বার্সেলোনা: আলো থেকে আঁধারিতে

ফুটবল বিশ্বের এক পরাশক্তির নাম বার্সেলোনা। বার্সার লাল-নীল জার্সি গায়ে মাঠ মাতিয়েছেন কুবালা, ম্যারাডোনা, রোনালদিনহো, রোমারিও, ইয়োহান ক্রুইফের মতো কিংবদন্তীরা। এখনো মাঠ মাতিয়ে যাচ্ছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। গার্দিওলার টিকিটাকা কিংবা ডি ক্রুইফের ধ্রুপদী ফুটবল, দিনহোর নিখুঁত স্কিল কিংবা মেসির বাঁ-পায়ের জাদু, ফুটবল বিশ্বকে সবসময়ই বার্সা উপহার দিয়ে গেছে চোখ ধাঁধানো ফুটবল নৈপুণ্য, ভক্তদের দিয়ে গেছে আজীবন লালন করার মতো আবেগী মুহূর্ত। অন্য সব ক্লাবের মতো বার্সা শুধু একটি নগরীর প্রতিনিধি নয়। বার্সা প্রতিনিধিত্ব করে পুরো কাতালান সম্প্রদায় এবং জাতিগোষ্ঠীর। এ কারণেই বার্সাকে বলা হয়, ‘মেস’কু উন ক্লাব’ (More than a club)।

ক্যাম্প ন্যুর গ্যালারিতে ‘more than a club’; source: FC Barcelona

শত বছরের ঐতিহ্য কাঁধে চাপানো এই ক্লাব সাম্প্রতিক সময়ে খবরের শিরোনাম হয়ে আসছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময়েই হারিয়ে গেছে বার্সার চিরচেনা ছন্দ। আর মাঠের বাইরেও সাম্প্রতিক সময়ে বার্সা জন্ম দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিতর্কের। অগ্নিদৃষ্টির সম্মুখীন হচ্ছে ইউরোপের বাকি ক্লাবগুলোর। এমনকি বার্সেলোনার পাড় সমর্থকেরাও বিরক্ত হয়ে উঠেছে ক্লাবের বোর্ডের উপর। বার্সার এই ছন্দপতনের পেছনের কারণ কী? এই দুর্দশার পেছনে কি বোর্ড দায়ী? আসুন, খুঁজে দেখি।

সূচনালগ্ন

ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা যাত্রা শুরু করে ১৮৯৯ সালের ২৯ নভেম্বর, সুইস ফুটবল অগ্রদূত জোয়ান গ্যাম্পারের হাত ধরে। সুইজারল্যান্ডে গ্যাম্পার যে ক্যান্টিনে কাজ করতেন, তার রঙ ছিল লাল-নীল। সেখান থেকেই তিনি বার্সার জার্সির ডিজাইন করেন লাল-নীলে। শুরু থেকেই বার্সেলোনা সমগ্র কাতালান জাতির প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে একটি টুর্নামেন্টও ছিল, যার নিয়মিত চ্যাম্পিয়ন ছিল বার্সা। কাতালান জাতির প্রতিনিধিত্ব করার জন্য শুরু থেকেই সরকার এবং বিভিন্ন মহলের আক্রোশের শিকার হয় এই ক্লাবটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পূর্ববর্তী সময়ে জাতিগত নিপীড়ন এবং ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোর মতো প্রধানমন্ত্রীর দমন নীতির শিকার হতে হয় কাতালান এই ক্লাবটির।

ইয়োহান ক্রুইফ ও ধ্রুপদী ফুটবলের সূত্রপাত

ফুটবল কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ প্রথমবারের মতো বার্সার জার্সি গায়ে দেন ১৯৭৩ সালে। তৎকালীন রেকর্ড ট্রান্সফার ফি ২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আয়াক্স থেকে ক্রুইফকে ক্যাম্প ন্যুতে হাজির করে বার্সেলোনা। রেকর্ড ট্রান্সফার ফি যে যথেষ্টই ছিল, ক্রুইফ তা প্রমাণ করে পরের বছরই। ক্রুইফের পায়ের জাদুতে ১৪ বছর পর লীগ শিরোপা জিতে বার্সা, তাও আবার চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের মাঠে ৫-০ গোলে হারিয়ে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ দু’বছরই ব্যালন ডি’অর জিতেন ক্রুইফ।

নান্দনিক ইয়োহান ক্রুইফ; source: FC Barcelona

শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই না, কোচ হিসেবেও সমানভাবেই আলো ছড়িয়েছেন ক্রুইফ। কাতালান ক্লাবটিকে আলোকিত করেছেন নিজের ধ্রুপদী ফুটবল দর্শন দিয়ে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত বিস্তৃত বার্সায় তার পাঁচ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ৪ বার লা লিগা ট্রফি ঘরে আনে কাতালানরা। তার আরেকটি বড় কৃতিত্ব হচ্ছে ‘লা মাসিয়া’ খ্যাত বার্সার ইয়ুথ একাডেমির উদ্ভাবন করা। এই ইয়ুথ একাডেমী থেকেই উঠে এসেছে পেপ গার্দিওলা, লুইস গার্সিয়া, পুয়োল, জাভি, ইনিয়েস্তা এবং মেসির মতো তারকারা। ‘লা মাসিয়া’-কে বিশ্বের সেরা ইয়ুথ একাডেমিগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য করা হয়।

লাপোর্তা যুগ

ক্রুইফ অধ্যায়ের পর আবার ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে বার্সার ধ্রুপদী ফুটবল, ট্রফি কেবিনেট হাহাকার করতে থাকে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে কোনো ট্রফিই ঘরে আনতে পারে নি কাতালানরা। পরিবর্তন আসে ২০০৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। বার্সার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন হুয়ান লাপোর্তা। লাপোর্তা এসেই দলে ভেড়ান ফুটবল জাদুকর রোনালদিনহোকে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ামাত্রই লাপোর্তা দলে ভেড়ান ফুটবল জাদুকর রোনালদিনহোকে; source: goal.com

শুরুতে তার রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার কথা থাকলেও মাদ্রিদ তাকে নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, কারণ মাদ্রিদীয় ভাষায় তিনি ‘কুৎসিত’। বার্সায় যোগ দেয়ার পর কিন্তু তিনি ঠিকই মাদ্রিদের সাথে তার পুরনো হিসাব চুকিয়ে নেন। তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন সৌন্দর্য শুধু গায়ের রঙেই হয় না। ফুটবল মাঠে সৌন্দর্য মাপতে হয় শুধু পায়ের জাদুতে। ২০০৫ সালের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যখন রিয়ালকে ৩-০ গোলে ধসিয়ে দেয় বার্সা, তখন জোড়া গোল দেয়া দিনহোকে শুধু মনোমুগ্ধ হয়ে দেখেই নি মাদ্রিদিস্তারা, দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনাও জানায় ম্যাচ শেষে।

সাফল্য আসতে থাকে বার্সার থলেতে। পাঁচ বছর কোনো ট্রফি না জেতা বার্সা ফ্রাংক রিকার্ডের ব্যবস্থাপনায় টানা দু’বছর লীগ জিতে, ঘরে আনে চ্যাম্পিয়নস লীগও। ফ্রাংক রিকার্ডের পর বার্সার কোচ নির্বাচিত হন পেপ গার্দিওলা। রোনালদিনহোর পর লাপোর্তার সবচেয়ে প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত হয়তো পেপ গার্দিওলার অন্তর্ভুক্তি। কেননা কোচ হিসেবে এই গার্দিওলাই পরে বার্সাকে নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়।

গার্দিওলা-মেসি যুগলবন্দী

২০০৮-০৯ মৌসুমে প্রেসিডেন্ট লাপোর্তা কোচ হিসেবে নিয়ে আসেন গার্দিওলাকে। তার চার বছরের অবস্থানকালে বার্সা ভাসে সাফল্যের বন্যায়। তার চার মৌসুমে কাতালানরা ঘরে তোলে ১৪টি ট্রফি, যা তাকে বানিয়ে দেয় বার্সেলোনার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচ। সেই চার বছরই মেসি ঘরে আনেন চার চারটি ব্যালন ডি’অর। ইতিহাসকে নতুন করে লিখে এই যুগলবন্দী।

বার্সার ইতিহাসের দুই বরপুত্র গার্দিওলা-মেসি; source: betfreg blog

বার্সেলোনার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বরপুত্র হয়তো মেসি। বিশ্বের যেকোনো ক্লাবের জন্যই তিনি এক স্বপ্নের নাম। সেই মেসি যখন ক্যাম্প ন্যুকে আপন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করে নেন, তখন কাতালানরা নিজেদের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ফুটবল সম্প্রদায় ভাবতেই পারে।

“আমার দেখা পার্থিব যেকোনো কিছুর উর্ধ্বে মেসি। সে ভিনগ্রহী”- কার্লোস পুয়োল; source: pinterest

মেসির প্রাক্তন বার্সেলোনা টিম-মেট পুয়োল বলেছিলেন, “বার্সাকে সবাই মনে রাখবে ‘মেসির বার্সা’ হিসেবে। আমার দেখা পার্থিব যেকোনো কিছুরই উর্ধ্বে মেসি। সে ভিনগ্রহী।” মেসিকে স্বজাত চেনানোর জন্য যদি একজনের নাম বলতে হয়, সেটি ‘পেপ গার্দিওলা’। আর এই যুগলবন্দীর চার বছর নিঃসন্দেহে বার্সার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ।

বার্সা-ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচ পেপ গার্দিওলা; source: getty image

এই সবকিছুর পেছনে ছিল একজন মাস্টার-মাইন্ড, প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা। ২০০৩-২০১০, তার এই সাত বছরে বার্সা সাফল্যে ভেসেছে বারবার। এই সময়ে বার্সার মূল একাদশ গড়ে উঠেছে মূলত তাদের ইয়ুথ একাডেমী থেকেই। রোনালদিনহো, ইতো, মেসিরা মাঠ কাঁপিয়েছে এই সময়েই, বার্সাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে। তারপরও লাপোর্তার আমলে বার্সার কোনো জার্সি স্পন্সর ছিল না। দাতব্য সংস্থা ইউনিসেফকে বার্সার জার্সি-ফ্রন্ট হওয়ার সম্মান দেয়া হয়। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় যখন লাপোর্তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্যান্দ্রো রোসেল ২০১০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে। শুরু হয় বার্সার কলঙ্কের এক অধ্যায়।

সান্দ্রো রোসেলঃ বার্সার অন্ধকার অধ্যায়ের শুরু

২০১০ সালে বার্সার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাপোর্তার স্থলাভিষিক্ত হয় সান্দ্রো রোসেল। এই রোসেল একসময় লাপোর্তার বন্ধু ছিল। কিন্তু মতামতের পার্থক্যের জন্য একজন আরেকজনের ঘোর শত্রুতে পরিণত হয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর রোসেল রাতারাতি বদলে দেন পুরো বার্সার চেহারা। বার্সার জার্সি-ফ্রন্ট থেকে সরে যায় ইউনিসেফ, আসে কাতার ফাউন্ডেশন (পরে কাতার এয়ারওয়েজ)। এটাই বার্সার নেয়া প্রথম জার্সি স্পন্সরশিপ। এর আগে বার্সার একটি অঘোষিত প্রথা ছিল, কোনো কর্পোরেট সংস্থাকে জার্সির স্পন্সরশিপ না দেয়া। আর কাতারের সাথে করা এই চুক্তিও অনেক বিতর্কিত। এর সাথে গাঢ়ভাবে জড়িয়ে আছে দুর্নীতির অভিযোগ।

বির্তকিত এক চুক্তির মাধ্যমে সান্তোষ থেকে বার্সায় আসে ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার; source: Esportes

রোসেলের আগমনে মাঠে এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই বিতর্ক ও বিরক্তির জন্ম দিতে থাকে বার্সেলোনা। পেপ গার্দিওলার পর কোচ হিসেবে নিয়োগ পান জেরার্ড মার্টিনো। আর মাঠের বাইরে বার্সা জড়িয়ে পরে একেক পর দুর্নীতি বিতর্কে। সব বিতর্কের মূলে ছিল সান্তোস থেকে নেইমারের ট্রান্সফারের সময় পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ। এই বিতর্কের জের ধরেই ২০১৪ সালে পদত্যাগ করেন রোসেল। আর এরকম বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তাকে এ বছরের মে মাসে গ্রেফতার করে স্প্যানিশ পুলিশ। বর্তমানে তিনি অর্থ-পাচারের দায়ে জেলে আছেন। রোসেলের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তারই সহযোগী জোসেফ বার্তোমেউ।

বার্তোমেউ এবং বার্সেলোনার বর্তমান দুর্দশা

রোসেলের পদত্যাগের পর বার্সা এক নতুন শুরুর স্বপ্ন দেখলেও তা সম্ভব হয়নি। কেননা নতুন প্রেসিডেন্ট বার্তোমেউও রোসেলের আদর্শে বিশ্বাসী, যে কারণে তার সময়েও বিতর্ক থেকে নিস্তার পাচ্ছে না কাতালানরা। বার্তোমেউ পরিচালিত বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্ত এবং অস্পষ্ট নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে বার্সাকে। যখন চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ জিদানের ব্যবস্থাপনায় পার করছে তাদের সেরা সময়টা, তখন মাঠে ও মাঠের বাইরে এক কথায় ধুঁকছে কাতালান এই ক্লাবটি। লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়নস লীগ দুই জায়গাতেই গত মৌসুমে বার্সার পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। অন্যদিকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে এই দুটি ট্রফিই ঘরে আনে রিয়াল মাদ্রিদ।

বর্তমানে কারাবাসরত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট স্যান্দ্রো রোসেলের (বামে) সাথে তার উত্তরসূরি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোসেফ বার্তোমেউ; source: Bleacher Report

গত মৌসুমের ব্যর্থতা পাশ কাটিয়ে যখন এই মৌসুমে নতুন শুরুর প্রতীক্ষা করছিল বার্সা ভক্তরা, তখনই তাদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে আসে নেইমারের দলবদল। বাই-আউট ক্লজ ভেঙে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নেইমারকে কিনে নেয় পিএসজি। ভেঙে যায় ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ত্রয়ী এম-এস-এন (মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার)। শুধু এই জায়গাতেই শেষ না, এ নিয়ে আরো পানি ঘোলা করে বার্সা বোর্ড। বলতে গেলে এখনো পানি ঘোলা করেই চলেছে। পিএসজি যাওয়ার পরপরই এক সাক্ষাৎকারে বার্সার এই বোর্ডকে একহাত নেন নেইমার। পাল্টা জবাব হিসেবে নেইমারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বার্সেলোনা বোর্ড। ঘোষণা দেয়ার পরপরই বার্সার প্লেয়াররা নেইমারের সাথে ছবি তুলে পোস্ট করে ইন্সটাগ্রামে। যেটা আরো গাঢ়ভাবে ইঙ্গিত দেয়- ঝামেলা বোর্ডের, খেলোয়ারদের না।

প্রাক্তন বার্সা সতীর্থদের সাথে নেইমার-দানি; source: Instagram

এই ছবি বোর্ডের প্রতি খেলোয়ারদের অসন্তোষেরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারার পর অনেকেই প্রকাশ্যে দল নিয়ে সমালোচনা করেছে। গত কয়েক বছরে ট্রান্সফার মার্কেটে বার্সার আনাড়িপনার ফল ভোগ করতে হচ্ছে দলকে, নেইমারের ট্রান্সফার দলে বিশ্বমানের প্লেয়ারের শূন্যতাটাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বোর্ডের ট্রান্সফার পলিসি যে কতটা আনাড়ি, তা গত কয়েক বছরে বার্সার দলবদলের চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। সম্প্রতি ১৩৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে ভেড়ানো ডেম্বেলেকে দুই মৌসুম আগে ৪ মিলিয়ন এবং গত বছর ১৫ মিলিয়ন ইউরোতে দলে নেয়ার সুযোগ থাকলেও তখন আগ্রহ দেখায়নি বার্সা। রিয়ালের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত তারকা এসেনসিওকেও দু’বছর আগে ৩.৫ মিলিয়নে সাইন করানোর সুযোগ হাতছাড়া করে বার্সা। প্রতিভাবানদের সময়মতো কদর না করে এ সময়ে কিছু অপ্রোজনীয় প্লেয়ার দিয়ে দল ভারী করে বার্সা, যাদের মাঝে আছে ৩৫ মিলিয়ন দিয়ে আন্দ্রে গোমেজ, ৩০.৫ মিলিয়ন দিয়ে সেমেডো এবং ৩০ মিলিয়ন দিয়ে এলকাসার। দলবদলে এই বোর্ড কতটা ‘পরিপক্ক’, তা বুঝার জন্য আর বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দল এবং বোর্ড নিয়ে ঘোর অসন্তোষে দলের প্রাণভোমরা মেসিও। স্বাক্ষর করেননি নতুন চুক্তিতে (অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাসখানেক আগেই মেসি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বলে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছিল বোর্ড )। শোনা যাচ্ছে, এই ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে যদি দল পছন্দ না হয়, তাহলে বার্সা ছাড়তে পারেন মেসি। কোনো বার্সা ভক্তই যে এই সংবাদ হজম করতে পারবে না, তা বলাই বাহুল্য।

বর্তমান বোর্ডের উপর যখন সবাই আস্থা হারিয়েছে, তখন এই বোর্ডকে সরানোর চিন্তা-ভাবনাও চলছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রদপার্থী বেনেডিটো একটি অভিযোগপত্র দাখিলের পথে আছেন। তিনি দাবি করেছেন প্রয়োজনীয় ১৬ হাজার বার্সা সমর্থকের স্বাক্ষর প্রায় নিয়ে ফেলেছেন। যদি তা হয়, তাহলে হয়তো কয়েক মাসের মধ্যেই আরেকটি নির্বাচন দেখা যাবে। হুয়ান লাপোর্তাও সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হতে পারে আগামী জানুয়ারি।

বার্সেলোনা এখন তাদের স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি পার করছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু ভুলে যাওয়া উচিত না, দলটা বার্সেলোনা। কঠিন সময় পার করে তারা সবসময় গর্জন করতে করতেই ফিরে আসে। এই সময়ে অন্তত এইটুকু ভেবে বার্সা ভক্তরা আশা দেখতে পারেন। আর বার্সেলোনা রঙ হারালে, রঙ হারাবে বিশ্ব ফুটবলও। তাই শুধু বার্সা ভক্তরা না, সকল ফুটবলপ্রেমীর মনেই হয়তো এখন এই প্রত্যাশা, “ফিরে আসুক ছন্দ, ফিরে আসুক ধ্রুপদী ফুটবল”।

ফিচার ইমেজ- The sports quotient

Related Articles

Exit mobile version