকর সেটা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। এখন পর্যন্ত আইপিএলের শেষ ৫ ওভারে ডি ভিলিয়ার্স ৫৪৮ বলে ১,২০২ রান করেছেন। কমপক্ষে ৫০ বল খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেইট সবচেয়ে বেশি। এই ইনজুরির আগে ডি ভিলিয়ার্স তার ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই ছিলেন ইনজুরি মুক্ত।
২০০৪ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়া ভিলিয়ার্স একটানা ১১ বছর এবং ৯৮টি টেস্ট খেলে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে দেশে ফিরে না গেলে অভিষেকের পর একটানা ১০০টি টেস্ট খেলা প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে রেকর্ড বুকে নাম লেখাতেন। অবশ্য বর্তমানে তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎও খুব একটা উজ্জ্বল নয়। শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ইনজুরি কাটিয়ে শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লিমিটেড ওভারের ম্যাচ খেললেও টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা হয়নি তার। গত বছর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে খেলার সময় ইনজুরিতে পড়ে ৬ মাসের জন্য মাঠের বাহির থাকতে হয়।
জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে ৬৩ রানের ইনিংসের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসেন। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ধারাবাহিকভাবে রান পেয়েছেন। আইপিএলের দশম আসরের প্রথম দুই ম্যাচে পিঠে হালকা ব্যথা অনুভব করার কারণে খেলেননি। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরেই খেললেন বিধ্বংসী ইনিংস। আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্সের নাম বর্তমান সেরা ব্যাটসম্যানদের সাথে উচ্চারিত হয় না। স্টিভ স্মিথ, জো রুট, বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসনদের সাথে তার নাম উচ্চারিত হয় না। এই নিয়ে ডি ভিলিয়ার্সও বলেন, “আপনাকে সেরা হতে হলে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই খেলতে হবে। তিন ফরম্যাটেই সেরা ৫ ব্যাটসম্যানদের তালিকায় থাকলে আপনি সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান হতে পারবেন।”
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা ভালো সময় অতিবাহিত করছেন না তিনি। ১৭ই ডিসেম্বর ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়। পোর্ট এলিজাবেথে অভিষেক ইনিংসে ২৮ রানের আশা জাগানিয়া ইনিংস খেললেও বড় সংগ্রহ করতে পারেননি নিজের প্রথম ৪ টেস্টে। সেঞ্চুরিয়ানে ঐ সিরিজের শেষ টেস্টে ৯২ এবং ১০৯ রানের ইনিংস খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন। পরের বছরে ১১ টেস্ট খেলে ৫৩.০৫ ব্যাটিং গড়েন ১,০০৮ রান। সেইসাথে ক্রিকেটবিশ্বকে জানিয়ে দেন, অঙ্কুরেই ঝরে যেতে আসেননি তিনি।
২০০৮ সালে ভারতের বিপক্ষে আহমেদাবাদ টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক হাঁকিয়ে অপরাজিত ২১৭ রানের ইনিংস খেলার পর সাউথ আফ্রিকা ইংল্যান্ড সফরে যায়। ব্যাট হাতে ভালোই ছন্দে ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। লর্ডস টেস্টে করেন ৪২ রান। ঐ ম্যাচের পর দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ তাকে তার প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে বলেন। লিডসে পরের টেস্টেই ৩৮১ বলে ১৭৪ রানের ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয় এনে দেন। তার ক্যারিয়ারের পরিবর্তনের শুরুটা হয়েছিল সেখান থেকেই, প্রতিভা আগে থেকেই ছিল। সেটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোই ছিল তার লক্ষ্য।
সাকিব আল হাসানের বলে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম শূন্য রানে আউট হওয়ার আগে খেলেছিলেন ৭৮টি ইনিংস। সেই ডি ভিলিয়ার্সই টেস্ট ক্রিকেটে নিজের শেষ তিন ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়েছেন। ঐ তিন ইনিংস বাদে টেস্ট ক্রিকেটে ছন্দে ছিলেন না সেটা বলা যায় না। প্রতি ইনিংসেই বড় স্কোর গড়ার ইঙ্গিত দিতেন। টানা তিন ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার আগে যথাক্রমে ৪২, ৪৩, ৪৯, ৩৭, ৮৮ এবং ৩৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। শেষ তিন ইনিংসের পর স্বেচ্ছায় অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তারপর ইনজুরির কারণে আর টেস্ট দলে ফেরা হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১০৬ টেস্টে ৫০.৪৬ ব্যাটিং গড়ে ৮,০৭৪ রান করা ডি ভিলিয়ার্সের টেস্ট ভবিষ্যৎ অনুজ্জ্বল।
ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার মূলমন্ত্র হলো নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখা এবং কঠোর পরিশ্রম করা। ডি ভিলিয়ার্স দুটোতেই খুব ভালো। ম্যাচে নিত্যনতুন সব শট খেলে রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনে বলের পর বল দেখে-শুনে খেলে কাটিয়ে দিতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা তিনি দলের প্রয়োজনে খেলেন। সব ক্রিকেটারই দলের প্রয়োজনে খেলেন, কিন্তু নিজস্ব ভঙ্গিমায়। যেভাবে খেললে দলের জন্য ভালো হবে ডি ভিলিয়ার্স ঠিক সেভাবেই খেলেন।
বর্তমান সেরা ব্যাটসম্যান হিসাবে যাদের ধরা হয়, তারা প্রায় সবাই তিন ফরম্যাটেই একইভাবে ব্যাট করেন। স্টিভ স্মিথ, কোহলি, রুট, উইলিয়ামসন এবং ওয়ার্নাররা ক্রিকেটের যে ফরম্যাটই হোক না কেন, ভালো বল একটু দেখেশুনে এবং মারার বল মেরে খেলতে পছন্দ করেন। এদিক দিয়ে ডি ভিলিয়ার্স অনেক এগিয়ে, দলের প্রয়োজনে প্রতিটা রান করেন। ২০১০ সালে আবুধাবি টেস্টে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকানোর সুবর্ণ সুযোগ ছিল তার হাতে। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ২৭৮* রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। শেষ উইকেট জুটিতে মরনে মরকেলের সাথে তখন ১০৭* রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। চাইলেই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসাবে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারতেন। ব্যক্তিগত রেকর্ড উপেক্ষা করে দলের জন্য কী ভালো হবে সেটাই তার কাছে মুখ্য।
টেস্ট ক্রিকেটে তার উল্লেখযোগ্য ইনিংসের মধ্যে একটি হলো ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থ টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৩৩ রানের ইনিংসটি। টেস্ট ক্রিকেটে ২১টি শতক আছে, ৩৩ রানের ইনিংসটিকে আলাদাভাবে বলার কী এমন আছে! এটা অনেকেই ভাবতে পারেন।
২০১২ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৪৩০ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচ ড্র করতে হলে প্রায় ১৫০ ওভার ব্যাট করতে হবে। চতুর্থ ইনিংসে ৪৩০ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ক্রিকেট ইতিহাসে নেই। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা শুরু থেকেই রক্ষণাত্মকভাবে খেলছিল। তাতেও কাজ হচ্ছিলো না। মাত্র ২১ ওভারে ৪৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারানোর পর ম্যাচ হারের শংকা দেখা দিয়েছিল তাদের। দলের বিপর্যয়ের মুখে ক্রিজে আসেন ডি ভিলিয়ার্স। ম্যাচ বাঁচাতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলতে হবে আরো ১২৫ ওভার, হাতে আছে মাত্র ৬ উইকেট। ম্যাচ বাঁচাতে হলে পরের ব্যাটসম্যানদের খেলতে হবে অতিমানবীয় ইনিংস।
ডি ভিলিয়ার্সকে বলা হয়েছিল নিজে স্বাভাবিক খেলাটা খেলার জন্য। অনেকে হয়ত ধরেই নিয়েছিল এই ম্যাচ আর ড্র করাও সম্ভব না। ডি ভিলিয়ার্সের মাথায় ছিল অন্য পরিকল্পনা, ম্যাচটা তিনি ড্র করেই ছাড়বেন। অভিষিক্ত ডু প্লেসিসকে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে খেললেন প্রায় ৭০ ওভার। নিজে ২২০ বল খেলে করেন ৩৩ রান। ইনিংসে কোনো বাউন্ডারি নেই। দলের প্রয়োজনে খেলার ধরণ সম্পূর্ণ বদলে খেললেন অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। শেষপর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ঐ ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রয়োজনের মুহূর্তে যেমন খারাপ বলও দেখেশুনে খেলেন, তেমনি ভালো বলেও ছয় হাঁকান তিনি। জোহানসবার্গে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে দুই ওপেনার হাশিম আমলা এবং রাইলি রসোওর জোড়ার শতকের উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। রসোও যখন আউট হন তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৮.৩ ওভারে সংগ্রহ করেছিল ২৪৭ রান। ম্যাচের মাত্র ৬৯ বল বাকি, যত বেশি সম্ভব রান করাটাই তখন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্সের প্রধান লক্ষ্য। এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩৪ রান তাড়া করে জিতেছিল, কোনো রানই নিরাপদ নয় এই মাঠে। তাই নিজেই ব্যাট করতে চলে আসলেন।
ইনিংসের প্রথম থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের উপর চড়াও হন। মাত্র ১৬ বলে অর্ধশতক করে সনাৎ জয়াসুরিয়ার ১৭ বলে করা অর্ধশতকের রেকর্ড ভাঙেন। এরপর মাত্র ৩১ বলে শতক হাঁকিয়ে কোরি অ্যান্ডারসনের করা ৩৬ বলে শতকের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে দ্রুততম ওয়ানডে শতকের রেকর্ড গড়েন। শেষপর্যন্ত ৪৪ বলে ৯টি চার এবং ১৬টি ছয়ের সাহায্যে ১৪৯ রান করে আউট হন। এই ইনিংসে তার হাঁকানো ১৬টি ছয়ও ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ছয়ের বিশ্বরেকর্ড। ঐ ম্যাচে না পারলেও তিন ম্যাচ পর বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই দ্রুততম দেড়শত রানের ইনিংস খেলেন। মাত্র ৬৪ বলে ১৫০ রান করেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ৬৬ বলে ১৭টি চার এবং ৮টি ছয়ের সাহায্যে অপরাজিত ১৬২ রান করেছিলেন। দ্রুততম অর্ধশতক, শতক হাঁকানোর চিন্তা নিয়ে ডি ভিলিয়ার্স কখনো মাঠে নামেননি। দলের জন্য যত বেশি সম্ভব রান করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্সের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। তার বাবা যুবক অবস্থায় রাগবি খেলতেন, তাই চাইতেন তার ছেলেও স্পোর্টসের সাথে যুক্ত থাকুক। ডি ভিলিয়ার্সও ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোতেই ব্যস্ত থাকতেন। শুধুমাত্র ক্রিকেট নয়, রাগবি, গলফ, টেনিস, সাতার সহ আরো অনেক স্পোর্টসেই তার পারদর্শিতা ছিল আশা জাগানিয়া। শেষপর্যন্ত প্রফেশন হিসাবে ক্রিকেটকেই বেছে নেন ডি ভিলিয়ার্স। শুধুমাত্র ক্রিকেটেই নন, মিউজিকেও তার প্রতিভা পরিলক্ষিত। ইতিমধ্যে কয়েকটা একক গানও গেয়েছেন। ১৭ সংখ্যাটির সাথে তার সখ্যতা চোখে পড়ার মতো। ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করা ডি ভিলিয়ার্স নিজের অভিষেক প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেন অক্টোবরের ১৭ তারিখে। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে। রঙিন পোশাকে জার্সি নাম্বার হিসাবেও বেছে নিয়েছেন ‘১৭’ সংখ্যাটিকে।
ক্রিকেটে অলরাউন্ডার বলা হয় তাদেরকে, যারা ব্যাটে-বলে সমভাবে পারফরমেন্স করেন। ব্যাটিংয়ের সাথে কিপিং বা ফিল্ডিং করলে সচরাচর তাদেরকে অলরাউন্ডার হিসাবে গণ্য করা হয়না। ডি ভিলিয়ার্স যেমন অনেকগুলো স্পোর্টসের মধ্যে ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছেন, তেমনি ক্রিকেটেও ব্যাটিংটাই বেছে নিয়েছেন। তা না হলে তিনি কিপিংয়েও বেশ প্রতিভাবান। ক্যারিয়ারের শুরুতে জন্টি রোডসের অভাব বুঝতে দেননি, মাঝেমধ্যে মিডিয়াম পেসও করতেন।
এখন পর্যন্ত ২৪টি টেস্টে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলে ৫৭.৪১ ব্যাটিং গড়ে ২,০৬৭ রান করেছেন। এছাড়া ৫৯টি ওডিআইতে ৭০.৫৪ ব্যাটিং গড়ে ২,৯৬৩ রান করেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলে। ক্যারিয়ারে যতবার বল হাতে নিয়েছেন, প্রায় প্রতিবারই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ওডিআইতে ৯ ইনিংস বল করে ২৭.৪ স্ট্রাইক রেইটে শিকার করেছেন ৭ উইকেট এবং টেস্টে ৫ ইনিংস বল করে নিয়েছেন ২ উইকেট।
ডি ভিলিয়ার্স এখন পর্যন্ত তিনবার আইসিসি বর্ষসেরা ওডিআই ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ারের পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১০, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে ইনজুরির কবলে না পড়লে ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে নিয়ে যেতে পারতেন অনন্য উচ্চতায়। তিনি নিজেই বলেছেন, “আপনাকে গ্রেট হতে ক্রিকেটের সব ফরম্যাট খেলতে হবে। আমি এখন টেস্ট ক্রিকেট খেলছি না। তবে এখনি সব শেষ হয়ে যায়নি।” ৩৩ বছর বয়সী ডি ভিলিয়ার্সের স্বপ্ন দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার
ইনজুরি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে ক্রিকেটকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার বাকি আছে তার। টেস্ট ক্রিকেটে ১০৬ ম্যাচে ৫০.৪৬ ব্যাটিং গড়ে ৮,০৭৪ রান এবং ওয়ানডেতে ২১৬ ম্যাচে ৫৪.২৮ ব্যাটিং গড়ে ৯,১৭৫ রান করেছেন। ওয়ানডেতে দ্রুততম ৯ হাজার রান করা ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্সই। একই সাথে ওয়ানডেতে ১০০+ স্ট্রাইক রেইট এবং ৫০+ ব্যাটিং গড়ে রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনিই। ডি ভিলিয়ার্স ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসার পর বলেন, প্রতিবার ইনজুরি থেকে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসেন। এইবারও তারই ইঙ্গিত দিলেন। কিংবদন্তিদের পাশে তার নাম উচ্চারণ না হলেও ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে আলাদাভাবে ঠিকই তার নাম উচ্চারিত হবে।