Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপের দামী কোচ যারা

সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়দের খোঁজ তো আমরা সবাই রাখি। কিন্তু কোচদের হিসাবও তো রাখতে হবে। কারা কারা এবার বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামী কোচ? জেনে নেয়া যাক সেরা দশ দামী কোচের তালিকা। প্রত্যেকের বার্ষিক আয় নামের পাশে দেওয়া হলো।

অস্কার তাবারেজ: ১৭ লাখ ইউরো

অস্কার তাবারেজ

এবার বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই উরুগুয়ের কোচ। সবচেয়ে প্রবীন এই মানুষটির ডাক নাম এল মায়েস্ত্রো, মানে শিক্ষক। ২০০৬ সাল থেকে আছেন উরুগুয়ে জাতীয় দলের দায়িত্বে। উরুগুয়ে দলকে ২০১০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন এবং ২০১১ কোপা আমেরিকা জিতিয়েছেন। ৫টি কোপা আমেরিকায় দলের দায়িত্বে ছিলেন। দলকে দীর্ঘকাল ধরে পরিচালনা করতে গিয়ে সারা বিশ্বে এক পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। ফুটবলে তার অবদান বিবেচনা করে ফিফা তাকে অর্ডার অব মেরিট প্রদান করেছে।

৭১ বছর বয়ষ্ক তাবারেজ খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন একজন ডিফেন্ডার।  জাতীয় দলে খেলা হয়নি কখনো। ১৯৮০ সাল থেকে ক্লাব ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দলকে কোচিং করাচ্ছেন।  

হোর্হে সাম্পাওলি: ১৮ লাখ ইউরো

হোর্হে সাম্পাওলি

আর্জেন্টিনার ‘রপ্তানি’ করা একজন উল্লেখযোগ্য কোচ, যিনি আর্জেন্টিনারই ঘাতকে পরিণত হয়েছিলেন ২০১৫ সালে।

হোর্হে সাম্পাওলি খুবই সাধারণ মানের একজন ফুটবলার ছিলেন। বড় কোনো ক্লাবেও ফুটবল খেলেননি। ২০০২ সালে খেলা ছেড়ে দ্রুত কোচিংয়ে ঢুকে পড়েন। একের পর এক ক্লাবকে কোচিং করাতে থাকেন। ২০১০-১২ সালে ইউনিভার্সিদাদ দে চিলির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তার সাফল্য দেখে সাম্পাওলিকে চিলি জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে তিনি চমৎকৃত করেন সকলকে। ২০১৫ সালে মাতৃভূতি আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই চিলিকে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন করেন।

সে বছর ফিফার বর্ষসেরা কোচের পুরষ্কারের জন্য তিনজনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম চলে আসে তার। এরপর সেভিয়া তাকে দলে ভেড়ায়। সেভিয়ার হয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর কৃতিত্ব দেখান। কিন্তু সেই চাকরি ছেড়ে দেন দেশের ডাকে। ২০১৭ সালের মে মাস থেকে আছেন তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্বে।

গ্যারেথ সাউথগেট: ২০ লাখ ইউরো

গ্যারেথ সাউথগেট

ইংল্যান্ডের বর্তমান কোচ। খেলোয়াড়ি জীবন ছিলো সাদামাটা, কিন্তু দীর্ঘ। ক্রিস্টাল প্যালেস, অ্যাস্টন ভিলা ও মিডলসবরোতে খেলেছেন পাঁচ শতাধিক ম্যাচ। ইংল্যান্ডের হয়েও ৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন। ডিফেন্ডার থেকে মিডফিল্ডার হয়ে যাওয়া সাউথগেট ৩৫ বছর বয়সে ফুটবল ছেড়ে সর্বশেষ ক্লাব মিডলসবরোতে কোচিং শুরু করেন।

শুরুতে তাকে নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে বিতর্ক হয়েছিলো। কোনো ধরনের পেশাদার লাইসেন্স ছাড়াই কোচিং করাতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। পরে লাইসেন্স পরীক্ষা দেবেন এই শর্তে তাকে কাজ চালাতে দেওয়া হয়। দল খুব ভালো না করলেও তখনই আর্সেন ওয়েঙ্গার বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে পারেন সাউথগেট।

তা-ই হয়েছে। প্রথমে ইংল্যান্ড যুব দলের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন।

কার্লোস কুইরোজ: ২০ লাখ ইউরো

কার্লোস কুইরোজ

বহু জায়গা ঘুরে এখন ইরান জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন একসময়ের ইউরোপের নাম করা কোচ কার্লোস কুইরোজ।

খুব অনুল্লেখ্য খেলোয়াড়ি জীবন কাটিয়ে দ্রুত কোচিংয়ে এসেছেন এই সাবেক গোলরক্ষক। নিজের দেশের দল পর্তুগাল যুবদলের দায়িত্ব দিয়ে তার কোচিং শুরু। এরপর পর্তুগাল জাতীয় দলের সহকারী থেকে মূল কোচ হয়েছেন। তারপর ঘুরেছেন ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নানান জায়গা। দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্ব ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউটেডে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সহকারী হয়েছিলেন। সেটা ছেড়ে হলেন রিয়াল মাদ্রিদের মতো তারকাখচিত দলের কোচ। সেখানে টিকতে পারলেন না। আবার ফার্গুসনের সহকারী। আবার দু’বছর পর্তুগালে গেলেন। অবশেষে এখন বিপুল অর্থের বিনিময়ে ইরান দলের দায়িত্বে আছেন।

ফার্নান্দো সান্তোস: ২২.৫ লাখ ইউরো

ফার্নান্দো সান্তোস

পর্তুগালের দায়িত্বে থাকা একজন প্রবীন কোচ। লিসবনে জন্ম নেওয়া এই কোচ বেনফিকা যুব দলের হয়ে খেলেছেন একসময়। তবে বলার মতো কিছু করতে পারেননি। সিনিয়র লেভেলে খেলেছেন পর্তুগিজ লিগে। নিজের ক্লাব এস্তোরিলের সহকারী কোচ হিসেবে কোচিং জগতে পা রেখেছিলেন। এরপর পোর্তো, বেনফিকার মতো দলের কোচিং করিয়েছেন। সর্বশেষ গ্রিসের জাতীয় দলের দায়িত্বে ছিলেন।

এরপর ২০১৪ সাল থেকে আছেন পর্তুগালের দায়িত্বে। পাওলো বেনতোর খারাপ ফলাফল তাকে দায়িত্ব পাইয়ে দিয়েছে। পর্তুগালের কোচ হিসেবে অনন্য এক অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে পর্তুগালকে তার ইতিহাসের প্রথম মেজর ট্রফি, ইউরো জিতিয়েছেন। ফলে তার ওপর আস্থা রাখতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি।

স্টারিস্লাভ চেরচেশভ: ২৬ লাখ ইউরো

স্টারিস্লাভ চেরচেশভ

খেলোয়াড়ি জীবনে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার সেরা গোলরক্ষক ছিলেন। খেলেছেন জাতীয় দলে। সোভিয়েত, সিআইএস ও পরে রাশিয়া জাতীয় দলের গোলরক্ষক হিসেবে খেলেছেন। দুটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ক্লাব জীবনে রাশিয়ার সেরা সেরা ক্লাবেই খেলেছেন।

খেলা ছাড়ার পর স্পার্তাক মস্কো থেকে শুরু করে রাশিয়ার বিভিন্ন ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন। দেশটির ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম সফল কোচ ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে রাশিয়া জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার সামনে লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া আছে, এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল!

হুলিয়েন লোপেতেগুই: ৩০ লাখ ইউরো

হুলিয়েন লোপেতেগুই

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, দুই দলেই খেলেছেন একসময়ের এই গোলরক্ষক। খেলেছেন স্পেন জাতীয় দলেও। কিন্তু ভাগ্য কখনোই তাকে একনম্বর গোলরক্ষক হতে দেয়নি। সবসময় দ্বিতীয় পছন্দ ছিলেন তিনি। তবে রায়ো ভালকানোর মতো ক্লাবে গিয়ে শেষ অবধি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন অনেক। ২০০৩ সালে কোচিং শুরু করেছেন স্পেন অনুর্ধ্ব-১৭ দলের সহকারী কোচ হিসেবে। এরপর রিয়াল মাদ্রিদ-বি দলের কোচ ছিলেন। তবে নিজেকে চিনিয়েছেন স্পেন যুব দলগুলোর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। স্পেন অনুর্ধ্ব-১৯, অনুর্ধ্ব-২০ ও অনুর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে অনেক সাফল্য তার। দুবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন তিনি। তাকে সেই সময় থেকেই ভবিষ্যত স্পেন কোচ মনেও করা হচ্ছিলো।

২০১৬ সালে ভিসেন্তে দেলবস্কের জায়গায় তাকে দেওয়া হয় স্পেন জাতীয় দলের দায়িত্ব। এবার লোপেতেগুইয়ের দলকে অন্যতম ফেভারিট মনে করা হচ্ছে।

দিদিয়ের দেশম: ৩৫ লাখ ইউরো

দিদিয়ের দেশম

এবার বিশ্বকাপে কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বর্ণময় খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনিই। ক্লাব ক্যারিয়ারে মার্শেই, জুভেন্টাস, চেলসি, ভ্যালেন্সিয়ার মতো দলের হয়ে খেলেছেন। অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রাণদীপ্ত এই ফুটবলার ছিলেন ফ্রান্স জাতীয় দলের অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্সের হয়ে একটি বিশ্বকাপ ও একটি ইউরো জয়ের কৃতিত্ব আছে তার।

কোচিং ক্যারিয়ারও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। খেলা ছাড়ার পর ২০০১ সালে মোনাকোতে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। প্রথম চেষ্টাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলে ফেলেন। এরপর জুভেন্টাস ও মার্শেইতে কোচিং করিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে নিয়েছেন জাতীয় দলের দায়িত্ব। যেরকম টাকা পাচ্ছেন, দলের পারফরম্যান্সও তেমন উজ্জল। এবার বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট তার ফ্রান্স দল।

তিতে: ৩৫ লাখ ইউরো

তিতে

খেলোয়াড়ি জীবনে মোটেও বলার মতো কেউ ছিলেন না। কোচিং জীবনের প্রথমটাও কেটেছে বিবর্ণ। তবে কোরিন্থিয়াসের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাফল্য তার হাত ধরে চলতে শুরু করে। এই সময়ে অর্জন করেছেন ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠ কোচের তকমা। কোরিন্থিয়াসের হয়ে একাধিক লিগ, কোপা লিবার্তোদোরেস ও একটি ফুটবল বিশ্বকাপ জয় তিতেকে সে সময়ের সেরা কোচ করে তোলে। ২০১৬ সাল থেকে ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন। তার অধীনে ব্রাজিল দল দারুন ছন্দময় হয়ে উঠেছে। এবার তিনি ব্রাজিলকে ষষ্ঠ শিরোপার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

জোয়াকিম লো: ৩৮.৫ লাখ ইউরো

জোয়াকিম লো

জোয়াকিংম লো এখন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ। তার সামনে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। মূলত জার্মানির পরিচয়েই তার পরিচয়। ক্লাব ফুটবলে খুব ভালো কোনো খেলোয়াড় ছিলেন না। ক্লাব স্তরে কোচিংও করিয়েছেন সাধারণ প্রোফাইলে। তবে ২০১৪ সালে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান তাকে নিয়ে আসেন জাতীয় দলে, সহকারী কোচ হিসেবে। সেই থেকে জার্মান জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ।

২০০৬ সালে ক্লিন্সম্যান আর দায়িত্ব বাড়াতে না চাইলে তার সহকারী লোকে দেওয়া হয় জাতীয় দলের দায়িত্ব। গত বিশ্বকাপ জিতে তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ ছাড়া জিতেছেন একটি কনফেডারেন্স কাপও। এখন পালা আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের।

Related Articles