ফুটবল! সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর খেলা! সবচেয়ে জনপ্রিয়ও তো বলা হয় এই ফুটবলকেই। জনপ্রিয় হবেই বা না কেন? এ খেলার মুহুর্তে মুহুর্তে যে লুকিয়ে থাকে রহস্য, লুকিয়ে থাকে উত্তেজনা। আর এই জনপ্রিয় খেলারই সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন রোনালদিনহো। পুরো নাম “রোনাল্ড ডি আসিস মোরেইরা”।
শুধু জনপ্রিয় খেলোয়াড় বললে রোনালদিনহোর প্রতিভাকে ছোট করে দেখানো হয়। সম্ভবত জাদুকর বা ঐন্দ্রজালিক শব্দটিই তার জন্য যথাযথ হবে। মাঠের লাখ লাখ সমর্থকদের চোখকেইই শুধু নয়, প্রতিপক্ষের ১১ জনকেও নিজের ভেলকিতে বারবার বোকা বানিয়েছেন এই ফুটবলার।
ব্রাজিল! ফুটবলের তীর্থভূমি, জাদুকরদের জন্মস্থান। যেখানে ফুটবলটা হলো ভালবাসা আর প্রতিটা মানুষ সেই ফুটবলের প্রেমিক। এখানে যুগে যুগে কত যে অসাধারণ ফুটবলারের জন্ম হয়েছে তা কি গুনে শেষ করা যাবে? সেই ব্রাজিলেরই সমুদ্রতীরবর্তী এক শহরে ১৯৮০ সালের ২১ মার্চ জন্ম নেন রোনালদিনহো। তার ডাক নাম ছিল ‘গাউচো’। তার বাবা জোসে মোরেইরাও স্থানীয় এক ক্লাবের ফুটবলার ছিলেন। ব্রাজিলের অন্যান্য পরিবারগুলোর মত দিনহোর পরিবারও ছিল ফুটবলের পূজারি। তার পরিবারে সবসময় ফুটবল নিয়ে আলোচনা চলত। দুঃখের বিষয় রোনালদিনহোর বয়স যখন মাত্র আট বছর তখন তার বাবা পারিবারিক এক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
এই আট বছর বয়স থেকেই রোনালদিনহোর ফুটবলীয় প্রতিভার প্রকাশ পেতে শুরু করে। তার বলের উপড় নিজের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, গতিশীল ফুটবল নিয়ে নতুন নতুন কলা-কৌশলে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেত। খুব ছোট বয়সেই রোনালদিনহো তার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশ বড় বড় খেলোয়াড়দের সাথে খেলার সুযোগ পেয়ে যান। তাই বয়সে খুব ছোট হওয়াই আসল নাম রোনাল্ড হওয়ার পরও তাকে ডাকা হত “রোনালদিনহো” বলে যার অর্থ করলে দাঁড়ায় “ছোট রোনাল্ড”।
রোনালদিনহোকে প্রথম সবাই চিনতে পারে যখন রোনালদিনহোর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এক স্থানীয় দলের সাথে রোনালদিনহোর দল ২৩-০ গোলে জয় লাভ করে এবং ধারণা করুন তো রোনালদিনহো কয়টি গোল দিয়েছিল সেই ম্যাচে? হ্যাঁ, গুনে গুনে ২৩ টি। ২৩ টি গোলের সবগুলো তিনি নিজে একাই করেছিলেন। এর কিছুদিন পর ১৯৯৭ সালে রোনালদিনহো ডাক পেলেন ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-১৭ এর যুব বিশ্বকাপের দলে। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ান হল। রোনালদিনহো হলেন টুর্নামেন্টের ৩য় সেরা। পেলেন ব্রোঞ্জ বল। এই বিশ্বকাপে দিনহো মোট দুটি গোল করেছিলেন। সবাই শুনতে পেলো অনাগত এক ফুটবল বিস্ময়ের আগমনী বার্তা।
রোনালদিনহোকে দলে ভেরাতে ব্রাজিলের বড় বড় ক্লাবগুলো ছোটাছুটি শুরু করে দিলো। কিছুদিনের মাঝেই ব্রাজিলের অন্যতম সেরা ক্লাব গ্রেমিও রোনালদিনহোকে চুক্তিবদ্ধ করে ফেলতে সক্ষম হলো। গ্রেমিওর যুব দলে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করলেন রোনালদিনহো। ১৯৯৮ সালে সিনিয়র দলে অভিষেক ঘটল তার। খেললেন ব্রাজিলের ঘরোয়া লীগ ‘কোপা লিবার্তাদোরেসে’। ১৯৯৯ সালে গ্রেমিয়ের হয়ে তিনি ৪৮ ম্যাচেই করে বসেন ২৩ টি গোল। এত অল্প বয়সে এমন সাফল্য খুব কমই দেখা যায়। এ সময় রোনালদিনহোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ম্যাচটি ছিল ‘ইন্টারনেসিওন্যালের’ বিপক্ষে। ইন্টারনেসিওন্যালে তখন খেলতেন ব্রাজিলের ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কার্লোস দুঙ্গা। খেলার এক পর্যায়ে দুঙ্গার মাথার উপড় দিয়ে বল ফ্লিক করেন রোনি। সেই ম্যাচেই আরেকবার চমৎকার ড্রিবলিঙ্গে দুঙ্গাকে বোকা বানিয়ে জয়সূচক গোল করেছিলেন রোনালদিনহো।
ব্রাজিলে মাত্র কয়েকজন ফুটবলার আছেন যারা সকল পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। তাদের মাঝে রোনালদিনহো একজন। ১৯৯৯ সালে দিনহো সাউথ আমেরিকান যুব চ্যাম্পিয়ানশিপে ব্রাজিলের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই প্রতিযোগীতায় তিনি মোট ৩ টি গোল করেছিলেন। এর ফলে ব্রাজিল ফিফা যুব বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। নাইজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত ফিফা যুব বিশ্বকাপেও দিনহো মোট ৩ টি গোল করেছিলেন। এ টুর্নামেন্টে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো।
তার এই ধারাবাহিক সাফল্যের ফলে ২৬ জুন,১৯৯৯ সালে লাটভিয়ার সাথে এক খেলায় ব্রাজিলের সিনিয়র টিমে রোনালদিনহোর অভিষেক ঘটে। তখন দিনহোর বয়স মাত্র ১৯ বছর। ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী হলুদ জার্সি গায়ে জড়ালেন রোনালদিনহো। হাতে তুলে নিলেন সাম্বার পতাকা। লাটভিয়াকে ৩-০ গোলে হারালো ব্রাজিল। দিনহো একাই করলেন ২ গোল। ১৯৯৯ এর কোপা আমেরিকার ব্রাজিল দলে ডাক পেয়ে গেলেন তিনি। স্বপ্নের শুরুটা করলেন স্বপ্নের মতই।
১৯৯৯ সালের কোপা আমেরিকায় করলেন ১ গোল। ব্রাজিল হলো চ্যাম্পিয়ান। কোপা আমেরিকা কাপে চুমু এঁকে দেয়ার সুযোগ পেলেন রোনালদিনহো। তাও মাত্র ১৯ বছর বয়সে। ভাগ্যবান রোনালদিনহো। আসলেই কি তাই? নাকি ব্রাজিলই ভাগ্যবান রোনালদিনহোর মত ফুটবলারকে পেয়ে?
১৯৯৯ ফিফা কনফেডেরেশান কাপ। শুধুমাত্র ফাইনাল বাদে সব ম্যাচে একের পর এক গোল করলেন রোনালদিনহো। সৌদি আরবের সাথে ৮-২ গোলে জেতা ম্যাচে করলেন হ্যাট্রিক। ফাইনালে গোল পেলেন না রোনালদিনহো। মেক্সিকোর কাছে হেরে গেলো ব্রাজিল। রোনালদিনহো জিতলেন টুর্নামেন্ট সেরার গোল্ডেন বলের পুরস্কার। সবচেয়ে বেশি গোল করে গোল্ডেন বুটও নিজের করে নিলেন।
২০০০ সালে রোনালদিনহো ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে প্রি-অলিম্পিক টুর্নামেন্টে অংশ নেন। এ প্রতিযোগীতার ৭ ম্যাচে ৯ গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ান করেন।
২০০২ সালে রোনালদিনহো ব্রাজিলের জার্সি গায়ে তার প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলেন। রোনাল্ড আর রিভালদোর সাথে জুটি বাঁধলেন রোনালদিনহো। এর আগেও এ ত্রয়ী ব্রাজিলকে কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ান বানিয়েছিল। তাই এ ত্রয়ীর উপড় ভরসা একটু বেশিই ছিল। এ বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ২ গোল করেন রোনালদিনহো। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসিস্ট করেছিলেন।
২১ জুন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রোনালদিনহো সম্ভবত বিশ্বকাপে নিজের সবচেয়ে অসাধারণ ম্যাচটি খেলেছিলেন। ২৩ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের মাইকেল ওয়েন গোল করে ফেললে ব্রাজিল চলে যায় ব্যাক ফুটে। হাফ টাইম প্রায় শেষ। হঠাৎই মাঝ মাঠে বল পেয়ে গেলেন এই ম্যাজিশিয়ান। ইংল্যান্ডের ডিফেন্স ভেদ করে দৌড় দিলেন রোনালদিনহো। ইংল্যান্ডের সেরা ডিফেন্ডার অ্যাসলে কোল রোনালদিনহোর সামনে চলে এলেন। নিজের ট্রেডমার্ক স্টেপ ওভার করে কোলকে বোকা বানিয়ে ফেললেন আমাদের রোনালদিনহো। পেনাল্টি এরিয়ার একটু আগে থেকে বলটি বাড়িয়ে দিলেন রিভাল্ডোকে। এবং গোল!!! ১-১ এ সমতা! কিছুক্ষণ পরেই পরের হাফের খেলা শুরু হয়ে গেলো। ৫০ মিনিটের খেলা শেষ। ব্রাজিলের ফ্রিকিক। ফ্রিকিক নেবেন রোনালদিনহো। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে!! গোল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তিনি যে রোনালদিনহো। সোনায় মোড়ানো জাদুর পা নিয়ে মর্ত্যে এসেছেন তিনি সে কথা যেনো ভুলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের গোল রক্ষক ডেভিড সিম্যান। বলটিকে অদ্ভুত এক সৌন্দর্যে বাঁকিয়ে শূন্যে ভাসিয়ে দিলেন ম্যাজিশিয়ান। এ বলটি জালে না ঢুকলেও যে পাপ হত!!! বাম পাশের কোণা দিয়ে জালে ঢুকে গেলো বল। ২-১!! ব্রাজিল লিড পেল এবং শেষ পর্যন্ত দিনহোর জাদুকরী অ্যাসিস্ট আর অনিন্দ্য সুন্দর ফ্রিকিকেই বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে পৌঁছে গেলো ব্রাজিল। জার্মানীর সাথে ফাইনালের ব্রাজিল দলেও মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ব্রাজিল জেতে তাদের রেকর্ড ৫ম বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপেই সোনার কাপটিতে নিজের ঠোঁটের চুমু এঁকে দিলেন ‘গাউচো’।
এরপর ২০০৫ সালে রোনালদিনহোকে ব্রাজিল ফুটবল সেনাদের সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হলো। হাতে ঢুকিয়ে নিলেন ক্যাপ্টেনের আর্ম ব্যান্ড। চলে আসল ২০০৫ এর কনফেডারেশান কাপ। সেমি ফাইনালে ব্রাজিলের খেলা পড়ে স্বাগতিক জার্মানির সাথে। ব্রাজিল এ ম্যাচ ৩-২ গোলে জেতে। দিনহো করেন ১ গোল। ফাইনাল ম্যাচ চিরপ্রতিদ্বন্দী আর্জেন্টিনার সাথে। আর্জেন্টিনা ৪-১ গোলে হেরে যায়। ১ গোল করে দিনহো হলেন ফাইনালের ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ। গোটা টুর্নামেন্টে দিনহো করেছিলেন ৩ গোল। মোট ৯ গোল করে এ টুর্নামেন্টের “অল টাইম হায়েস্ট স্কোরার” হয়ে যান তিনি। ক্যাপ্টেন হিসেবে ব্রাজিলকে জেতালেন কনফেডারেশান কাপ।
২০০৬ এর বিশ্বকাপ ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য এক হতাশার বিশ্বকাপ। রোনালদিনহো এই বিশ্বকাপে কোন গোল পান নি। করেছিলেন মাত্র ১ টি অ্যাসিস্ট। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে ব্রাজিল। দিনহো খেললেন তার জীবনের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।
২০০৫ এর কনফেডেরেশান কাপের পর থেকে প্রায় ২ বছর ধরে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে গোলবিহীন ছিলেন এই জাদুকর। অনেকেই তার বিরুদ্ধে ব্যক্তি জীবনে উশৃঙ্খল জীবন যাপনের অভিযোগ আনেন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিল অলিম্পিক টিমে যোগ দেন রোনালদিনহো। তাকে ব্রাজিল অলিম্পিক টিমের ক্যাপ্টেন করা হলো। কোয়ার্টার ফাইনালে ২ গোল করে দলকে সেমি ফাইনালে তুললেন রোনি। সেমি ফাইনালে রোনালদিনহোর ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ মেসির আর্জেন্টিনা। এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ান আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যায় ব্রাজিল। ব্রাজিল এই অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ মেডেল জেতে।
২০১০ বিশ্বকাপে রোনালদিনহোর ফর্ম থাকার পরও কোচ দুঙ্গা তাকে দলে জায়গা দেন না। তারপরও ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেমে থেমে দলে ডাক পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালের কনফেডেরেশান কাপে তাকে দলে ডাকা হয় না। এমনকি ২০১৪ সালে স্কোলারির বিশ্বকাপ দলেও আর জায়গা পাননি তিনি। এর পর আর কখনই ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দেখা যায়নি এ নক্ষত্রকে।
ক্লাব ক্যারিয়ারেও বেশ উজ্জ্বল ছিলেন রোনালদিনহো। কিন্তু শুধু ব্রাজিলের জার্সি গায়েই তার যা কীর্তি সেটাই কিংবদন্তীতুল্য। তাই আজ আর তার ক্লাব ক্যারিয়ার নিয়ে কথা না বলি। তার কিছু ব্যক্তিগত অর্জনের কথা বলেই লিখাটি শেষ করব।
রোনালদিনহো ব্যক্তিগত পুরস্কার হিসেবে ফিফা কনফেডেরেশান কাপ গোল্ডেন বল, ব্রোঞ্জ বল, গোল্ডেন শু, কনমেবল মেন প্রি অলিম্পিক টপ স্কোরারের পুরস্কার জিতেছেন। এছাড়াও ২ বার ওয়ার্ল্ড সুকার ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা খেলোয়াড়, ২ বার ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অভ দ্যা ইয়ার হয়েছেন। ব্যালন ডি অরও জিতেছেন এ প্রতিভাধর ফুটবলার। ফিফা বিশ্বকাপের একাদশে ১বার এবং ফিফপ্রো ওয়ার্ল্ড একাদশে ৩ বার জায়গা করে নিয়েছেন। এমনই ছিলেন ব্রাজিলের এ জাদুকর। আদরের ‘গাউচো’। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ড্রিবলার, অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ও বলা হয় যাকে। ব্রাজিলের অনেক সমর্থক এখনো চান দিনহো তাদের প্রিয় হলুদ জার্সি গায়ে জড়িয়ে আবারো মাঠে নামুক। আরেকবার তার জাদু দেখাক। কিন্তু যা দিয়েছেন তিনি তাই বা কম কি? থাক না হয়। তার স্মৃতি নিয়েই ব্রাজিলের ফুটবল সামনে এগিয়ে যাক। বেশি ভেলকি দেখালে চোখ দুটো আবার ঝলসে যেতে পারে যে!