স্পেনের দীর্ঘদিনের সৈনিক ডেভিড হোসে জিমিনেস সিলভা বা ডেভিড সিলভা। বাম পায়ের এই ফুটবলার ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় আক্রমণভাগে খেলতে পারেন। জাতীয় দলে তাকে উইংয়ে খেলতে হয় এবং ক্লাবে এখন পেপ গার্দিওলা তাকে খেলান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। এটাই সিলভার জীবনের প্রতীক।
নানা সময়ে নানা বৈচিত্রের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন এই ফুটবলার। ভ্যালেন্সিয়াতে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ারে। সেখানে দীর্ঘদিন কাটানোর পর এবার সেল্টাতে ধারে খেলেছেন। অবশেষে থিতু হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে।
২০০৬ সাল থেকে খেলছেন জাতীয় দলে। সেই লুইস অ্যারাগোনাসের অধীনে শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে ভিসেন্তে দেল বস্কের দলের হয়ে জিতেছেন সবকিছু-বিশ্বকাপ ও দুটো ইউরো। এখনও দলের অন্যতম ভরসা তিনি।
আরেকটি বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে। সিলভারা স্বপ্ন দেখছেন আরেকটি ট্রফির। এই সময়ে নিজেকে নিয়ে ও দলকে নিয়ে মার্কার সাথে কথা বলেছেন ডেভিড সিলভা।
আপনি কি সদ্যই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিচ্ছেন?
রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব যত এগিয়েছে, আমি দিনে দিনে আরও নিজেকে ভালো বলে মনে করেছি। অবশ্যই আমার বয়স বাড়ছে। কিন্তু আমার তো কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই। আমি এখন অবসর নিয়ে ভাবছি না। অন্তত যতদিন অবধি আমি এভাবে খেলে যেতে পারি এবং দলে নির্বাচনের জন্য বিবেচিত হতে পারি, আমি অবসর নিয়ে ভাবছি না। আমি সবসময় মানসিকভাবে খুব শক্ত মানুষ। তা না হলে আমি এতদিন ধরে এখানে থাকতে পারতাম না। আমি যখন অনুভব করবো যে, আমি আর অবদান রাখতে পারছি না। তখন আমি নিজেই দু’হাত তুলে জানাবো এবং সরে দাঁড়াবো।
বলা হচ্ছে, স্পেন কেবল নিজেদের কৌশলে কিভাবে জিততে হয়, সেটাই জানে। এটা কি ন্যায্য কথা?
২০০৮ সাল থেকে আমরা আমাদের মূল স্টাইলে খুব একটা পরিবর্তন আনিনি। আমাদের খেলোয়াড় বদল হয়েছে। কিন্তু আমরা আগের স্টাইলেই খেলেছি। হ্যাঁ, আপনাকে নতুনের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। এমনকি নতুন একজন কোচ আসলেও কিছু পরিবর্তন হয়।
১২ বছর আগে যখন আপনার অভিষেক হলো, সেটাকে কীভাবে মনে রেখেছেন?
লুইস আরাগোনাস আমাকে সব দিয়েছিলেন। উনি আমাকে ২০ বছর বয়সে দলে ডেকেছিলেন। কোনো দ্বিধা ছাড়াই মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন। উনি আমাকে এই আত্মবিশ্বাসটা দিয়েছিলেন যে, আশেপাশে কী ঘটছে, সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আমি যেন নিজের খেলাটা খেলে যেতে পারি। হুলেনও (লোপেতেগি) আমার ওপর অসাধারণ বিশ্বাস রেখেছিলো। ওর অধীনে আমি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত খেলোয়াড় ছিলাম। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি একটু পাল্টে গেছে।
২০০৬ সালে যে ডেভিড সিলভাকে আমরা দেখেছিলাম, সেখান থেকে কী পরিবর্তন হয়েছে?
আমার ধারণা আমার এই যে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সেটা আমাকে আরও ভালো ফুটবলারে পরিণত করেছে। অভিজ্ঞতা থেকে আপনি শিখবেন যে, কিভাবে করতে হবে। কারণ, ফুটবলের প্রতিটি মুহুর্ত, ম্যাচের প্রতিটি মুহুর্ত নতুন নতুন ছন্দ নিয়ে আসে। এই সময়টা কিভাবে সামলাতে হয়, সেটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যত খেলবেন, তত ভালো ম্যাচ বুঝতে পারবেন। আমি ২০১৮ সালের ডেভিড সিলভাকে এগিয়ে রাখবো। কারণ, সে অনেক বেশি শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবলে অভিজ্ঞ। মানসিক প্রশান্তি আনতে পারাটা সাফল্যের একটা বড় সূত্র। আমি জাতীয় দলের হয়ে ১২০টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছি। এটা আমাকে ওই প্রশান্তি দিয়েছে।
এই সময়ে দলের দিক থেকে দেখলে কী কী বদল হয়েছে?
অনেক। অনেক জিনিস বদলে গেছে। ফুটবল যেভাবে খেলা হয়, সেটাই বদলে গেছে। খেলোয়াড়, কোচ বদলে গেছে। আর আমাকে মানিয়ে নিতে হয়েছে।
এই বিশ্বকাপ থেকে কী আশা করছেন? আপনি কি একক একটা ঝড় চালিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন?
আমি মনে করি না যে, আমার একার একটা মুহুর্ত আসতেই হবে। আমি তা-ই করবো, আমার যা করার দরকার হবে। আমি ১২ বছর ধরে এই দলটার সাথে খেলছি। আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দারুণ সব সময়ে সাজানো। প্রজন্ম যাবে এবং আসবে। আমি সৌভাগ্যবান যে, আমি বিজয়ী দলের একজন ছিলাম। আমরা অনেক অসাধারণ জিনিস অর্জন করেছি। আমার জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আর রাশিয়ার কথা যদি বলেন, সেরা জিনিসটা হবে আরেকটা বিশ্বকাপ জিতে ফেরা। আর সেটা করতে গেলে আমাদের সবাইকে ভালো খেলতে হবে। একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে সেটা হবে না।
এটা কি আপনার শেষ বিশ্বকাপ?
আপনি কি আমাকে আরেকটা বিশ্বকাপে কল্পনা করতে পারেন? আমি এখনও দলের সাথে খেলা, আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা উপভোগ করতে পারছি। কিন্তু এটা বিশ্বাস হয় না যে, আরেকটা বিশ্বকাপ খেলতে পারবো।
আপনার পজিশনের একজন খেলোয়াড়ের জন্য পেনাল্টি এরিয়াতে অবদান রাখাটা কতটা জরুরি?
আমাদের অবশ্যই এই ব্যাপারে অবদান রাখতে হয়। কারণ, আমরা জানি, ফরোয়ার্ডদের জন্য খুব বেশি জায়গা বাকি থাকে না। আমাদের গোল তৈরি করতেই হবে। আমি এক্ষেত্রে নিজেকে সফল মনে করি। আমি সহজে গোল তৈরি করতে পারি। আসলে আপনার তো সতীর্থদের সহায়তা করতেই হবে। একটা বিশ্বকাপে প্রতিটা মুহুর্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সকলকে অবদান রাখতে হবে।
উইংয়ে খেলা কি আপনার ক্যারিয়ারকে বদলে দিয়েছে?
এই ভূমিকায় খেললে অনেক বেশি অ্যাংগেল পাওয়া যায়। এটা তুলনামূলক সহজ। কারণ আপনি সবসময় দুটো অপশন পাচ্ছেন।
এই বছরটা আপনার ব্যক্তিগতভাবে কঠিন কেটেছে। সেটা কি আপনাকে আরও শক্ত করে তুলেছে?
আমি সবসময়েই খুব শক্ত। আমার মানসিকতা সবসময়ই এরকম। যে কারণে আমি এতদিন টিকে আছি। এবার এই ঘটনা আমাকে যে সহায়তাটা করেছে, তা হলো, আমি এখন জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শিখেছি। এখন আমি জীবনে সেসব জিনিসকেই গুরুত্ব দেই, যেগুলোর আসলেই কিছু মূল্য আছে।
কী বদল এলো জীবনে?
শেষ অবধি এটা হলো আপনার অগ্রাধিকার তালিকা, যেটা একটু বদল হয়েছে। জীবনে অনেক কিছু আছে, যা খুব সহজ মনে হয় সেটাকে গুরুত্ব দিতে হয়; যেমন পরিবার ও বন্ধু। এখন আমি ছোট ছোট ব্যাপারকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শিখেছি।
গার্দিওলা আপনার খেলার স্টাইলে কী ধরনের পরিবর্তন এনেছেন?
আমি সবসময়ই খুব শারীরিক প্রচেষ্টা দিয়ে খেলাটা খেলার চেষ্টা করি। আমি এখন আরেকটু ভেতরের দিকে খেলি। আমি এখন খেলায় আরও বেশি জড়িত থাকি। পেপ আমাকে মাঝে নিয়ে এসেছে। তাতে আমি ম্যাচে আরও বেশি জড়িত থাকতে পারি।
ম্যানচেস্টার সিটি এবার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় সরবরাহ করেছে। এর অর্থ কী আপনার কাছে?
দেখুন, এর মানে হলো ওখানে আমরা যা করছি, সেটা ঠিক করছি। পেপ দলটাকে বদলে দিয়েছে। এখন আমাদের প্রতিপক্ষ আমাদের নিয়ে আরও বেশি ভাবে।
আপনি যাদের সাথে খেলেছেন, তার মধ্যে কোন সেন্টার ফরোয়ার্ডকে দলের সাথে বেশি মানানসই মনে হয়েছে?
আসলে আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে। আমরা জানি, ডিয়েগো (কস্তা) স্পেস পেলে সবচেয়ে ভালো। আবার অ্যাসপাস বা রদ্রিগো একটু নিচে নেমে বল রিসিভ করতে পছন্দ করে। তারা সবাই অসাধারণ খেলোয়াড়। আবার মিডফিল্ডারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।