আরেকটি হোম সিরিজ, আরেকটি সিরিজ জয়। দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ এক শতকে শেই হোপ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুনটা উসকে দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু মিরাজ-তামিম-সৌম্য যেন দমকল বাহিনী, মিরপুরে জ্বলে ওঠা আগুনটা সিলেট আসতেই সেটিকে নিভিয়ে দিলেন। সিরিজের দিকে তাকালে প্রাপ্তি অনেক, হতাশাও কম নয়। তামিমের প্রত্যাবর্তন, সৌম্যের জ্বলে ওঠা, হোপের নিঃসঙ্গ লড়াই, কিংবা ইমরুল কায়েসের হতাশাজনক পারফরমেন্স; ঘরের মাঠে সিরিজ জেতাটাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলবার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি আছে হোয়াইটওয়াশ না করবার হতাশাও। চায়ের কাপে ঝড় তোলার মতো অনেক বিষয়েরই জন্ম দিয়েছে সিরিজটি। চলুন, ফিরে তাকানো যাক এই সিরিজের দিকে।
হোপের উইন্ডিজ, হোপলেস উইন্ডিজ
সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটা অবিসংবাদিতভাবেই নিজের পকেটে পুরেছেন শেই হোপ, সেখানে কোনো প্রশ্ন নেই কারো। পুরো উইন্ডিজ দল যেখানে ছন্নছাড়া, হোপ সেখানে নিঃসঙ্গ যোদ্ধা। উইন্ডিজ দলটাকে হোপ ঠিক কতটুকু একা বয়ে বেড়িয়েছেন, তা বোঝা যায় এই পরিসংখ্যানেই; ৩ ম্যাচ মিলে উইন্ডিজ পুরো দলের রান ৬৪৯, সেখানে হোপের একার রানই ২৯৭! অর্থাৎ পুরো সিরিজে উইন্ডিজ দলের ৪৫.৭৬% রান করেছেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচের পারফরমেন্স আরও অমানুষিক, দলের ২৫৬ রানের মধ্যে হোপের একার রানই ১৪৬, অর্থাৎ ৫৭.০৩ শতাংশ! শেষ ম্যাচেও সেই ধারাই অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি, দলের ১৯৮ রানের ভেতর ১০৮ রানই তার, শতকরার হিসেবে ৫৪.৫৫ শতাংশ। উইন্ডিজ নামের ডুবন্ত টাইটানিককে একাই ঠেলে নিয়েছেন, একবার তীরে ভেড়াতে পারলেও পরেরবার আর হয়ে ওঠেনি।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলা হোপের অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংসটিকে আপনি খুব সহজেই ওয়ানডে ক্লাসিকের তালিকায় রাখতে পারেন। ক্লাস, টেকনিক আর টেম্পারমেন্ট মিলিয়ে একা হাতে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের হাত থেকে, প্রথম ম্যাচে ইনিংস লম্বা না করতে পারার ভুল দ্বিতীয়বার আর করেননি। অন্যপাশে যখন সতীর্থদের ক্রমাগত আসা-যাওয়ার পালা, তখন তিনি একপ্রান্ত আগলে রেখেছেন, সময়মতো বাউন্ডারি বের করেছেন, আস্কিং রেটটাকে কখনোই যেতে দেননি ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাকিবের ওভারে রান নেননি, পরে ঠিকই পুষিয়ে দিয়েছেন মুস্তাফিজের এক ওভারে ৩ চার মেরে। তার ইনিংসটা দেখলে অবশ্য মনে হবে খুব সহজভাবেই এগিয়েছেন তিনি। ওয়েল, জিনিয়াসরা কঠিন বিষয়টাকেই সহজ করে ফেলেন, এখানেই তারা অনন্য। পুরো ইনিংসে বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের সুযোগ দেননি একটিও, নিজেদের দুষতে গিয়েও তাই পারবে না প্রতিপক্ষ। মাত্র মাস দুয়েক আগেই ভারতের বিপক্ষে ভিশাখাপত্তনমে নিজে ১২৩ রানে অপরাজিত থাকার পরও দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়াতে পারেননি, সমালোচিত হয়েছিলেন প্রচণ্ড। হয়তো অনুপ্রেরণা নিয়েছেন সেই ইনিংস থেকেই, গোঁ ধরে ছিলেন ম্যাচ এবার জিতিয়েই ছাড়বেন। তাই সেঞ্চুরি করেও বাঁধভাঙা উল্লাস করলেন না, তিনি জানতেন কাজ এখনও ঢের বাকি। মাথা ঠান্ডা রেখে, নিজের জেদকে পুঁজি করে জিতিয়ে ছাড়লেন দলকে। সেই অসামান্য জেদের কাছেই আসলে হার মেনেছে বাংলাদেশ, নিজেদের দোষ এখানে সামান্যই।
মিরপুরে যেখানে শেষ করেছিলেন, সিলেটে শুরুটা সেখান থেকেই করলেন। এবারও দেখলেন অপর প্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিল, তবু ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন। মিরাজের বলে যখন চোখে অন্ধকার দেখছিলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা, তিনি তখনও নিরুদ্বেগ। বাংলাদেশের বোলারদের চাপে রানের চাকা প্রায় থেমেই গেলো, তবু তিনি থামেননি। তুলে নেন সিরিজে নিজের দ্বিতীয় শতক, উইন্ডিজের ইনিংস শেষে তার রান ১০৮, উইন্ডিজের মাত্র ১৯৮!
উপরে দেওয়া পরিসংখ্যানটাই আসলে প্রমাণ করে, এই সিরিজে ঠিক কতটা হোপনির্ভর দল ছিল উইন্ডিজ। পরিসংখ্যানে অতিরিক্ত রান যোগ করলে দেখা যায়, উইন্ডিজ দলে হোপ আর ‘মি. এক্সট্রা’ মিলে করেছেন দলের অর্ধেকেরও বেশি রান, বাকি দল মিলে করেছে ৪৯.১৫ শতাংশ। বাকি দলের অবস্থা যেন সেই দিগ্ভ্রান্ত পথিকের মতো, যার জানা নেই কী করতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি করা প্রতিটি ফাঁদে তারা পা দিয়ে নিজেদের মৃত্যু ডেকে এনেছেন, বোলিংয়ে না ছিলো কোনো বৈচিত্র্য, না ছিলো কোন পরিকল্পনা। লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু তাতে আরেক কাঠি সরেস, গোটা সিরিজে তিনি একটি গুগলিও দেননি! উইকেটগুলো যতখানি বোলারদের প্রাপ্তি, তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যাটসম্যানদের দান। রভম্যান পাওয়েল অথৈ সাগরে হারিয়ে যাওয়া জাহাজের নাবিকের মতো উপায় খুঁজে বেড়িয়েছেন, খুঁজে পাননি বলতে গেলে কিছুই। হাস্যকর কিছু কাজও করেছে উইন্ডিজ দল, প্রথম দুই ম্যাচে যেই ওশেন থমাস গতি দিয়ে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের, সেই থমাস তৃতীয় ম্যাচের একাদশেই নেই! অথচ কাপ্তান রভম্যান পাওয়েল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেই বলে গেছেন বাংলাদেশের পেস বোলিং খেলতে অস্বস্তি এবং সেটা কাজে লাগানোর কথা!
পুরো সিরিজজুড়েই উইন্ডিজ দল ছিলো এরকম ছন্নছাড়া দিগভ্রান্ত জাহাজ, মাঝখানে শেই হোপ নামের এক শুকতারা তাদের আশা দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সেটাকে অনুসরণ তো করা চাই! দুঃখজনকভাবে সেটা তারা করতে পারেননি। তাই, হোপের উইন্ডিজ সিরিজজুড়েই ছিলো ‘হোপলেস’!
সেই সৌম্য, এই সৌম্য
২০১৫ সালে সৌম্য সরকারের খেলা দেখা ছিলো প্রশান্তিদায়ক, কী দুর্দান্ত স্ট্রোকমেকিং! প্রতিপক্ষের বোলিং অ্যাটাককে চুরমার করে দিচ্ছেন, যেন এই মাঠ তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। বিনা অনুমতিতে প্রবেশের সাজা দিচ্ছেন সবাইকে!
সেই সৌম্য হারিয়েই গিয়েছিলেন। মাঝের দুই বছর থেকে থেকে পুরনো ঝলক দেখালেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। দল থেকে বাদ পড়েন, ফিরে আসেন, আবার বাদ পড়েন। অদ্ভুত এক চক্রে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন সৌম্য সরকার, মনে হচ্ছিলো যেন বেরুতেই পারবেন না।
ঘরোয়াতে রান পাচ্ছিলেন, জিম্বাবুয়ের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করে ফেললেন সেঞ্চুরি। আর এর পুরষ্কার হিসেবেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে দলে জায়গা পান, আর সেটাই বুঝি হলো ‘গেমচেঞ্জার’। দলে ফিরেই কিস্তিমাত! চোখ জুড়ানো এক সেঞ্চুরি করেন, অনেকদিন পর সৌম্যকে সৌম্যের মতো মনে হচ্ছিলো।
উইন্ডিজের সাথেই তামিম ফিরলেন, এর মাঝে টেস্ট সিরিজে রান একদমই পাননি তিনি। তবুও শেষ ওয়ানডে আর উইন্ডিজের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরির বদৌলতে দলে টিকে গেলেন, কিন্তু খেলতে হলো ৬ নাম্বারে। অচেনা পজিশনে নিজের সেরাটা দিতে পারছিলেন না, আর তাতেই বিদ্ধ হচ্ছিলেন সমালোচনার বিষাক্ত তীরে। জবাব দেওয়ার সুযোগ পেলেন শেষ ওয়ানডেতে, ইমরুল কায়েস বাদ পড়ার সুবাদে টপ অর্ডারে জায়গা পেয়ে।
লিটন দাস ব্যক্তিগত ২৩ রানে আউট হওয়ার পর ক্রিজে এলেন, শুরুটা ধীরেসুস্থে করলেন। মারলন স্যামুয়েলসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে প্রায় কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের তালুবন্দী হয়েই গিয়েছিলেন, এতদিন রুষ্ট ভাগ্যদেবী এবার একটু মুখ তুলে তাকালেন। সেই ছয়ের পর সৌম্যের ব্যাটে দেখা গেলো সেই পুরনো ছন্দ, ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ব্যাটে তুললেন ক্যালিপসোর সুর। এরপর আরও হাঁকালেন ৪টি বিশাল ছয়, দুটো গিয়ে আছড়ে পড়লো সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে।
৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে তামিমকে স্ট্রাইক দিলেন, তার রান তখন ৮০, দলের প্রয়োজন আর মাত্র ২৩। স্ট্যাম্প মাইকে শোনা গেলো তামিম তাকে ডেকে বললেন,
‘রান নিস না!’
পরের বল দুটো ফিরিয়ে দিলেন তামিম, কারণ তিনি চান, সৌম্যের সেঞ্চুরিটা হোক।
মনে করুন তো, সৌম্যের ২০১৫ সালের তাণ্ডবলীলা সবচেয়ে কাছে থেকে কে দেখেছিলেন? জ্বি, তামিম ইকবাল খান। তামিম ঠিক জানেন, সৌম্যের ক্ষমতা কতটুকু, তাকে দলের কতখানি প্রয়োজন। তামিম জানেন, সৌম্যের জন্য এই সেঞ্চুরিটা পাওয়া কতখানি জরুরী; নিজের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য।
সৌম্য পারেননি, কিমো পলের পরের ওভারেই ৮০ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন। কিন্তু সাথে এটা জেনে গেছেন, সিনিয়রদের তার উপর আস্থা আছে। এই জানাটা প্রয়োজন, এই বিশ্বাসটা তার প্রয়োজন, কারণ বাংলাদেশ দলের প্রয়োজন একজন আত্মবিশ্বাসী সৌম্য সরকারকে, সেই সৌম্য সরকারকে।
মিরাজের রাজত্ব
সময়টা ২০১৬, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আসর বসেছে বাংলাদেশে। সেমিফাইনালে স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উইন্ডিজ। বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ টুর্নামেন্টজুড়েই আলো ছড়িয়েছেন, অন্য পক্ষের কাপ্তানের নাম শিমরন হেটমায়ার। নিজে দুর্দান্ত খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ, হেটমায়ার অবশ্য চ্যাম্পিয়ন করেই ছেড়েছিলেন নিজের দলকে।
এবার বর্তমানে ফিরে আসা যাক। উইন্ডিজের মুখোমুখি বাংলাদেশ, আবারও ঘরের মাটিতেই। মিরাজ জাতীয় দলে আলো ছড়াচ্ছেন, হেটমায়ারও ভারতের বিপক্ষে সিরিজে দুর্দান্ত খেলে স্পটলাইট নিজের উপর টেনে এনেছেন। দুর্দান্ত স্ট্রোকমেকিং, লারার যোগ্য উত্তরসূরি পাওয়া গেলো, ক্রিকেট দুনিয়ায় এই আলোচনাই চলছে।
হেটমায়ার এলেন, মিরাজের বিপক্ষে খেললেন, মিরাজ জয় করলেন। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে ৭ বার আউট হয়েছেন হেটমায়ার, ৬ বারই মিরাজের শিকার তিনি। মাঝখানে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রুবেল বাগড়া বাধিয়ে দিয়েছেন, মিরাজের ‘বানি’কে আউট করে। বাস্তবেই যেন মিরাজের ‘বানি’ হয়ে গেছেন হেটমায়ার, মিরাজ বোলিংয়ে এলেই নিজের সহজাত স্ট্রোকমেকিং বাদ দিয়ে ডিফেন্সিভ খেলার চেষ্টা করছেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে তিনি ব্যাটিংয়ে আসার সাথে সাথেই মিরাজকে বোলিংয়ে আনলেন মাশরাফি। ফলাফল? কী আর হবে, হেটমায়ার প্যাভিলিয়নে!
তৃতীয় ম্যাচটি মিরাজ শেষ করেছেন ক্যারিয়ারসেরা ফিগার ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে, সাথে বাগিয়ে নিয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। পুরো সিরিজজুড়েই মিরাজকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা, হাঁসফাঁস করেছে তার দুর্দান্ত লাইন লেংথে।
ম্যাচ শেষে মিরাজ প্রেস কনফারেন্সে এসে একটু মজা করার সুযোগ ছাড়লেন না, জিম্বাবুয়ের সাথে ম্যাচের পর প্রেস কনফারেন্সে এসে বলেছিলেন,
‘খিদা লাগছে, একটু খাই’।
সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়া নিয়েই মিরাজ বললেন,
‘আগের বার প্রেস কনফারেন্সের কি একটা ভিডিও ছেড়ে দিছে খিদা লাগছে একটু খাই, এমন ভাইরাল হয়ে গেছে!’
তামিমের প্রত্যাবর্তন
এশিয়া কাপে সুরাঙ্গা লাকমলের বাউন্সারটা হাতে লাগার পর থেকেই মাঠের বাইরে ছিলেন তামিম ইকবাল। সেই ম্যাচেই এক হাত দিয়ে সেই লাকমলের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়ে প্রমাণ দিয়েছিলেন নিজের দেশপ্রেমের, নিজের সাহসের। এই তামিম ইকবালকে কে না মিস করবে?
মিস করছিলোও বাংলাদেশ, এশিয়া কাপের ফাইনাল ছাড়া কোনো ম্যাচে হয়নি বলার মত উদ্বোধনী জুটি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টেও অবস্থা ছিলো তথৈবচ। জিম্বাবুয়ের সাথে অবশ্য ইমরুল কায়েস অসাধারণ খেললেন, সাথে লিটন-সৌম্য সঙ্গ দেওয়ায় সে যাত্রায় আর খান সাহেবের অভাব বোধ হয়নি। ফেরার কথা ছিল উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টেই, অনুশীলনে আবার দেখা দিলো সাইড স্ট্রেইন, টেস্ট সিরিজটাও বাইরেই কাটাতে হলো। উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেই করলেন এক মারমুখী শতক, মনেই হয়নি যেন বহুদিন পরে ফিরছেন! প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু না করলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নেন ফিফটি। সেদিন ইনিংস বড় না করতে পারেননি বটে, পুষিয়ে দিলেন শেষ ম্যাচে। অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন, সাথে নিয়ে গেলেন সিরিজটাও। তামিম ইকবালের ফেরাটা স্বস্তিদায়ক, ফিরেই রান পাওয়াটা আনন্দের।
মধুর সমস্যা কোথায় গেলো?
উইন্ডিজ সিরিজ শুরু আগে থেকেই বাংলাদেশ ক্যাম্পে মধুর সমস্যা ; ফিরছেন তামিম ইকবাল, অন্যদিকে শেষ সিরিজেই রান পেয়েছেন ইমরুল, লিটন, সৌম্য তিনজনই। কাকে রেখে কাকে খেলানো যায়?
টিম ম্যানেজমেন্ট এত ঝামেলায় না গিয়ে নামিয়ে দিলো চারজনকেই, সৌম্যকে পাঠানো হলো মিডল অর্ডারে। বলাই বাহুল্য, রান পেলেন না তিনি। অন্যদিকে ৩ নাম্বারে খেলা ইমরুল কায়েস দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে করলেন চার রান, ওশেন থমাসের এক্সপ্রেস গতির কাছে পরাস্ত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হলো তাকে। তৃতীয় ম্যাচে তিনে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েই সৌম্য খেললেন এক দুর্দান্ত ইনিংস। এমন অবস্থায় ইমরুল কায়েসের জন্য পরের ম্যাচে দলে ফেরাটা একটু কঠিনই।
মাশরাফির শেষ?
আকাশে বাতাসে গুঞ্জনটা উড়ছে অনেক দিন ধরেই, বিশ্বকাপশেষে অবসর নেবেন তিনি। আর যদি সেটা সত্যি হয়, তবে উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজটাই ঘরের মাঠে তার শেষ সিরিজ, সিলেটের ম্যাচটাই বাংলাদেশের হয়ে বাংলাদেশে তার শেষ ম্যাচ।
প্রেস কনফারেন্সে এই নিয়ে প্রশ্নে অবশ্য সরাসরি জবাব দেননি তিনি, বলেছেন,
‘ওয়ার্ল্ড কাপের পরে কী করবো, সেটা আসলে ওয়ার্ল্ড কাপের শেষ ম্যাচ খেলার পরেই ডিসাইড করবো।’
শেষ ম্যাচ নিয়ে এটিও বলেন, ২০১১ থেকেই তিনি তার সব ম্যাচকে শেষ ম্যাচ ধরেই খেলেন। মাশরাফি তার উত্তরে ভবিষ্যতের উপর ধোঁয়াশার চাদর মুড়ে দিয়েছেন বটে, তবে ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’ আরও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যাবেন, সেই আশার বসতি গড়তে দোষ কী!