Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দুটো জয়, বায়ো-বাবল, কিংবা নতুন দিনের বিজ্ঞাপন

‘নাকউঁচু’ বলে অজিদের একটা ‘খ্যাতি’ ছিল বরাবরই। এবারের বাংলাদেশ সফরটা সেই খেতাবটা বোধহয় পাকাপোক্ত করে দিয়েছিল। 

সিরিজ শুরুর আগে থেকেই হাজারো নিয়মের যাঁতাকলে পড়ে শুরুতেই হারানো মুশফিকুর রহিমকে। পিচ কিউরেটর গামিনী ডি সিলভাও বায়ো-বাবলে সময়মতো ঢুকতে পারেননি। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অদ্ভুতুড়ে আরো কিছু সমন জারি করার ফলে রীতিমতো হাঁসফাঁস করছিল বাংলাদেশ। সে হিসেবে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দুটো দারুণ জয় বোধহয় প্রচণ্ড খরার মধ্যে একপশলা বৃষ্টির মতো শান্তি এনে দিয়েছে। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দু’টি জিতে ফুরফুরে মেজাজেই আছে টাইগাররা। দুটোই ছিল লো-স্কোরিং ম্যাচ। তবে এর জন্য মিরপুরের স্লো পিচ যেমন অনেকাংশে ‘দায়ী’, বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংও পাশাপাশি যথেষ্ট বাহবা কুড়াচ্ছে।

প্রথম দেখা

Image Credit: Financial Express

দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এই প্রথমবারের মতো দেখা অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের। এই সিরিজের আগে চারটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল, তাতে চারটিতেই পরিষ্কার ব্যবধানে জিতে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল অজিরা। 

তবে এবার আয়োজনটা হচ্ছে বাংলাদেশে; পাঁচটি ম্যাচই ‘হোম অফ ক্রিকেট’ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে দেখা হওয়ার মানে, বাংলাদেশকে কোনোক্রমেই হিসেবের বাইরে রাখার উপায় নেই – সে টেস্ট হোক কি টি-টোয়েন্টি। উপরন্তু, অজি দলে নেই অ্যারন ফিঞ্চ-ডেভিড ওয়ার্নার-স্টিভ স্মিথ-মার্নাস ল্যাবুশেন-গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-প্যাট কামিন্সের মতো নামগুলো। নিয়মিত অধিনায়ক ফিঞ্চের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করছেন ম্যাথু ওয়েড। সব মিলিয়ে তাই বলা হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কিছু একটা করে দেখানোর এটাই মোক্ষম সুযোগ। 

তবে বাংলাদেশের স্কোয়াড নিয়েও ছিল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তামিম-লিটন ইনজুরির কারণে বাইরে, বায়ো-বাবল জটিলতার কারণে মুশফিকুর রহিমও নেই দলে। মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলার মেহেদী হাসান মিরাজও নেই স্কোয়াডে; অবশ্য তিনি ছিলেন না জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও, তবে সেটা তো ছিল বিদেশের মাটিতে। নতুন করে কোনো খেলোয়াড়কে বায়ো-বাবলে আনাও সম্ভব ছিল না। অগত্যা স্কোয়াডে রাখা হয়েছিল ইতোমধ্যেই বায়ো-বাবলের মধ্যেই থাকা মোসাদ্দেক-মিঠুন-রুবেলকে।  

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ ফিরছে জিম্বাবুয়ে থেকে, কষ্টসাধ্য ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর। সব মিলিয়ে সিরিজ শুরুর আগে পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় শুধু জিম্বাবুয়ের সাথে ওই দুটোই। তবে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থাও খুব একটা সুবিধের ছিল না বৈকি; গত পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে যে তারা জয়ের দেখা পেয়েছে মোটে একবার!  

লেখাটা যখন পড়ছেন, ততক্ষণে অবশ্য দুটো জয় পকেটে পুরে নিয়েছে টাইগাররা। সিরিজ জয়ের স্বপ্নটাও চাউর হয়েছে বেশ। এবার সেটাও হবে কি? 

ব্রডকাস্টিং ইস্যু এবং ফিঞ্চ-ম্যাক্সওয়েলের টুইট

প্রথম টি-টোয়েন্টি চলাকালীন টুইটারে লাইভ লিংক চেয়ে টুইট করেছিলেন ইনজুরির কারণে চলমান সিরিজ মিস করা নিয়মিত অধিনায়ক ও ওপেনার ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর অস্ট্রেলিয়ায় হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা এই ব্যাটসম্যান এক টুইট বার্তায় বলেন, 

একই পোস্টে প্রমিলা অজি ক্রিকেটার এবং মিচেল স্টার্কের সহধর্মিনী অ্যালিসা হিলিও জানান, তিনিও খুঁজছেন একটা লাইভ স্ট্রিমিং লিঙ্ক। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও এমনই আরেকটি টুইট করেন: 

আসলে হয়েছে কী, লাভের অংক কষতে গিয়ে এই সিরিজের কোনো ম্যাচ সম্প্রচার করছে না অস্ট্রেলিয়ার কোনো চ্যানেল। বাংলাদেশের র‍্যাবিটহোল এবং টি স্পোর্টস ইউটিউব সম্প্রচার করলেও সেটা আবার অস্ট্রেলিয়াতে দেখা সম্ভব নয়। ফলাফল: ২৭ বছর পর প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াতে নিজ দেশের ক্রিকেট ম্যাচ দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ এমনটি হয়েছিল সেই ১৯৯৪ সালে।

সমস্যার নাম ওপেনিং 

‘You gotta play the ball, not the man.’

সিরিজের শুরুর দিকে কথাটা বলেছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো। সৌম্য কি শুনতে পেয়েছিলেন সে কথাটা?

বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন প্রথম ম্যাচে; Image Credit: BCB

প্রথম দুটো ম্যাচে বাংলাদেশকে যে জিনিসটা বেশি ভাবাচ্ছে, সেটি হলো উদ্বোধনী জুটি এবং উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। নিয়মিত দুই ওপেনার তামিম-লিটন দু’জনের কেউই নেই এই সিরিজে, ছিলেন না জিম্বাবুয়ে সিরিজেও। নাঈম-সৌম্য’র সামনে বড় সুযোগ ছিল নিজেদের প্রমাণ করার। সেটা কতটুকু করতে পেরেছেন দু’জন, সেটা নিয়ে ভাবার অবকাশটা রয়ে গেছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। 

নাঈমকে ভোগাচ্ছে তার স্ট্রাইক রোটেশন, অতিরিক্ত ডট বল দেওয়ার প্রবণতা, এবং ক্রিজে সেট হয়ে বড় রান করতে না পারা। প্রথম ম্যাচে ২৯ বলে ৩০ রান আর দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩ বলে ৯ রান থেকেও প্রথম ম্যাচে ১৭ ডট আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ ডটই কপালে চিন্তার ভাঁজগুলো আরো বড় করে দিচ্ছে৷  দ্বিতীয় ম্যাচের এই ইনিংসটাতে অবশ্য রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ এসেছিল, তবে ভুগিয়েছে বাউন্ডারি না আসাটা। সেটা আরো পরিষ্কারভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ‘স্মার্ট পজিটিভ ক্রিকেট’ ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।  

তবে চিন্তাটা রীতিমতো শঙ্কায় রূপ নিচ্ছে সৌম্য সরকারের ‘অদ্ভুতুড়ে’ ব্যাটিং দেখার পর। জিম্বাবুয়ে সিরিজে পরিসংখ্যানগতভাবে দারুণ করলেও খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। তবে তাতে ম্যান অফ দ্য সিরিজ হওয়াটা আটকায়নি তার। কিন্তু সৌম্য সরকার এই সিরিজে স্রেফ ‘ধুঁকছেন’ বললেও বোধহয় কমই বলা হয়। তার ব্যাটিং দেখাটা সচরাচর দৃষ্টিসুখকর, স্বভাবজাত আগ্রাসনটা বরাবরই আড়াল করেছে তার অধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি যেটা করছেন, সেটাকে বাংলা বাগধারায় ‘খাবি খাওয়া’ বলে বোধহয়। প্রথম দুই ম্যাচে করেছেন ২(৯) এবং ০(২) রান, তার থেকেও দৃষ্টিকটু ছিল শরীরী ভাষা৷ দুই ম্যাচেই বোল্ড হয়েছেন পেস বলে; প্রথম ম্যাচে তো রীতিমতো নিজেই বল স্ট্যাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন৷ দ্রুতই ছন্দে ফিরতে না পারলে সামনে ঘোর বিপদ!  

 

নতুন দিনের বিজ্ঞাপন

Image Credit: BCB

বাংলাদেশের এই সিরিজে এখন পর্যন্ত সবচাইতে বড় প্রাপ্তি অজিদের বিপক্ষে প্রথমবার কোনো ফরম্যাটে পরপর দুই জয়৷ এরপরই বড় স্বস্তির সংবাদগুলোর মাঝে অন্যতম হলো আফিফের নিয়মিত শেষের দিকে চাপ সামলে ক্যামিও খেলার সামর্থ্যের জানান দেওয়া।

দুটো ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে ব্যাটিংয়ে যে ব্যাটসম্যানের অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি আফিফ হোসেন ধ্রুব৷ প্রথম ম্যাচে শেষদিকে আফিফের ১৭ বলে ২৩ রানের ধ্রুপদী ইনিংস বাংলাদেশকে শেষদিকে লড়াকু সংগ্রহ পেতে সাহায্য করে। না, স্রেফ বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলাই নয়; ধ্রুব নজর কেড়েছিলেন শরীরী ভাষা দিয়েও। 

প্রথম ম্যাচে আফিফ যখন ক্রিজে আসেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮৬/৪ (১৪.৩ ওভার)। আর যখন আউট হয়ে সাজঘরে ফিরছিলেন, তখন দলের সংগ্রহ ১৩১/৭ (২০ ওভার)। এই ৩৩ বলে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৪৫, যার ২৩ রানই আসে আফিফের ব্যাট থেকে৷ কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশও ম্যাচটা জেতে ২৩ রানে। 

তবে নিশ্ছিদ্র ব্যাটিংয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দ্বিতীয় ম্যাচে। আফিফ যখন ক্রিজে আসেন, তখন দলের সংগ্রহ ৫৯/৪ (৯.৩ ওভার)। বাংলাদেশের তখন থরহরিকম্প অবস্থা। ম্যাচের মাঝপথে এক ওভারের ব্যবধানে সাকিব এবং রিয়াদের ফিরে যাওয়ায় ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা কিছুটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। রিয়াদ স্বীকারও করে নিয়েছেন, একটা সময়ে স্নায়ুচাপে ভুগছিল গোটা ড্রেসিংরুমই। বিপর্যয়ের শঙ্কা চোখ রাঙাচ্ছিল যে! তবে আফিফ শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন হালটা; জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। চোখধাঁধানো এক ইম্প্রোভাইজড শটে দলের জয়সূচক বাউন্ডারিটি হাঁকিয়েই মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে জয়োল্লাস করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের প্রত্যয়টা। শেষ পর্যন্ত ৫ বাউন্ডারি, ১ ওভারবাউন্ডারিতে ৩১ বলে ৩৭* রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছেন৷ এর মধ্যে স্টার্ককে খেলা দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভ থেকে আসা বাউন্ডারিটা আরো অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে দর্শকের, সেটা বলাই বাহুল্য। 

Image Credit: BCB

তবে দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ে আফিফের পাশাপাশি আরো একজনের কৃতিত্ব সমান। তিনি উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান৷ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে ফিরেছেন বহুদিন পর, ২০১৭ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দুটো টি-টোয়েন্টির পর এরই মধ্যে কেটে গেছে আরো চারটে বছর। সময়টা যে নেহায়েত হেলায় হারাননি, সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার তাগিদটা ছিল তার। 

আফিফ যখন ক্রিজে আসেন, তখন দলের প্রয়োজন ছিল ৬৩ বলে ৬৩ রান। আর সোহান যখন ক্রিজে আসেন, তখন দলের প্রয়োজন ছিল ৫২ বলে ৫৫ রান৷ ম্যাচভাগ্য তখন পেন্ডুলামের মতো দোদুল্যমান। ঠিক সেখান থেকে নিজেও রান করেছেন, সাথে আফিফকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গত। ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্বটা পালন করেছেন ষোল আনাই, সব স্নায়ুচাপ উড়িয়ে দিয়ে নতুন দিনের বার্তাই যেন শুনিয়েছেন সোহান। 

ব্যাটার সাকিব আল হাসান

Image Credit: BCB

দুটো ম্যাচে দুই রকম ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল ব্যাটসম্যান সাকিবের৷ প্রথম ম্যাচে ৩৩ বলে ৩৬ রান, আর দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রিজে এসেই মিচেল স্টার্ককে ব্যাক-টু-ব্যাক তিন বাউন্ডারির পর সাকুল্যে ১৭ বলে ২৬ রানের ধ্রুপদী ইনিংস৷ পরপর দুই দিনে দু’টি ম্যাচে দুইরকম সাকিবকে দেখল সবাই৷ 

সাকিবের এই ইনিংস বাংলাদেশকে অনেকটাই এগিয়ে দেয়। দুটো ম্যাচেই দুটো গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছেন সাকিব৷ প্রথম ম্যাচে রিয়াদের সাথে ৩২ বলে ৩৬, আর দ্বিতীয় ম্যাচে মেহেদীর সাথে ৩২ বলে ৩৭ রান৷ দুই ম্যাচে এই দুটো জুটি বাংলাদেশকে রানের চাকা সচল রাখতে দারুণ সাহায্য করেছে৷ 

আচ্ছা, মেহেদীর কথা যখন এলোই, টিম ম্যানেজমেন্টকে একটা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা যেতেই পারে। তাকে ‘ফ্লোটার’ হিসেবে ব্যবহার করা এবং ফ্রি রোলে ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে উঠিয়ে আনা টিম ম্যানেজমেন্টের সাহসী এক সিদ্ধান্ত। বারবার লাইফ পাওয়া এক ইনিংসের পর মেহেদী অবশ্য টিম ম্যানেজমেন্ট এবং অজি ফিল্ডারদের পাশাপাশি ভাগ্যকেও ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না। 

স্লো পিচ, নাকি অভিজ্ঞতার অভাব? 

পিচ নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বায়োবাবলে না ঢুকায় এই সিরিজে সরাসরি মাঠে প্রবেশের অনুমতি নেই বিসিবির পিচ কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার। তবে ভিডিও কল এর মাধ্যমে নিজের কাজ করার অনুমতি অবশ্যই আছে এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন নিজ কক্ষ থেকে। এখানেই অনেকটা কৃতিত্ব পায় গামিনির টিম। এমন অদ্ভুতুড়ে পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে যে দারুণভাবে উৎরে গেছেন তারা, সেই সুবাদেই দুটো ম্যাচে জয় পকেটে পুরতে পেরেছে বাংলাদেশ। 

প্রথম ম্যাচে খেলা হয়েছে মিরপুরের ৩ নাম্বার পিচে, যেটিতে স্পিন বেশি হয়। ওভারকাস্ট কন্ডিশনে পিচ অনেকটা সময় ঢেকে রাখা হয়েছিল। বাউন্স ছিল না বেশি, সময়ের সাথে সাথে পিচ আস্তে আস্তে আরো স্লো হয়েছে। অষ্ট্রেলিয়াও স্লো পিচে যে কতটা দুর্বল, তা তাদের ব্যাটিংয়েই আবারও প্রমাণিত হলো।

দ্বিতীয় ম্যাচের পিচও কঠিন ছিল, তবে আগের ম্যাচের মতো নয় ঠিক৷ তবে স্ট্রাগলটা একটু বেশিই করতে হয়েছে অজিদের। অবশ্য দুই দলের বোলাররা তাদের সেরাটাই দিয়েছেন দুটো ম্যাচের চারটি ইনিংসেই। কিন্তু মূল পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে অজিদের ব্যাটিং লাইনআপের ব্যর্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিদের উদ্ভাসিত পারফরম্যান্স।

অজিদের ব্যাটিং লাইনআপে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম অভিজ্ঞতা। নাহ, এই দলের প্রত্যেকেই শর্টার ফরম্যাটের পরীক্ষিত নাম৷ কিন্তু বাংলাদেশের স্লো পিচে স্পিন-বিষে নীল হতে হচ্ছে তাদের। অতিরিক্ত ডট দেওয়া এবং উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে না পারাতেই তা আরো বড় করে চোখে লাগছে। দুই ম্যাচে অজিদের ১৫ রানের বেশি ইনিংস মাত্র ৩টি; যার দু’টি মিচেল মার্শের ( দুই ম্যাচেই ৪৫ রান করে দুটো ইনিংস), আরেকটি হেনরিকসের ৩০। তবে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বোলারদের ভূমিকাও দারুণ প্রশংসনীয়৷ 

Image Credit: AFP

 

প্রথম ম্যাচে নাসুম আর মেহেদীর দারুণ বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকে অজি ব্যাটাররা, আর তাতেই কেল্লা ফতে। মেহেদীর করা ইনিংসের প্রথম বলেই ক্যারির উইকেট ম্যাচের শুরুতেই অজিদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। বাকি কাজটা ৪ উইকেট শিকার করা নাসুম করেছেন। সাথে ছিলেন মুস্তাফিজ-শরিফুল-সাকিব। এরই সুবাদে বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে কম রান ডিফেন্ড করে জয় আসে।  

দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যাচের হাল ধরে বড় ইনিংসের দিকে এগোতে থাকা মার্শ-হেনরিকস জুটি ভেঙে দিয়ে অজিদের রানে লাগাম টানায় সাকিবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ ম্যাচেও শুরুতেই ক্যারিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মেহেদী। তবে গত ম্যাচের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি নাসুম এদিন ছিলেন উইকেটশূন্য। এই ম্যাচে স্লগ ওভারে মুস্তাফিজ এবং শরিফুলদের কিপটে বোলিংয়ে অজিদের অবস্থা হয়ে উঠেছিল আরো সঙ্গীন। দু’জনে শেষ ৪ ওভারে খরচ করেছেন যথাক্রমে ৩, ৩, ৬ এবং ১১৷ অর্থাৎ, শেষ ২৪ বলে আসে মাত্র ২৩ রান, সাথে ৪ উইকেট। প্রথম ম্যাচেও যথেষ্ট হিসেবি ছিলেন মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে ১৬ রান খরচায় তিনি শিকার করেছিলেন ২ উইকেট। 

বাংলাদেশের ডিআরএস-ভাগ্য

দুটো রিভিউ দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছিল এবং শেষ পর্যন্ত বোধহয় ম্যাচও জিতিয়েছে। প্রথমটি অবশ্যই সাকিবের নেওয়া রিভিউ। সাকিব যখন রিভিউ সিদ্ধান্তে জয়ী হন, তখন তার রান ১৬ (১০), তিনি থামেন ২৬ (১৭) রানে। দেখে মনে হচ্ছে স্রেফ দশ রানের তফাৎ তো? তবে যেখানে রানের দেখা মেলাই ভার, সেখানে এই দশ রানটাও যে ঢের বেশি! আর তার থেকে বড় কথা, ডিআরএসে সাকিবের এই রিভিউটা দলকেও মানসিকভাবে বেশ এগিয়ে দিয়েছিল। 

এরপর আফিফ যখন ৪ বলে এক রানে ব্যাটিং করছেন, মিচেল মার্শের করা ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই দারুণ আত্মবিশ্বাসী এক এলবিডব্লিউ আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। সময় ছিল এমন, সাকিব-রিয়াদ মাত্রই বিদায় নিয়েছেন, মেহেদীকেও অপর প্রান্তে খুব একটা স্বচ্ছন্দ লাগছে না। অগত্যা, আফিফ রিভিউ নেন এবং তাতে সফলও হন। শেষ পর্যন্ত তিনি ম্যাচ জিতিয়েই ফিরেছেন সাজঘরে। 

ডিআরএসের সদ্ব্যবহার নিয়ে খুব একটা সুনাম নেই বাংলাদেশের। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, দ্বিতীয় ম্যাচে এই দুই রিভিউ ম্যাচজয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। 

এবং পাওয়ারপ্লে…

দুটো ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে উন্নতির জায়গা আছে অনেকটা। বিশেষ করে ওপেনিং জুটি এবং পাওয়ারপ্লের যথার্থ ব্যবহারটা এখন বেশ গুরুতর সমস্যা বলেই মনে হচ্ছে। 

প্রথম ম্যাচে পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে সাকুল্যে ৪টি, আর উইকেট হারিয়েছে ১টি৷ আর দ্বিতীয় ম্যাচে সেটা আরো বাজে অবস্থা; পাওয়ারপ্লেতে উইকেটের পতন ঘটেছে ২টি, আর বল বাউন্ডারি পার হয়েছে সাকুল্যে ৩ বার৷ সেটিও আবার তৃতীয় ওভারে সাকিবের ক্রিজে এসেই স্টার্ককে মারা পরপর ৩ বাউন্ডারি। সেই তিন ডেলিভারি ছাড়া পাওয়ারপ্লে’র বাকি ৩৩ বলে একটিও বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেননি ব্যাটসম্যানেরা।

সামনেই বিশ্বকাপ আসছে। পাওয়ারপ্লে, ওপেনারদের দারুণ সূচনা এনে দিতে না পারা, সেট হয়েও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা, অতিরিক্ত ডট বল দেওয়া, এবং স্ট্রাইক রোটেশন করতে না পারার মতো সমস্যাগুলো কাটাতে না পারলে এর খেসারত যে অদূর ভবিষ্যতে দিতে হবে বাংলাদেশকে, সেটা বলাই বাহুল্য। সামনেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজেই হয়তো এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে টাইগারদের। 

Image Credit: BCB

অজিদের বিপক্ষে প্রথমবার কোনো ফরম্যাটে একাধিক জয়, তাও আবার ব্যাক-টু-ব্যাক৷ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস এই মুহূর্তে তুঙ্গে৷ সিরিজ জিততে বাকি তিন ম্যাচ থেকে দরকার একটিমাত্র জয়, তাই তৃতীয় ম্যাচটাতেও বাংলাদেশ হয়তো অপরিবর্তিত একাদশই খেলাবে। শামীম-শরীফুলরা দারুণ শুরু করেছেন ক্যারিয়ারে, আফিফ-সোহান-মেহেদীরা নিয়মিত ম্যাচ জেতাতে শুরু করেছেন, ব্যাটারদের গোলকধাঁধায় হরহামেশাই ফেলছেন মুস্তাফিজ, তরুণদেরকে সাহস যোগাতে পাশে আছেন ভেটেরান সাকিব-রিয়াদরাও। টাইগাররা তাই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সামনে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ, এরপর আছে বিশ্বকাপও। ততদিনে দলে ফিরবেন তামিম-লিটন-মুশফিকরাও। দলগত পারফরম্যান্স, আত্মবিশ্বাস, এক হয়ে খেলা, আর একটা চমৎকার টিম কম্বিনেশন তৈরি করে ফেলা – এই লক্ষ্যগুলো পূর্ণ করতে পারলে সীমিত ওভারের ক্রিকেতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হতে পারে আরো উজ্জ্বল। 

This article is in Bangla language. It is about the consecutive win for Bangladesh against Australia.

Featured Image Credit: BCB

Related Articles